বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

হাওয়ায় জ্বলে আগুন-জাকির সোহান

হাওয়ায় জ্বলে আগুন-জাকির সোহান

হাওয়ায় জ্বলে আগুন
জাকির সোহান

রাত কি আর দিন কি। সে ঘরে থাকলেও যা না থাকলেও তাই। আর যা সম্ভব তা তো ফোনে হয়। এমনই ব্যক্তি ফালগুনীর কাছে নাজিম। নাজিমের অক্ষমতার কারনে ফালগুনীর পৃথিবীটা হাহাকারময়। থেকেও যেনো কি নেই। নাজিম একটা মূর্তি ছাড়া আর কি? পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনের চার বছরই কামনার অতৃপ্তি কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ফালগুনীকে। একে তো দুই ধর্মের ধার্মিকের বিয়ে। স্টুডেন্ট লাইফ থেকে সম্পর্ক। ক্যাম্পাসে তারা বিশেষভাবে পরিচিত ছিলো- দুই ধর্মের হওয়ায়। ধর্মের জিন হাজার বছর ধরে বহমান শরীরে কিন্তু ক্ষণিক প্রেমের কাছে তা বিলীন হয়নি আবার বাধাও হয়নি। প্রেমে কেউ নাক না ছিটকালে বিয়েতে দু-একজন বাদে সবাই এক ধরনের আপত্তি জানিয়েছে। তবু তারা বিয়ে করেছে।
নাজিম জানে রাতে বাসায় গিয়ে তেমন কাজ নেই। সন্ধ্যায় ফালগুনীর সাথে ফোনে ‘হায় হ্যালো’ বলে গলা ভেজাতে বারে ঢুকল। ফালগুনী অফিস শেষে সেক্সডল কিনে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে চা খাচ্ছে। হলিউডের মুভি দেখতে শুরু করল সে। দু’জনের লাইফ স্টাইল একই, কেউ কারো বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে না। কিন্তু এভাবে কতো দিন? সেক্সডলে বিরক্ত ফালগুনী। সে নাজিমকে শ্রদ্ধা করে, ভালোওবাসে। অপরদিকে নাজিমেরও অবস্থান একই ফালগুনীর প্রতি। নাজিমের সেক্স নিয়ে কোনো চাহিদা নেই-জড়াজড়ি, চুমাচুমি-এসব ফালগুনী বা অন্য কোনো মেয়ের সাথে চালিয়ে নিচ্ছে।
সকাল হয়ে গেছে। এখনও ফালগুনী একাই উদ্যোম হয়ে ঘুমাচ্ছে। নাজিমের কাছে বাসার চাবি থাকায় সে বাসায় ঢুকল। ফালগুনীর বিছানায় সেক্সডল দেখে মুচকি হেসে দিয়ে নাস্তা বানাতে লাগল। আধা ঘন্টা পর ফালগুনী ফ্রেশ হয়ে নাজিমের সাথে নাস্তা খেতে বসল।
নাজিম জিজ্ঞেস করল,‘ঘুম কেমন হলো?’ঘুমানোর জন্য ঘুম। এর বেশি কিছু নয়। তোমার কেমন ঘুম হলো? নাকি সারারাত মদ গিলেছ না ঘুমিয়ে?
ফালগুনীর প্রশ্নে নাজিম বলল, ‘মদে যদি সব পাওয়া যায় তাহলে আর কিছু দরকার বলো?’
নাজিম ফালগুনীকে বারে নিতে চাইল আজ শুক্রবার বলে। ফালগুনী জানাল, ‘যাওয়া যায়। তবে ভালো হয় কিছু কেনাকাটা করা। ভেবে দেখ, কেনাকাটা করাই ভালো।’
নাজিম ফালগুনীর কথায় সায় দিলো।
সকাল দশটার পর দু’জনে বের হলো সারাদিন ঘুরবে বলে। রিক্সায় ঢাকা শহর চষে বেড়াবে। রিক্সায় উঠল। রিক্সা চলছে। তবে আগের মতো ফিলিংস নেই কারো। চাওয়া-পাওয়াও নেই। ট্রাফিক সিংন্যালে আটকে গেল। ওদের রিক্সার পাশে বাইকে বসা এক জুটি মজা করছে। দু’জনের দৃষ্টি ওদিকে গেলে নাজিম ফালগুনীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। আর ফালগুনী নিরবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দীর্ঘশ্বাস ফেলার শব্দ শুনে নাজিম বলল, ‘তুমিও কি বাইকে চড়তে চাও?

না। চার চাকার গাড়ি ছেড়ে এমনি কি রিক্সায় চড়েছি?

