সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১৭ অপরাহ্ন

স্মৃতিময় ভ্রমণ: ১ ভ্রমণ দেশে-বিদেশে- ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ

স্মৃতিময় ভ্রমণ: ১ ভ্রমণ দেশে-বিদেশে- ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ

স্মৃতিময় ভ্রমণ ১
ভ্রমণ দেশে-বিদেশে
ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ

অস্ট্রেলিয়ার পথে আমকান্ড
কুকুরের হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেলনা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়া গেল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা। ইমিগ্রেশন সব পার করে এসেছি। বেল্ট কনভেয়র থেকে ব্যাগ নিয়ে কাঁধে ঝুলিয়েছি সবেমাত্রই। একটি কুকুর বারবার আমার ব্যাগে কামড় দেয়ার চেষ্টা করছে। সেটা দেখে ইমিগ্রেশন পুলিশ চটজলদি চলে এল। ব্যাগ খুলতে বললেন। খুললাম, জামা কাপড়ের সাথে বেড়িয়ে এল বেশ বড় সাইজের দুটি পাকা আম। আর যায় কোথায়! সাথে সাথে ১০০ ডলার ফাইন। ৭ দিনের অস্ট্রেলিয়া ট্যুরের হাত খরচা বাবদ সব নিলিয়ে প্রফেসর দিয়েছেন ২০০ ডলার। ১০০ ডলার এখানেই চলে গেলে, এই কয়দিন চলবো কি করে?
কুকুরটাও খুব পাঁজি। আম কি শুধু আমি একা নিয়ে এসেছি? আমার সংগী দুজন কোরিয়ান মেয়ে তারাওতো একই কাজ করেছে। কই তাদের ব্যাগেতো হানা দিতে পারছিস না? নাকি মেয়েদের ব্যাগে হাত দিতে নেই?
ফাইনতো মাফ করাতেই হবে। কি করা যায়? যতই বলছি, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমার ঠিক জানা ছিলনা। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি বন্ধুর জন্য আম দুটি নিয়ে যাচ্ছি। আমি নেহাতই কনফারেন্সে যোগ দেয়ার জন্য আপনাদের দেশে এসেছি। কে শোনে কার কথা? কিছুতেই কনভিন্স করা যাচ্ছেনা। অবশেষে শেষ অস্ত্রটি প্রয়োগ করলাম। এবার কাজ হলো। বললাম শুধু আমি কেন, আমার সংগী দুজনই যে একি কাজ করেছে। তাদের ব্যাগেও দুটি করে আম রয়েছে। তাদের টনক নড়লো। সাথে সাথে তল্লাশি, আম বের হলো, এবং যথারীতি, প্রত্যেককেই ১০০ ডলার করে ফাইন। এবার আমি যতটুকু ইংলিশ জানি তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে অনুনয় বিনয় করলাম। কোরিয়ান মেয়ে দুটি মানে একটি আমারই ল্যাবমেট জিয়ন, আরেকজন অন্য একটি ইউনিভারসিটির মেয়ে ( নাম মনে পড়ছে না) সেও ভাংগা ইংরেজী দিয়ে চেষ্টা চালালো।আমরা যে ছাত্র। শুধুমাত্র অজ্ঞতাবশেই কাজটা করেছি, তা বিশ্বাস করতে শুরু করলো। সবশেষে আমাদের জরিমানা মাফ। হাফ ছেড়ে বাচলাম।
যে আম নিয়ে এত কাহিনী, তার একটা ইতিহাস আছে। সালটা ২০০৮। আমরা কোরিয়া থেকে সিডনি যাচ্ছি সিংগাপুর এয়ারলাইনসে। উদ্দেশ্য সিডনিতে অনুষ্ঠিতব্য তাত্ত্বিক রসায়নবিদদের বিশ্ব সম্মেলনে (WATOC) যোগ দেয়া। মাঝে ৬ ঘন্টার ট্রানজিট। কি করা যায়? কোরিয়ানদেরতো ভিসা লাগেনা।আমি কি করবো? বাংলাদেশকে সবাইতো একটু ভিন্ন চোখে দেখে। তবে মোক্ষম একটা অস্ত্র আছে, দেখা যাক কাজ করে কিনা। ভালই কাজ হলো, যেন আকাশ হাতে পেলাম। অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের সিংগাপুরে প্রবেশে ভিসা লাগেনা। শুধুই কি প্রবেশ, সিংগাপুর সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয় এই ট্রানজিটধারিদের বিনে পয়সায় গাড়ির ব্যবস্থা রেখেছেন সিংগাপুর ঘুরে দেখার জন্য। ট্যুরিজমের কি সুন্দর ক্যাম্পেইন! আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো বুগিজ ভিলেজে। সেপ্টেম্বর মাস, কিন্তু বেশ গরম। পরে জেনেছি, সিংগাপুরে একটাই ঋতু। সারাবছরই গরম। এই দেশের কথা অনেক শুনেছি, অনেক প্রশংসা।সত্যি বলতে কি, কোরিয়ার উন্নতির কাছে সিংগাপুর নেহাতই পিছিয়ে। যাহোক, প্রায় ৪ ঘন্টা সময় আমরা বুগিজ ভিলেজে কাটালাম। টুকটাক কেনাকাটাও করলাম।তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হই বড় বড় আম দেখে। সবাই আম কেনলাম। ইচ্ছেমত খেলাম। আমগুলোও মিষ্টি। থাইল্যান্ডের আম। গত ২ বছরে কোরিয়াতে কত ফল খেয়েছি তবে আম পাইনি। মনের আনন্দে আম খাওয়ার পর দুটি আম আমার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি ফলিত রসায়নের বন্ধু রোমান ও রাসেলের জন্য নিয়ে যাওয়ার মনস্থির করলাম। আর তারপরই এতসব বিপত্তি।
লেখক: আঞ্চলিক পরিচালক ( দায়িত্বপ্রাপ্ত), উপ আঞ্চলিক পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার, রংপুর

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge