শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০৫:১২ অপরাহ্ন

পোস্টার-সোমের কৌমুদী

পোস্টার-সোমের কৌমুদী

পোস্টার
সোমের কৌমুদী

হাশেম সাহেব এমনিতেই অনেক ভালো হলেও বাসার বিষয়ে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে স্বভাবের।কোন লোক তার বাসা ভাড়া নিতে চাইলেই অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দেন যাতে বাসার ঘরের দেয়াল বা অন্য কোন কিছুর ক্ষতি যেন না হয়।মাঝেমাঝে অনেক লোকের তার বাসা পছন্দ হলেও শর্তের পাহাড় শুনে আর ভাড়া নেয় নি। তবুও হাশেম সাহেবের কোন দুঃখ নেই।তারপরও তার বাসার যাতে কোন ক্ষতি না হয় এমন সিদ্ধান্তে তিনি অটল।কিছুদিন আগেই দোতলার ব্যাচেলর ফ্লাট থেকে শব্দ শোনার সাথে সাথে প্রায় দৌড়ে সেখানে যান। গিয়ে দেখেন, একটা ছেলে হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে দেয়ালে পেরেক আটকানোর চেষ্টা করছে। এ দৃশ্য দেখেই আঁতকে উঠেন হাশেম সাহেব। হাতুড়ির আঘাত যেন দেয়াল নয় তার বুকে লাগছে। ঠিক থাকতে পারেন না তিনি। সেদিনই সে ফ্ল্যাটের সবাইকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এগিয়ে আসে ইমন। এই ফ্ল্যাটের অন্যদের থেকে হাশেম সাহেবের সাথে ওর সম্পর্ক অনেক ভালো। মুখে মায়া মায়া ভাব এনে বলতে শুরু করে-চাচা, আমাদের ভুল হয়েছে। এবারের মত আমাদের মাফ করে দেন। এরকম আর কখনও হবে না।
অনুনয় করে ইমন।তাতেও শান্ত হন না হাশেম সাহেব। উত্তেজিত কণ্ঠেই বলা শুরু করেন।

আমি কিছু শুনতে চাই না। তোমরা সবাই আজকের মধ্যেই আমার বাসা ছেড়ে চলে যাবে।

চাচা, আমরা আপনার ছেলের মত। দয়া করে আর একটা সুযোগ দেন।
কথাগুলো বলেই ইমন আড়চোখে তাকায় হাশেম সাহেবের দিকে।বুঝতে চেষ্টা করে তার রাগ কমেছে কি না। কিন্তু কিছু বুঝতে পারে না।আবার বলতে শুরু করে—
— চাচা, আজ ২৬ তারিখ। মাসের এরকম সময়ে হঠাৎ কোথায় বাসা পাব বলেন। এবারের মত আমাদের মাফ করে দেন।
মুখ তুলে এবার সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেন হাশেম সাহেব।সবার মুখগুলো থমথমে। শান্ত কণ্ঠেই বলেন —

-তোমাদের আজকেই আমার বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে।যাও, তোমাদের এমাসের ভাড়া দিতে হবে না। হঠাৎ বাসা ছাড়লে অতিরিক্ত একমাসের যে ভাড়া নেওয়ার কথা শর্তে আছে সেটাও দিতে হবে না। তবুও আজকেই তোমাদের বাসা ছাড়তে হবে।
কথাগুলো বলেই হনহন করে চলে যান হাশেম সাহেব। তার চলে যাওয়া পথের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে ছেলেগুলো।

আর কিছুদিন পরেই নির্বাচন। এলাকার অন্য বাসার মত হাশেম সাহেবের বাসার চারিদিকের দেয়ালও ভরে গেছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টার আর দেয়াল লিখনে। এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।কিন্তু কিছু করারও নেই।সন্ধ্যার পর বারান্দায় চেয়ারে বসে তিনি এ থেকে পরিত্রানের উপায় ভাবছিলেন।এই একটা বিষয় তার গত কিছুদিনের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।উঠে দাড়ান।সোজা ছুটে যান রঙমিস্ত্রির দোকানের দিকে।রঙমিস্ত্রিকে ডেকে এনে রাতেই বাসার চারদিকের দেয়াল নতুন করে রঙ করেন। রঙ করা শেষ হলে চারদিকের দেয়ালের উপর চারটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।যাতে লেখা,“এই বাসার দেয়ালে যে প্রার্থীর পোস্টার লাগানো হবে কিংবা দেয়ালে কিছু লেখা হবে তাকে এ বাসার কোন সদস্যই ভোট দিবে না।”

আজ নির্বাচন।এলাকার সবাই আনন্দচিত্তে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে ভোট দিতে।কিন্তু হাশেম সাহেব অনেক চিন্তিত। ভোট দেবার যোগ্য হবার পর থেকে তিনি কখনই ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন নি।কিন্তু আজকে কি করবেন ভেবেও পাচ্ছেন না তিনি।তার বাসার দেয়ালে যে কোন প্রার্থীর পোস্টার সাঁটানো কিংবা দেয়াল লিখন হয় নি।তাহলে এখন কি করবেন তিনি।তার ভোট তো একটাই।তবে কি সকল প্রার্থীকেই ভোট দিবেন তিনি?এও তো সম্ভব না।এখন তাহলে তার কি করা উচিত তা ভেবেও পাচ্ছেন না।বারান্দায় বসে বসে এসবই ভাবছেন।হঠাৎ “আব্বু”, “আব্বু” ডাকে সম্বিৎ ফিরে পান।সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে তার মেয়ে হিমু।আব্বু, তুমি ভোট দিতে যাবে না?
কিছু বলেন না হাশেম সাহেব।চিন্তিত মুখেই হিমুর দিকে তাকান শুধু।হিমু আরো এগিয়ে যায়।হাশেম সাহেবের মাথায় হাত বুলায়।

আব্বু, আমি জানি তুমি কি ভাবছ।আমাদের বাসার দেয়ালে কোন প্রার্থীরই পোস্টার কেউ সাঁটায় নি।তাই ভাবছ এখন তাহলে সবাইকে ভোট হিতে হবে।কিন্তু তুমি তা ভাবছ কেন? তুমি ভোট না দেবার কথা বলেছ, ভোট দেবার কথা না।এখন তুমি তোমার পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকেই তো নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারবে।
চেয়ার থেকে হাসিমুখে উঠে দাঁড়ান হাশেম সাহেব।তাই তো, হিমু তো ঠিকই বলেছে।হিমুর কপালে স্নেহের একটা চুমু এঁকে দেন তিনি।তারপর হাসিমুখেই পা বাড়ান ভোটকেন্দ্রের দিকে।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge