অনিদ্রার অপেক্ষা
রেজাউল ইসলাম হাসু
বিশ্বাফুল ঝরছে- থোকা থোকা
আমাদের আঙুলের অগ্রভাগ থেকে- অঙ্গের অন্তর্গত আরশ থেকে- জীব ও জীবাশ্ম জৌলুস থেকে- রক্ত ক্ষরণের মতো ঝরছে- থোকা থোকা।
ঝরছে- হৃদপিণ্ডের হরিৎ উদ্যান থেকে- চকচকে চুম্বনের চৌবাচ্চা থেকে- বর্ণাঢ্য বাতাসের বৃন্ত থেকে- অনন্ত আকাশের অন্তরভেদ থেকে- জলপ্রপাতের মতো ঝরছে- থোকা থোকা।
আজ পাখিদের কোনো পাপ নেই তবু পালকে পাপের ছুতো। হাতে কোনো হাতুর নেই তবু বিদ্ধ হবার ত্রস্ততা। মুখে কোনো মুখোশ নেই তবু মিথ্যে ছড়ানোর মিথস্ক্রিয়া। দেখো- অবিশ্বাসের অতলে স্বপ্নেরা ভুলে যাচ্ছে সন্তরণ। চুম্বনের চাকচিক্য ছেয়ে যাচ্ছে মরিচীকার আস্তরণে। সমূহ হাসিপাতা মিলিয়ে যাচ্ছে হাওয়াইমিঠাইর মতো অন্ধকার অভ্যন্তরে।
অথচ বাতাসেই আসতো বিবিধ প্রত্যুষের বার্তা। আকাশ থেকেই বর্ষিত হতো বিবিধ গানের বর্ষণ। আজ আমরা প্রত্যুষ ভুলে ঢলে পড়ছি সূর্যাস্তের মতো অচেনা অরণ্যে। গানের গহন ভুলে গলায় তুলছি গ্রসনের গুঞ্জন।
আমি থেকে আমি একা হয়ে যাচ্ছি। তুমি থেকে তুমি একা হয়ে যাচ্ছো। আমাদের থেকে আমরা একা হয়ে যাচ্ছি- একা হয়ে যাচ্ছি। এখানে একা থাকার মানে কোয়ারেন্টাইন। এখানে একা থাকার মানে আইসেলোশন। এখানে একা থাকার মানে লকডাউন।
পৃথিবী লকডাউন হয়ে যাচ্ছে। চুম্বন লকডাউন হয়ে যাচ্ছে। উহানের উজ্জ্বল শোকে উত্তাল সমুদ্রের তরঙ্গমালা- প্রকম্পিত পর্বতশুঙ্গ- সন্ত্রস্ত ঘাস, লতাগুল্ম!
প্রত্যেক পুরুষ যেন রোলান্ড টরে। প্রত্যেক রমণী যেন ইমোট সিডল। প্রত্যেক শহর যেন প্রাচীন ইয়ামে। পথে পথে একাকীত্বের বেহালা। গৃহে গৃহে কোয়ারেন্টাইন বিষাদ। অন্তরে অন্তরে আইসেলোশনের আর্তনাদ।
সাঁটারগুলো নেমে যাচ্ছে নামানোর আগেই। চাকাগুলো থেমে যাচ্ছে থামানোর আগেই। জানালাগুলো ভুলে যাচ্ছে প্রত্যুষের রোদ। বারান্দাগুলো ভুলে যাচ্ছে ঝিরিঝিরি বয়ান। বাড়িগুলো ঘুমিয়ে পড়ছে শিশুর মতো নিঃসঙ্গতার গাউন মুড়িয়ে।
বদ্ধ দরজা ফেটে ফেটে ছড়াচ্ছে বিষাদবীজ। কান্নাগাছে ভরে উঠছে কারফিউর শহর। বেলাভূমির মতো নিরীহ দৃষ্টিরা আছড়ে পড়ছে রুক্ষ চরে। আমাদের ভেতর এখন দগদগে দুপুর। দুপুরের ভেতর এখন লকডাউন পৃথিবী। পৃথিবীর ভেতর এখন প্রচণ্ড শীত।
হাত ফসকে উড়ছে বিপুল বিকেল। কর্পুরের মতো ফুরাচ্ছে কবিতাক্যাফের ধোঁয়া। অন্ধ বেহালা বাদকের আঙুলে উপচে পড়ছে সমূহ সন্ধ্যা। অনিদ্রার অপেক্ষা তীব্র হচ্ছে- দীর্ঘ হচ্ছে- সুদীর্ঘ।
Leave a Reply