বৃষ্টি ও শেষ বিকেলের গল্প
পিয়াল হাসান
কিছু কথাঃ- “শেষ উপহার” গল্পে ছিল রাসেল ও বৃষ্টির পরিচয়। এরপর তাদের মধ্যে বন্ধুক্ত হয়। কিন্তু এ সম্পর্কের মাঝে রাসেল ভালবেসে ফেলে বৃষ্টিকে। কিন্তু বৃষ্টি তো রাসেলকে ভালবাসে নি। বন্ধু হিসেবেই দেখেছে সে রাসেলকে। আর গল্পের শেষে বৃষ্টি চলে যায় শহর ছেড়ে। রেখে যায় স্মৃতি। আর তা হলো একটি চিঠি। আর রাসেল সেই চিঠি নিয়েই বাঁচে। তারপর…
১
ঢাকার একটি দোতলা বাসা। এ বাসায় উঠেছে বৃষ্টি ও তার পরিবার। বৃষ্টির বাবা ইঞ্জিনিয়ার সাহেব সারাদিন ব্যস্ত থাকেন কাজ নিয়ে। বৃষ্টির মা সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বৃষ্টি ঢাকা ভার্সিটিতে অনার্স নিয়ে পড়ছে। ৩ বছর আগে ওরা যখন ঢাকা আসেনি তখন তারা মফস্বলে থাকতো। সে তখন ইন্টারমিডিয়েডে। যাইহোক ওর বাবা মা ওর জন্য ছেলে পছন্দ করে রেখেছে। নাম সাগর। আগামী বছর দেশে এলেই ওর হাতে বৃষ্টিকে তুলে দেবে ওর বাবা মা।
বৃষ্টি প্রতিদিন ঢাবিতে যায়। Tsc-তে বসে থাকে আর ওর এক বন্ধুর কথা ভাবে। যাকে সে কৈশরে হারিয়েছে। তাকে ছেড়ে চলে এসেছে এই ঢাকায়। নিজের ক্লাসমেটদের সাথে ওর সম্পর্ক ভাল। কিন্তু কৈশরে ফেলে আসা বন্ধুকে সে আজও ভোলেনি।
কিছুদিন হয় ঢাকায় মামার বাসায় উঠেছে রাসেল। বৃষ্টিকে হারিয়ে সে দিসেহারা। কেটে গেছে দীর্ঘ ৩টি বছর। তবুও রাসেল বৃষ্টিকে ভুলতে পারেনি। রাসেল এখন সারারাত রাস্তায় হাটে। সে বৃষ্টিকে ভূলবার জন্য এ পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু, সে কি ভুলতে পেরেছে বৃষ্টিকে। বৃষ্টি যখন তার কাছ হতে চলে যায়, তখনকার শেষ উপহারটা এখনও রাসেল ধরে রেখেছে। লেখক জানে না রাসেলের কি হবে। বিধাতা কি লিখে রাখছে তার জন্য।
২
এক সকালে বৃষ্টি ঘুম হতে উঠে হাতমুখ ধুয়ে তার ল্যাপ্টপ নিয়ে বসে। আজ সে সাগরের সাথে কথা বলবে। গতকাল রাতে ফেসবুকে সাগর তার সাথে কথা বলার জন্য স্ট্যাটাস দিয়েছে। ভিডিও কলের শুরুতে সাগর বলল,“Hello, Baby. ভাল আছ?”“ভাল। তুমি কেমন আছ?”“Fine. আঙ্কেল আন্টির শরীল কেমন?”“ওরা ভাল আছে।”“তুমি কি রাগ করেছ?”“না, রাগ করব কেন। রাগ করিনি।”“তাহলে?”“তাহলে কিছু না। বাদ দাও, তুমি তো শুকিয়ে গেছ সাগর।”“কাজের চাপ তাই শুকিয়ে গেছি। আরে, তোমার মন খারাপ মনে হয়। কি কোন সমস্যা?”“না, কোন সমস্যা নেই।”“আমার তো তা মনে হয় না। কি, কারো কথা মনে পড়ছে। কোন পুরনো বন্ধু, আই মিন রাসেল সাহেব বা অন্য কেউ।”একটু থামে সাগর। তারপর বলে, “যদি রাসেলের কথা ভাব তবে তুমি ভুল করছ। সে তোমার কাছে অতীত। আর আমি বর্তমান।”“বাদ দাও তো ওসব কথা। আমি কি ওকে পাব। আর তোমার শেষ কথাটা ঠিক যে, তুমিই আমার সব।”“ঠিক আছে বুঝলাম তোমার কথা। কিন্তু, এ ধরনের পাগলামু আর করনা।”“কোনটা পাগলামু?”“ঐযে পুরনো বন্ধু।”“By the by, এখন আমার একটু কাজ আছে। পরে কথা বলি। Bay.”
