স্মৃতিটুকু থাক
পিয়াল হাসান
১
কলেজের নাম করা ছাত্র রাসেল। সে যে ক্যাম্পাসে থাকে সে ক্যাম্পাসে একদিন ইঞ্জিনিয়ারের মেয়ে বদলি হয়ে এল। রাসেল পড়ত অনার্স ২য় বর্ষে। ওদের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারের মেয়ে অর্থাৎ বৃষ্টিকে দেখে রাসেল । দেখেই তার রূপে পাগল হয়ে যায় সে। সবাই এ দৃশ্য দেখে বলল, “কি রে শালা। ঐ মেয়েটির দিকে এত চেয়ে আছিস কেন। প্রেমে পড়লি নাকি।” “দুর তোরা যে কি বলিস। আমি কেন ওর প্রেমে পড়তে যাব।” সবার মধ্যে থেকে সুমন বলল, “তবে চেয়ে আছিস কেন ?” “কারণ সে সুন্দর। নাম কি রে ওর।” “বৃষ্টি।” “ও-য় বৃষ্টি। সো নাইচ।” ব্যাস এটুকুই ঘটেছিল সেদিন।
কয়েকদিন কেটে গেল। একদিন সকালে হাটতে বেড়িয়েছে রাসেল । বৃষ্টিও সেদিন হাটতে বের হয়েছে। রাস্তায় মুখোমুখি হল ওরা দু’জন। ইতিমধ্যে ওদের পরিচয় হয়ে গেছে। বৃষ্ট্ িরাসেলকে দেখেই বলল, “কি ব্যাপার রাসেল। কেমন আছ ?” “ভাল। তুমি ?” রাসেল জানতে চায়। “নাইচ। তা, হঠাৎ এদিকে কেন ?” “না এমনিই। বৃষ্টি চল হাটি।” “ও-য় হাটবে। চল।” ওরা হাটতে শুরু করলো। এ সময় বাতাস মৃদু ভাবে বৃষ্টির চুলে পরশ বুলিয়ে যায়। আর তা দেখে রাসেলের হার্টবিট আর বাড়তে থাকে।
সেইদিন রাতে রাসেলের বাবা যিনি কিনা একজন টি এন ও, তাকে রাসেলের মা বলল, “চল না গো। নতুন ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি হতে বেরিয়ে আসি।” “শোন। আমার অনেক কাজ। পারলে রাসেলকে নিয়ে যাও। বুঝেছ।” রাসেলের বাবা উত্তর দিলেন। “তোমাকে তো কাজেই খেয়েছে। ঠিক আছে। রাসেলকে নিয়েই আমি যাব।” রাসেলের মা উত্তর দিল।
পরদিন সকালে বৃষ্টির বাড়িতে হাজির হয় রাসেল ও তার মা। দরজা নক করতেই দরজা খুুলে বাহিরে বেড়িয়ে আছে বৃষ্টি। বৃষ্টিকে দেখে রাসেলের বুক ধক করে ওঠে। বৃষ্টি ওদের দেখেই ভেতরে আসতে বলে। কারণ সে বুঝে যায়, রাসেলের সাথে এই মহিলাটি রাসেলের মা ছাড়া কেই হতে পারে না। ওদেরকে বসতে বলেই সে প্রবেশ করে বাড়ির ভিতরে। বৃষ্টির মা বের হতেই রাসেলের মা অবাক হয়। কারণ এই তো তার ছোটবেলার বান্ধবী। রাসেলের মাকে পেয়েই তাকে জড়িয়ে ধরলেন বৃষ্টির মা। বৃষ্টিকে বললেন, “তোর রহিমা খালা। সালাম কর।” বৃষ্টি সালাম করতে এলে রহিমা বেগম বললেল, “থাক মা। সালাম করা লাগবে না। এমনিতেই আমি দোয়া করি তুমি বড় হও।”
রহিমা বেগম ও বৃষ্টির মা গল্প শুরু করলে বৃষ্টি রাসেলের হাত ধরে ওর ঘরে নিয়ে যায়। মূলত রাসেল বৃষ্টিকে মনে মনে ভালবাসলেও বৃষ্টি রাসেলকে বন্ধুর মত দেখে। কিন্তু রাসেল মনে করে বৃষ্টি তাকেও ভালবাসে। যাইহোক বৃষ্টি যখন রাসেলকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসায়, তখন রাসেল বলল, “তুমি কি আজ আমাকে সময় দিতে পারবে?” “কেন? কোন সমস্যা?” “না-য়া। একটু জিনিস কিনতাম।” “কার জন্য?” “নিজের জন্য।” “ঠিক আছে। আমি সময় দেব।” “ধন্যবাদ, বৃষ্টি।” হেসে ওঠে রাসেল।
