হেলেন আরা সিডনীর দুটি কবিতা
বিভেদীকরণে যন্ত্রণাক্লিষ্ট অন্তর
অজ্ঞাতে এসেই কাটছে বিষের ছুরি
তোমার – আমার, শ্বাস – প্রশ্বাসের নালী
চুপি চুপি বুকে চেপে বন্ধ করে দিচ্ছে
সারা বিশ্বের হৃদপিন্ডের সন্চালন।
মন বাগিচা ভালোবাসার কারুকাজ ভুলে
আত্মার নিবীড়তায়
বিভেদীকরণে যন্ত্রণাক্লিষ্ট
চারদিকেই চলছে দূরত্বের মাপজোঁক
একাকীত্বের ঘরে মৌনতার সাথে বাস।
শব্দমেঘেরা নিবীড় প্রণয়ে এসেও
থমকে যায় ; অনুভূতির ঝড়
মন আঙ্গিনায় নতুনের স্বাগতে সোহাগীশব্দে
মধুর বচনে পিপাসা মেটায়
শব্দদুয়ার মুখরিত হয়ে ওঠে ভয়কে জয় করে
হৃদয় চয়নে রুদ্ধস্বর প্রত্যয়ী বিশ্বাসে
আবরণ খোলে গোপনসুখের জীবন ব্রতে
“ প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে ।”
তাই যা কিছু ভুল ; পাপ – অন্যায় – অবিচার
তাই নিয়ে অনুশোচিত মনে হে প্রভু,
আজি এ নতুন বছরে তোমারি দ্বারে
দু’ হাত তুলে প্রার্থনা করি —
ক্ষমিও প্রভু ; ক্ষমিও মোরে
যদি যেতে হয়; যদি চলে যাই সময়ের অসময়ে
তবে ক্ষমা করে দিও হে রাব্বুল আলামীন
গন্তব্যের শেষ যাত্রাপথটি রেখো আমার
যন্ত্রনাহীন সহজ – সরল স্বাভাবিকতায়।
এ দেশ , বড় অসহায় আর গরীব দেশ
তাই চাই এ দেশের মানুষ – মাটির জন্য
তোমার রহমতের বারিধারা ; হতে চাই পরিশুদ্ধ
সজীব করে তুলো তুমি সারা বিশ্বের প্রাণশক্তি ।
চিকিৎসার প্রয়োজন নেই
অদৃশ্য ভয়াল থাবায় হারিয়ে যাচ্ছে ; হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সুদৃঢ় মনোবল
কোন পাপের সাগরে ডুবে যাচ্ছি হায়, সেও জানা নাই
দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে যেনো মহা পরীক্ষা নেবার মৃত্যুদূত
মানবতার দাবীদার মানুষ আজ অশ্রুসিক্ত – ভারাক্রান্ত হতবাক।
কতোটা পাষন্ড আর নির্মমতার হৃদয়ে বলতে পারি
পরিবারের বৃদ্ধদের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই
জায়গা নেই .. সময় নেই.. জনবল নেই..
নেই যে আর কোনো উপায়
আসলে কঠিন বিপর্যস্ততা আর টানাপোড়নে
মানুষ বড় বেশি আজ অসহায়
কাঁদছে মানুষ.. কাঁদছে আকাশ-বাতাস, কাঁদছে মাটি..
কাঁদছে সারা বিশ্বের নিষ্ঠুর – পাষন্ড্যেরও বিবেকবোধ
তোমার কাছেই তাই হয়েছে আজ সকলেরই মাথানত।
জলে-স্থলে, আপন নিবাসের টানে ছুটছে মানুষ
আসছে তেড়ে ভয়াবহ দুর্যোগের ঘনঘটা
গৃহবন্দী মানবতা ডুকরে কাঁদছে ; পারছে না ছুটতে
জাতি – ধর্ম – বর্ণ- শ্রেণী সকলে একি কাতারে দাঁড়িয়ে
সমধুর স্বরে ডাকছে – আল্লাহু আকবর ; আল্লাহু আকবর
থরথরিয়ে কেঁপে উঠছে অসীম নীলাকাশ
কোটি মানুষের মাথার উপরে তোমারি হাতের ভরসা।
দয়াময় তুমি দাও দেখা, তুমি নেমে আসো ধরার ধুলিতে
নেই..নেই মুক্তি ; আর কিছুতে নেই মুক্তি আমাদের
অস্থির চিত্তে পৃথিবী জুড়ে বিচ্ছিন্নতার নির্মম হাহাকার
ভীত – সন্ত্রস্ত এই বুঝি মৃত্যুর করাল গ্রাসে যায় প্রাণ
স্বজনেরা – বন্ধু বান্ধব এমনকি পরিবারেরাও অচেনা
বেদনাহত মনে নয়নাশ্রু মুছে পাথর সমান
চাই না এ মরণ প্রভু ; চাই না এ মরণ
সময় নাই – চিকিৎসা নাই – কাছে নেই কোনো আপন জন।
তুমি এসে পাশে দাঁড়াও প্রভু ; হাতটি মোদের ধরো
মৃত্যুর কালো হাত ; কষ্ট ছোঁয়া আর্ত চিৎকার
ঘুচিয়ে দাও ; ঘুঁচিয়ে দাও দূরত্বের মায়াজাল
আলো দাও প্রভু ; আলো দাও ; জীবনখানি ভিক্ষা দাও
দেখো.. দেখো চেয়ে হিংসা – বিদ্বেষ – দম্ভ সব.. সব মুছে
মনুষ্যবোধে আজ যেনো সকলে উঠেছে জেগে ।
জাগো মানুষ জাগো.. মানবতার বন্ধনে জাগো
ভুলে যাও বড় – ছোট ; যুদ্ধ আর আধিপত্য
ধন – দৌলত আর জৌলুসের ঘরে রেখো না অহংকার
আমরা সকলে আদম সন্তান ; কালো আর ধলো
একই স্রষ্ঠার সৃষ্টি মোরা ; রক্তের রঙে লাল
নতুন করে রাখি হাতে হাত ; পাঁজরের গভীরে একাকার
সকলের জন্যে সকলে বলি – সমঅধিকারে এসো ভালো থাকি
যদি ভালো থাকি ; যদি বেঁচে যাই আগামীর সময়ে
তবে নিও না কেউ চোখ আর মন উল্টিয়ে সুসময়ে আবার।