তারপরেও অতীতের ব্যাপার-স্যাপার আছে না।

সেখানে কি আর ফিরে যাওয়া সম্ভব? ফালগুনী কেন জানি অন্যরকমভাবে বলে উঠল,‘থাক ওসব।’
দুপুরে রেস্টুরেন্টে খেয়েদেয়ে টি.এস.সি’র দিকে গেল। টি.এস.সি’র মাঠে একসাথে বসল-মুখোমুখী কিন্তু নাজিমের মধ্যে একটা অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। ফালগুনীর মধ্যে বেড়ে চলল অস্থিরতা। দু’জনেই বুঝতে পারছে না কেন এমন হচ্ছে। ওরা আবার হাঁটতে শুরু করল। চায়ের দোকানের কাছে আসতেই পরিচিত বন্ধুদের দেখা পেল। দু’জনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। কিছুক্ষণ আগের মেঘের ঘনঘটা পলকে কোথায় যেনো হারিয়ে গেল। বেশ জমিয়ে আড্ডা দিতে লাগল। সন্ধ্যার দিকে নাজিম ফালগুনীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ক’জন বন্ধুর সাথে কোথায় যেনো গেল।
ফালগুনী বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে রাত দশটার পর হেঁটে বাসা আসতে লাগল। সে একা একা হাঁটছে। ঘড়িতে সময় অনেক নয় কিন্তু ঢাকায় রাত অনেক। রাজপথের কোথাও আলোতে ঝকঝকে, কোথাও মৃদু আলো, কোথাও আলোকিত না হলেও আঁধারের প্রাধান্য বেশি। উচ্চ শব্দের বাইকগুলোতে পিক আপের টান পড়ায় গর্জে উঠে ছুটে চলেছে। কিছু বখাটে ছেলে কটু কথা বলল ফালগুনীকে। ওসব গুরুত্বহীন ভেবে অভিজ্ঞ লোকের মতো হেঁটে চলেছে সে।
বাসার সামনে রাস্তার মোড়ে একটা ছেলে দুইটা মেয়ের শরীরের দরদাম করছে। ফালগুনীর মনের মধ্যে কি রকম যেনো একটা অনুভূতি জাগল। কামুক দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখে- ছেলেটা দেখতে ভয়াবহ কুৎসিত। লম্বা লম্বা চুল, ছেলেটা গাঁজাখোর টাইপের হবে। আরো একটু ভালো করে তাকালো, বুঝল ছেলেটাকে টি.এস.সি-তে দেখেছে। সে ভার্সিটিতে পড়ে এবং নাটক করে। সামনে পেছনে এত মেয়ে থাকতে ছেলেটা রাস্তার মেয়ে ভাড়া করতে চাইছে কেন- এ নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল জাগল ফালগুনীর মনে। পাশে দাড়িয়ে মোবাইল টেপার অভিনয় করতে করতে ছেলেটার দরকষাকষি শুনছে সে। ছেলেটা এক পর্যায়ে মেয়ে দুটোকে নিয়ে কোথায় যেনো চলে যাচ্ছে।
ফালগুনী বাসায় চলে এলো। রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে ভাবছে- কোনো ছেলের সাথে সেক্স করতে পারে কি না সে। এর আগেও এসব নিয়ে ভেবেছে আজও ভাবছে। সেক্সে কোনো আপত্তি নেই তারপরেও একটা অপরাধবোধ কাজ করে। যদিও নাজিম বাধা দিবে না সে জানে। বরং হেল্প করতে চেয়েছে বেশ কয়েক বার। তারপরেও বাস্তবে এগুতে পারে না ফালগুনী। আচ্ছা নাজিম তো কোনো বিষয় নয় কিন্তু অন্যরা কি ভাববে? অন্যরা জানবে না। যদি জানে? জানলে কি হবে? সে কি কারো ধার ধারে? স্টুডেন্ট অবস্থায় শখের বশে কতো কি তারা করল। আর এখন প্রয়োজনে কেন পারবে না? নানান চিন্তায় ঢুবে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে জানে না ফালগুনী। পরের দিন সকাল বেলায় ঘুম ভাঙ্গল। নাজিম আসেনি বাসায় এখনো। শনিবার তো অফিস নেই কারো।
ফালগুনী নাস্তা করে চলে এলো টি.এস.সি-তে। সে সেক্স করার জন্য উতলা এবং প্রস্তুত। আজ একটা ছেলে চাই-ই চাই। কাকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। পরিচিত ছেলে বন্ধুরা এখনো কেউ আসেনি। কি যে হলো তার মাথার মধ্যে সেক্স ছাড়া আর কিছুই যেনো নেই। মনের মধ্যে সেক্সের আগুন জ্বলছে। এই বুঝি পাগল হয়ে যাবে। দু’ একজন বন্ধুর সাথে ফোনে ‘হায় হ্যালো’ বললো। কোনো সুবিধা করতে পারল না। একজন স্বল্প পরিচিত হ্যান্ডস্যাম এবং সেক্সি বন্ধুর দেখা হলো। দু’জনে হেসে হেসে কথা বলল- কিন্তু তাকে সেক্সের অফার দিবে কি না এই দ্বিধায় ভূগতে ভূগতে বন্ধুটা বিদায় নিয়ে চলে গেল। অবশেষে কালকের নাটকের যে ছেলেটাকে মেয়ে দরদাম করতে দেখেছে তাকে দেখতে পেল ফালগুনী। তাকে অনেক ফ্রেন্ডলি মনে হলো তাই তার কাছে গেল।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge