ভ্যান থেকে প্লেনে
আবিদ করিম মুন্না
সব মানুষের জীবনেই কমবেশি স্বপ্ন থাকে। চলার পথে যা প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জোগায়। সামিকার জীবনেও এরকম ছোটোবড়ো অনেক স্বপ্ন ছিল। প্লেনে চড়ার শখ থাকে অনেকের। আবার প্রচণ্ড ভীতিও কাজ করে। আকাশে প্লেন ক্র্যাশ করে যদি আগুন ধরে যায় কিংবা জরুরি অবতরণের জন্য পানিতে বা খোলা প্রান্তরে নামিয়ে দেয়া হয়। সামিকা প্লেনে চড়ার স্বপ্নটা পূরণ করতে পেরেছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজে থার্ড ইয়ার-এ পড়ার সময় ওর মনে ইচ্ছে জেগেছিল এমবিবিএস পাস করে ডাক্তার হলে বাসায় যাবে প্লেনে চড়ে আর সেটা নিজের খরচে। অনেকের কাছে এটা সামান্য ব্যাপার হতে পারে যারা নিয়মিত প্লেনে চড়ে অভ্যস্ত। কিন্তু সামিকার কাছে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এমবিবিএস পাস করে ডাক্তার হবার পর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ-এ চড়ে যশোর এসেছিল নিজের খরচে। মেডিকেল প্রফেশনাল লাইফের ইন্টার্নশিপের পুরো টাকা বাবার হাতে তুলে দিয়েÑপা ছুঁয়ে সালাম করেছিল। সেদিন সামিকা বাবার চোখেমুখে যে আনন্দের ছাপ দেখেছিল তা এখনও ওর চোখে ভাসে।
ফেসবুকে এরকম কথাবার্তার স্ট্যাটাস দেখে সামিউল সাহেব পেছন ফিরে তাকালেন। তার মনে পড়ে গেল প্লেনে চড়ার প্রথম অভিজ্ঞতার কথা।
যে এলাকায় ডাক্তার নেই সে জায়গায় থেকো নাÑকথাটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছিলেন সামিউল স্ত্রী নাজিয়াতের অসুস্থতার সময়।
বিয়ের এক দশক তখনও হয়নি। সেদিন মনে হয়েছিল স্ত্রীর সত্যিকার বন্ধু হতে পেরেছেন। এভাবে নাজিয়াত অসুস্থ হয়ে পড়বে ভাবতেও পারেননি।
ঢাকা আর দিনাজপুর এই দুই জায়গায় সামিউলের সংসার। প্রায় প্রতিমাসে বাড়ি যেতেন রাতের বাসে চেপে। কখনও দিনের বেলায়। সারাদিন লেগে যেত এমনিতেই।
আস্তে আস্তে সড়ক পথের উন্নতি হয়েছে। দেশে নতুন নতুন ব্রিজ, ওভারব্রিজ, কালভার্ট হয়েছে। দিনাজপুর থেকে সকালে রওয়ানা দিলে বিকেলেই রাজধানীতে পৌঁছানো আজকাল ব্যাপারই না।
নাজিয়াত রমজান মাসের শেষ দিকে সেহরি খাওয়ার পর প্রচুর বমি করলেন। আশপাশের ফ্ল্যাটের প্রিয়জনেরা নিয়ে গেল হাসপাতালে। আইসিইউতে রাখা হলো। হার্টের সমস্যা হতে পারে এই চিন্তা থেকে ইসিজি করা হলো। না; হার্টের কোনো সমস্যা নয়। অবস্থার একটু উন্নতি হলে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলেন।
কদিন পরই ঈদ। ঈদের দু-একদিন আগেই বাড়িতে গিয়ে ডাক্তারের নির্দেশমতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটা ভাবছিলেন। কিন্তু পরদিন সকালে শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলো।
অফিসে এসে ঘণ্টা দুই অতিক্রান্ত হয়েছে। নাজিয়াত বারবার ফোন করে ত্যাক্তবিরক্ত শুরু করলো। সামিউলের ভাষায় যেটা পাগলামির চরম পর্যায়।
বারবার বলছিল তুমি কি এখনও বুঝতে পারছো না আমি কী পরিমাণ অসুস্থ!
যদি এখনও রওয়ানা হতে পারে তবে দিনাজপুর পৌঁছতে রাত দুইটা বেজে যাবে। তাহলে কি এখনই রওয়ানা হবে নাকি নাইট কোচে যাবার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেবে।
এসব যখন ভাবছিল তখন মনে পড়লো প্লেনে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দর যেতে পারলে দিনাজপুর মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল-বিকাল প্রতিদিন পাঁচটি ফ্লাইট যায়। টাকা একটু বেশি লাগলেও প্লেনে চড়ার স্বপ্ন এবার পূরণ হতে পারে।
আকাশে যা ওড়ে মানুষকে নিয়ে তার নাম বিমান; অনেকে প্রায়শই ভুল করে। এটার নাম প্লেন বা উড়োজাহাজ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কিংবা নভোএয়ার এগুলো কোম্পানির নাম।
সামিউলকে তার বন্ধু ডা. আরিফুল হোসেন লেমন জানিয়েছিল এস-ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এর কথা। রংপুর সিটি বাজারের পাশে কৈলাশ রঞ্জন হাইস্কুলের উলটোদিকে দোতলায় অফিস। শামীম ভাই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার। আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক যে কোনো রুটের প্লেনের টিকেট মুহূর্তেই পাওয়া যায় এস-ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এ।
ফোন দিলেন শামীম ভাইকে। টিকেট পাওয়া গেল। বিকাশ করে যাত্রাও নিশ্চিত হলো। মোবাইলে মেসেজ এলো এবং ই-মেইলে টিকেট এসে গেল মুহূর্তে। ভাবছে সামিউল পৃথিবী কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায়।
বিকেল চারটায় ফ্লাইট। এখন ঘড়িতে বেলা প্রায় ১২টা। ব্যাগ আর কাপড়চোপড় কিছুই গোছানো হয়নি। হঠাৎ করেই অফিসে একজন আসে। সব খুলে বললে তিনি মাথা ঠান্ডা রাখতে বলেন। মাথা গরম করলে টেনশন বাড়বেই, কমবে না।
সামিউল রিকশা নিয়ে ছুটে চলছে বাসার দিকে। সকালে অফিস যাবার আগে গোসল করেছিল। এখন আর গোসল করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ব্যাগটা কোনোরকমে গুছিয়ে তাতে দু-একটা কাপড় ঢুকিয়ে একহাজার এবং পাঁচশত টাকার কয়েকটি নোট টেনে বের করে সোজা চলল বাস ধরতে।
ঢাকা শহরে এ সময়টায় জ্যাম খুব একটা থাকে না। কারণ অফিস আওয়ার এই রমজান মাসে শেষ হবে বেলা সাড়ে তিনটায়। বিআরটিসির এসি বাসের টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে আছে ফার্মগেটে। পেছনে সুন্দরী এক তরুণী রঙিন ছাতা মাথায়। কিন্তু টেনশন কোনো কিছুই আকৃষ্ট করাতে পারছে না। এসি বাস এসে গেলেও সেখানে বসে যাবার মতো অবস্থা নেই। উঠতে পেরেছে এটাই কম কিসের। বিজয় সরণি পার হবার পর একজন নেমে গেলে সামিউলের বসার সুযোগ হলো। বয়স্ক দুজন মহিলা সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ইচ্ছে করছিল না তাদের একজনের জন্য সিটটি ছেড়ে দিতে। ভাবছিল নাজিয়াতের কথা। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেল এয়ারপোর্টের কাছাকাছি।
জীবনে প্রথম আকাশে উড়ে বউ-বাচ্চার কাছে যেতে পারবে এটা ভীষণ পুলকিত করলো।
এয়ারপোর্টের বাইরের কিছু বিষয় নিয়ে ধারণা থাকলেও ভেতরের কোনো কিছু নিয়ে তেমন ধারণা ছিল না। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুরো শরীর চেক করার পর ব্যাগ বেল্টে স্ক্যানিং করা হলো। কিছুপর বোর্ডিং পাস দেয়া হলো। বাংলাদেশের ভেতরে ফ্লাই করার আগে পাসপোর্ট, ভিসা, ইমিগ্রেশন, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, স্মার্ট কার্র্ড এসব কোনোকিছুরই প্রয়োজন নেইÑএটা জানা থাকলেও আরো পরিষ্কার হলো।
ফ্লাইট এখনও বেশ দেরি আছে। বোর্ডিং পাস দেয়ার সময় কাউন্টারের লোকটি বললেনÑকোন সিটটি আপনি নিতে চান। ডোমেস্টিক বা আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রায় সময় নিজের পছন্দমতো বসা যায় এটা জানা ছিল না। কোন সিটটি চান কথাটা শোনামাত্রই জানালার ডানদিকে একটি সিট দেবার অনুরোধ করলেন।
বোর্ডিং পাস নিয়ে সামিউল অপেক্ষা করছে ওয়েটিং রুমে। কাচঘেরা রুমের ভেতর থেকে দেখা যাচ্ছে নানা দেশের যাত্রীবাহী এবং কার্গো প্লেনের বিশাল রানওয়েতে ল্যান্ডিং (ভূমিতে অবতরণ) এবং টেক অফ (আকাশে উড়ে যাওয়া)।
প্লেন ল্যান্ড করার পর টারমাক (প্লেন রাখার স্থান)-এ প্লেন আসছে, কোনো কোনো প্লেন হ্যাঙ্গার (প্লেন সার্ভিসিং স্থান)-এ এবং কোনো প্লেন পুরো লোড হবার পর আবার টেক অফ এর জন্য চলে যাচ্ছে।
যথাসময়ে প্লেনে ওঠার জন্য ডাক পড়ল। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দুটো বাস এসে দাঁড়িয়েছে। তার একটাতে উঠে বসে সামিউল। ধীরে ধীরে প্লেনের কাছাকাছি চলে এলেন।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যারা নিয়মিত যাত্রী তাদের মিট অ্যান্ড অ্যাসিস্টস্ ইংরেজিতে এমএএএস স্ট্যাটাস প্রদান করা হয়। তাদের বাসে না চড়িয়ে আলাদা প্রাইভেট কারে করে প্লেনের কাছে নিয়ে গিয়ে প্লেনের ভালো সিট দেয়া হয়। এই ক্যাটাগরির যাত্রীরা এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে তিনি স্কাই স্টার কার্ডধারী হন। এই কার্ডের মান সিলভার, গোল্ডেন, ডায়মন্ড এবং প্লাটিনাম পর্যন্ত হয় এবং তারা বোনাস টিকেটসহ দেশ-বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পান।
কারো কারো কাছে প্লেনে চড়া ডালভাত (যদিও মসুর ডালের কেজি এখন একশত টাকার বেশ ওপরে) হলেও বাংলাদেশের শতকরা পাঁচ শতাংশ মানুষের এখনও সুযোগ হয়নি।
ছোট্ট একটা প্লেন। ৬০-৮০ জন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই প্লেনে ওঠার আগে অনেকেই সেলফি তুলছেন, কেউবা গ্রুপ ফটো তুলছেন। প্লেনের একজন কর্মী বললেন, এখনই উঠে পড়ুন। প্লেন লোড হলেই ছেড়ে দেবে।
সিট বেল্ট বাঁধার জন্য অনুরোধ করা হলো। প্লেনের ইঞ্জিন চালু হলো প্রচণ্ড শব্দে। পাখা ঘোরা শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে টারমাক থেকে ট্যাক্সিওয়ে (রানওয়েতে যাবার আগের পথ) এর দিকে চলে যাচ্ছে। ডানদিকে দেখা যাচ্ছে যারা দেশের বাইরে যাবে তাদের প্লেন লোড হচ্ছে। আবার কিছু কিছু প্লেন আনলোড হচ্ছে। মানুষ, পণ্য, কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে সোনাদানা (যদিও ধরা পড়ার খবর প্রতিনিয়ত টেলিভিশনে আসে) এমনকি মৃত মানুষের কফিন আসছে বাংলাদেশে। এরই মাঝে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেনটি বাঁদিকে টার্ন নিয়ে রানওয়ের কাছে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল। তারপর স্পিড বাড়িয়ে বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর উড়াল দিলো নীলাকাশে।
এয়ারপোর্টের সীমানা প্রাচীর, ঢাকার মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, রেডিসন ব্লু হোটেলÑআকাশ থেকে চোখে পড়লো। আস্তে আস্তে সবকিছু ছোটো হতে লাগলো। নিচের জলাশয়গুলো সর্পিলাকার মোটা সুতার মতো লাগছিল। গাছপালাগুলো মনে হচ্ছিল ঘাসের দলা।
প্লেন ডান দিকে টার্ন নিয়ে উত্তরাঞ্চলের দিকে ছুটে চলল।
আকাশে উড়ছিল মেঘ। মেঘ ভেসে যাচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো। যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। পাইলট জানালেন, ১৫ হাজার ফুট ওপর এবং ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বেগে চলছে প্লেন।
৫০ মিনিটের এই যাত্রাপথে প্লেন সাধারণত জলাশয়ের কাছাকাছি এলাকার ওপর দিয়ে যায়। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর রুটে যমুনা নদী সবচেয়ে বড়ো জলাশয়। বগুড়ার করতোয়া নদী এবং আরো ছোটোখাটো নদ-নদী তো রয়েছেই।
কোনো কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে কাছাকাছি কোনো এয়ারপোর্টে জরুরি অবতরণ অথবা সোজা পানিতে কিংবা ধানক্ষেতে…।
এরই মাঝে খাবারের সুদৃশ্য স্ন্যাকসের প্যাকেট সিটের সামনে দিয়ে গেলেন রূপসী এয়ার হোস্টেস।
সামিউল সাহেবের মনে হলো সৃষ্টিকর্তার এই দুনিয়াটা কতই না মনোহর! আকাশ থেকে দেখলে মনে হয় এত জায়গা। তারপরও বাংলাদেশের মানুষের অনেকেরই থাকার ঠাঁই নেই, কোথাও ঠাঁই নেই।
মাঝে মাঝে এয়ার পকেটের সৃষ্টি হলে প্লেন কয়েকশ ফুট নিচে নেমে যাচ্ছে। নাজিয়াতের চিন্তায় সামিউল সাহেবের মনে এসব ভয় কাজ করছে না।
পাইলট জানালেন আর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে প্লেন ল্যান্ড করবে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে।
আবারো সিট বেল্ট বাঁধার জন্য অনুরোধ করা হলো। প্লেন ১৫ হাজার ফুট থেকে আস্তে আস্তে আরো নিচে চলে এলো এটা অনুভব করলেন এবং জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন প্লেনের চাকার বক্স থেকে চাকা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।
সবুজ ধানক্ষেত দেখে মনটা ভরে গেল সামিউলের।
কিছুক্ষণ আগে সৈয়দপুরে একপশলা বৃষ্টি হয়েছে। প্লেন এই মুহূর্তে ১০০০ ফুট ওপরে। আর ২৫ কিলোমিটার দূরে রানওয়ে। তারপর ভূমিতে অবতরণ। এ কথা ভাবতে না ভাবতেই প্লেন সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করলো।
