মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন

প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজ এবং আমি অমলিন স্মৃতিগুলো কত মধুময় [২য় ব্যাচ সেশন ১৯৭১-১৯৭২] -মফিজুল ইসলাম মান্টু

প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজ এবং আমি অমলিন স্মৃতিগুলো কত মধুময় [২য় ব্যাচ সেশন ১৯৭১-১৯৭২] -মফিজুল ইসলাম মান্টু

(পূর্ব প্রকাশের পর)
৭.
বন্ধু সবাইকে শুভেচ্ছা।
আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে এই মহান বাংগালির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ভালোবাসা।
গত পর্বের কথার রেশ টেনে মনে পড়ে নানা সুখদুঃখ মাখা কত স্মৃতি।
আমাদের প্রজন্মের বন্ধুরা এস এস সি দিয়েছিলাম ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাপুর্ব জেনারেল ইয়াহিয়ার আমলে সামরিক বাহিনীর কড়া পাহারায়। মনের মনিকোঠায় ছিল ৬৯এর গন-অভ্যূত্থান এর প্রতিবাদী স্মৃতি। এরপর ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী অহংকারের বাংলাদেশ। ফলে এই ব্যাচের বন্ধুদের সেই তরুন বয়সের সময় যাপনের নানা অংশে সেই মানসিকতার উদ্ভব হতো বিভিন্ন অনাকাংখিত ঘটনায়।
ইতোপর্বের কথায় তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮১৯৭৯ সালের আমাদের মেডিকেল শিক্ষাজীবনে এ দেশে নানা পটভূমি রচিত হয়েছিলো। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস মতাদর্শের কারনে অন্য পক্ষের মধ্যে বারবার হয়েছে নানা সংঘাতের মত কিছু অযাচিত ঘটনা। মনে পড়ে নিরাপত্তা আইনে কয়েকজন বন্ধুকে কারাগারে পাঠানোর মত দুখখজনক পরিস্থিতির কথা। চিকিতসা বিঞ্জানের এই মেধাবীদের পরিক্ষার হলে দেখেছি আমাদের সাথে পুলিশের কড়া প্রহরায় পরিক্ষায় অবতীর্ণ হতে ভাইভা দিতে এবং পাশ করতে।অন্তরিন থাকায় বন্ধুদের অবয়বে ছিল বিপ্লবীভাব পরনে সাধারন পোশাক ঘাড় অবধি অবিন্যস্ত মাথার চুল কারোকারো শশ্রুমন্ডিত মুখ।পরিক্ষার কয়েকটি দিন তাদের সাথে বন্ধুদের ছিলো ইশারায় কুশল বিনিময়ের স্মৃতি। প্রিয় সহপাঠী অধ্যাপক ডাঃআকতার আহমেদ ডাঃ একরামুল স্বপন ডাঃ নুরুল আমিন (অকাল প্রয়াত) ডাঃ শমসের ডাঃ আব্দুর রশিদ আকন্দ এবং ৩য় ব্যাচের ডাঃ শাহজাহান পারভেজ। (কিছুকালিন এই কারাজীবনের স্মৃতিকথা লেখার জন্য দোস্ত ডাঃ স্বপন/ডাঃ আকতার বা আরও বন্ধুদের কাউকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি) এবার কয়েকটি ছবি পোস্ট করলাম।মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশের নানা সময়ে বাংগালির জাতীয় জীবনে এসেছে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা দুর্যোগ নানা রক্তক্ষয়ী কলংকজনক ঘটনা। আমাদের শিক্ষার্থী জীবনে এমন ঘটনায় আমরাও নানাভাবে বিপন্নতায় ভুগেছি কষ্ট পেয়েছি দুখখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দিনাতিপাত করেছি। সমগ্র জাতি সেদিন স্তম্ভিত হতাশায় নির্বাক। মনে পড়ে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের নির্মমতার ঘটনাবাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পরিবার প্রিয়তমা স্ত্রী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ভাই শেখ নাসের নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল সহ অন্যান্যরা একিদিনে বংগবন্ধুর পরম আত্মীয় মন্ত্রী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ওনার পরিবারের কয়েকজন সদস্য শিশু সুকান্ত এবং উজ্জ্বল যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যবর্গ বংগবন্ধুর নিরাপত্তা সদস্য কর্ণেল জামিল সহ কত সাধারন মানুষের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর সারাদেশে কারফিউ আমাদের ক্লাশ সহ দেশের এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে উতকন্ঠার সময়কাল। এরপর একি বছর১৯৭৫ এর ৩ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সেন্ট্রাল জেলে জাতীয় চার নেতা মুক্তিযুদ্ধের অস্থায়ী সরকার এবং স্বাধিনতা যুদ্ধের মুলকুশিলববৃন্দের নির্মম হত্যাযজ্ঞ স্মরণ করি সেই মহান নেতাদের সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাজউদ্দিন আহমদ ক্যাপটেন মনসুরর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান। এসকল হত্যাকান্ডে নিহত সকল শহিদদের প্রতি জানাই গভির শ্রদ্ধা তাদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি ঐ সময়গুলোতেদেশে সারাদেশে চরম অরাজকতা। মহান মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় চেতনায় কঠোর আঘাত এবং সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে উল্টোপথে ঘুরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা ইত্যাদি জাতীয় নানা ঘটনার মধ্যে আমাদের মেডিকেল শিক্ষা জীবন চলছিল নানা অযাচিত পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে । দেশে অস্বাভাবিক পরিবেশে সামরিক শাসন চলছে। এই রকম অবস্থায়/ পরিস্থিতিতে একদিন মেয়েদের হোস্টেল এ কয়েকজন অপরিচিত ব্যাক্তির অপততপরতা চেষ্টার বিরুদ্ধে ১ম ব্যাচের ড়াঃ রোকেয়া সুলতানা আপার সাহসী প্রতিবাদ প্রতিরোধ এবং বৈরী পরিস্থিতিতে অন্যান্য আরো নানা সমস্যা মোকাবেলায় সাহসী ভুমিকার কথা তার স্মৃতিকথার লিখা পড়লে এখনো শিহরিত হতে হয়। এমন অনেক বিরোধমুলক ঘটনা-পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে কয়েক বছরের শিক্ষা জীবন নিশ্চয়ই স্মরণীয়। এ সময়গুলোতে সাময়িকভাবে ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো সারাদেশেই বন্ধ ছিল কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড/ইনঅডোর-আউটডোর খেলাধুলা উন্মুক্ত হলে বিভিন্ন কর্মসূচি /প্রতিযোগিতা আয়োজিত হতে থাকে। (সে বর্ণনা পরের পর্বগুলোতে যাবে) প্রিয় বন্ধু আরও কয়েকটি ছবি ঃ ছবিগুলোর বিষয়গুলোতে রংপুর মেডিকেল কলেজ এর ২য় ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার নিজের সম্পৃক্ততার কয়েকটি ছবি সংযুক্ত হলো।পেশাগত কাজের পাশাপাশি আমার এবং আমার অনেক বন্ধুই সাংস্কৃতিক /সামাজিক /দেশপ্রেমমুলক এমন কর্মধারায় নিয়ত উপস্থিত থাকেন/ আছেন/ থাকবেন এমন চেতনার চিরন্তন ধারা এখনও অব্যাহত আছে। ৮(ক). আমার অনেক শুভেচ্ছা সবাইকে।আমাদের মেডিকেল শিক্ষা জীবনে নানা স্মৃতি নিয়ে বন্ধুদের আহবান জানাই লিখবার জন্য। অনেকেই লিখছেন লিখবেন নিশ্চয়ই। এই পর্বে ডাঃ স্বপন সারা দিয়েছে।পড়ুন অসাধারণ অমর সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের অধ্যায়। এই বর্ণনায় বন্ধু ডাঃ একরামুল স্বপনের এবং কয়েকজন রংপুর মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীকে নিয়ে এমন ঘটনা সত্যি এক অনন্য দলিল আন্দোলন সংগ্রামের নানা অজানা তথ্য। (বন্ধু ডাঃ স্বপন সহ দির্ঘ ৭ বছরের ইরানের প্রবাসকালে আমরা একি প্রদেশে জিলান (ওরা বলে গিলান) বেশ কাছাকাছি দুরত্বে ছিলাম। মাত্র ২ ঘন্টার যাত্রাপথ (মোটর কারে)।অনেকদিন সেই স্মৃতিচারন হয়েছিলো কিন্ত বয়সের কারনে সে প্রায় বিস্মৃতির ইতিহাস আবার তুলে আনায় আগামীর প্রজন্ম নিশ্চয়ই তা মনে রাখবে। আন্তরিক ধন্যবাদ দোস্ত ডাঃস্বপন) ৮(খ). প্রিয় বন্ধু অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আলতাফ হোসেন সরকার ডাঃ স্বপন এর মত একি দিনের স্মৃতিকথা লিখেছে। কত রোমাঞ্চকর সে রাত্রির ঘটনা। ধন্যবাদ দোস্ত। পড়ুন সেই রাতের কথা; বন্ধু আলতাফের লেখায়-“প্রিয় বন্ধু মান্টুর অমলিন স্মৃতি কত মধুময় বেশ জমে উঠেছে। বন্ধুবর স্বপন তার স্মৃতি থেকে তুলে এনেছে কারাগারের জীবন এবং পুলিশের কাছে ধরা পড়ার মুহূর্তগুলো। আমার মনে এখনো সেই দিনটির সকাল বেলার মুহূর্তগুলো অমলিন হয়ে আছে। এইযে পুলিশের কাছে ধরা না পড়া, পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে থাকা সত্যিই রোমাঞ্চকর (সেই সময় সেবা প্রকাশনীর গোয়েন্দা বই গুলো আমার খুব প্রিয় ছিল, তাই হয়তো পুলিশকে ফাঁকি দিতে পেরেছিলাম)। ৪ঠা জানুয়ারি কাকডাকা ভোর, আধো ঘুম আধো জাগরণে শুনতে পেলাম, নাম জিজ্ঞেস করায় আমার রুমের কেউ একজন বলল আজাদ, অবাক হলাম সেদিন আমার রুমে আজাদ ছিল না বন্ধু রফিক ছিল, মশারির ভেতর থেকে দেখতে পেলাম কয়েকজন খাকি পোশাকধারীর মুখ, রুমের সবার নাম জিজ্ঞেস করিতেছে আর হাতে ধরে থাকা একটি লিস্ট এর সাথে মিলিয়ে নিচ্ছে, সেদিন রাতে আমি ও রফিক একসাথে লেখাপড়া করতে করতে এক বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এবং মশারী টাঙ্গানো ছিল। আমি ছিলাম দেয়ালের দিকে তাই ওরা আমাকে দেখতে পায়নি (মশারী টি সবুজ ও মোটা ছিল)। আমাদের সবাইকে নিচে আসতে বলল , আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গেলাম কী ঘটতে চলছে পুলিশদের পিছে পিছে আমার রুমে যারা ছিল সবাই হাঁটা শুরু করলো, বুঝলাম ওরা বিশেষ কয়েকজনকে খুঁজছে এবং তার মধ্যে আমিও আছি। তাই আমি ওদের পিছে পিছে না গিয়ে চট করে বাথরুমে ঢুকে বাথরুম সেরে নিয়ে আবার রুমে আসলাম, পরনে ছিল লুঙ্গী আর স্যান্ডো গেঞ্জি, একটু পরেই আরও দুটো পুলিশ এসে ধমকের স্বরে বলল কি ব্যাপার আপনি এখনো রুমে? নিচে আসেন , আমি ওদের পিছু পিছু হাঁটা শুরু করলাম, চারতলা থেকে নীচে নামার সময় হাঁটার গতি একটু মন্থর করলাম যাতে একটু গ্যাপ পড়ে, নামতে নামতে দোতলা এসে ওদের পিছু পিছু সিঁড়ি দিয়ে না নেমে চট করে সিঁড়ির পশ্চিমদিকের চারটি রুমের প্রথমটি তে ঢুকে পড়লাম এবং সঙ্গে সঙ্গে লুঙ্গি খুলে একটা প্যান্ট ও শার্ট পড়ে নিলাম ( সম্ভবত সেগুলো সাজুর ছিল)। এদিকে পিছন ফিরে আমাকে না দেখে পুলিশ দুটো আবারও উপরে উঠে এল। করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিল আমার দুই বন্ধু (নাম দুটো উহ্য থাক,কারন পরে ওদের সাথে আমার বন্ধুত্ব গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছিল ) ওরা পুলিশকে বলল ওটা আলতাফ ছিল যাকে আপনার খুঁজতেছেন, পুলিশরা বলল কোন দিকে গেল ? ওরা সিঁড়ির পশ্চিমদিকের রুমগুলা দেখায় দিলো, এখানে উল্লেখ্য যে সিঁড়ির পশ্চিম দিকে ছিল চারটা রুম, আমি ঢুকেছিলাম প্রথমটিতে আমি যখন ড্রেস চেঞ্জ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছি, এমন সময় পুলিশ দুটো রুমের দরজায় এসে আমায় না চিনতে পেরে আবারো নাম জিজ্ঞেস করল আমি বললাম সাজু, ওরা বলল এখানে একজন লুঙ্গি গেঞ্জি পরা ছেলে ঢুকলো সে কোথায়? আমি বললাম সেতো নীচে গেল, আবার জিজ্ঞেস করল আলতাফ কোথায় আমি বললাম এখানে তো আসেনি পাশের রুমগুলোতে খোঁজেন, ওরা বলল আপনি এক্ষুনি নিচে আসেন, ওরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই, আমি পাশের রফিকুলের রুমে ঢুকে পড়লাম, দেখি বাবলা এখনো রুমে, নীচে যায়নি বললাম দোস্ত আমি এখানে চৌকির তলায় ঢুকে পড়লাম (রুমের জানালাগুলো কাচের ছিল তাই), তুমি দরজায় তালা দিয়ে চলে যাও, বাবলা চলে গেল,একটু পরে বুঝতে পারলাম পুলিশগুলো আবারো সেই রুমে এসে আমার খোঁজ করতেছিলো, তারপরে কাউকে না পেয়ে ওরা চলে যায়। চৌকির তলে আমি তখন একা, না একা ঠিক তা বলা যাবে না মশক কুল কানের কাছে গুনগুন গান গাচ্ছে,কিন্তু আমাকে কামড়াচ্ছে না হয়তো ভীত একজন মনুষ্যকে দেখে তাদের করুণা হচ্ছে অথবা তাদের কোন খিদে নেই কারণ রাতের বেলা বাবলা এবং রফিকুল কেউই মশারি খাটায় না। আমি নিঃশব্দে প্রহর গুনছি আর মনে মনে দোয়া ইউনুস পাঠ করতেছি। চারিদিকে নিস্তব্ধ, শুধু করিডোরে পুলিশের পায়ের শব্দ ও ওদের কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত কথাবার্তা , “সবাইকে এখনো পাওয়া যায়নি, এখনো কয়েকজন মিসিং” তার মধ্যে আমার নামটিও শুনতে পেলাম।প্রায় দুই ঘণ্টা পর (মনে হল দুই যুগ)রফিকুল এসে দরজা খুলল, শুনলাম আমাদের পাঁচ বন্ধু ও ছোট ভাই শাহজাহান পারভেজকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। খুব খারাপ লাগলো রুমমেট শমসের ও শাহজাহান পারভেজের জন্য সত্যিই ওরা এসব ব্যাপারে মোটেও জড়িত ছিল না,যাক ভবিতব্য কে ঠেকাতে পারে।(আমার এই লেখার সাথে রফিকুলকে আরো কিছু ইনপুট দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি)।” ৮(গ). রংপুর মেডিকেল কলেজের প্রিয়ভাজন বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নুরন্নবী লাইজু এবং বিভিন্ন বিভাগের সহযাত্রী মেধাবী শিক্ষক ও চিকিতসকদের কয়েকজন। রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত প্রিয়জনেরা এখানে যাদের ছবি তাদের প্রায় সবাই আমাদের এই কলেজের বর্তমান প্রজন্ম। আমাদের কলেজের গর্বিত পতাকা তাদের হাতেই উড্ডীন। (ছবিটি আমর সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ “স্বাস্থ্য সেবার ইতিহাসে রংপুর” এর প্রাক-প্রকাশনায় খসরা পান্ডুলিপিটি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় তোলা) আমাদের পরবর্তীকালের প্রজন্ম যারা উড্ডীন রেখেছে বর্তমান সময়ে আমাদের প্রাণের এই মহান প্রতিষ্ঠানের গর্বিত পতাকা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত প্রিয় বাংলাদেশের লাল সূর্য খচিত সবুজ পতাকা। ছবিতে – – ১ ঃ বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মুজিব শতবর্ষ অনুষ্ঠান সুচনা অনুষ্ঠানে বর্তমান কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নুরন্নবী লাইজু সংগে বর্তমান উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সহ অন্যান্য। ২ ঃবর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নুরন্নবী লাইজু ৩ ঃ বর্তমান উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান ৪ ঃমুজিব শতবর্ষের সুচনার অংশ আমাদের প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজের প্রিয়ভাজন কয়েকজন মেধাবী ছাত্র ও এদেশের বিশিষ্ট মেডিকেল শিক্ষাবিদ ও চিকিতসক এই মেডিকেল কলেজ এর সম্মানিত অধ্যক্ষ পদে বিভিন্ন মেয়াদে সমাসীন ছিলেন। ছবিতে প্রথম দুজন আমাদের সহপাঠী বন্ধু ২য় ব্যাচের। প্রিয়ভাজন প্রত্যেকের প্রতি জানাই অভিনন্দন এবং শুভকামনা। ছোট ভাই অকাল প্রয়াত অধ্যক্ষ ডাঃ অনিমেশ মজুমদারের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি । ৯(ক). প্রিয়জন সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা। প্রতিদিন নিতান্ত স্মৃতিকাতরতা নিয়ে এ লেখা লিখছি। ত্রুটিগুলো লিখে মন্তব্য চাই শুধরে নিতে হবে যারা লেখাগুলো সময়করে পড়ছেন। ফিরে আসি আমাদের প্রিয় ২য় ব্যাচের স্মৃতি কথায়। উল্লেখ্য আমাদের ব্যাচের শিক্ষা সময়কালের সমাপ্তি হয়েছিলো প্রায় ১৯৭৮ এর ডিসেম্বরে কারো কারো ১৯৭৯ সালে এবং অল্প কয়েকজন ১৯৮০ সালের মধ্যেই বেশির ভাগেই পাশ করেছিল। মাত্র ২/৪ জন বিভিন্ন কারনে যেমন অসুস্থতা /পারিবারিক কারন /বা দুখের সংগে বলি যে বিভিন্ন কারনে কোন কোন শিক্ষক মহোদয়গনের বিশেষ অভিযোগ।এছাড়াও ২/১ জনের ক্লাশ বা পড়াশোনায় অমনোযোগীতা ইত্যাদি। যেমন মেধাবী ছাত্র ডাঃ জায়েনুর রহমান অনেক পরে পাশ করেছিল। এছাড়াও কোর্সের শুরুতেই কয়েকজন বন্ধু বিভিন্ন কারনে মেডিকেলে না পড়ে অন্যান্য কোর্সে তাদের শিক্ষাকাল শেষ করেছে যেমন বন্ধু মফিজুল হক তারা(গাইবান্দায় সাংবাদিকতা) আব্দুস সামাদ (পলাশবাড়ি – ব্যাবসা) এনামুল (সৈয়দপুর)। আর মনে পড়ছে না। (ইতোমধ্যেই আমাদের ছেড়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে অন্তত ১৫ জন) আমাদের অনেকের সাথে অনেকের প্রায় শতাধিক বন্ধুর সাথে দেশে বিদেশে যোগাযোগ কুশল বিনিময় হয় হচ্ছে। (অনেকের অর্জন ও সাফল্যের সংক্রান্ত কিছু বর্ননা এই পর্বের পরে যাবে) বন্ধুরা আজ বয়সের এই প্রান্তে এসে মনে পড়ছে নানা আনন্দ বিষাদের স্মৃতি। রংপুরের মেডিকেল জীবনে শিক্ষা জীবনের সেই সোনালি দিনগুলোতে আমরা বন্ধুরা নিয়মিত ক্লাশ/পড়াশুনো/পরিক্ষার ব্যাস্ততা ছাড়াও মনটাকে ভালো করার জন্য নানা এক্সট্রা কারিকুলার কাজে আনন্দমুখর রঙবেরঙের সময় কাটাতাম। এক এক জন বিভিন্ন বিষয়ে যথেষ্ট পারদর্শীতা দেখিয়ে মেডিকেলে / কখনো আবার জেলা/বিভাগ/বা জাতীয় পর্যায়েও নিজের/কলেজের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। এ ক্ষেত্রগুলো ঃ খেলাধুলা নাটক গান কবিতা রচনাও আবৃত্তি বিতর্ক সহ সাহিত্যের কত বিষয়। এ ছাড়া কেউ বিশেষ প্রতিভাবান ছবিআকা মঞ্চসজ্জা কলেজ ভ্যানুসজ্জা পোষ্টার লেখা সুন্দর সুন্দর দেয়াল পত্রিকা বের করা ইত্যাদি নানা অভিনব বিষয় চমতকার কাজ করতো যা এখনো চোখে ভাসে। আমাদের অনেকে বিভিন্ন গনমাধমে যেমন রেডিও /মঞ্চ/টেলিভিশন সহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রত্ববেলা থেকেই নিয়মিত জড়িত ছিলো এবং আমি সহ কেউ কেউ এখনো জড়িত আছে। সেই আনন্দময় কালে আমাদের মেডিকেলের মঞ্চে পরিবেশিত নাটকগুলো ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। একটি নাটক নিয়মিত মঞ্চায়ন হতো পরপর দুই রাত দর্শকদের স্থান সংকুলানের জন্যই।একদিন অতিথি ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও তাদের পরিবারদের জন্য। পরদিন আবার ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থী ও স্টাফদের জন্য।অত্যন্ত উৎসাহ /উদ্দিপনায় এই নাটকগুলোর মুল প্রেরনা ও পরিচালনায় ছিলেন আমাদের সদ্যপ্রয়াত শিক্ষক অত্যন্ত উঁচুমানের মঞ্চ অভিনেতা স্রদ্ধেয় ডাঃগোলাম রব্বানী স্যার এবং স্যারের সাথে সবসময়ই থাকতেন ডাঃ নুরজাহান ম্যাডাম। পরে এসে যুক্ত হয়েছিলেন স্রদ্ধেয় অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান স্যার। তখন কলেজ অডিটোরিয়াম ছিলো না যে কোন নাটক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো কলেজ দোতলার বড় করিডোরে (এখন নামাজ ঘর হয়েছে)।মঞ্চের গ্রীন রুমের কাজ হতো এখনকার অডিটোরিয়াম এর দক্ষিনের লম্বা করিডোরে। সেই মঞ্চ বানানো হতো হোস্টেলের চৌকি এনে।কারন তখন কোন ডেকোরেটর ব্যাবসায়ী ছিলো না। নাটক গুলোতে অভিনয়শিল্পী ছিলো ১ ম ও ২য় ব্যাচ পরে ৩য় ৪ র্থ ৫ম ও ৬ ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যোগ হলে সেই নাটকগুলো আরো বেশি প্রানবন্ত হয়।বাহিরের মেয়ে নাট্যশিল্পি কদাচিত আনা হতো কেননা কলজের প্রথম ব্যাচ ও দ্বিতীয় ব্যাচের কয়েকজন মেয়ের অভিনয়শৈলী ছিল অসাধারন এবং পেশাদার শিল্পীদের থেকেও অনেক উঁচুমানের। ৯(খ). স্মৃতির মনিকোঠায় অসাধারণ সেই নাটকঃ পুনশ্চঃ পুরাতন দিনের সেই ঐতিহাসিক নাটকের ছবিগুলো হাতে নেই। সেজন্যে আমাদের ২য় ব্যাচের পুনর্মিলনীর ছবিতে (৫ফেব্রুয়ারী ২০১১সালে সন্ধায় কলেজ অডিটোরিয়াম শহিদ রফিকুল ইসলাম মিলনায়তন অনুষ্ঠিত নাটক স্রদ্ধেয় শিক্ষক ডাঃ রব্বানী স্যার এর জীবনের শেষ অভিনিত নাটকে মঞ্চে স্যার মুল ভূমিকায় দাড়িয়ে বন্ধু আব্দুর রশিদ আকন্দ আর বসে আছে বন্ধু ডাঃ স্বপন) চরিত্রের নাম মনে নেই। অসাধারন অভিনয় অনেক উঁচুমাপের অভিনয় চমতকার পরিবেশনায় সেই নাটকগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। রংপুর মেডিকেল কলেজের ১ম ২য় ৩য় ব্যাচের মধ্যেই আমি কয়েজনের নাম নিয়েই বলছি লেখার কলেবর ছোট রাখতে( sorry) মঞ্চ নির্মান স্থান নিয়ে কিছু বলেছি এর আগের বর্ননায়। চৌকি বাধা মূল মঞ্চে নানান উইংস পর্দা সেট আলো সামনের পেছনের স্ক্রিন এই কষ্ট পরিশ্রম নিরবে করে যেতো বড় ভাই ডাঃ আনিসুল করিম বন্ধু ডাঃদেলোয়ার হোসেন বাচ্চু ছোট ভাই ডাঃ কবিরুল ইসলাম লাবু সংগে কলেজের উৎসাহী কর্মচারী এবং কলেজ আর্টিস্ট আমাদের পিসির ভাই প্রমুখ। রিহার্সাল হতো কলেজ কেন্টিনে সন্ধ্যার পর। রব্বানী স্যার কথার একচুল এপাশ ওপাশ হলেই খবর হয়ে যেতো। স্যারের হুংকার কখনো হাতের বেতের অনায়াসে ব্যবহার। কয়েকদিন রিহার্সালের পর শিল্পীদের অসামান্য অভিনয় এবং সফলতার খুশিতে স্যার ম্যাডামের আপ্যায়ন ছিল কাংখিত পরম পাওয়া। যাদের অভিনয়ের বর্ননায় সবাই উচ্চপ্রশংসায় পঞ্চমুখ হতো তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজনের কথা স্মৃতি থেকে এবং শ্রদ্ধেয় ডাঃ অশোক ভদ্র দাদার লেখা বিভিন্ন স্মরণিকার সাহায্যে লিখলাম। কারো কথা বাদ গেলে শোধরানোর অনুরোধ জানাচ্ছি ঃ ১ম ব্যাচের ঃ শ্রদ্ধেয় ডাঃ অশোক ভদ্র ডাঃ শফিউল আলম ডাঃ মিন্টু চৌধুরী ডাঃ হরিরাম আগরোওয়ালা ডাঃ তারিক আল নাসির ডা সুশান্ত সাহা ডাঃ ইমদাদুল হক টুটুল । মেয়েদের মধ্যে ডাঃ রোকেয়া সুলতানা ডাঃগুলশান আরা ডাঃ সিতারা মজিদ প্রমুখ ২য় ব্যাচেরঃ প্রিয় বন্ধু ডাঃ মোঃ একরামুল হোসেন স্বপন ডাঃ আব্দুর রশিদ আকন্দ ডাঃ জীবন ঘোষ ডাঃ জাহাংগীর আলম ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান ডাঃ মোঃ আব্দুর রউফ ডাঃ আব্দুর রশিদ আলমগীর ডাঃ পশুপতি সাহা। মেয়েদের মধ্যে ডাঃ উম্মে সালমা লুলু ডাঃ মমতাজ বেগম ডাঃ জেসমিন মিলি প্রমুখ। আমি মাত্র দু-একটি নাটকে নাম মাত্র ছিলাম তবে মঞ্চের পেছনের সহযোগিতা আলো মিউজিক বা গানের বিষয়ে যুক্ত হতে হতো। ৩য় ব্যাচের ঃ প্রিয়ভাজন ডাঃ পরিতোষ ডাঃ সাঈদ ডাঃ আফরোজা খানম মীনা ডাঃ হাসিনা আশা ডাঃ মনা প্রমুখ। উল্লেখযোগ্য মঞ্চ- নাটকগুলোর মধ্যে ঃ গোর্কির মা ভাড়াটে চাই বাবা বদল এক পেয়ালা কফি এরাও মানুষ ইত্যাদি। মনে আছে কি অসাধারণ অভিনয় করেছিলো ডাঃ স্বপন এরাও মানুষে বানছারামের সাজানো বাগান নাটকে প্রতিটি নাটকে প্রানবন্ত চমৎকার অভিনয় করত ডাঃ জীবন আর ডাঃ রশিদ আকন্দ ও অন্যান্য অনেকে। মেয়েদের মধ্যে অনবদ্য অভিনয়ে খুব ভালো করত ডাঃ সালমা লুলু ডাঃ মমতাজ। মুলতঃ সবার কথাই বলাটা উচিৎ। এরপর ৩য় থেকে পরের ব্যাচ গুলোতেও বহুজন ছাত্র-ছাত্রী অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রানবন্ত চমৎকার অভিনয় করেছিলো। এদের অনেকেই বাংলাদেশ বেতার রংপুর ও স্থানিয় নাট্যদলের সাথেও যুক্ত ছিলো। আমাদের কলেজের ডাঃ এজাজ তো জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমা টেলিভিশন মঞ্চনাটকে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শক্তিমান অভিনেতা। ৯(গ). বন্ধুদের শুভ সকাল। আমাদের প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ব্যাচ আয়োজিত জনপ্রিয় নাটক অনুষ্টান এর কিছু ছবি আমাদেরই কলেজের প্রতিভাবান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা ডাঃ এজাজ সহ অন্যান্যরা ১০(ক). প্রিয় স্বজন প্রিয় বন্ধুদের অনেক ভালোবাসা শুভেচ্ছা জানাই।গতপর্বের নাটকগুলোর বর্ননা পর আমাদের সময়ের খেলাধুলা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সাহিত্য প্রবাস জীবন ও অন্যান্য আরো প্রসংগ আসবে পরের পর্বগুলোতে। গত কয়েক পোস্টে আমাদের ২য় ব্যাচে বন্ধুদের শিক্ষাজীবন শুরু /পরিনতি /অর্জন /সাফল্যের সাথে সম্পৃক্ততা নিয়ে কিছু বলেছি। আজকের এই পোস্টে তার ধারাবাহিকতায় আরও যোগ হলো নীচের কিছু ছবিঃ এই বন্ধুদের কর্মজীবনে শেষ পদের অবস্থান থেকে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন। কেউ কেউ বিশেষভাবে পরিবর্ধিত সময়ে দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ অসুস্থতায় আক্রান্ত কেউ প্রাইভেট প্রাকটিস করছেন। বন্ধুদের সবার জন্য অনেক শুভকামনা। প্রথম ছবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ১ ডাঃ মোঃ আব্দুল জলিল মন্ডল বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ঃ রংপুর বিভাগ ২ ডাঃ মতিয়ার রহমান (প্রথম বিভাগীয় পরিচালক৷স্বাস্থ্য রংপুর) ৩ ডাঃ শাহাদত হোসেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ৪ ডাঃ তৌফিকুল ইসলাম ৫ ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ৬ ডাঃ গুরুদাস শিকদার। স্বাস্থ্য – অধিদপ্তর /বিভাগীয় পর্যায়ের এর উপ-পরিচালক /সহকারী পরিচালক পদে ছিলেন- ৭ ডাঃশাহ মোঃ রিয়াজুল ইসলাম ৮ ডাঃ রেজাউল করিম ৯ ডাঃ মোঃ লায়েল হাসান ১০ ডাঃ মোঃ শফিকুল আলম ১১ ডাঃ কাজী হাবীবুর রহমান ১২ ডাঃনুর কুতুবুল আলম রবি ১৩ ডাঃ এম এ সোবহান ১৪ ডাঃ মিজানুর রহমান ১৫ ডাঃ জেসমিন আকতার মিলি (পরিবার পরিকল্পনা) বিভিন্ন জেলায় সিভিল সার্জন ছিলো বন্ধু- ১৬ ডাঃ মোঃ সাইফুল হক ১৭ ডাঃ মোঃ আব্দুর রশিদ আকন্দ ১৮ ডাঃ মোঃ নঈম উদ্দিন আকন্দ। প্রমুখ ১০(খ). প্রিয় বন্ধু আমাদের শিক্ষাজীবনে আগে থেকেই নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েজন সহপাঠী ছিল ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বেশ সিরিয়াস। আমরা অনেকেই রাজনীতি নিয়ে সচেতন ছিলাম নিজস্ব দৃষ্টিভংগী নিয়ে এবং এক একেকজন পছন্দের ছাত্র-সংগঠনের সমর্থক ছিলাম। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ছিলাম বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থক। তবে ছোট বেলা থেকেই পারিবারিক ও পরিবেশগত কারনে আমি মুলত ছিলাম সাহিত্য- সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে উৎসাহী। লেখালেখি ও সংগীতের প্রতি দুর্বলতাও ছিল প্রচুর।পেশাগত জীবনে এসেও তা অব্যাহত আছে। অন্যান্য বন্ধুদের মধ্যেও অনেকেই এই ধারাগুলোর সাথে খেলাধুলা সহ নানা বিষয়ে অনুরাগী ও অনুরক্ত ছিল। আমাদের এমন কাজের অনুকুল পরিবেশও ছিল মেডিকেল কলেজের চত্তরে। সে বিষয়ের বর্ননা পরের পর্বে যাবে। আমাদের ছাত্র জীবন ও পরবর্তী পেশাগত জীবনে বন্ধুত্বের পাশাপাশি বেশ কজনকে নেতৃত্বের অবস্থানে দেখেছি।যারা তাদের কর্মকান্ডে তাদের বিশ্বাসের অবস্থানে সিরিয়াস এবং এখনো তারা অনেকে নিবেদিত আছেন তাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্টের জায়গায়। এ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা /অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ/ পেশাভিত্তিক অধিকার আন্দোলন সহ জাতীয় ও স্থানীয় নানা বিষয়ে তাদের প্রায় সবাই এখনো সোচ্চার। প্রিয় বন্ধু তোমাদের অনেক ভালোবাসা শুভকামনা নিরন্তর। এমন কজন বন্ধু ও নেতার ছবিঃ প্রথম ছবি প্রাক্তন সাংসদ মরহুম ডাঃ ইউনুস আলি সরকার। (বন্ধু! তোমার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি)) এর পরের ছবি ২ ডাঃ দেলোয়ার হোসেন ৩ ডাঃ মোঃ একরামুল হোসেন স্বপন ৪ ডাঃ মাহমুদুল বারী দোহা ৫ ডাঃ এ টি এম মোজাম্মেল হক বকুল ১১(ক). শুভ সকাল! আজ স্মৃতি থেকে টুকরো টুকরো কথায় প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজ ও আমাদের ব্যাচ এর সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে ঃ শুরুতে একথা বলতে দ্বিধা নেই যে ঐ সময়ে আমরা যারা রংপুর মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছিলাম তাদের সিংহভাগ শিক্ষার্থী ছিলাম নির্মল প্রকৃতির মত অতি সহজ সরল। নিতান্তই সাধারণ ঘরের সন্তান। ১ ডাঃ মোঃ আব্দুর রকিব- আমার কৈশোরের সহপাঠী বন্ধু আমার স্কুল রংপুর হাই স্কুলে পড়তো। ক্লাস নাইনে জিলা স্কুলে গেল তারপর উচ্চমাধ্যমিক তখনকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রংপুর কলেজে পড়ে। ও ছিলো আমাদের খুব সহজ সরলতম বন্ধু।মেডিকেলে আমাদের প্রতিযোগিতামুলক ভর্তি পরিক্ষার মেধাতালিকায় ও প্রথম হলো। আমরা সবাই অত্যন্ত আনন্দিত হলাম চমকিত হলাম। ২ – ডাঃ মোঃ আব্দুর রশিদ ঃ আমাদের জুম্মাপাড়ায় খুব বন্ধুবতসল আমুদে সারাদিন এখেলা সেখেলা আড্ডাবাজি ইত্যাদি নিয়েই ব্যাস্ততা।দিনে সকাল বিকাল আমরা পড়াশুনা নিয়ে কথা বলতাম। ৮ নং মেডিকেল (নতুনতম) ভর্তি পরিক্ষায় কি হবে ঠিক নেই দু’জনেই কারমাইকেল কলেজ এ পাসকোর্স বিএসসিতে ভর্তি হলাম। পড়াশুনোয় কেউ তত সিরিয়াস নই।আমারতো পড়া মুখস্ত করার অভ্যাস নাই বুঝে বুঝে পড়ি।রশিদ ভালো মুখস্থ রাখে। ও ভর্তি পরিক্ষা মেধাতালিকায় ৫ম হলো আমি ৪১তম হলাম প্রথম ১০০ জনেই সুযোগ পেলাম।পাড়ার প্রিয় বন্ধু এখনকার সিনিয়র সাংবাদিক রশিদ বাবু দৌড়াতে দৌড়াতে বাসায় এসে খবরটা জানালো আব্বা মা স্বজনদের মধ্যে খুশির বন্যা। ৩ বন্ধু ডাঃ মেজর অবঃ রফিক ঃ কারমাইকেল এর স্মার্ট সুদর্শন ছেলে কথা কম হতো। ৬৯ ও ৭১এর বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অগাধ ভালোবাসা দরদ আবহ। ইংরেজি ভার্শন নিয়ে পড়লেও বিষয় ইংরেজিতে তত সিরিয়াস নই। ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট পার্ট পরিক্ষায় ৫/৬ শত বা আরও বেশি ছাত্র কমার্স আর্টস মিলে বন্ধু রফিক ইংরেজি পরিক্ষায় পেলো সর্বোচ্চ স্কোর ৭২ আমরা সবাই চমকিত হলাম। তারপর মেডিকেল পড়া এরপর পেশাগত জীবনে ওর এবং আমাদের বান্ধবী ডাঃ রানীর বন্ধুত্বের তুলনা নেই। আমরা যত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করেছি ওদের আগ্রহ ছিল অনেক। স্মরণিকা প্রকাশে রফিক মেডিকেল কলেজ অফিসে গিয়ে আমাদের ভর্তি পরিক্ষার ফলাফল এর পত্রিকা বন্ধুদের সবার সেই ছবিগুলোর মধ্যে এখনকার অমিলগুলো নিষ্ঠার সাথে ছাপাতে খুব কষ্ট করেছে।পত্রিকা সম্পাদনায় ওর এ কাজ সত্যি অনন্য। ৪ ডাঃ মোঃ হেদায়েতুল হেলাল ঃ আমাদের বন্ধুদের অনেকের বিয়ের বরযাত্রা হতো ওর গাড়িতেই (তখন রেন্ট কার এর সিস্টেম ছিলো না)।নির্বিবাদে খুশিতে যেই বন্ধুর প্রয়োজন ও আমাদের সংগ দিত।তার ভদ্রতা আমাদেরকে এখনো অবাক করে সত্যি বন্ধু। ৫ – বন্ধু ডাঃ গুরুদাস শিকদার ঃ মেধাবী ছাত্র। ক্লাশে ওর এপ্রোনটা থাকত বিপর্যস্ত সারা জায়গায় সিগারেটের আগুনে পুড়ে যাওয়ার দাগ। ওর হাতে প্রতিদিন থাকত ঐ ভারী ভল্যুমের গ্রেজ এনাটমির বই।স্মৃতি হয়ে আনন্দমুখর এই বন্ধুকে খুব মনে পড়ে। ৬ ডাঃ জয়েন/ ডাঃ মুক্তা ঃ ক্লাসের প্রায়শই অমনোযোগী বন্ধু আমাদের গ্রুপ পড়াশুনার টেবিলে এসে ওরা এখন থেকে সিরিয়াস এমন প্রতিশ্রুতিতে আমাদের সাথে যুক্ত হওয়া আবার হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া। খুব মনে পড়ে তাদের কথা। ৭ বন্ধু ডাঃ শেফালীঃ আমাদের সবার সাথেই দুষ্টুমি খুনশুটির গল্প খুব মনে পড়ে। ৮ প্রিয় বন্ধু যারা স্যার এর ক্লাসগুলোতে ছিলো খুব মনোযোগী সিনসিয়ার ঃ ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম ডাঃ আলমগীর ডাঃ পশুপতি ডাঃ গুরুদাস ডাঃআজিজুল বারি ডা আজিজুল ইসলাম ডাঃ মোঃ নজরুল হক খোকন ডাঃ হাবিবা ডাঃ রানী ডাঃ জেসমিন মিলি ডাঃরীনা ডাঃছবি ডাঃ বিজয় প্রমুখ। ৯ প্রতি ক্লাসের পেছন দিকে বসে স্যার ব্লাকবোর্ডের দিকে মুখ ঘোরালে নিয়মিত দুস্টুমি করত- বন্ধুদের মধ্যে রেজা আমি সিদ্দিকুর লুলু মমতা বাবলা দোহা আকন্দ রশিদ প্রমুখ অসমাপ্ত। ১১(খ). ছবিতে ঃ ১ প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মুখ অংশ। ২ রংপুর মেডিকেল কলেজের শহিদ মিনার ৩ বন্ধু ডাঃ রেজাউল করিম তার মেডিকেল জীবনের চার যুগ এবং পেশাগত জীবনের চার দশক পুর্তিতে স্বজন সুহৃদ বন্ধুদের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বন্ধু ডাঃ হেদায়েতুল হেলাল- ডাঃ লিপি ডাঃ মোঃ আব্দুর রশিদ- বেবি ভাবি এবং আমি ও ডাঃ মমতা। এমন বিরল অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য দোস্ত রেজাউলকে অনেক ধন্যবাদ ৪ ডাঃ মুজিবুল হাসান চৌধুরী শাহীন (নীলফামারীর প্রিয় মুখ রমেক ৩য় ব্যাচ) সহ একটি অনুষ্ঠানে আমি ও মমতা। ১১(গ). প্রিয়জনেরা! স্মৃতি যেমন আনন্দের তেমনিভাবে তা কখনো কষ্টের দুখের।পরম করুনাময় সৃষ্টিকর্তার কাছে বন্ধুদের জন্য সবার সুস্থতা নিরাপদ জীবনের প্রার্থনা জানাই। ইতোমধ্যে আমাদের কোন কোন বন্ধু ভীষন অসুস্থ যেমনঃ প্রিয়বন্ধু– ডাঃ ফজলুর রহমান। দীর্ঘ দিন অসুস্থ ঃ ডাঃ এম এ সোবহান ডাঃ মোঃ সামসুল (জেনারেল) এর মধ্যে মহান আল্লাহর বিশেষ কৃপায় খুব সংকটাপন্য অবস্থা থেকে সুস্থ হয়েছে – বন্ধু ডাঃ মোঃ আব্দুর রউফ ও আরও কেউ কেউ। আসলে আমরা মুলতঃ সবার খবরাখবর রাখতে পারি নাই পারছিও না।এটার বিভিন্নরকম কারন আছে।সময়ের বাস্তবতা এতটাই সত্য এবং বেদনাময়। তবুও প্রত্যাশা করি এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আমাদের বন্ধুরা তাদের সন্তান ও পরিজনসহ সবাই খুব ভালো ও নিরাপদে থাকুক। হে প্রিয়জন! এসো ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভের কাছে – ১২(ক). প্রিয়জন আজ কথা বলতে চাই গান নিয়ে- আমাদের ১ম ব্যাচের প্রিয় শ্রদ্ধেয় ডাঃ সিতারা মজিদ আপা কি অসাধারণ রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন – “দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পরা ঐ ছায়া / ভুলালো রে ভুলানো মোর প্রাণ/ও পারেতে সোনার কূলে আঁধার মূলে কোন মায়ায় /গেয়ে গেল কাজ ভাংগানো গান/ নামিয়ে মুখ চুকিয়ে সুখ যাবার মুখে যায় যারা / ফেরার পথে ফিরেও নাহি চায় /সন্ধ্যা আসে দিন যে চলে যায় /তাদের পানে ভাটার টানে যাবে রে আজ ঘরছাড়া /সন্ধ্যা আসে দিন যে চলে যায় /ওরে আয় আমায় নিয়ে যাবি কে রে দিন শেষের শেষ খেয়ায়। দিনের শেষে –শ্রদ্ধেয় ডাঃ রব্বানী সারের খুব প্রিয় এই গান অনুরোধে অথবা যেকোন অনুষ্ঠানে আপা এই গানটা এমন করে গাইতেন স্যার চোখ বন্ধকরে নিবিষ্ট মনে শুনতেন নিরবেই স্যারের চোখ বেয়ে ঝরত অশ্রু। আহা আজ স্যার আপা দুজনেই বেচে নেই (দুজনের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি)। সিতারা আপা আরও গাইতেন ঃ ভেংগে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে– গাইতেন “আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে বসন্তের এই মাতাল সমিরনে – – এমন অসাধারন রবীন্দ্র সংগীত রংপুর মেডিকেলে আর কেউ গাইতেন না। ২য় ব্যাচের সহপাঠী বন্ধু ডাঃ শামসুন্নাহার রেনু আপা খুব মেলোডি মাখা কন্ঠে গাইতেন কাজী নজরুল এর গান- আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায় –রেনু আপা আরও গাইতেন আধুনিক গান অসাধারন। বাংলাদেশ বেতারের ক শ্রেণীর শিল্পী ছিলেন। বাংলাদেশ বেতারের বিশেষ গ্রেডের শিল্পী ৩য় ব্যাচের প্রিয় ডাঃ শহিদুল ইসলাম খান গাইতো কাজী নজরুল এর গান আর রাগপ্রধান গানঃ অঞ্জলি লহো মোর সংগীতে – – তুলনাহীন। ১ম ব্যাচ এর ( নিজ হাতে দোতরা বাজিয়ে) গাইতেন ডাঃ তমসিল ভাই ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি গান সংগে বাশি বাজাত বন্ধু ডাঃ নুর কুতুবুল আলম রবি। স্পেনিশ গিটার নিয়ে গান করতেন ডাঃ নাহার ভাই। এছাড়াও ২য় ব্যাচের সহপাঠী বন্ধু ডাঃ সেলিনা গাইত (সখি!ভাবনা কাহারে বলে সখি যাতনা কাহারে বলে –) ডাঃ মমতাজ গাইত (সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে-) বন্ধু ডাঃ রেজাউল করিম রেজা গাইত (বড় আশা করে এসেছি জননী কাছে ডেকে নাও – আরও গাইত- তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই–) অনেক সময় সমবেতকণ্ঠের গান গাইত – ১ম ব্যাচের ডাঃ রোকেয়া সুলতানা আপা এবং ২য় ব্যাচের প্রিয় বন্ধু ঃ ডাঃ লুলু ডাঃ রীনা ডাঃ সেলিনা ডাঃ মমতাজ ডাঃ রেজা প্রমুখ। বিভিন্নরকম গান আমিও গেয়েছি নানা অনুষ্ঠানে। এছাড়াও ৩য় ৪র্থ ৫ম ব্যাচের অনেকে গান গাইত। ৩য় ব্যাচের ডাঃ রুমা অসাধারন রবীন্দ্র সংগীত গাইত শুনে মনে হতো আমরা বিখ্যাত শিল্পী পাপিয়া সারওয়ারের গান শুনছি।রুমা আরও একটা জনপ্রিয় গান করতো “নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম /আমি এখন বন্ধুর খবর কেমনে লইতাম — তারপর ডাঃ রুমা আমাদের প্রিয় ডাঃ আতিক কে জীবন সাথী হিসেবে প্রথমে ইরান পরে আমেরিকা গিয়েছে। এছাড়াও গান শোনাত ৩য় ব্যাচের ডাঃ নিলু অন্যান্যরা। ৪র্থ ব্যাচের প্রিয়বন্ধু ডাঃ ফয়জুল আলম চমতকার ব্যাঞ্জু বাজাতো। অনুষ্ঠানে নিয়মিত তবলায় সংগত করত আমাদের প্রিয় বন্ধু ডাঃ নজরুল হক খোকন আরও কেউ কেউ। অনুষ্ঠানগুলোতে স্বয়ংসম্পন্নভাবেই আমরা নিজেরাই মুলত পারফর্ম করতাম। মাঝে মাঝে অতিথি শিল্পী হিসেবে কেউ কেউ আসত।খবর পেলেই যেখানেই থাকুক না কেন ছুটে আসত ঐ সময়ে রংপুর শহরের জনপ্রিয় শিল্পী দোস্ত প্রিয় বন্ধু হাসিব নাজনু (সৌদি আরব প্রবাসী ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য এডভোকেট হোসনে আরা লুতফা ডালিয়া আপার ছোট ভাই সংস্কৃতিপ্রাণ পরিবার) নাজনু মুলতঃ গাইত তখনকার সময়ের জনপ্রিয় ধারার গান বিশেষ করে ফিরোজ সাই এবং মান্নাদে- হেমন্তের গানগুলো। শিল্পী দোস্ত হাসিব নাজনুর সংগে অথবা নিজেরাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আরও গাইত আমাদের কলেজের প্রিয় ভাই ১ম ব্যাচের ডাঃ ইমদাদুল হক টুটুল ভাই +৩য় ব্যাচের প্রিয় ডাঃ রফিউদ্দিন চৌধুরী বাবুল সহ অন্যান্যরা। ওরা জমিয়ে গান গাইত -ওই সময়ের প্রিয় গান।ওদের পরনে থাকতো হালআমলের বেলবটম প্যান্ট কোমরে মোটা বেল্ট চোখে কালো চশমা। গাইতো মঞ্চে ঘুরেঘুরে নেচেনেচে হেলেদুলেঃ ইস্কুল খুইলাছেরে মওলা ইস্কুল খুইল্যাছে /গাওছোল আজম মাইজ ভান্ডারী ইস্কুল খুইল্যাছে– আরও গাইতেন আলাল দুলাল এই আলাল দুলাল — অথবা ও রে সালেকা ওরে মালেকা ওরে ফুলবানু পারলে না বাচাতে –। অনুষ্ঠান জমে যেত। খুব মনে পড়ে শ্রদ্ধেয় ডাঃ মাহফুজুল হক স্যারের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় “পরীর দেশে ” নামে শিশুদের নিয়ে একটি গীতিনাট্য অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে। মাহফুজুল হক স্যার দায়িত্ব দিলেন আমার জানামত ভালো গান নাচ জানে এমন কজন স্থানীয় শিশুশিল্পী নিয়ে আসার জন্য।খুব আনন্দের সাথে অভিভাবক কজনের কাছে গেলাম এবং শিশুদের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য অনুমতি দিলেন।চমতকার সেই গীতিনাট্যর মতো এমন আয়োজন বোধ হয় আর হয়নি।আসলে সব শিশুই আমাদের ২য় ব্যাচের সহপাঠীদের ভাই বোন। যেমন ঃ ডাঃ একরামুল স্বপন এর ছোট বোন প্রিয় ডাঃ মুক্তা ডাঃ শামসুন্নাহার রেনু আপার ছোট বোন রোজী ডাঃ উম্মে সালমা লুলুর ছোট বোন খুকু আমার ছোট ভাই – বোন হেনা ও মুকুল আরও কেউ কেউ সবার নাম আজ মনে নেই। ওদের সবাই তখন সাত/আট বছর বয়স।তারাও খুব আনন্দেই প্রায় এক সপ্তাহ রিহার্সাল দিয়ে নেচে গেয়ে এ অনুষ্ঠান করল।খুব চমতকার সে অনুষ্ঠান মনে পড়ে এখনো। এমন কত কত আয়োজন। অনুষ্ঠানে নিয়মিত দর্শক হিসেবে ক্যাম্পাসের অনেকেই এবং পার্শ্ববর্তী ধাপ ও শহরের সব বয়সী নারী পুরুষ শিশু কিশোর দলে দলে আসত। কোনদিন কোন সমস্যা হয়েছে এমন নজির নেই। সময়ের ঘন্টায় যুগ যুগ কেটে গেছে সেই স্মৃতি গুলো মনে ভিড় করে। সেই বন্ধুরা সবাই চিকিৎসক হবার পর দেশে- বিদেশে ছড়িয়ে আছে। নিজেদের মহান চিকিৎসা পেশার সাথে অনেকেই সেই সংগীত জীবন ছেড়ে গেছেন কেউ ধরে রেখেছেন। বন্ধুরা ভালো থেকো নিরাপদে থেকো। প্রিয়জন! গতকাল বলছিলাম কত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা। আমাদের অনুষ্ঠানে প্রায়ই অতিথি শিল্পী হিসেবে আসতো ঐ সময়ের জনপ্রিয় শিশু সংগীত শিল্পী বেবি নাজনীন (এখনকার তুমুল জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী বেবি নাজনীন ব্লাক ডায়মন্ড খ্যাত বেবি নাজনীন বাংলাদেশ ও বৃহত্তর রংপুরের গর্ব।) জনপ্রিয় সেই শিল্পীর বাবা আমাদের শ্রদ্ধেয় মনসুর আহমেদ ভাই ছিলেন বেতারের সুখ্যাত মিউজিসিয়ান এবং কলেজের পাশেই সিএনবি স্টাফ কোয়ার্টারেই থাকতেন।(মেডিকেল কলেজের পাশেই) শিশু কিশোর সময় বেবি রংপুরেই কাটিয়েছে জাতীয় নানা পুরস্কার সম্মাননা পেতো। ও অনুষ্ঠানে নিয়মিত গাইতো ঐ সময়ের সব জনপ্রিয় বাংলা ও উর্দু গান। যেমন ঃ আল্লাহ ই আল্লাহ কিয়া কারো দুখ না কিসিকো দিয়া কারো – – এ মওলা আলী আয় মেরে খোদা ইএ ক্যাস্তিনে পার এ লাগা দেনা– আরও গাইত ঃ ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি গান সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান। অনুষ্ঠানে এসে আরও গান গাইত অধ্যাপক ডাঃ জলি বিশ্বাস এর ছোট বোন এবং বন্ধু সদ্যপ্রয়াত ডাঃ ইউনুস আলি সরকার এম পি এর প্রিয় শ্যালিকা আমাদের সবার প্রিয়ভাজন ঐ সময়ে শহরের জনপ্রিয় শিশু-শিল্পী রুবী বিশ্বাস ( কষ্ট যে ও খুব অল্পবয়সেই দৃষ্টিশক্তি হারায় এবং তার অমিত সম্ভাবনাময় শিল্পী জীবনের ব্যাঘাত ঘটে।) রুবি এখন সংগীতের শিক্ষকতায় লালমনিরহাটের একটি সংস্থায় কর্মরত। ওর ভাই আমাদের স্টাফ জীবন বিশ্বাস এবং রংপুর বেতারের কর্মকর্তা নাট্যশিল্পী রাজ বিশ্বাস। রুবি বিশ্বাস গাইত নজরুলের গান পুরনো বাংলা গান। অসাধারণ গান করত ও। আরও অতিথি শিশু-শিল্পী আসত বাংলাদেশ বেতারের সংগীত ও নাট্যশিল্পী এ সময়ের সাংস্কৃতিক অংগনের একনিষ্ঠ কর্মী মকসুদার রহমান মুকুল সহ অন্যান্যরা। প্রিয় সেই অনুষ্ঠানগুলোর কথা কারোই ভোলার মতো নয়। নিচের ছবিতে দেখে বলা যায় কিচিরমিচির গানের পাখিগুলো কত অনিন্দ্য সুন্দর আহা – – ১২(খ). প্রিয় বন্ধু স্বজন শুভেচ্ছা! প্রিয় এই বাংলাভাষা বাংগালি সংস্কৃতি নিয়ে এ দেশের ভাষা আন্দোলন সহ স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে নানা পর্বে ঢাকা মেডিকেলের ততকালীন ছাত্র ও ততকালীন পুর্ব- বাংলায় সমগ্র তরুন শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন তার উজ্জ্বল স্বারক আমাদের গর্বের অম্লান শহিদ মিনার। গণমানুষের আশা আকাংখ্যার সাথে তৎকালিন শাসক দল ও এদেশিয় ক্ষমতালোভি চক্র যে প্রতারণা বিরুদ্ধাচারন করছিলো মায়ের ভাষার প্রতি অবজ্ঞা রাষ্ট্র ভাষা না করার জন্য অন্যায় জুলুম নির্যাতন তার বিরুদ্ধেই ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র তরুনের শহিদী রক্তের স্মারক শহিদ মিনার।সেদিনের সেই অশ্রুপাত এবং সাহসী প্রতিবাদ প্রতিরোধ থেকে মাত্র এক রাত্রিতেই নির্মিত হয়েছিলো সেই স্মৃতির মিনার।ঢাকা মেডিকেলের ততকালীন ছাত্র রাই তা ঢাকায় মেডিকেল কলেজ চত্ত্বরেই এটি নির্মাণ করে। সেই ইতিহাস মেডিকেল কলেজ ছাত্রদের আরেক গর্বিত ইতিহাস। অতি পবিত্র সেই রক্তের সিড়ি বেয়ে ইতিহাসের নানা বাক পেরিয়ে বাংগালির মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামের পরিনতি আমাদের প্রাণের স্বাধীনতা এবং অহংকারের পতাকা। জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সেই সংগ্রাম সহ এদেশের চিকিতসকদের নানা আন্দোলন সংগ্রামে মেডিকেল কলেজ ছাত্র ও চিকিতকদের রয়েছে সোনালী ইতিহাস। আজকের পোস্টের ১ম ছবিটি শহিদ মিনারের আমাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ এর প্রাংগনে গড়ে উঠেছে তারই ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে। বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলের এই ৮ম মেডিকেল রংপুর মেডিকেল কলেজ এর নবযাত্রায় এই ছবির শহিদ মিনার’টিতো ছিলো না। সম্ভবতঃ ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোন এক প্রহরে ২য় ব্যাচের কজন শিক্ষার্থীরা ভাবলো আগামীকাল মহান ২১ ফেব্রুয়ারিতে তারা কোন শহিদ মিনারে যাবে কোথায় হৃদয় নিংড়ানো তাদের ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি কিভাবে দেয়া হবে।(সেই সময়ে এমন জনবহুল পরিবেশ ছিলো না)। তাই কজন সহপাঠি সেই ১৯৭৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে রাত্রি ১০টায় মিলিত হলো এই মিনারের স্থানে।কলেজ কেন্টিনের কাছাকাছি এক নির্মাণাধীন ভবনের পাশ থেকে হাতে হাতে কয়েকখানা ইট এনে একটি অস্থায়ী স্মৃতি স্মারক স্তম্ভ দাড় করালেন। তারাই রাত জেগে এ মহত কাজটি শেষ করে সেই ভোরেই সেখানে মহান শহিদ দিবসের পুস্প- শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালো।খুব স্মৃতিবহ সেই স্থানেই পরে আজকের এই শহিদ মিনারটি গড়ে উঠেছে। এই ঘটনাটি মনে করে মোবাইলে জানালো প্রিয় সহপাঠী বন্ধু ডাঃ গুরুদাস শিকদার (এখন দিল্লিতে)। সেদিনের সেই স্মৃতি আওড়িয়ে বললেন সেদিন এই কাজটির প্রস্তাব করেছিলো বন্ধু ডাঃ বিজয় সরকার(অধ্যাপক মেজর জেনারেল অবঃ ডাঃ বিজয় কুমার সরকার।)তার সংগে ছিলো আমাদের ২য় ব্যাচের কয়েকজন সহপাঠী বন্ধু ডাঃ রেজাউল করিম রেজা লেঃ কর্ণেল অবঃ ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান ডাঃ সৈয়দুল (অকাল প্রয়াত) আরও কেউ কেউ (নামগুলো মনে করতে পারলো না বন্ধু ডাঃ রেজাউল করিম রেজা।) প্রিয় স্বজন বন্ধু! মহান ২১শের এই ইতিহাস এবং আমাদের নানা মাত্রিক সাহিত্য -সাংস্কৃতিক চর্চার বিষয়টি একিভুত একাকার।কেননা আমাদের এই বাংলা ভাষার চেতনা আমাদের হাজার বছরে গড়ে ওঠা নানা লোক সাহিত্য সংগীত নাটক চিত্রকলা সবই তারই উত্তরাধিকার এবং আমাদের চর্চার প্রাসিংগকতা।আর তা থেকে সবসময় মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিতসকগন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ব্যাপ্ত হয়েছে চর্চা করেছে। তার উদাহরন অনেকঃ ভাষা সংগ্রামী ডাঃ রফিক আহমেদ(বিশিষ্ট রবীন্দ্র-গবেষক সাহিত্যিক) অধ্যাপক ডাঃ আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং আমাদেরও রংপুর মেডিকেল কলেজের শ্রদ্ধেয় ডাঃ সিতারা মজিদ আপা প্রিয়জন ডাঃ শহিদুল ইসলাম খান আরও অনেকেই। প্রসংগতঃ উল্লেখিত সেই ধারাবাহিকতার ধারক অবস্যই রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।এজন্য গতকালের পোস্টের বর্ননায় বলেছি সংগীত নিয়ে।সেই ধারাবাহিকতায় এই কলেজেও নানামাত্রিক সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার ধারা অব্যাহত আছে যার শুভসুচনা হয়েছিলো ১ম ও ২য় ব্যাচের নানা প্রতিভায় উজ্জল অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর মাধ্যমে। ( প্রিয় বন্ধু প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুর রউফ কে অনুরোধ জানাচ্ছি এখনকার এই পুর্নাঙ্গ শহিদ মিনার নিয়ে তার কথা যেহেতু তিনি সেসময় কলেজের দায়িত্বশীল পদে সমাসীন ছিলেন।জানিনা বিষয় নিয়ে আমার কোন মিস্টেক হচ্ছে কিনা? প্লিজ হেল্প)। ২ য় ছবি বাংলার স্বাধীনতা শিশুর হাসি মায়ের আদর। ৩য় ছবিতে প্রিয় সিতারা আপা গাইছিলেন যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই ঘাটে — (ছবিতে আপার জীবদ্দশায় ২০০২ সালে সাভারে সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে শেষ গান গাইছিলেন। এই ছবি পাঠিয়েছেন আপার জীবন সংগী শ্রদ্ধেয় ডাঃ ব্রিগেডিয়ার গোলাম মোস্তফা ভাই গতকাল। এবং এই ছবি তিনি এতদিন পর আমাদের জন্য দেখালেনঃ ভালো থাকুন স্রদ্ধেয় বড় ভাই) ৪ র্থ ছবিতে বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রিয় বন্ধু ঐ সময়ের অতিথি শিল্পী হিসেবে আসতো দোস্ত হাসিব নাজনু (দাম্মাম সৌদি আরব প্রবাসী)। ৫ম ছবিতে প্রিয় বন্ধু ডাঃ উম্মে সালমা লুলু এবংবন্ধু বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আব্দুর রশিদ আলমগীর (দুজনেই নাট্য অভিনেতা লুলু বাচিকশিল্পী ও বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী)অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। ১২(গ). প্রিয় বন্ধু স্বজন! আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে নানা বিষয় ছিলো। যেমন সংগীত নাটক চিত্রকলা সাহিত্যকর্ম পত্রিকা প্রকাশ বিতর্ক ইত্যাদি চর্চা ও উপস্থাপন। আর সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ও অপেক্ষার আনন্দ। প্রতি বছর ছাত্র সংসদ এর ব্যবস্থাপনায় সপ্তাহব্যাপী সেই প্রতিক্ষার বর্ণাঢ্য আয়োজন টি হতো। পুরো এক সপ্তাহ সবার ক্লাস সকাল ১১ টার পর স্থগিতাদেশ হতো। শ্রদ্ধেয় স্যার অতিথি বিচারক(বিভিন্ন বিষয়ে) প্রতিযোগি অন্যান্য সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব আসনেই ঠিক সময়েই বসে থাকতেন।তুমুল উতসাহ উত্তেজনা আবেগ আনন্দ নিয়ে একেকজন পছন্দের একএকটা ইভেন্টে অংশ নিতো। ফলাফল ঘোষনা না হওয়া পর্যন্ত কেউ হল ছেড়ে যেতো না। প্রতিযোগিতার বিষয় সাধারণত যেগুলো থাকত ঃ স্বরচিত কবিতা ছোটগল্প রম্যরচনা পুর্ব নির্ধারিত বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ(এগুলো নির্দিষ্ট স্যারের কাছে জমা দিতে হতো)। সরাসরি লাইভে প্রতিযোগিতার জন্য– সংগীতের বিষয়ে ছিলো ঃ দেশগান নজরুল রবীন্দ্র লোকসংগীত আধুনিক গান এবং যন্ত্রসংগীতের প্রতিযোগিতা। মঞ্চে উপস্থাপিত বিষয় ছিলো ঃ আবৃত্তি (পুর্ব নির্ধারিত) বিষয় নিয়ে বক্তৃতা (নির্ধারিত) উপস্থিত বক্তৃতা কৌতুক একক অভিনয় নাটকের সংলাপ উচ্চারণ ধারাবাহিক গল্প বলা গানের সাথে ছবি অংকন ইত্যাদি। দলীয়ভাবে প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো ঃ বিতর্ক ও শ্রেণি- বিচিত্রা। প্রতিজন সর্বোচ্চ ৫ টি বিষয়ে অংশ নিত। মেডিকেলের অনেক মেধাবী ছাত্র পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে যথেষ্ট পারদর্শী ও প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে তাদের বিষয়টিতে অংশ নিতো। খুব জমে যেতো প্রতিটি ইভেন্ট। সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত দুজনের থেকে চাম্পিয়ন রানার্সআপ পুরস্কারও দেয়া হতো। যতদুর মনে পড়ে প্রথম সাংস্কৃতিক সপ্তাহে আমরা ১ম ২য় ও ৩য় ব্যাচ পরের গুলোতে ৪ র্থ ও ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহন ছিলো। (প্রতিজন ছাত্র-ছাত্রী এ বিষয়ের চর্চা / অনুরাগ থাকার কারনেই তাদের মধ্যে সুস্থচিন্তা শান্তি- শৃংখলা সৌন্দর্য্যবোধ বন্ধুত্ববোধের মত মানবিক মূল্যবোধের চর্চায় নিশ্চয়ই অনুশীলন হতো তরুন বয়স থেকেই। (সেই সৃজনশীল সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডঃ চর্চা আজ থেকে চার দশক আগে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই হতো এবং ইদানিংকালে মনে হয় সেই কর্মসূচিগুলি শধু শহরের গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানেই নিয়মিত চালাচ্ছে।আর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে এসব এখন এগুলো উপেক্ষিত।মেডিকেল কলেজগুলোতেও একি অবস্থা যদিও একাডেমিক কারিকুলামের সাথে এই কর্মকান্ডগুলোর বিশয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে)
ফিরে আসি আমাদের রংপুর মেডিকেলের সেই আনন্দময় সাংস্কৃতিক সপ্তাহে।এখানে যারা তাদের সর্বোত্তম পারদর্শিতা নিয়ে অংশগ্রহণ করতো/বিজয়ী হতো তাদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাচের কয়েকজনের নাম মনে পড়ছে –
১ম ব্যাচ থেকে ডাঃ সিতারা আপা ডাঃঅশোক ভদ্র ডাঃ শফিউল আলম ডাঃ মিন্টু চৌধুরী ডাঃ রোকেয়া সুলতানা ডাঃ টুটুল প্রমুখ।
২য় ব্যাচের – ডাঃ একরামুল হোসেন স্বপন ডাঃ শামসুন্নাহার রেনু ডাঃ সিদ্দিকুর রহমানলে( কর্ণেল অবঃ) ডাঃ রেজা ডাঃ সেলিনা ডাঃ মমতাজ ডাঃ উম্মে সালমা লুলু ডাঃ বাবলা ডাঃ পিন্নু ডাঃরশিদ আকন্দ ডাঃ মোঃ নজরুল হক খোকন ডাঃ বিজয় কুমার সরকার (মেজর জেনারেল অবঃ) ডাঃ অমল বর্মন আমি সহ অনেকে।
৩য় ব্যাচের – প্রিয় ডাঃ শহিদুল ইসলাম খান ডাঃনিলু অধ্যাপক ডাঃ হাসিনা আশা ডাঃআব্দুল জলিল ডাঃ আল মামুন প্রমুখ
৪র্থ ৫ম ব্যাচের – ডাঃ মখদুম আজম মাশরাফি অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ মোস্তফা খোকন ডাঃ রুমা (আতিক)প্রমুখ
প্রিয় পাঠক!
নিচের ছবির শেষে উদাহরণ হিসেবে প্রতিযোগিতায় প্রদত্ত কয়েকটি সনদ ১৯৭৬ এবং ১৯৭৭ সালের উল্লেখ আছে (কারমাইকেল কলেজের ১টি ছাড়া)। ওগুলোতে স্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহিদুল্লাহ স্যার ও অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তাহির স্যারের সই আছে দেখে খুব ভালো লাগছে আমার সে জন্যে পোস্টে দিয়েছি।
উল্লেখ্য আমরা ২য় ব্যাচ ১৯৭৫ এর জুলাই এর আগেই আরেকটি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা পেয়েছিলাম ১ম সংসদ আয়োজিত তাতে পুরস্কারও পেয়েছিলাম কিন্তু সে বছর পুরস্কৃতদের কোন সনদ দেয়া হয়নি।
কারমাইকেলের সনদে শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ নাসিম উদ্দিন আহমেদ স্যারের সই দেখে নষ্টালজিয়া থেকেই।
প্রিয় বন্ধু স্বজন!
আগের বর্ননায় কয়েকজন প্রতিযোগির নাম ও ছবি দিয়েছি। এবার আরও কজনের নাম ও ছবি।
তার আগে বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্তদের/ অংশগ্রহণকারিদের নাম লিখছি আমার স্মৃতি থেকে।যেমন ঃ
সাহিত্যের বিষয় ঃ
কবিতা/ছোট গল্প/প্রবন্ধ/রম্যরচনায় ঃ
ডাঃ অমল বর্মন /অধ্যাপক ডাঃ আলতাফ হোসেন সরকার /ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান / ডাঃ একরামুল হোসেন স্বপন /ডাঃ নজরুল হক খোকন/ ডাঃ মান্টু/ডাঃ মখদুম আজম মাশরাফি /অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ মোস্তফা খোকন প্রমুখ
সংগীত বিষয়ে ঃ
রবীন্দ্র সংগীত — ডাঃ সিতারা মজিদ আপা / ডাঃমফিজুল ইসলাম মান্টু/ডাঃ রেজাউল করিম রেজা/ ডাঃ সেলিনা মার্গিস/ডাঃ জেবুন্নেসা বনানী/প্রমুখ।
দেশের গান – ডাঃ রোকেয়া সুলতানা /ডাঃ শামসুন্নাহার রেনু /ডাঃ মান্টু ও প্রমুখ।
নজরুল সংগীত – ডাঃ শহিদুল ইসলাম খান/ ডাঃ শামসুন্নাহার রেনু / কর্ণেল অবঃ ডাঃ আবদুল কাদের খান সাবেক সংসদ সদস্য /ডাঃ মান্টু ও প্রমুখ।
আধুনিক গান- ডাঃ শামসুন্নাহার রেনু / ডাঃ মমতাজ /ডাঃ মান্টু প্রমুখ
লোক গান – লেঃ কর্ণেল অবঃ অধ্যাপক ডাঃ শফিউল আলম / ডাঃ তমসিল আহমেদ ভাই /আমি প্রমুখ।
যন্ত্রসংগীত – ডাঃ নুর কুতুবুল আলম (বাশি) ও নানাধরণের যন্ত্রসংগীতে অনেকে।
কবিতা আবৃত্তি ঃ ডাঃ পিন্নু/ডাঃ উন্মে সালমা লুলু/ ডাঃ নজরুল হক খোকন ডাঃ /ডাঃ স্বপন প্রমুখ
অন্যান্য বিষয়ে যেমন ঃ- যেমন –
বিতর্ক (দলগত) কয়েকজনকে মনে আছেঃ
মেজর জেনারেল অবঃ ডাঃ বিজয় কুমার সরকার /
ডাঃ মোঃ নজরুল হক খোকন / ডাঃ একরামুল স্বপন ডাঃ মখদুম আজম মাশরাফি /ডাঃআল মামুন প্রমুখ।
(মনে পড়ে বিটিভিতেও/জেলায় বিভিন্ন সময়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে বিভিন্ন ব্যাচ দলগত অংশ নিতো এখনো নিচ্ছে/ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নিয়েছে।)
একক অভিনয় /কৌতুক ঃ
লেঃ কর্ণেল অবঃ অধ্যাপক ডাঃ শফিউল আলম
ব্রিগেডিয়ার অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম
ডাঃ মোঃ আব্দুর রশিদ আকন্দ
ডাঃ জীবন ঘোষ প্রমুখ।
আমাদের প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে বাংলাদেশ বেতার রংপুরে অনেকে শিক্ষার্থী জীবন থেকে এবং অনেকে পেশাগত জীবনেও নানা অনুষ্ঠানে নিয়মিত /অতিথি শিল্পী বা নানাভাবে নিয়ে থাকেনঃ
নাটক /গান /কথিকা/উপস্থাপনা /খবর পাঠ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে। যেমনঃ
সংগীত – ডাঃ শহিদুল ইসলাম খান ও অনেকে
নাটক – ডাঃ জীবন ঘোষ /ডাঃ রশিদ আকন্দ /ডাঃ উম্মে সালমা লুলু প্রমুখ।
খবর পাঠক ঃ ডাঃ নজরুল হক খোকন /লেঃ কর্ণেল অবঃ ডাঃ রুখসানা লুসি /ডাঃ মখদুম আজম মাশরাফি /প্রমুখ।
প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান /সাহিত্য চর্চা /নাটক /সংগীত ইত্যাদি নিয়ে সর্বশেষ ব্যাচ পর্যন্ত প্রিয় শিক্ষার্থী /পেশাগত জীবনেও অনেকে তাদের অনুরাগ/ প্রতিভা/মেধা /নিজেদের নিষ্টা নিয়ে এই ধারাগুলো এখনো অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন /সিনেমায় ডাঃ এজাজ (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
ডাঃ অনুপম হোসেন টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় /আন্তর্জাতিক খেলার জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার।
এছাড়াও বেতার/টিভি সহ বিভিন্ন গনমাধ্যম /চ্যানেলে অনেকে জড়িত আছেন যাদের অনেকের নাম উল্লেখ করতে অপারগতায় ক্ষমা-প্রার্থী।
আমাদের সাহিত্য সংগীত নাটক চিত্রকলা সবই ব্যক্তি জীবন /সামাজিক জীবনে মানুষের কল্যান বয়ে আনুক।
১৩(ক).
প্রিয়জন বন্ধুজন শুভেচ্ছা।
কত বর্ননায় লেখা যায় অতিতের স্মৃতি কথা তার কোন সীমা-পরিসীমা নেই।
এ পর্বের স্মৃতি বর্ননায় তারুন্যদীপ্ত উজ্জ্বল স্বারক আমাদের গর্বের রংপুর মেডিকেল কলেজের সহযাত্রী /সহপাঠীদের বিভিন্ন খেলার মাঠে নানা অর্জনের গল্প। ১৯৭৪ সাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল খেলার মাঠে প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজের প্রিয়ভাজন কয়েকজন শিক্ষার্থী ছেলে-মেয়েদের কৃতিত্বে সারা মাঠ চমকিত এবং আনন্দিত।
আন্ত-মেডিকেল স্পোর্টসে আমাদের মাত্র ১ম ও ২য় ব্যাচ এই দুইটি ব্যাচকে নিয়ে গঠিত একটি খেলোয়াড়দের দল অসাধারণ নৈপুণ্যে উদ্ভাসিত হলো। সেবার রংপুর মেডিকেল কলেজ দলগতভাবে
রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলো।
ছেলেদের গ্রুপে চাম্পিয়ন ২য় ব্যাচের বন্ধু ডাঃ মোজাম্মেল হক চাম্পিয়ন এবং মেয়েদের গ্রুপে রানার্সআপ আপ হলেন ১ম ব্যাচের ডাঃ রোকেয়া সুলতানা আপা।
এই প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ গেমস আউটডোর গেমস এথলেটিক্স ছেলেদের এবং আগ্রহী মেয়েদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালো খেলতেন /খেলতো।
ছেলেদের হোস্টেল এর সামনের মাঠে সিজন অনুযায়ী ফুটবল/ক্রিকেট/বার্ষিক স্পোর্টস নিয়মিত চলত। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো। বিপুল উতসাহে মাঠ ভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে প্রতিটি ব্যাচ অংশগ্রহণ করতো।
ছেলেদের এবং মেয়েদের কমনরুমে খেলা হতো নিয়মিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো বিভিন্ন বিভাগে।যেমন ঃ
টেবিল টেনিস- একক/দ্বৈত /মিশ্র দ্বৈত (ছেলে-মেয়ে)
কেরাম বোর্ড- একক/ দ্বৈত /মিশ্র দ্বৈত
অকশন ব্রিজ /দাবা/
মেয়েদের জন্য – টেবিল টেনিস /কেরাম বোর্ড/লুডু।
সবার জন্যই ব্যাডমিন্টন -একক /দ্বৈত /মিশ্র দ্বৈত
রংপুর মেডিকেল কলেজ ক্রিকেট টিম এর প্রায় ৬/৭ জন তুখোড় খেলোয়াড় ওই সময়ের রংপুর জেলা দলে খেলতো।
যেমন ১ম ব্যাচের প্রিয়ভাজন ডাঃ গোপাল সরকার/
ডাঃ গোলাম মোস্তফা।
২য় ব্যাচের বন্ধু ডাঃ আব্দুর রশিদ আলমগীর /
ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান।
অন্যান্য ব্যাচের ডাঃ সুবির সরকার /
ডাঃ ওয়ালি আহমেদ বেলাল / ডাঃ মুনিম চৌধুরী
ডাঃ জাভেদ আখতার ।
এ ছাড়া রংপুর মেডিকেল কলেজ টিমে আরও খেলতেন ডাঃ তারিক আল নাসির /ডাঃ আকতার আহমেদ/ ডা আব্দুর রশিদ (জুম্মাপাড়া) / ডাঃ নাজমুল / ডাঃ বিষু প্রমুখ।
টেবিল টেনিস দলের বিভিন্ন ব্যাচের বেশ কজন খেলোয়াড় জেলা পর্যায়ের জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল করেছিলো। এদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন ঃ
১ম ব্যাচের ডাঃ ঝুলন দাশ শর্মা/ডাঃ ইমদাদুল হক টুটুল
২য় ব্যাচের – ডাঃ নুর কুতুবুল আলম রবি / ডাঃ আব্দুর রশিদ / ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান /ডাঃ রেজাউল করিম রেজা /প্রমুখ
৩য় ব্যাচের- ডাঃ কবিরুল ইসলাম লাবু / ডাঃ রফিউদ্দিন চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।
ফুটবল খেলতোঃ
২য় ব্যাচের অনেকে – ডাঃ নুরুল আমিন ও ডাঃ আখতার হোসেন তিতু দুজনেই অকাল প্রয়াত। এছাড়া আরো খেলত ডাঃ মোজাম্মেল হক ডাঃ রফিক ডাঃ মোখলেস ডাঃ বাবলা ডাঃবাসেদ ডাঃ নইম আকন্দ ডাঃ শাহাদত ডাঃ রেজাউল করিম
অন্যান্য ব্যাচেরঃ
ডাঃ তৌহিদ
ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজ মজনু (কুড়িগ্রাম) প্রমুখ।
(অসমাপ্ত তালিকা)
(সংশোধন হতে পারে বন্ধুদের সাহায্য চাই)
১ম ব্যাচের ডাঃ হাফিজ ডাঃ মজিবর রহমান মিন্টু ডাঃ সাইফুর রহমান প্রমুখ।
নিচের ছবিতে ঃ
২ ডাঃ রোকেয়া সুলতানা/ ৪ ডাঃ শাহ ই আলম/
৫ ডাঃ গোলাম মোস্তফা /৭ ডাঃ শফিউল আলম।ও অন্যান্য নাম ছবির সাথেই।
(স্মৃতি থেকে লিখলাম সংশোধনের জন্য বন্ধুদের সাহায্য চাই।
১৩(খ).
প্রিয়জন বন্ধুজন শুভেচ্ছা।
কত আনন্দ উদ্দীপনা আর তারুন্যের দিনগুলোতে মাঠে /কমনরুমের নানা ধরনের খেলায় অংশ নিতো কলেজের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
তাদের মধ্যে অনেকেই ভালো খেলতেন /খেলতো ঃ
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো বিভিন্ন বিভাগে। মেয়েদের মধ্যে কজন ছিলেন /ছিলো ঃ
১ ম ব্যাচ-
ডাঃ রোকেয়া সুলতানা ডাঃ সিতারা ডাঃ মুক্তা প্রমুখ।
২য় ব্যাচে ডাঃ শামসুন্নাহার রেনু ডাঃ শেফালী ডাঃ সালমা লুলু ডাঃ রীনা ডাঃ সেলিনা ডাঃ মমতাজ ডাঃ জেসমিন মিলি প্রমুখ।
অন্যান্য ব্যাচের ডাঃ আফরোজা খানম মীনা ডাঃ হাসিনা আশা ডাঃ রুখসানা লুসি ডাঃ মনা
ডাঃ নিলুফার বেগম নিলু।
অকাল প্রয়াত -ডাঃ সুলতানা আরা রানু
ডাঃ আনোয়ার কবির বিশু প্রমুখ।
এই ধারাবাহিকতা পরবর্তীতে কলেজের অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখনো অব্যাহত রেখেছে।
১৪(ক).
প্রিয়জন বন্ধুজন শুভেচ্ছা।
আমাদের খুব প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজের
২য় ব্যাচের এর সহপাঠী বন্ধুদের শিক্ষাজীবন শুরু থেকে শেষের সবগুলো প্রফেশনাল পরিক্ষার মহাসড়ক এক সময়ে শেষ হয়ে আসতে থাকে।
কে রাজনীতি /নাটক /গান /খেলাধুলা ইত্যাদিতে চাম্পিয়ন সেটি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় সবার ক্ষেত্রে হয়ত তেমন ব্যঘাত ঘটাতে পারেনি।কিন্তু ওসবের জন্য স্যারদের কাছে পরিক্ষার টেবিলে কোন খাতির পায়নি। সবাইকেই কঠোর নিয়ম পড়াশুনার টেবিলে রাত জেগে পরিক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতিটা নিয়েই পরিক্ষা যুদ্ধ করতে হয়েছে।
তারপর কাংখিত সেই ফলাফলের পর রুটিন মেনে ইন্টার্নিশিপ শেষে নিজের নিজের পেশাজীবনের চ্যালেঞ্জ নিয়েই কর্মস্থলে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
বন্ধুদের অনেকে সেই দায়িত্বশীল কাজের মধ্যে থেকেও উচ্চতর পড়াশুনাও চালিয়ে গ্যাছে।সেও এক পর্বত প্রমান পথের দুর্গম-যাাত্রার পরিক্রমা। কঠিন অধ্যাবসায়।তারো দীর্ঘ কাহিনী এখানে নয়।
ততদিন শ্রদ্ধেয় বাবামার আঁচল ছায়া থেকে নেমে নিজেদের ঘাড়ে সব বোঝা তুলে নেয়া হয়েছে।
দেশে বিদেশে নানা পথ শেষে সফলতার তিলকে তখন একদা সহপাঠী-বন্ধুরা গর্বের স্নাতকোত্তর সনদের মালা নিজের গলায় ঝুলিয়েছে।নিশ্চই অভিবাদন সাধুবাদ।
এবারে এমন কজনের ছবি ও নাম( কয়েকজনের নাম ছবি হয়তো দেয়া গেলো না সংগ্রহে নেই বলে দুখখ প্রকাশ করছি)ঃ
প্রসুতি-স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ –
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আজিজুল ইসলাম
অধ্যাপক ডাঃ হাবিবা খাতুন
ডাঃ জহুরুল ইসলাম
লেঃ কর্ণেল অবঃ ডাঃ আঞ্জুমান আরা বেগম রাণী
ডাঃ জিন্নাত আরা শেফালী।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ঃ
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নুরুল আবসার।
চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ঃ
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুর রউফ
মেজর অবঃ ডাঃ রফিকুল ইসলাম।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ঃ
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল বারী
লেঃ কর্ণেল অবঃ ডাঃ আ.কাদের খান এম পি(এক্স)
ডাঃ মোঃ জহুরুল ইসলাম মজনু . সহযোগী অধ্যাপক (বক্ষব্যাধী)
১৪(খ).
প্রিয়জন বন্ধুজন!
গত পোস্টের পর অসম্পূর্ণ ছবি আমার সংগ্রহ থেকেঃ
রেডিওলজিও ইমেজিং বিশেষজ্ঞ ঃ
ব্রিগেডিয়ার জেনাঃ অধ্যাপক ডাঃ জাহাংগীর আলম
অধ্যাপক ডাঃ আকতার উদ্দিন আহমেদ।
জেনারেল সার্জারী বিশেষজ্ঞ ঃ
মেজর জেনাঃ অবঃঅধ্যা ডাঃ বিজয় সরকার
ডাঃ মোঃ বজলুর রহমান।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ঃ
লেঃ কর্ণেল অবঃ অধ্যাঃ ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শরিফুল আলম চৌধুরী
ডাঃ মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল
ডাঃ মোঃ আনোওয়ারুল হক
ডাঃ পশুপতি সাহা।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ঃ
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আলতাফ হোসেন সরকার
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ এনায়েত করিম কাজল।
এনেস্থেসিয়লজি বিশেষজ্ঞ ঃ
ডাঃ মোঃ ইউনুস আলী সরকার এমপি (এক্স)
ডাঃ সৈয়দ শফিউল আলম
ডাঃ মোঃ আব্দুস সাহিদ সহযোগী অধ্যাপক।
অর্থপেডিকস বিশেষজ্ঞ ঃ
অধ্যাপক ডাঃ এম এ বাসেদ
ডাঃ মোঃ আব্দুর রশিদ আলমগীর সহকারী অধ্যাপক।
অন্যান্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ঃ
ডাঃ মোঃ নজরুল হক খোকন (ট্রপিক্যাল মেডিসিন)
মেজর অবঃ ডাঃ মোঃ মোকলেছুর রহমান (প্যাথলজি)
ডাঃ মোস্তাফিজার রহমান পেয়ারা (গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি)
ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম বাবলা( হৃদরোগ)সহযোগী অধ্যাপক।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ঃ
ডাঃ মোঃ আব্দুল জলিল মন্ডল
ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম রেজা
ডাঃ লায়েল হাসান
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান প্রমুখ
এছাড়াও দেশে-বিদেশে বন্ধুদের অনেকে তাদের মেধা ও পেশাগত দক্ষতায় তাদের জীবনে নানাভাবেই মানবসেবা ও কল্যানে সুনামের সংগে কাজ করেছেন/করে যাচ্ছেন।
বন্ধুদের সকল কর্ম আয়োজন সফল হোক।
১৫.
প্রিয়জন বন্ধুজন।
শুভেচছা অনাবিল।
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যময় মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রিয় রংপুর মেডিকেল কলেজ। এবছর অর্ধশত বছরের গৌরবময় সময় অতিক্রম করছে।
এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও অভিবাদন।
শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এর প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা নির্মাণ উন্নয়ন সহ সকল কর্মকান্ডে শুরু থেকে যারা এই প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানকে আজকের এই পর্যায়ে এনেছেন।
শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মহান এই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৩০লক্ষ শহিদ প্রায় ২ লক্ষ নির্যাতিত নারী-শিশু মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ অন্যান্য সকল স্তরের ব্যাক্তি/ প্রতিষ্ঠান যাদের অবদানে আমাদের আজকের এই বাংলাদেশ।
সেই বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজের একজন অতি ক্ষুদ্র স্বত্বা এই রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকেই আমার পেশাগত জীবনের শুরু হয়েছিল।এজন্য আমি মহান সৃষ্টিকর্তা সহ আমার পিতামাতা পরিবার স্বজন সকলস্তরের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী সহযাত্রী সহপাঠীদের প্রতি জানাই গভির কৃতজ্ঞতা।
হঠাৎ কোন পূর্ব-পরিকল্পনা ছাড়াই শুরু করেছিলাম আমার ব্যাক্তিগত অনুভব থেকেই এই মধুময় স্মৃতিচারন।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এই লেখার পর্বগুলি দেখার পর প্রিয়বন্ধু/সহযাত্রী/সহপাঠী এবং আমার শ্রদ্ধাভাজন/অনুরাগী /সুহৃদ অনেকেই আমার এই বিষয়টিকে সানন্দে গ্রহন করে/করেন।
সবাই বিভিন্নভাবে অনুভুতি /পরামর্শ /সহযোগিতা দিয়ে উতসাহিত করে/করেন।
আমি সকলকেই সেজন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
এই পোস্টে সংযুক্ত হয়ে বন্ধুদের কেউ কেউ তাদের কথা লিখেছেন যেমন ডাঃ রফিক ডাঃ অমল
ডাঃ স্বপন ডাঃ আলতাফ ও অন্যান্যরা তাদের প্রতিজনকে ধন্যবাদ।
এই লেখটি কোন ইতিহাস নয় নিতান্তই আমার স্মৃতি কথা এবং যা মনে আছে তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
এই লেখাটি কখনো বই আকারে প্রকাশিত হবে কিনা তা সুযোগ সময় হলেই বলা যাবে।
এই লেখাটির জন্য ফেসবুকে প্রকাশকালের সময় অনেকেই অনেক তত্ত্ব /তথ্যসূত্র দিয়েছেন।
রংপুর মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পুনর্মিলনীতে প্রকাশিত (প্রথম থেকে সপ্তম ব্যাচের) স্মরনিকা থেকে তথ্য ও ছবি নিয়েছি।
সেই ছবিগুলি ফেসবুকে পোস্ট উপযোগী করতে সাহায্য করেছে ছোট ভাইয়ের ছেলে আবরার সিয়াম এবং বোনের মেয়ে সুমাইয়া সুচি।
দেশ বিদেশের কয়েকটি ছবি তুলেছেন আমার বন্ধু/ পরিজন এবং শুভার্থী অনেকে।তাদের প্রতিজনকে ধন্যবাদ।
আমাদের এই স্বল্প আয়ুষ্কাল প্রায় শেষের দিকে কিন্ত বলতে ভয় হয়। কবিগুরুর কথায় বলতে ইচ্ছে করে মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে।
আমাদের বন্ধু জীবন যাপিত জীবন সুস্থতায় আনন্দে কাটুক মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি।
এই দেশ পৃথিবী আবার স্বাভাবিকতায় ফিরে আসুক।
শেষ বাক্যগুলোয় আমার খুব প্রিয় গানের পংক্তি আওড়ে বলি-
এই কথাটি মনে রেখো
তোমাদের এই হাসি খেলায়
আমি যে গান গেয়েছিলেম মনে রেখো
এই কথাটি মনে রেখো – – (কবিগুরু)
সবাই ভালো থেকো নিরাপদে থেক-
(বিভিন্ন পর্বের ছবিগুলো দিতে না পারার জন্য দুখিত-সম্পাদক)
সমাপ্ত

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge