আজ বাবা দিবস। বাবাদের দিন।যদিও আমি খুব বেশী বাবাকে নিয়ে লিখি না। যতটা মায়ের জন্য লিখি। বাবাও কখনো এই নিয়ে কিছু বলেন না। এমনিতেই আমার লেখা থেকে শুরু করে সব কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক আমার বাবা।অন্য সবাই যতই ভালো বলুক না কেন,বাবা ঠিক কোন না কোন ভুল ধরবেই। তখন সাময়িক ভাবে রাগ হয় ঠিকই কিন্তু পড়ে উপলব্ধি করি এই সমালোচনাগুলোই তো পরবর্তীতে আমায় আরো শুধরে নিতে সাহায্য করবে, দৃঢ়তা জোগানোর কাজ করবে।
বাবা নিজের জন্য কবে শেষ কি কিনেছিল আমার তো মনে পড়েনা। কিন্তু যখনই বাবার জন্য কিছু কিনতে যাই বলবে আমার আছে, লাগবে না। কিন্তু আমি জানি লাগবে।দোকানে রীতি ঝগড়া চলবে একপ্রস্থ। এমনকি বাড়ি এসেও কথা শোনাবে । তবে বাবার জিনিস না কিনে বাড়ি আমি ফিরব না। আমিও তো বাধ্য মেয়ে কোনো কালেই নয়। ঐসব কথা শোনার আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।
আমার বাবার একটা বড় দোষ কোন কিছুই ফেলতে চাইবে না। পুরানো জিনিস ঝেড়েটেড়ে আবার গুছিয়ে রাখবে।এই নিয়ে বাড়িতে রাগারাগি কম হয়না। কিছুদিন আগেই ঘর পরিষ্কার করে কিছু জিনিষ নিজেই আমায় দেখালো, যেগুলো ছবিতে রয়েছে।আমি বললাম কি দরকার ছিল এইসব কেউ রেখে দেয় কি?ফেলে দাও।দিয়েছে শেষ পর্যন্ত ফেলে। তবে বুঝতে পারলাম দিদির আর আমার এইগুলো জিনিসের মাঝে শুধু আমাদের ছোটোবেলা নয় ধরাছিল বাবার বাবাবেলা। তাই প্রাণেধরে আর ফেলতে মন চায়নি।আমাদের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে ফেলেছে।যখন কোন জিনিস বাজারে নতুন আসবে বাবা অল্প হলেও নিয়ে আসে।যদি বলি কি দরকার এত দাম দিয়ে কেনবার । দাম কম হলে আনতে।বাবা বলে এখন অল্প থাক পরে বেশিকরে আনব ।জানি এটাই বাবার ভালোবাসা। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে না ফেরা অবধি রাস্তার ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকবে রোদ বৃষ্টি ঝড় যাই হোক।আমি রাগ করলেও শুনবে না। এটাই বাবার চিন্তা।
মায়ের সঙ্গে রোজ ঝগড়া না হলে তো হবে না। দুজনের সালিশি আমায় করতে হবে।
আমিও কথায় কথা অনেক সময় অনেক বেশি কিছু বলে দেই মাথা গরম করে। কিন্তু মাকে সরি বললেও বাবাকে জীবনে সরি বলি নি।জানি বাবা ঠিক সব বুঝে যায়। অন্যদের জন্য উপকার করেও বাবাকে চিরদিন ঠকতে হয়েছে, অনেক কথা শুনতে হয়েছে।তবে একথা জানি আমার বাবা একজন সৎ মানুষ।দাদুকে যেমন কোনো দিনও বাবার জন্য মাথা নীচু করতে হয়নি, আজীবন বাবা দাদুর সবচেয়ে বড় ভরসা ছিল তেমনি আমিও যেন বাবার ভরসা টুকু হয়ে উঠতে পারি ,গর্ব নাই বা হলাম।বাবা তোমার ভালোবাসা আমার আকাশ । এই আকাশের নীচে আমৃত্যু আমার পৃথিবী ডুবে থাক।