চলিত পথের গপ্পো
সাব্বির হোসেন
রমজানের দোকানে বসে আছি। সবে মাত্র পাঁচ কাপ চায়ের অডার্র দিয়েছে জলিল্লা। নাম জলিল আমি ডাকি জলিল্লা। সাথে ট্যাড়া যগলু, চিকনা জিকো আর তোতলা দেবু। রমজানের জান জুড়ানো গরুর খাঁটি দুধের চায়ে চুমুক আর গপ্পো সপ্পো চলছে। রাজনীতির আলাপে এখন আর দম নেই। ভাইরাসঘটিত কর্মকান্ডে সব লাপাত্তা। তবুও ভালোবাসা সব সময় আগের ঠিকানায় থাকে। পাড়ার শিউলির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে জলিল। তাকে নিয়েই অনেকটা মাসোয়ারাই চলছে। চিকনা জিকো পুরনো দিনগুলোতে ততোক্ষনে ফিরে গেছে। আহা, রঙিন দিনগুলো সোনার খাঁচায় বন্দি এখন। দেবু বলল,
: দোস্ত তুই কতবার জেরিনকে নিয়ে স্কুল পালিয়েছিলি। আর ক্লাসে এর জন্য রবিন আর আমি কত ঝাড়ি যে খেয়েছি।
মুচকি হাসি হেসে আবার চা পান করছি। কিচ্ছুক্ষণ পর ছোটভাই কচি আর ওর সাগরেদ পাতলু খান এসে হাজির। দুটো মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর শুকনো গলায় বলল,
: ভাই আসসালামুআলাইকুম। একটু কথা ছিল ভাই।
: হম, ওয়ালাইকুম আসসালাম। আবার কি হইছে? কোথায় কি করছোস? ক্রিকেট খেলায় গণ্ডগোল হইছে? কারও বাড়ির গ্লাস ভাংছোছ? কোন মাইয়া ছ্যাকা দিছে? স্কুল পালাইছোস? আব্বায় মারছে? কেউ দাবড় দিছে? কাউরে টোন করছোস?………
: না ভাই।
: দ্যাখতো জলিল্লা। আমার মাথাটা ক্যামনে গরম করতাছে। কস না ক্যান কি হইছ?
: ভাই, হইছে কি! ঐ যে আমার বাসার পাশে দুলালী আছে না। ওর সাথে দেখা করা খুব দরকার। করোনা ভাইরাসের জন্য সরকার সব বন্ধ কইরা দিছে। কিছু একটা করেন ভাই। তা না হইলে মারা যাবো।
: দুলালী তো হিজাব পড়ে। তো সমস্যা কি?
: ভাই, দুলালী তো হিজাব পড়ে। আমি তো পড়ি না। আমি কি করব?
: তুইও পড়। হা হা হা হা।
: ভাই। কিছু একটা করেন ভাই। আপনি ভরসা এখন ভাই। সব ফেল মারছে ভাই।
: এক কাজ কর। ২০ টাকা দিয়া একটা নাকের মাস্ক নে। ধূলা বালির দিন। নাকে দিয়া রিকসায় দুলালীরে নিয়া উড়াল দে। আর পড়াশুনা ঠিকমত মন দিয়া করতে হইব। মস্ত বড় অফিসার হইয়া দুলালীরে ঘরে তুলতে হইব।
: জী ভা-আ-আ-আ-আ-ই-ই-ই। গেলাম।
: যা।
বুঝলিরে দোস্ত, আমরা এমন বড় ভাই পাইলে কত ভাল থাকতাম। আমি আইজ জেরিনরে নিয়া ঘর বাঁধতাম। আমাদের মজনুটা আত্মহত্যা করত না। সেলিমটা আজ মানহানি মামলায় জেলেও থাকতো না। আকাশটা পাগলের মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতো না। শুধু ভাল একটা মানুষের বিশেষ প্রয়োজন এই সমাজে। যেকিনা শুধু একটু ভাল ব্যবহার আর হাসি মুখে বোঝাবে কিভাবে সমাজে বাঁচতে হয়, বাঁচার স্বপ্ন দেখতে হয়।
Leave a Reply