২
সেদিন বিকালে ওরা অনেক জিনিস কেনে। পরদিন সকাল। একটি রিক্সা এসে থামে রাসেলের বাসার সামনে। শম্পা ও আতিক এসেছে। মূলত আতিক শম্পা ওরা দু’জন কাজিন। ওদের মধ্যে লাভ ম্যারেজ হয়েছে। যাইহোক ওরা বাড়ির সামনে আসতেই রাসেলের বাড়ির কেয়ারটেকার দরজা খুলে দ্যায়। ভেতরে প্রবেশ করতেই রাসেল বেড়িয়ে আসে। আতিককে জড়িয়ে ধরে। কারন আতিক রাসেলের কাজিন। তাই এই জড়িয়ে ধরা। আতিককে ছেড়ে দিয়ে রাসেল জিজ্ঞেস করে, আতিক ভাল আছে কিনা। আতিক জানায় সে ভাল আছে। শম্পাকে এতক্ষণ লক্ষ করে নি রাসেল। দেখেই বলল, “আরে শম্পা বু কে বিয়ে করলে কবে ?” আতিক বলল,“পড়ে বলল। আগে ভেতরে চল্।” “চল।”
যেদিন ওরা রাসেলের বাড়িতে এল সেদিন বৃষ্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দ্যায় রাসেল। এই কারনে সেদিন রাতে ঘূমানোর সময় শম্পা আতিকের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, “আচ্ছা আতিক। আজকে রাসেল কার সাথে না পরিচয় করে দিল।” “কেন? বৃষ্টির সাথে।” “আচ্ছা বৃষ্টিকে তোমার কেমন লাগে?” “ভাল। কেন, কারও সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছ নাকি।” “হ্যা। রাসেলের সাথে ওকে ভালই মানাবে, না।” “তুমি যে এসব করছ। তা রাসেল তো ওকে পছন্দ নাও করতে পারে।” “তাহলে তুমি শোন, ও বৃষ্টিকে পছন্দ করে কিনা।” “ঠিক আছে। এখন ঘুমাও।” ওরা এরপর ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে আতিক রাসেলকে ছাদে নিয়ে গেল। বলল, “রাসেল তোকে আজ একটা কথা বলল। বল রাগ করবি না।” “বল। কি বলবে। আমি কোন রাগ করব না।” “বৃষ্টিকে তোর কেমন লাগে ?” “হঠাৎ এ প্রশ্ন ?” “না এমনিই।” “প্রচন্ড ভাললাগে।” “সত্যি!” “সত্যি।” “তাহলে তোর পছন্দের কথাটা বলে ফ্যাল ওকে।” “কিন্তু কিভাবে?” “প্রথমে তোর মনের কথাটা একটি গল্প হিসাবে বানিয়ে বলবি। তারপর এক বিশেষ দিন দেখে তোর মনের কথাটা ওকে বলে ফেলবি।” “ও ভাইয়া। ইউ আর গ্রেড। চল নিচে চল।” “চল্।”
সেদিন বিকেলে বৃষ্টি রাসেলের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এসেই রাসেলের বাবাকে জিঞ্জেস করে, রাসেল কোথায়। রাসেলের বাবা রাসেলের ঘরের কথা বৃষ্টিকে বলে। উপরের ঘড়ে রাসেল অন্যমনস্ক ভাবে শুয়ে ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি আসায় হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসল। বৃষ্টি রাসেলের কান্ড দেখে মৃদু হেসে বলল, “কি, শরীল খারাপ ?” “না-য়া। বস, কথা আছে।” “কি এমন কথা যে বসতে হবে।” “বস না।” “ঠিক আছে, বাবা বসছি। বল।” “আমি একটা সঠিক সীদ্ধান্তে উপনিত হতে চাই। একটা গল্পের থিম বলব তোমায়। তা হলো, একটি ছেলে একটি মেয়েকে ভালবাসে। কিন্তু মেয়েটাকি আদৌ ছেলেটিকে ভালবাসে কিনা ছেলেটি তা জানে না। একই পাড়ায় থাকে ছেলেটি ও মেয়েটি। কিন্তু তারপরেও ছেলেটি ভালবাসার কথা বলতে পারে না। এখন বল ছেলেটি কি করবে ?”
