স্বর্গ ঘেরা নীড়
শামিম রেজা
কোনো এক নিস্তব্ধ রাতে
এলোচুলে বসে বারান্দাতে,
ভাবছিলাম দুচোখ বন্ধ করে
কেউ যদি আমায় নিয়ে যেত
ব্যস্ত এই শহর থেকে দূরে।
যেখানে থাকবেনা কোলাহল,
থাকবেনা কোনো দূষণ,
পাখির মতো মেলবো ডানা,
মানবোনা কোনোই শাসন।
ইচ্ছে মতো ঘুরবো আমি
যেখান থেকে সেখানে।
ব্যস্ততা আর কষ্ট গুলো
রেখে যাবো এখানে।
ঠিক তখনই কেউ যেন এসে
বললো ডেকে আমারে।
যাবে নাকি আমার সাথে,
নিয়ে যাবো পাহাড়ে?
অধীর আগ্রহ আর ভয়ে বলছি যেন তাঁকে
কি করবে আমায় নিয়ে, তোমার সাথে গেলে?
দেবে নাকি পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে?
“না না।” বললো সে মিষ্টি হেসে,
চলতে থাকো আমার সাথে, সব চিন্তা ঝেড়ে।
নিয়ে যাবো তোমাকে এক স্বর্গ ঘেরা নীড়ে।
সুবিশাল এক পাহাড় চুড়ায়
থাকবে ঘন সবুজ বন।
কতো শত পাখির গান
শুনবে তুমি সারাক্ষণ।
ইচ্ছে হলে বনের ভেতর
ঘুরে বেড়াবে তুমি।
সূয্যিমামা পাতার ফাঁকে
দিয়ে যাবে চুমি।
কাঠবিড়ালির ছোটাছুটি
এডাল থেকে ওডালে।
প্রজাপতি আর ঘাসফড়িং
নাচবে রঙিন ডানা মেলে
হরেকরকম গাছগাছালি আর
লতাপাতা গুল্ম ঘাস,
রং বেরঙের বুনো ফুল
ছড়িয়ে দিবে নানান সুবাস।
কখনো বা অবাক হবে
আকাশ ছোঁয়া গাছ দেখে।
হারিয়ে যেতে চাইবে তুমি
বিষন্নতার জীবন থেকে।
ঢালুতে আছে ধানের খেত,
ছোট্ট একটা জুম ঘর।
সবুজ পাতা ঢেউ খেলে যায়,
বাতাস বহে দিনভর।
বাঁশের তৈরি জুমঘর,
থাকবে শীতল ছায়া।
সেথায় বসে দেখবে তুমি
স্বর্গ দিগন্তের কায়া।
সুনীল আকাশ, মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি খেলা,
বৃষ্টি হলেই কোথাও বসে রংধনুর মেলা।
জুমের পাশেই বইছে ঝিরি
কোথায় যে তার শেষ।
কলকল তার শব্দ ধ্বনি
প্রশান্তি দেয় বেশ।
ক্লান্ত হলে ভিজিয়ে নিয়ো
কাজল কালো চুল।
খোঁপায় তোমার পড়িয়ে দিবো
বুনো-পাহাড়ি ফুল।
একটু দূরে ঐ দেখা যায়
পাহাড়ি ঝর্ণাধারা,
তোমায় নিয়ে যাবো সেথায়
তুমি যদি দাও সারা।
ঝর্ণাধারায় দাঁড়াবে তুমি
দুহাত প্রসার করে,
ব্যথা-বেদনা আর কষ্ট গুলো সব
মন থেকে যাবে ঝরে।
পাহাড়ে পাহাড়ে মেঘগুলো সব
ছোটাছুটি করে।
বাঁশের মাচায় পা দুলিয়ে
দেখবে নয়ন ভরে।
সারাদিনের ক্লান্ত মেঘ
ঘুমায় পাহাড় কোলে।
ঘুমন্ত মেঘ দেখবে বলে
মন খুশিতে দোলে।
তারা ভরা রাতের আকাশ
ছায়াপথ ঘিরে।
জোছনা দিয়ে করবে আদর
স্বর্গ ঘেরা নীড়ে।
জোনাকিদের বসবে হাট
তোমার চারপাশে।
মুরং পাড়ার প্লুং বাঁশির
সুর যে ভেসে আসে।
সেই সুরেতে তাল মিলিয়ে
নাচবে তুমি বেশ।
ইচ্ছে হলে গাইতে পারো
সুখের নাই যে শেষ।
নিরাবতা ভেঙে ডাকে
রাত জাগা পাখি।
যায় যেন কোথা সে
আবেশ যায় রাখি।
কখনো বা মেঘ এসে
ঘিরে নিবে তারার আকাশ।
জোছনারা নিবে ছুটি
ভারি হবে শীতল বাতাস।
নিকষ কালো আধার এসে
বৃষ্টি শুরু হবে।
সেই বৃষ্টিতে ভিজতে তুমি
বারান্দাতে রবে।
হঠাৎ করে বৃষ্টি-বাতাস
কোথা থেকে এসে,
ঝাপটা দিলে চমকে দেখি
আমি বারান্দাতে বসে।
থেমে গেল, হারিয়ে গেল সেই
সুখের ভাবনা।
কখনো কি আমাকে আমি
ফিরে পাবো না?
দায়-দায়িত্ব,ব্যস্ততা আর
কোলাহল থেকে কেড়ে,
আমাকে কেউ নিয়ে যাবে সেই
স্বর্গ ঘেরা নীড়ে?
Leave a Reply