সুশান্ত নন্দীর দুটি ছড়া
পরিচারিকা এবং…
(একটি সচেতনার ছন্দ বার্তা )
বাড়ির কাজের মাসি
সবেতনে ছুটি,
ওরাও খাক ঘরেই বসে
গরম ভাত বা রুটি।
এই যে আসা যাওয়া
বিপজ্জনক বুঝি,
কে যে কি করছে বহন
কোথায় সেটা খুঁজি!
রান্না করেন যিনি
তারও ছুটি হোক,
একটু সেবা নাইবা পেলেন
শুনুন বড় লোক।
আমার,তোমার,সবার
ঝুঁকি থাকে এ-কাজে,
আমাদেরও পেন ডাউন
হয় যে মাঝে মাঝে।
সবেতনে ছুটি নিয়ে
নিজের হিসেব মেলাই,
কাজের মাসির বেলায় কেন
মাইনে কাটা চাই?
ছি!ছি!নাহোক এমনতরো
ওরাও মানুষ ভাই,
এ কটা দিন ওদের ছুটি
জানিয়ে দিও তাই।
আয়া মাসি,কেয়ার টেকার
আর দারোয়ান যারা,
ওরাও সচেতন-তায়
এবার পাক ছাড়া।
এই যে বসে আছি
বাড়িতে দিন রাত,
এইতো সুযোগ সবাই মিলে
লাগাই কাজে হাত।
একটু নাহয় রান্না করি
বাসন মাজি নিজে,
হোস্টেল বা মেসের স্মৃতি
পেতেই পারি খুঁজে।
একটু আয়ে চলছে ওদের
যুদ্ধ জীবন বাবা!
এই মানবিক ছুটি দিয়ে
রোজগারেতে থাবা?
এই ভাবনার কাজ বুঝি
অমানবিক বটে,
অসামাজিক তকমা এসে
লাগবে তাদের পিঠে।
সবুর করো এ কটা দিন
বেঁচে থাকলে পরে,
“করোনা”এসব কিছুই
ছন্দ ফিরুক ঘরে।
বাড়ির কাজের মেসো
(একটি ব্যাঙ্গাত্মক ছড়া)
সবেতনে ছুটি নিয়ে
বাড়ির কাজের মাসি,
গালের ভেতর পান ঢুকিয়ে
পিক ফেলে দেয় হাসি।
পায়ের উপর পা তুলে
আল্লাদে আটখানা,
উঁকি মেরে দেখে বাবুর
কান্ড কারখানা।
গিন্নী হাঁকেন বাবুমশাই
সবজি দাও কেটে,
এত্তো কাজ বাড়ির আমার
ভাল্লাগে না মোটে ।
বাবু গিরি ছেড়ে এবার
ঘর গোছাতে এসো,
মাসির জায়গায় এ কটা দিন
হলেইবা কাজের মেসো।
বাটনা বেটে রান্না করার
ছিলই আমার ঝোঁক,
মিক্সি দেখে সেসব ভোলে
বাড়ির কাজের লোক।
পুরুষ মানুষ পারবে তুমি
মশলা গুলো বাটো,
এরপরেতে আনাজ শেষে
মাছের মুড়ো কাটো।
হায় বাবু সাব সাট ডাউনে
তোমার কি হাল হলো!
গ্যাস ফুরিয়ে ধোঁয়ায় ধোঁয়ায়
জ্বাললে খড়ির চুলো।
এসব দৃশ্য দেখতে রোজ
কাজের মাসি আসে,
গ্রিলের ফাঁকে মুখ লুকিয়ে
ফিক করে দেয় হেসে।
এই শুনছো মেয়ের বাবা
পাড়ার মোড়ের থেকে,
এরই ফাঁকে বাজার সারো
গিন্নী বলেন হেঁকে।
চলি বাপের বাড়ি
একটু ঘুরে আসি,
ভাল্লাগেনা এত্তো অর্ডার
আমি কি চাপরাসি?
থাকলো ছেলে মেয়ে
একটু রেখো দেখে,
নজর রেখো ওরা যেন
নামতা গুনতে শেখে।
রাগ করোনা লক্ষীটি
আমার প্রিয় স্বামী,
এই কটা দিন আয়েস করে
আসবো ফিরে আমি।
সাট ডাউনে স্বপ্ন ছিল
এই ছুটিতে বেশ,
একটু আরাম খানা পিনা
থাকবে খুশির রেশ।
উল্টো হলো সব
একুশ দিনের শেষে,
অফিসটাই লাগবে ভালো
বড় বাবুর বেশে।