বৃষ্টি বলল, “এখন দরকার মেয়েটিকে ছেলেটির মনের কথা বলার। যদি মেয়েটি ছেলেটির কথায় রাজি হয় তবে কেল্লা ফতে। আর যদি এর বিপরীত হয় তবে ছেলেটিকে অন্য রাস্তা দেখতে হবে।” “ঠিক আছে আমি এর মর্মকথা তোমাকে অন্য দিন বলল।” “ও-হ হো। তোমাকে বলতে তো ভূলে গেছি। কাল আমার জন্মদিন। তোমাদের সবার দাওয়াত থাকল।” “ঠিক আছে।” বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর রাসেল ডিসিসন্স নেয় বৃর্ষ্টি জন্মদিনেই তার মনের কথাটি বলবে সে।
৩
আজ বৃষ্টির জন্মদিন। সন্ধ্যা হতে না হতেই ফুল নিয়ে হাজির রাসেল। সাথে তার পরিবারের সবাই আছে। বৃষ্টি সামনে আসতেই ফুলের তোরা এগিয়ে দিয়ে বলল, “মেনি মেনি রিটান্স অফ দ্যা দে। তোমার জন্মদিন শুভ হোক।” “থ্যাক্স, রাসেল। রাসের, আজ আমি তোমার সাথে একজনার পরিচয় করিয়ে দেব।” “তাই। কার সাথে?” “আমার মনের মানুষের সাথে।” “বৃষ্টি। নট ফান প্লিজ।” “ইট ইস নট ফান, রাসেল।” “মানে?” “মানে, এস আমার সাথে।” বৃষ্টি সাগরের সাথে রাসেলের পরিচয় করিয়ে দিল। বলল, “এই হলো আমার মনের মানুষ।” রাসেলের মাথা ঘুড়ে যায়। তবুও স্বাভাবিক ভাবেই সাগরের দিকে হাত বাড়িয়ে দ্যায় রাসেল। বলে, “নাইস টু মিট ইউ।” তারপর আর থাকতে পারে না রাসেল। অনুষ্ঠানের এক ফাকে চলে আছে সে তার বাড়িতে। কারণ তার মনে যে ঝড় উঠেছে তা থামবার নয়।
পরদিন বৃষ্টি রাসেলের বাড়িতে আসে। রাসেল নির্বাক। বৃষ্টি জানতে চাইল, কেন সে কাল এভাবে চলে এল। রাসেল নির্বাক। বৃষ্টি বলল, “কি হল, কথা বলছ না কেন তুমি ?” “কি করে বলব। আমার কথা বলার শক্তি তো হারিয়ে গিয়েছে বৃষ্টি। কারণ আমি ভাবতেও পারছি না আমার গল্পের নায়িকা এভাবে অন্যের হয়ে যাবে।” “তোমার গল্পের নায়িকা মানে? তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ রাসের, একটু খোলাসা করে বলবে?” “বৃষ্টি তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমার গল্পের মর্মকথা। আসলে আমার গল্পে যে ছেলেটির কথা বলা হয়েছে তা আমি আর নায়িকা তো তুমিই বৃষ্টি।”
বৃষ্টি অবাক হলো। কেঁদে ফেলল সে। বলল, “আগে কেন বলনি তুমি এই কথা। এখন আমার বাগদান সম্পন্ন হয়ে গেছে সাগরের সাথে। সে বিদেশ থেকে ফিরেই আমায় বিয়ে করবে। তুমি ভুল করেছ রাসের তুমি ভুল করেছ।” কান্নারত অবস্থায় বৃষ্টি চলে যায় ঘড় হতে। এদিকে রাসেলও বেদনায় গুমরে মুসরে যায়।
কয়েকদিন পরের ঘটনা। বৃষ্টির বাবার বদলির অর্ডার হয়েছে। তাই শেষ বারের জন্য বৃষ্টি এসেছে রাসেলের সাথে দেখা করতে। শম্পা বলল, “যাও ও ছাদে আছে।” ছাদে চলে এল বৃষ্টি। রাসেলকে দেখেই বলল, “রাসেল কেমন আছ ?” রাসেল মুখ না ফিরিয়েই বলল, “যেমন রেখেছ।” পরক্ষনেই বলল, “কেন এছেস তুমি এখানে? কি চাও তুমি আমার কাছে?” “আমি চলে যাচ্ছি রাসেল। কারণ আমার বাবা বদলি হয়ে গিয়েছে।” এবার রাসেল তার দিকে চোখ ফেরালো। বলল, “তুমি আমার স্বপ্ন ছিলে বৃষ্টি। কিন্তু আজ তোমাকে আমি বলতে চাই আই লাভ ইউ। বৃষ্টি, আমি তোমাকে যেতে দেব না। দেব না। তুমি আর কারও হতে পারো না।” “পাগলামু কর না রাসেল। পাগলামু করনা।” এ বলে বৃষ্টি কোন কথা না বলে নেমে যায়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রাসেল।
বৃষ্টিদের যাওয়ার দিন এসে গেল। এ সময় রাসেল বন্ধ ঘড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। শম্পা এসে বলল, “যে চলে যায়, তাকে চলে যেতে দিতে হয়। বৃষ্টি তোকে ভাল না বাসলেও বন্ধু হিসাবে দেখেছে। তার প্রমান এই চিঠি। শম্পা যাওয়ার পর রাসের চিঠিটা খোলে। তাতে লেখা-
রাসেল,
জানি না তুমি ভুলে থাকতে পারবে কিনা। তবে মনে রেখ তোমার আমার মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল তা শুধুই বন্ধুক্তের। তাই আমি তোমাকে কোনদিন ভুলব না। তুমি আমাকে ভালবাসলেও আমি সেভাবে দেখিনি। তবুও আমাকে তুমি কোনদিন ভুল না।
-বৃষ্টি
চিঠিটা শেষ করতে পারে না রাসেল। তার আগেই ওর চোখের পানিতে ঝাপসা হয়ে আসে চারপাশ। তবুও সে চিঠিটা যত্ন করে পকেটে রাখে। আর বলে, “ভাল থেক বন্ধু। আজ থেকে তোমার চিঠিই হবে আমার কাছে তোমার শেষ উপহার।আমার প্যতিঠিছ পরতে মিরেশ থাকবে তোমার স¥ৃতি। আর এ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকব আমি সারা জীবন। সারা জীবন।”
Leave a Reply