বৃষ্টি ল্যাপ্টপ বন্ধ করল। ওর মন আসলেই খারাপ। রাসেলের কথা আবার সাগরের মুখে শুনায় পুরনো সব কথা আবার ওর মনে খেলা করে। তবুও সে ভুলে থাকে সবকিছু।
৩
আতিকের অফিসের দরজা খুলে সেখানে প্রবেশ করে রাসেল। আতিক দেখে অবাক হয়। দাড়ি রাখতে শুরু করেছে রাসেল। আতিক রাসেলকে দেখেই বলল,“ঢাকায় এসেছিস কবে?”“এই তো কয়েকদিন হলো।”“তা উঠেছিস কোথায়?”“মামার বাসায়।”“দাড়ি রেখেছিস মনে হয়।”“বলতে পার। কারন বৃষ্টির খোজ আমি জীবনেও পাব না। তাই বাউন্ডুলে হতে ইচ্ছে করছে।”“তাই নাকি।”“হ্যা।”“ভাল, খুব ভাল।”একটু থেমেই আতিক আবার বলল,“আমার মনে হয় তুই বৃষ্টিকে কথা এখনো ভুলতে পারিস নি না।”“ঠিকই ধরেছ। আর তাই ওকে ভুলে থাকার জন্য আমি এ পথ ধরেছি। এখন আমি পথে পথে ঘুরি, আর চাঁদের আলো দেখি।”আতিক কিছু বলে না। একটু পরেই সে জানতে চায়,“তুই বৃষ্টিকে ভুলে যেতে পারবি।”“অবশ্যই পারব। পারতে আমাকে হবেই।”এরপর রাসেল কোন কথা না বলে উঠে পরে। আজ পথে নামবে সে। হাটবে সে সারারাত।
আজ সন্ধ্যায় বৃষ্টি সাগরের স্ট্যাটাস পেয়েছে। ক’দিন পর বৃষ্টির জন্মদিন। সে দিন সাগরের একটি উপহার আসবে। তাই এ স্ট্যাটাস। এজন্য বৃষ্টি খুবই খুশি। সে ফেসবুকে কি লিখবে তাই ভাবছে। কারন সে এখন ল্যাপ্টপ নিয়ে বসেছে। কিন্তু, বৃষ্টির মা সে সময় ওকে ডাকায় বৃষ্টি ফেসবুকে স্ট্যাটাস না দিয়েই এগুতে থাকল ডাইনিং রুমের দিকে।
৪
রাসেলের মামাতো বোন বৃষ্টিকে চেনে। কারন, বৃষ্টি তার বাবার ছাত্রী। কিন্তু, রাসেল তা জানে না। আজ বৃষ্টির জন্মদিন। তাই রাসেলের মামাত বোন রূপা ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। রাসেল এগিয়ে এল তার কাছে। বলল,“কিরে, তুই এত সেজে গুজে কই চললি?”“বাবার এক ছাত্রীর আজ জন্মদিন। তাই সেখানে যাচ্ছি।”“ওহ।”একটু থামে রাসেল। তারপর বলে,“জানিস। আজ না ওরোও জন্মদিন ছিল।”শুনে রূপা জানতে চায়,“কার জন্মদিন ভাইয়া! তোমার সেই মেয়ে নাকি।”“হ্যা-রে। কিন্তু, সে তো আজ আমার মাঝে নেই। আর কোথায় সে তাও জানি না।”“ভাইয়া, মন খারাপ করো না। কেউ তো কারো জীবনে বেশী দিন থাকে না। তবে আমার ধারনা, তুমি তাকে অবশ্যই ফিরে পাবে।”“তুই বলছিস।”“হ্যা বলছি। এখন যাই। টা-টা, ভাল থেক।”রূপা চলে যায়। আর রাসেল রাস্তায় নামে। ওর মামাতো বোনের মুখে বৃষ্টির কথা শুনে তার মনটা সহসা কেঁদে উঠে। আজ যে বৃষ্টির জন্মদিন আর সে যে তা মনে রেখেছে তা তার ভাগ্য। তাই সে আজ সারারাত এ জন্মদিনের কথাটি ভুলে থাকার জন্য রাস্তায় হাঁটবে। চাঁদ দেখবে। আজ যে পূর্ণিমা।
কিছুদিন পরের ঘটনা। বৃষ্টি তার স্যারের মানে রাসেলের মামার কাছে এসেছে। তাই, সে বেল টিপল। এদিকে রাসেলের শরীরটা সামান্য খারাপ করেছে। তবুও সে দড়জা খুলল। এ সে কাকে দেখছে। বৃষ্টিই তো। অনেকদিন পরে সে দেখল বৃষ্টিকে। প্রায় ৩ বছর।“কেমন আছ?”জানতে চায় রাসেল।“ভাল, তুমি?”বৃষ্টি বলে।“দেখতেই তো পাচ্ছ। সাগর সাহেব ভাল তো?”“আবার সাগর সাহেব কেন?”“না-য়া। ওনার সাথে তো তোমার……”“বাদ দাও ওসব কথা। তুমি খুব বদলে গেছ রাসেল। কৈশরের রাসেলটি আর নেই।”“ঠিকই বলেছ। বৃষ্টি, তুমি আবার আমার জীবনে আসতে পার না।”“না রাসেল। তুমি আমার বন্ধু ছাড়া আর কিছু ছিলে না। তোমাকে আমি কোনদিন এই বন্ধু ছাড়া অন্য কোন ভাবে দেখি নি।”“But why?”জানতে চায় রাসেল। সেই মূহূর্তেই রাসেলের মামা ঘরে প্রবেশ করলে ওদের কথা থেমে যায়। বৃষ্টিকে দেখে তিনি মানে রাসেলের মামা কখন বৃষ্টি এসেছে তা জানতে চায়। আর বলেন,“তোমাদের মধ্যে পরিচয় আছে নাকি?”“কিছুটা।”রাসেল জানায়। এরপর একটা নোট নিতে বৃষ্টি চলে যায় রাসেলের মামার সাথে ভিতরে। আর রাসেল থাকে চুপ হয়ে। কারন, এতদিন পর বৃষ্টিকে দেখে ও নিজের গভীরের দুঃখগুলো যেন নিজেই কবর দিতে থাকে নিজের ভিতরে। এজন্য সে নিরব নিস্তব্ধ।
যেদিন রাসেল বৃষ্টিকে তার মামার বাসায় দেখে সেদিন আতিক খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে। শম্পা মুগ্ধ হয় ওকে দেখে। দরজা খুলতেই আতিক শম্পাকে জড়িয়ে ধরে। এমন দিনে ওদের বিয়ে হয়েছিল। ইতিমধ্যে রাসেলের ব্যাপারে ওদের কথা হয়েছে। আজও কেক কাটা ও খাওয়ার পর রাসেলের ব্যাপারে প্রসঙ্গ তুলল ওরা। প্রথমেই শম্পা জিজ্ঞেস করল,“আতিক, রাসেলটা অনেক বদলে গেছে না।”“হ্যা-য়া। মনে হয় বৃষ্টিকে হারিয়েই সে এমন হয়েছে। আর তাই সে সারারাত হাটে।”“আচ্ছা, এর কি কোন সমাধান নেই?”“মনে হয় না।”তখনি ফোন বেজে ওঠে আতিকের। ফোন করেছে রাসেল।“হ্যালো কে রাসেল।”“জ্বি, ভাইয়া।”“কি খবর বল।”“বৃষ্টিকে দেখলাম।”“দূর পাগল। বৃষ্টিকে কই দেখবি তুই।”“মামার বাসায়।”“মানে?”“মানে, এখন সে মামার কাছে এসেছে। কারন মামার ছাত্রী সে।”“তাই নাকি।”“হ্যা।”পরক্ষনেই রাসেল বলল,“বৃষ্টিকে এবার আমি আর হারাতে চাই না ভাইয়া। ওকে আমি ভালবাসি।”“ঠিক আছে। বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা।”“কিন্তু ভাইয়া, ও-য় যদি আবার আমার জীবন থেকে……”“Don’t worry. দেখা যখন পেয়েছিস, কিছু একটা হবেই। তবে Be careful. Ok.” “ Ok.” ফোন কেটে দেয় আতিক।
সেদিন রাস্তায় নামে রাসেল। বৃষ্টির সাথে একটু আগেই দেখা হওয়ায় ওর মনটা আজ ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। তাই আজ রাস্তা দিয়ে হাটবে সে। কারন আজকের রাত তার কাছে শ্রেষ্ঠ রাত। আর আজ যে পূর্ণিমা।
৫
রাসেলের দিন ভালভাবে কেটে যাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু এখনও সে বৃষ্টিকে নিজের অস্তিত্ব থেকে মুছে ফেলতে পারে নি। সেদিন তার মামার বাসায় বৃষ্টিকে দেখে সে অবাক হয়েছিল। সামান্য কথাও হয়েছিল। কিন্তু, আজ রাসেল বড় একা। এদিকে রাসেলের মামাত বোন রূপা কোন ভাবে যেনে গেছে বৃষ্টি রাসেলের সেই হারান মানুষ। কিন্তু সে রাসেলকে কিছু বলে না। চুপ করে থাকে।
সামনের সপ্তাহে সাগর আসছে। সাগর আসার খবরটি পাওয়ায় বৃষ্টি আচমকা অবাক হয়। ঘটনাটা এমন। সে স্কাইপি চালু করেছে। সাগর বলল,“Hay baby. What’s up?”“Fine. Thanks. ভাল আছ?”“ভাল। শোন, আগামী শুক্রবার আমি ঢাকা আসছি। তৈরি থেক।”“তাই নাকি। আমি তো ভাবলাম দেরি হবে তোমার।”“না-য়া। সুযোক যখন পেলাম তখন হাতছাড়া করব কেন। তৈরি থেক। Bay.”
আতিকের অফিসে আবার রাসেল প্রবেশ করে। তার গায়ে পাঞ্জাবী। ইদানিং সে বাউন্ডুলে হয়ে গেছে। আর তাই পাঞ্জাবী। অন্যদিকে বাউন্ডুলে হওয়ায় সারারাত সে হাটতে থাকে। পূর্ণিমা দেখে। আতিক অবাক হয়ে রাসেলকে দেখে। তাকে পাঞ্জাবীতে দেখে আরো অবাক হয়। মুলত রাসেল পাঞ্জাবীটা পড়েছে দু’দিন হল। সে তা কিনেছে মগবাজার হতে। খুব সুন্দর লাগছে ওকে। রাসেল বলল,“ভাইয়া। আমি বৃষ্টিকে ভুলে থাকতে চাই।”“অদ্ভুত। খুব অদ্ভুত।”“মানে।”“মানে, তুই একদিন আমাকে বললি বৃষ্টিকে তুই পেয়েছিস। আবার আজ বলছিস ওকে তুই ভুলে যাবি। আচ্ছা তোর কি হয়েছে রাসেল? Anything wrong?”“Nathing. কিছুই হয় নি। আমি ছন্নছাড়া হয়ে গেছি ভাইয়া। দেখছ না আমার গায়ে পাঞ্জাবী।”“পাঞ্জাবী পড়লেই কি সব হওয়া যায়। আর ছন্নছড়া হয়েই বা তোর লাভ কি। লাভ আছে কোন।”রাসেল উত্তর দেয় না। তার এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।
যেদিন সাগর আসবে সেদিন সকালে বৃষ্টিকে ফোন করে রাসেল। বৃষ্টি যখন সাগরের জন্য ফুল নিয়ে রেডী হচ্ছিল তখনি ফোনটি করে রাসেল।“হ্যালো। কে বলছেন?”“বৃষ্টি আমি রাসেল।”“কেন ফোন করেছ?”“আমি তোমাকে ভুলে যেতে চাই। তবে একটা অনুরোধ। আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি আসবে। অনেক দিন বৃষ্টিতে ভিজিনা। আজ বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। তুমি কি আসবে। শেষ বারের মত একবার। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে বৃষ্টি। Please চলে এসো।”বৃষ্টি কোন কথা বলে না। মানে সে কি করবে তা বুজতে পারে না।“আসবে কিন্তু। আমি তোমার জন্য রমনা পার্কে অপেক্ষা করব। Please এসো। Bay.”
এই মাত্র প্লেন ল্যান্ড করল এয়ারপোর্টে। সাগর এসেছে শুধু একটি বার বৃষ্টির সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু, বৃষ্টি কোথায়। বৃষ্টি তো সেখানে নেই। কোথায় সে কোথায়?
রমনা পার্কে বসে আসে রাসেল। বর্ষার বাড়িধারা পড়তে শুরু করেছে। একটু পর বৃষ্টি সেখানে এল। সে যে রাসেলের কথা রেখেছে তা তাকে দেখেই বোঝা যায়। রাসেলকে দেখে বৃষ্টি প্রথমে অবাক হয়। গায়ে পাঞ্জাবী, মুখে দাড়ি। অদ্ভুত। রাসেল বৃষ্টিকে দেখে বলল,“এসেছ বৃষ্টি। তুমি এসেছ। Thanks a lot. আমি ভাবতে পারিনি তুমি আসবে।”“এখন তো এসেছি।”“বৃষ্টি, তুমি কি আমার হতে পার না। আর একবার। Please বৃষ্টি, কথা বল।”“না রাসেল। যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করা আছে তাকেই আমি ভালবাসি। তুমি আমার বন্ধু। আর কিছু না।”“তাইতো, তুমি তো সাগর সাহেবের……”“কি আমি কি। বল?”কথা আর এগোয় না। কারন বাড়িধারা বেড়ে গেছে তখন প্রচন্ড। কি হবে বুজতে পারছে না রাসেল। তবুও বৃষ্টিতে ভিজছে সে। ভিজছে বৃষ্টি। এতেই তার আনন্দ। শুধু এই ভেজা বেলায় বৃষ্টির একটি হাত ধরতে ইচ্ছে করে রাসেলের। কিন্তু সে পারে না। কেন সে পারে না। লেখকের তা জানা নেই।
৬
রাতে খেতে বসেছে বৃষ্টি। বৃষ্টির বাবা অফিসের কাজে বাহিরে গেছেন। মা কাজে ব্যাস্ত। সাগর বৃষ্টির সাথে বসেছে। সাগর উঠেছে হোটেলে। তবে বৃষ্টির মায়ের কথায় সে আগামীকালই বৃষ্টির বাসায় উঠবে। সাগর খেতে খেতে বৃষ্টিকে বলল,“বৃষ্টি। আজ তুমি এয়ারপোর্টে এলে না কেন?”“একটা কাজে গিয়েছিলাম। তাই।”“কি এমন কাজ যা আমাকে বলা যায় না।”“সাগর। Cool cool. এমন করছ কেন?”“এমন করছি কারন আমার সাথে তোমার বিয়ে তাই।”“শোন। আমি রাসেলের কাছে গিয়েছিলাম।”“ও-য়! ওনার কাছে। ভাল, খুব ভাল। এখন তো আমাকেই পাত্তা দেবে না দেখতেছি।”“সাগর। Keep easy. Ok.”“Ok. তবে আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি বৃষ্টি। খুব ভালবাসি।”“সেটা আমি জানি সাগর। কিন্তু রাসেলও তো আমাকে….”“আর কথা এগোয় না। ওরা মনোযোগ দেয় খাওয়ায়।
সাগর আসলে একজন ড্রাস বিক্রেতা। সে বিদেশে মাল সাপলাই করে। আত্মগোপনের জন্য সে বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু, এ দেশের গোয়েন্দা বিভাগ তাকে ধরতে প্রস্তুত। কারন, ওরা যেনে গেছে সাগরের কু-কীর্তী। সাগর তাই আজ সন্ধ্যায় হংকং-এর প্লেন ধরবে। এদিকে বৃষ্টি জানে না সাগরের এসব ঘটনা। যেদিন সাগর হংকং যাবে সেদিন আচমকা একটা ফোন আসে বৃষ্টির কাছে। ফোন করেছে CID রাশেদ চৌধুরী।
