মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

অভীককুমার দে এর একগুচ্ছ কবিতা

অভীককুমার দে এর একগুচ্ছ কবিতা

অভীককুমার দে এর একগুচ্ছ কবিতা

পৃথিবীর হতে পারে মানুষ

এত এত পতাকা উড়িয়ে মানুষ !
কোন স্বাধীনতার কাছে ?

ব্যবধানের সিঁড়ি টপকে আরও আরও প্রাণী
মানুষের মত নয়, ওরা মাটির দেশেই স্বাধীন;
মুক্ত সংগ্রামী বেঁচে থাকার এবং
প্রাণীজ চেতনায় বাঁচিয়ে রাখে মাটির শিশু।

এযাবৎ প্রমাণিত–
মানুষ প্রাণী মাত্র, পৃথিবীর জঞ্জাল।
এ সত্য মানে না বলেই পরিচয় খোঁজে, কিন্তু কার !
সময় বলে, পতাকা এক ইতিহাস, রক্তের
নাড়ি বেয়ে গলে যায় নদী
সাঁতার কাটে।
একগলা রক্ত খেয়ে ঈশ্বর দানব হলেই খুশি !

মাটিকে চেনার আগে দখল হয় না ঠিক,
অন্য যত প্রাণী একই মাটির ঘরে, অথচ
বিকারগ্রস্থ মানুষ
পৃথিবীর খেয়েই পৃথিবী খায় !

নিজেকে মানুষ বলা মানুষ, অকৃতজ্ঞ
পতাকায় ঢেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে বাড়ি, এখন
মুখ লুকিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে লাশ,
নির্যাস থেকে উঠে আসছে অপসারণ চিঠি।

দমবন্ধ ঘরে যদিবা কাঁচা হয় হৃদয়ের মাটি
আবার পৃথিবীর হতে পারে মানুষ।

চোখের তুলি

এখন সময় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার,
না হয় মৃত্যু
না জানি বসন্ত বলেই ডেকে ওঠে পাখি,
বাইরে দিন রাত, পাশে হেঁটে, কথা বলে, অথচ
ভোরের চোখে সন্ধ্যা !
অনিচ্ছায় জ্বলে যায় বাতি এবং
মুখের উপর ভেসে ওঠে মুখোশ।

আমাদের ভেতর শিল্পী কেউ ঘরবন্দি, একা
মনের বাটিতে ডুবে গেলেই ভিজে যায় চোখের তুলি
বেরঙের যাপন যত, জানালায়
ঝড় ওঠে,
দুমড়ে মুচড়ে সব গাছ,
অন্তঃকর্ণ তা দেয় বিবর্তনের।
মগজের প্রহরী জানে, আরেকটি পথ মনোমোহিনী,
যুবতীর বুকের কপাট খুলে গেলেই আপাত মরণ।

মানুষের একাগ্রতা বলে, আমি কালোতেই রাজা
আমার ধ্যানস্থ সন্ন্যাস এক, আলোর জন্য
একমুঠো নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চেয়ে নিতে হয় !

আলো ছিল, আলো আছে, আলো থাকবেই।

অতিথি

জন্মের পর, নাড়ি থেকে সুতোকাটা ঘুড়ি
ক্রম রূপান্তরের সিঁড়ি বেয়ে এই আকাশ
কপাট খোলা শরীর
মেঘভাঙা ধমক শোনে, ভাঙন শেখে, তাই
দূরত্ব ছাড়া কিছুই থাকে না মানুষের।

আগুন চাকা ঘুরে মধ্যরেখা পেরিয়ে গেলেই
বিভাজনের ধারাপাত
শীত ছেড়ে শীতের দিকে, বাঁধন ভোলা
নীল তারা, শুকিয়ে যায় উদাস উষ্ণ নদী।

একতারায় সুর তুলে অতিথি পাখি
আনুমানিক দূরত্ব রেখেই শূন্যে লুকায় পৃথক তারা।

বালকপুরাণ

ভাবছি, সব ছেড়ে চলে যাবার আগেই
হাতে নেবো ঘোঁটনকাঠি,
যতসব যত্নে রাখা মেঘ
তছনছ হয়ে যাক আর বের হয়ে আসুক আস্ফালন।

জীবন কোনও হোলি উৎসব নয়, যে
আবির খেলবো, অন্য কারও মুখে দেবো রঙ।
এযাবৎ বুঝেছি যা– আফলোদয়,
নিজের সাথে নিজের সমীকরণ।

জীবনের কাছে নতজানু হতে হতে
লেখা হয়ে যায় মৃত্যু। এক জীবন কাঁদে
ঈষৎ ঘুমের ঘোর কেটে গেলে
চোখের সামনে জেগে থাকে বালকপুরাণ।

মহারাজ শুনুন

আপনি জানেন, অবেলা অসুখ অসহ্য কেমন,
অন্য কেউ বোঝে না, বলেই
নির্মাণ করে ঠুনকো দেয়াল।

আমার ঘরে এক জীবনের কারাবাস, আমি
পাখিকে বলি, তুমি থাকো তোমার মত
উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াও, নিজস্ব আকাশ।

যে আকাশ নীল হয়ে আছে
আসলেই অভিনয়,
ঘরের দোলনা থেকে প্রান্তীয় বলয়, চলাচল;
পাখি নিজেই ফিরে আসবে ঠিক।

আমার আকাশ ঋতুমতী হলেই নতুন ভোর,
হিসেব বুঝে নেবো শূন্য জমিনের কাছে।

যে ভারত এখন দেখছি

এত সব জাতের ভার বয়ে জাতির মা
চোখের কাজল মুছেও সুখি,
উঠে দাঁড়িয়েছিল আবার…
কখনও এমন নীরবতা দেখিনি !

তারপর…
উঠোনে ভাগের বেড়া পড়েছিল।
বাঁকা চাঁদ, লাল সূর্য ভাগের আকাশে,
চেনা মানুষ অচেনা হতেই
মসনদ ডিঙিয়ে অজস্র মিছিল
বেপরোয়া ঢল, এদিক ওদিক
ক্ষুধার্ত মানুষের ফসল জলে, তবুও
এমন নীরবতা দেখিনি।

যে ভারত এখন দেখছি, অপরিচিতা
সময় গুনছে ঘরবন্দী ক্যালেন্ডার মানুষ,
বাইরে মৃতদের আদমশুমারি।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge