সোনালি দিন আসে যদি: এম এ শোয়েব দুলাল, প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রকাশক: শাকিলা পারভীন, পাতা প্রকাশ: রংপুর, গ্রন্থস্বত্ব: লেখক, প্রচ্ছদ, চারুলস্কর। মূল্যঃ ২৫০/- টাকা মাত্র।
‘সোনালি দিন আসে যদি’ এমন প্রত্যাশায় যাপিত জীবন কাটে কাস্তের কষ্টে। তবু ভালোবাসায় এক মুঠো স্বপ্নের কাছাকাছি কবি খুঁজে ফিরে স্বপ্ন দেখাতে।
এ স্বপ্ন দেখাতে আপেক্ষিকতা সহজ সমীকরণে সমাধানের পথ নেই। তাই তো কবি বেঁচে থাকেন সময় অসময় পেরিয়ে কালে বহু মাত্রিক প্রচ্ছদে। আপনার অনুভূতি নিজস্ব ভূগোলের সীমা পেরিয়ে কালোর উত্তীর্ণতায় স্বমহিমায় সামষ্টিক অনুভূতির মিথস্ক্রিয়ায়।
সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত এম এ শোয়েব দুলাল এর ‘সোনালি দিন আসে যদি’ বহুমাত্রিক কাব্য। চুয়ান্নটি কবিতায় কখনও বসন্তের অপূর্ব আগমন, স্মৃতি জাগানিয়া বেদনা-বিধূর অসমাপ্ত কথন, দলিত মানবতার কথা, দ্রোহ-আর ভালোবাসার এমন শানিত ঝংকার হৃদয় ছুঁয়ে হৃদয়ের ভিতর ঘুরপাক খেতে থাকে। মনে হয় নিস্তব্ধতা চিৎকার তোলে; জেগে ওঠার আহ্বানে।
মুলত কবিতায় থাকে সুললিত শব্দের নাচ। সময়ের এ বেলায়, কালের কাঠিন্যতায় কবিতা মেলেছে অবিনাশী মোহনায়। তবুও কবিতায় বাঁক নিতে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত দেখাতে হয়। অনুপস্থিতি এমনটা কোন কোন কবিতায় এক পা দাঁড় নিয়েছে। যা বাংলা কাব্যের কালজয়ী কবিদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমালোচনা এনেছে।
যদিও শোয়েবের কবিতায় এমন দৃশ্য হরদম পাখা মেলে কালের বসন্তে কোকিল আর কোকিল হয়ে ফিরে না।
‘যদি তুমি ফেরো’-
চোখের পাতায় এখন বেদনার চর/ ভূমিহীন খাঁ-খাঁ করে চির চেনা ঘর/ দূরত্ব বাড়ায় কাঁদে মহাকাল/ দেখিনা আমি সোনালি সকাল।
কারণ “আর কত গণহত্যা দেখবে বিশ্ববাসী ফিলিস্তিনের গাজায়” দীর্ঘ কবিতায় শিরোনামে এমনত দ্রোহ ক্ষোভ স্বাভাবিক। যেখানে মানবতা নিষ্পেসিত বৃহৎ শক্তিধর মার্কিন সহায়তায়। সেখানে আমরা ও কবির মতো সোনালি সকাল খুঁজে ফিরি আহুত বিলাপে।
গাজার পথে পথে ট্যাংক, সাঁজোয়াযান/ চলছে স্থল অভিযান/ গাজা এখন মৃত্যুর শহর/ আর কত গণহত্যা দেখবে বিশ্ববাসী ফিলিস্তিনের গাজায়?
সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যে ‘মানুষ নামের অমানুষ’ কবিতায় এক নির্মোহ বাস্তবতা যা সময়ের প্রেক্ষাপটে দালিলিক প্রতিচ্ছবি। যার আবেদন সময় এর পেটে পিঠে বসে চলমান:
আমরা শহরে কোন অমানুষ নেই/ হয় না নারী নিপীড়ন/ এ শহরে কামুকের উপদ্রব উল্লাস নেই/ নেই রক্ত ক্ষরণ/ তোমার শহরে মানুষ নামের অমানুষ/ হর হামেশা উল্লাস করে/ নারীর নাভীমূলে আঁকে যৌনতার বিভৎস ছাপ/ করে রক্ত ক্ষরণ।
ছোট ছোট কবিতায় এক ধরনের ওপিটাপ ধর্মী কবিতা এম এ শোয়েব দুলালের হাতে বেশ যত্নে বেড়ে ওঠে। তার অন্যান্য কবিতার বইয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো টিপে বধূর কপাল যেন আলোকিত হয়ে ওঠে। এমনই একটি কবিতা: (রোদসী ও আমি)
রোদসী মেঘ আমার বলতো/ পৃথিবী ও কী টেনশনে/ না তোমার মতো পেনশনে?/ আশাহীন বালু চরে/ এক আকাশ স্বপ্ন মনে/ আমি এখন অন্য জনে।
কবিতার কাছে এমনই উপমা যা কবির একান্ত অনূভব তা সামষ্টিক অনূভবে আম-জনতার ঐক্যতানে এক বিরল সৃষ্টিময় পোস্টারে ক্যাপশন হয়ে ওঠে। এসবই কালের স্পর্শ ছুয়ে আগত দিনের কাছে ছুটে চলেছে।
কবিতায় এমন মুন্সিয়ানা এক ধরনের স্বকীয়তা, সৃষ্টিতে অন্বয় কীর্তি।
ধরা যাক:
সময় শুধু চলে যায়/ ফিরে আসে না ফিরবেও না/ মেঘের ভেলায়/ সব সৃষ্টির জনক যিনি/ তিনিই হলেন ‘রব’/ আমার অনুভব/ সময় শুধু মন ভোলায়/ লোভ লালসার দুনিয়ায়।
কিছুটা বাঁক ঘুরিয়ে এমন উপমা টানা, প্রেক্ষাপটে উল্টানো, সময় সময় সত্যি কী তাতে ছন্দ পতনের ইঙ্গিত আনে।
যদিও এমনটা প্রত্যাশিত কোন কোন কবিতার অবয়ব-এ, সামান্য স্কেচ খর কুটোর ভিতর শৈল্পিক পরিধির মাপকাঠি ফেলে কিছুটা প্রতিচ্ছবি জলরঙে মিশে। আবার অন্য এক কবিতায়:
ফাগুন ছিল ভালো বাসায়/ আগুন ছিল আশায়/ প্রেম পিরিতির স্মৃতি গুলো/ চোখের জলে ভাসায়
ভাসতে ভাসতে চোখের জলে নীল কমলই ফুটে। ফুটতে হয় তাই ফুটে। সহজ সরল এমন উপমা-বুদ্ধিদীপ্ত পাঠকের কাছে সহজ হয়ে ওঠে না। কারনটা ব্যক্তিগত হলে সামষ্টিক ভাবনায় তাড়িত করে না। যতটা সামষ্টিক ভাবনা চেতনার স্ফুরণ শৈল্পিক ভাবনার কাছে অনবরত হাতছানি দেয়, অন্য উপমায় তা নিতান্তই আলো ও ছায়ার সাময়িক সময়।
তোমার শহরে/ প্রতিদিন বদল হয় কষ্ট/ নীল খামে/ আমার শহরে/ কষ্টগুলো হেসে ওঠে/ হলুদ খামে/ সবুজ খামে কষ্ট গুলো/ বার্তা দেয় তোমার আমার/ অফুরান ভালোবাসার।
ঝিনুকে মুক্তা জন্মে, তার বর্হিপ্রকাশ বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্নতায়। যতই কবিতা দেখি, দ্যুতিময় ঔজ্জলতা শুধুই পূর্ণিমা।
‘সোনালি দিন আসে যদি’ এমনই ভালোবাসায় ভরা কবিতা। মূদ্রণ চমৎকার। বানানে তেমন একটা বিভ্রাট চোখে পড়ে না। চারু লস্করের সুন্দর প্রচ্ছদ ভালোই হয়েছে। বইটি কবিতা প্রেমিকদের হৃদয় ছুঁয়ে ভালোবাসার কথা বলবে।