ফোন ধরতেই রাশেদ চৌধুরী বলল,“হ্যালো,বৃষ্টি ম্যাডাম কি আছেন?”“জি,বলছি।”“আমি CID রাশেদ চৌধুরী বলছি। আপনি জানেন কি আপনার সাথে যার বিয়ের কথা তিনি একজন ড্রাস ব্যাবসায়ি।”“মানে?”“মানে তিনি এখন হাজতে। আজই তিনি আমাদের হাতে ধরা পড়েছেন। সরি ম্যাডাম। এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় ছিল না। রাখি। ধন্যবাদ।”বৃষ্টি যেন কথাটা শুনে অবাক হয়। এ কি শুনছে সে। এটাও কি সম্ভব। যাকে সে এটতা ভালবেসেছিল। সেই আজ তাকে ধোকা দিল। সে আর স্থির থাকতে পারেনা। যেন সমস্ত পৃথিবী তার মাথার উপরে এসে পড়ল। আর তখনি সে মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। এসময় তার এ অবস্থা দেখে তাকে দ্রুত ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এদিকে রাসেল তার মায়ের অসুখের কথা শুনে সেই রাতেই পারি জমিয়েছে তার আপন ঠিকানায়। সে ছুটছে তার মায়ের কাছে।
৭
বৃষ্টি এখন ভাল আছে। সে বুঝতে পেরেছে সাগর একজন ভন্ড প্রতারক। সে তাকে নিয়ে খেলেছে মাত্র। তাই তার রাসেলের কাছে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আর এজন্য সে ছুটলো রাসেলের মামার বাসায়।
রাসেল ইতিমধ্যে তার মামার বাসায় ফিরে এসেছে। যেদিন বৃষ্টি রাসেলের মামার বাসায় গেল সেদিন রাসেল রমনা পার্কে বসে বাদাম চিবুচ্ছে। বৃষ্টি কিন্তু তা জানেনা। কলিংবেল টিপতেই রুপা যে রাসেলের মামাতো বোন সে দরজা খুলে দেয়। বৃষ্টি জানতে চায় রাসেল কোথায়। রূপা জানায় রাসেল রমনা পার্কে। সাথে সাথে বৃষ্টি রওনা দেয় রমনা পার্কের দিকে। রাসেলকে আজ তার বড় প্রয়োজন, বড় প্রয়োজন।
সেদিন ছিল আকাশ মেঘলা। বাদল দিনের কদম ফুল হাতে বৃষ্টি সেইদিন বিকেলে এসে হাজির হয় রমনা পার্কে। রাসেল যেন এ অপেক্ষাই করছিল। সে এগিয়ে এল বৃষ্টির কাছে। জিজ্ঞেস করল,“কেন এসেছ বৃষ্টি? What’s happen?”“রাসেল, আমার হৃদয় এখন ভেঙ্গে চুড়ে একাকার। তুমি কি এবার এখানে একটু বসবে।”“না-বৃষ্টি। তা আর হয়না। তুমি চলে যাও। সাগর সাহেবেই তোমার সব।”“না রাসেল। সাগর আমার সাথে খেলেছে, তুমি তো খেলনি।”“মানে?”“মানে, ও ধরা পড়েছে। ও একজন স্মাগ্লার।”“কিন্তু আমি তো ছন্নছাড়া। তুমি সুখী হবেনা বৃষ্টি।”“Please রাসেল। একবার আমার কথা শোন।”“মেঘ করেছে। বৃষ্টি আসতে পারে। চলে যাও তুমি।”“যাব না। আজ আমরা ভিজব দু’জনে।”“মানে?”বৃষ্টি হাসে। অনাবিল হাসি। বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। টুপটাপ তারপর একটু জোড়ে। বৃষ্টি রাসেলকে জড়িয়ে ধরে। আবেগে সে হাসছিল। এবার আনন্দে সে কাঁদে। কান্না পায় রাসেলেরও। সে আর নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে না। প্রচন্ড আবেগে সেও ধরে থাকে বৃষ্টিকে। তার ছন্নছাড়া জীবনের সাথে জড়িয়ে নেয় যেন সে বৃষ্টিকে। সে এতদিন পথে পথে হেটে ক্লান্ত হয়েছে। কিন্তু, আজ বৃষ্টির প্রেম তার ক্লান্ত হৃদয়টাকে ধুয়ে দিয়েছে। আজ সে বুজেছে মানুষ ভালবাসতে জানে। মানুষ কাঁদাতেও জানে। এদিকে বর্ষার বাড়িধারা তখনো পড়ছে। আর এ বাড়িধারায় মিশে যাচ্ছে দু’জন মানব মানবি। বৃষ্টি আর রাসেল। তাদের ভেজা যেন শেষ হবার নয়।
Leave a Reply