প্লেন থেকে নামার অল্প সময়ের মধ্যে এক্সিট গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলেন সামিউল সাহেব।
স্যার গাড়ি লাগবে। এমন কথা শুনতে শুনতে এয়ারপোর্টের বাইরে চলে এলেন। ৩২০০ টাকা খরচ করে প্লেনে এসেছেন। আবার গাড়ি এ কথা যখন ভাবছেন তখন দূরে দেখতে পেলেন তীর্থের কাকের মতো যাত্রীর অপেক্ষায় এক রিকশাওয়ালা।
এই যাবা। বলতেই রিকশাওয়ালা বেচারা বলল, পেলেনের প্যাসেঞ্জার ধরমো বলি বসি আছোং সেই দুপুর থাকি। ৩০ টাকা চাইতেই আর পেছনে ফিরে দেখলেন না। শেষে এটাও মিস করলে মুদ্রার পরিমাণ বাড়বে বৈ কমবে না।
এয়ারপোর্ট থেকে বেশকিছুটা দূরে চলে এসেছেন সামিউল। এয়ারপোর্টের সাথেই সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট। ভাবছেন জীবনে তিনিই শুধু প্লেনে চড়েছেন আর আশপাশে যাদের দেখতে পাচ্ছেন তাদের কেউ এই জনমে প্লেনে চড়েনি। কোনোদিন তাদের চড়ার সুযোগও হয়ত আসবে না।
রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানালোÑ ‘কী কন বাহে। পেলেনোত ওঠো নাই মানে। এই কেনটোরমেন্টের এক করনাল ছাড় মোক পেলেনোত করি ঢাকা নিয়া গ্যাছলো বাগান ছাপ করবার জোনতে।’
রিকশাওয়ালাও প্লেনে চড়েছে শুনে বিস্মিত সামিউল সাহেব।
শেষ পর্যন্ত বউ-বাচ্চার কাছে যখন পৌঁছলেন সামিউল তখনও ইফতারের এক ঘণ্টার বেশি বাকি। কারণ দিনাজপুর এবং তার আশপাশের জেলাসমূহে বাংলাদেশের সবচেয়ে শেষসময়ে ইফতার।
পরদিন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে জানা গেল নাজিয়াতের গলব্লাডারে পাথর চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যেটাকে বলে কোলিলিথিয়াসিস। আবারো অস্ত্রোপচার। ডাক্তার জানালেন ইনফেকশন হয়েছে। ৪২ দিন পর অপারেশন করাতেই হবে।
অনেক ধকল গেছে। তাই আর ট্রেনে কিংবা বাসে রাজধানীতে ফেরা নয়। নাজিয়াতের সঙ্গে পরামর্শ করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সৈয়দপুর-ঢাকা রুটের একটি টিকেট কাটলেন আবারও শামীম ভাইয়ের এস-ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস থেকে।
প্লেনে যাবার মূল উদ্দেশ্য ইউনিভার্সিটির তাদের ব্যাচের পুনর্মিলনী এবং ইফতার পার্টিতে যোগদান।
বেলা সাড়ে চারটায় ফ্লাইট। ঘণ্টা দুই হাতে সময় নিয়ে বেরিয়েছেন। বেশ কয়েকবার বাহন পরিবর্তন করে সামিউল উঠলেন একটি ভ্যানে ১০০ টাকা ভাড়া করে। এই ভ্যানওয়ালার প্লেনে চড়ার শখ আছে তবে পূরণ হয়নি।
প্রতিদিন একবার দুবার এয়ারপোর্টের কাছাকাছি এলাকায় এলে প্লেনের ওঠানামা দেখেন ভ্যানওয়ালা।
এয়ারপোর্টের মূলসড়কে সবাই দামি গাড়িতে চেপে হর্ণ বাজিয়ে ছুটে চলছে। চলছে সামিউল সাহেবকে বহনকারী ভ্যানও।
আর একটু পর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেনটি উড়াল দেবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে।
Leave a Reply