রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন

শিস খন্দকারের ৫টি কবিতা

শিস খন্দকারের ৫টি কবিতা

শিস খন্দকারের ৫টি কবিতা
১. রঙ
ধরুন, একটি নীড়প্রিয় পাখি,
একটি শান্ত সমুদ্দুর—
ধরুন, একটি রক্তজবা বিকেল,
একটি রাত্রিনরম সুর।
ধরুন, একটি কামিজভরা নারী,
একটি ঘুমশুকানো রাত—
ধরুন, একটি ঘড়িকাঁটা জীবন,
একটি আলসে প্রভাত।
ধরুন, একটি কলসশীতল সুখ,
একটি আকাশ জানালা—
ধরুন, একটি বৃষ্টিভেজা ছাতা,
একটি রাত্রিনিঝুম বেলা।
ধরুন, একটি জীবনবাজি প্রেম,
একটি মায়াকাজল চোখ—
ধরুন, একটি বাতাসমাখা দুপুর,
একটি ক্ষয়ে যাওয়া শোক।
ধরুন, একটি নূপুরবন্দি পা,
একটি চক্ষুছুরির খুন—
ধরুন, একটি বনসাইকৃতি মন,
একটি খোলসভাঙা ভ্রূণ।
২. সুসংবাদ
এই দুর্দিন পেরুবে তখন।
হয়তো তখন বর্ষা—একদুপুর ভিজিয়ে তাপমাত্রা বাড়াবো তোমার কোলে—
শাসিয়ে বলবে, ‘এভাবে কেউ ভেজে!’
সংবাদ পরিক্রমায় প্রসন্ন কণ্ঠে
কয়েকপৃষ্ঠা সুসংবাদ শুনিয়ে যাবেন আফরোজা নীলা—
সুপ্রস্তুত পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে সুখে, সৌহার্দ্যে—কেউ থামাতেই পারছে না!
রাতজাগা জুয়োতে হেরে পুরুষ ঘরে ফিরবে
নারী রেগে আগুন হবে; ফাগুন হবে—
কাঁথা ভিজিয়ে কেঁদে উঠবে সময়ের শৌখিন শিশু।
বহুদিন পর চিরচেনা আর্তনাদে ছুটবে ট্রেন
বাঁশিতে ফুঁ দেবে রেলগেটের ইউনিফর্ম ছোকরাটা
পথের দুদিকে আটকে পড়বে মটরগাড়ি, জিপ, রিকশা
জিপের জানালা নামিয়ে শহরের সবচেয়ে সুচারু মেয়েটা
ভ্রু কুঁচকে বৃথা আওড়াবে, ‘উফ, এখনো কেনো ছাড়ছে না!’
ক্রিকেটীয় উন্মাদনায় ডুবে যাবে পাড়ার ছেলেরা
নির্বাচনী নোঙর ভিড়বে চায়ের কাপে
লাবণ্য উছলানো নায়িকার পোস্টারে ছেয়ে যাবে মৌলিক দেয়াল।
হয়তো তখন তুমুল প্রেম—
বুকে জড়াবো, চুমু খাবো—চষে বেড়াবো অনঙ্গ উঠোন
অনুরাগে, আনন্দে…
এই দুর্দিন পেরুবে তখন।
মসজিদে মসজিদে মুয়াজ্জিন ডাকবেন, ‘কল্যাণের জন্য এসো।’
আমরা দলবেঁধে যাবো।
৩. ভালোবাসি
উনার কটিদেশ পেরিয়েছে যে দীঘল কেশরাশি, নিশ্চিন্তে—তাকে আমি ভালোবাসি। উনার দুচোখের কার্নিশে লেপ্টে থাকে যে কাজল, স্বল্পায়ু প্রাণে—তাকে আমি ভালোবাসি। উনার গ্রীবার সোনালি চেইন ছুঁইছুঁই যে তিল, বুকের ডানে—তাকে আমি ভালোবাসি।
এভাবে আমি ভালোবেসি—উনার দেহের শ্লীল-অশ্লীল প্রতিটি মুদ্রা।
৪. এপিটাফ
আমার শৈশবে কোনও ব্যালকনি ছিলো না; কোনও গ্রিল ছিলো না। তবে হ্যাঁ, গ্রিলের মতো সমান্তরাল কিছু শিক্ ছিলো আমার শৈশবের জানালাগুলোতে। সেগুলো কাঠ কিংবা সুপারি গাছের তৈরি। আমাদের বাড়ির উত্তরের দিকে বিশাল সুপারি বাগান ছিলো; এখন এর বিশালতা কমে গেছে। এর মাঝ দিয়ে বিভাজন রেখাটি আমাদের বাড়ির প্রবেশ পথ। ডানের অংশে পারিবারিক সমাধিক্ষেত্র। সবকিছু ছাড়িয়ে সেখানে মহাকালের স্মারকস্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একটি সুবিশাল তালগাছ। তালগাছের ঠিক নিচেই দাদার সমাধি। সেখানে নেই কোনও বদ্ধ প্রাচীর, নেই কোনও এপিটাফ। অথচ ভাদ্র-আশ্বিনে সেখানে যখন ধুপধাপ তাল পড়ে, আমি এপিটাফ দেখতে পাই। সেখানে লেখা—‘আমাকে মাড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।’ তাই আমি কখনওই দাদার সমাধিতে পা রাখিনি। অথচ তাল কুড়ানোচ্ছলে এই বায়বীয় এপিটাফ সবাই অমান্য করে যায় নির্দ্বিধায়। সকল সমাধিক্ষেত্রে যদি এরূপ বায়বীয় এপিটাফ সবার চোখে ভাসতো, তাহলে পৃথিবীর পথরেখাগুলো আরও জটিল হতো।
৫. ব্যক্তিগত সেফটিপিন
নারী একটি দ্বিধাগ্রস্ত পাহাড়। দ্বিধা একটি ব্যাধি—পুরুষের খোলা চোখ পেলে যা মাত্রাধিক হয়ে যায়। পুরুষের চোখ একটি আড়াল অযোগ্য সূর্য। বরং দ্বিধাকেই ঢেকে রাখতে হয়। দ্বিধাকে ঢেকে রাখতে কাপড়ে ভাঁজ প্রয়োজন, প্রয়োজন সেফটিপিন। ঘুমানোর পূর্ব পর্যন্ত নারী ও সেফটিপিনের মাঝে একটি হসন্ত বিরাজ করে। বাকিটা সময় সেফটিপিনের স্থলে বিনিদ্র পুরুষই ভালো মানায়—নির্দ্বিধায়। নির্দ্বিধা মানে দ্বিধাশূন্য। দ্বিধাশূন্যতা দেখা দিলে কাপড়ে ভাঁজ লাগে না, সেফটিপিন তো নয়ই। সমূহ সেফটিপিন অবসরে গেলে, ব্যক্তিগত সেফটিপিন দরজা খোলে।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge