শিশুতোষ গল্প:
ম্যাজিক ব্রাশ
আসহাদুজ্জামান মিলন
আরিয়ান অতি দুষ্ট ছেলে। সকাল থেকেই শুরু হয় তার দুষ্টমি। সকাল সাতটা বাজলেও তার ঘুম ভাংতে চায় না। অথচ তার স্কুল শুরু হয় সকাল আটটায়। তাকে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয় সকাল সাতটা ত্রিশ মিনিটে।তার মা তাকে এই জন্যে সকাল ছয়টা ত্রিশ মিনিট থেকে ডাকা শুরু করেন। রান্না ঘর থেকেই মাঝে মাঝেই ডাকেন-
‘আরিয়ান! ও আরিয়ান বাবা! উঠো বাবা উঠো। সকাল হয়ে গেছে। তোমাকে স্কুলে যেতে হবে! উঠো বাবা উঠো’।
তবুও উঠে না আরিয়ান। মায়ের ডাক শুনে আরো আড়াম করে ঘুম দেয়। মা যতোই ডাকে আরিয়ানের ঘুম ততোই গাঢ় হয়।
অনেক ডাকাডাকির পর ঘুম থেকে উঠে আরিয়ান। এরপর শুরু হয় দাঁত ব্রাশ করা নিয়ে যুদ্ধ।
আরিয়ানের বয়স সাত বছর। এই বয়সেও তাকে দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিতে হয়। ঘুম ঘুম চোখে সে ব্রাশ হাতে দারিয়ে থাকে, মুখে দেয় না। তার মা এসে মুখে ব্রাশ ঢুকিয়ে দেয় কিন্তু সে মুখ খুলতে চায় না। অনেক কষ্ট হয় যেন তার। আরিয়ানের মা রাগ করে। কিন্তু সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। মুখ বন্ধ করে বেসিনের সামনে থাকে সে। কিছুটা জোড়াজুড়ি করে আরিয়ানের মা দাঁত ব্রাশ করে দেয়। যদিও বাচ্চাদের ভয় দেখাতে নেই। তারপরেও আরিয়ানের মা বাধ্য হয়েই ছেলেকে ভয় দেখায়।
‘তোমাকে কতোবার বলি, বাবা ভালোভাবে ব্রাশ করো, না হলে মুখে অনেক জীবানু থাকে যেগুলো তোমাকে খেয়ে ফেলবে। রাতে ঘুমানোর সময় অনেক জীবানু ঢুকে পরে মুখে। যেগুলো প্রথমে মুখের ভিতরে সব কিছু খেয়ে নেবে, দাঁতগুলো সব পরে যাবে। অসুস্থ হয়ে যাবে তুমি। এরপর একদিন তোমাকেই খেয়ে নেবে। তুমিতো এখন বুঝবে না, যেদিন সমস্যায় পরবে সেদিনই বুঝবে।’
এরপর শুরু খাবার খাওয়া নিয়ে যুদ্ধ। যেদিন যেটা রান্না হবে না সেদিন সেটাই খেতে চাইবে। আরিয়ানের দেখাদেখি তার বড় বোন তামান্নাও শুরু করে দেয় খাবার নিয়ে। তামান্নার বয়স দশ। কিন্তু আচরন ছোট বাচ্চার মতো। মাঝে মাঝে আরিয়ানের চেয়েও ছোট হয়ে যায় সে।
একদিন খুব সকালে ঘুম ভেংগে যায় আরিয়ানের। বিছানায় থাকতেও ইচ্ছে করছে না। পাশে তার মা ঘুমাচ্ছে। বেশ গভীর ঘুম। আরিয়ান বিছানা থেকে উঠে পড়লো। তার মা টের পেলো না। টুল জোড়া দিয়ে দরজা খুললো সে। বাইয়ে ঠান্ডা বাতাস। মনে হয় কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ ফর্সা হয়েছে। আরিয়ানের মুখ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে। বিশুদ্ধ বাতাসে তার নিজের নাকে আঘাত হানছে বেশি বেশি। আরিয়ানের মায়ের কথা মনে পড়ে। রাতে অনেক জীবানু ঢুকে যায় মুখে। যারা মুখে ঢুকে আনন্দ উল্ল্যাস করে আর মুখের ভিতরে মল মুত্র ত্যাগ করে। এই জন্যে সকালে আমাদের মুখে গন্ধ হয়।
বাধরুমের সামনে যায় সে। বেসিনের র্যাকে একটি নতুন ব্রাশ দেখতে পায় সে। নতুন ব্রাশটি হাতে নেয়। টুথপেষ্ট ভরিয়ে নেয় ব্রাশে। মুখে ব্রাশ ঢুকিয়ে দেয়ার পর মজার ঘটনা হয়। ব্রাশটিকে উপর-নীচ কিংবা ডানে-বায়ে ঘুরাতে হচ্ছে না। ব্রাশটি নিজে থেকেই তা করছে। আরিয়ান শুধু মুখ ফাঁক করে আছে। বাহ! আরিয়ান বেশ মজাই পাচ্ছে। তাকে কষ্ট করতে হচ্ছে না। দু তিন মিনিট এভাবে ব্রাশ সব দাঁত পরিষ্কার করে দিলো। এরপর থেমে গেলো। আরিহান এবার হাত দিয়ে ব্রাশটিকে ধরলো। ভালো করে দেখলো আম্মু কি ম্যাজিক ব্রাশ এনেছে নাকি! মনে মনে খুশি-ই হয় সে। যাক এরপর থেকে ব্রাশ করতে আম্মুকে জ্বালাতন করতে হবে না।
এভাবে সে প্রতিদিন সবার আগে ঘুম থেকে উঠে আর ব্রাশ করে নেয়। আরিয়ানের মা আশ্চর্য হয় আবার খুশিই হয়। ব্রাশ করা নিয়ে যন্ত্রনা বিদায় হয়েছে।
ম্যাজিক ব্রাশের কথা আম্মুকে বলে না। এমনকি তামান্নাকেও না। তার ভয় হয়। ম্যাজিক ব্রাশের কথা সকলে জেনে গেলে যদি আর কাজ না করে!
সকাল সকাল ব্রাশ হবার কারনে আরিয়ানের স্কুলে যেতে দেরি হয় না। সময়ের আগেই স্কুলে পৌঁছায় সে। বন্ধুরাও আশ্চর্য হয়। আর খুশিও হয়। আরিয়ানকে প্রতিদিন বকা খেতে হয় না। আরিয়ান প্রতিদিন বকা খেতো আর বন্ধুদের মন খারাপ হয়ে যেতো। বিশেষ করে আবিদের মন খারাপ হতো সবচেয়ে বেশি। আবিদ আরিয়ানকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
অনেক খুশি মন নিয়ে আবিদ আরিয়ানকে জিজ্ঞেস করে তার এই পরিবর্তনের কথা।
প্রথমে আরিয়ান বলতেই চায়নি। পরে আবিদের চাপাচাপিতে বলে ফেলে গোপন রহস্যের কথা। এক ম্যাজিক ব্রাশই তার এই পরিবর্তনের কারন। আবিদ বলে একদিন যেন ব্রাশটি স্কুলে নিয়ে আসে। আরিয়ানের অনিচ্ছা স্বত্বেও হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ে।
প্রতিদিনের মতো আজও আরিয়ান সকালে ঘুম থেকে উঠে। যথারীতি ওয়াশ রুমে যায়। ব্রাশ হাতে নেয়। পেস্ট চেপে লাগায় ব্রাশে। মুখে দেয়। নুখ সামান্য ফাঁক করে চুপচাপ থাকে। ব্রাশ আপনা আপনি ব্রাশিং হবার কথা কিন্তু আজ হচ্ছে না। মন খারাপ হয়ে যায়। নিজ হাত দিয়েই সে ব্রাশ করে নেয়। সে মনে মনে ভাবে। আবিদকে ব্রাশের কথা বলার জন্যেই কি ব্রাশ আর কাজ করছে না?
পরদিন আরিয়ান আবারও সবার আগে ঘুম থেকে উঠে। ওয়াশ রুমে যায়। ব্রাশ হাতে নেয়। পেষ্ট লাগিয়ে নেয় ব্রাশে। তারপর মুখে দেয়। কিছু সময় মুখ সামান্য ফাঁক করে চুপচাপ থাকে। কিন্তু ম্যাজিক ব্রাশের কেরামতি আর হয় না। তাকে হাত দিয়ে উপর+নীচে, ডানে বায়ে এভাবে ব্রাশ চালাতে হয়।
ম্যাজিক ব্রাশ আর ম্যাজিক দেখায় না কিন্তু আরিয়ানের জীবনে এক ম্যাজিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
Leave a Reply