সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন

সিকিম, দার্জিলিং : বরফ, নদী আর পাহাড়ের দেশে-লতিফুর রহমান প্রামাণিক

সিকিম, দার্জিলিং : বরফ, নদী আর পাহাড়ের দেশে-লতিফুর রহমান প্রামাণিক

পঞ্চম ও শেষ পর্ব
পুরো ভ্রমণে ভালো ঘুম হয়নি আমাদের। তবে এই ঘুম হারানো অভিজ্ঞতা আমাদের পুরনো। ঠিক ভোর সাড়ে তিন বাজতেই সবাই উঠে পড়ি। ড্রাইভার ঠিক চার টা ১৫ বাজতেই হাজির। তাড়াতাড়ি হোটেল থেকে নেমে গাড়ির ভিতর বসে পড়ি। গতকাল রাতে অনেক বৃষ্টি হওয়ায় মনের ভিতর একটা ভয় ছিলো, হয়তো মেঘ বা বৃষ্টির জন্য আমাদের সূর্য উদয় হওয়া ভেস্তে যাবে। কথা প্রচলিত আছে যে, অনেক পর্যটক দুই বা তিন বার চেষ্টা করে ও নাকি সেই কাংখিত কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্য উদয় হতে দেখেনি। বলে না ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আর ঠেকায় কে? আজকের এই ভোরের মতো ভোর নাকি কপাল গুনে পাওয়া যায়। আগেই বলেছি, পাহাড়ের ভোর মানে একটা স্বর্গীয় অনুভূতি খুঁজে পাওয়া। আমাদের হোটেল থেকে টাইগার হিলের দূরত্ব প্রায় এগারো কিমি। পাহাড়ি আঁকা বাঁকা রাস্তায় যেতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগবে।
দার্জিলিং টাইগার হিলের উচ্চতা ২,৫৯০ মিটার।

টাইগার হিল জায়গাটি দার্জিলিং শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দার্জিলিং থেকে এখানে জিপে করেও যাওয়া যায়। আবার চৌরাস্তা, আলুবাড়ি বা জোড়বাংলা হয়ে পায়ে হেঁটে গিয়ে, তারপর পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠেও পৌঁছানো যায়।
সূর্যোদয়ের সময় নিচু উচ্চতায় সূর্যকে দেখতে পাওয়ার আগেই কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরগুলি আলোকিত হয়ে ওঠে। পৃথিবীপৃষ্ঠের বক্রতার জন্য টাইগার হিল থেকে মাকালু পর্বতকে (৮৪৮১ মিটার) মাউন্ট এভারেস্টের (৮৮৪৮ মিটার) থেকে উঁচু মনে হয়। টাইগার হিল থেকে সরলরেখায় মাউন্ট এভারেস্টের দূরত্ব ১০৭ মাইল (১৭২ কিমি)।
আকাশ পরিষ্কার থাকলে দক্ষিণে কার্শিয়াং শহর এবং কিছু দূরে দক্ষিণেই তিস্তা নদী, মহানন্দা নদ, বালাসোন নদ ও মেচি নদীকে সর্পিল পথে এঁকে বেঁকে চলতে দেখা যায়। চোলা পর্বতমালার পিছনে অবস্থিত তিব্বতের চুমল রি পর্বতটিকেও টাইগার হিল থেকে দেখা যায়। এই পর্বতটি টাইগার হিল থেকে ৮৪ মাইল (১৩৫ কিমি) দূরে অবস্থিত। সেঞ্চল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য টাইগার হিলের কাছে অবস্থিত। আমাদের গাড়ি যথাসময়ে হাজির হয় টাইগার হিলে। এত মানুষ এখানে কল্পনায় আসেনা। মানুষের চোখে মুখে অধীর আকাঙ্খার অভিব্যক্তিটা স্পষ্ট। কেউ কেউ ফিসফিস করে বলছে, এর আগে ও দুবার এসেছি কিছু সূর্য উদয় হতে দেখিনি। মেঘ আর কুয়াশার চাদরে ঢেকে ছিলো সূর্য আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। হিম শীতল ঠান্ডার ভোর। যেন বরফ থেকে ঠান্ডা উড়ে আসছে। সুবহানাল্লাহ। আমাদের চোখের সামনে তখন দৃশ্যমান কাঞ্চনজঙ্ঘা। মনে হচ্ছে এই তো সামনে। এই সুন্দর মুহূর্ত দেখার বাসনা হয়তো পুর্ন হবে না অনেকের। মিনিট কয়েক পর আরেকটি পাহাড়ের বুক থেকে তেজি সূর্য উঠে আসে। করতালি আর মানুষের আনন্দের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। সাদা বরফ মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন মুহূর্তে বদলে গেল। সূর্য কিরণে ঝলমলিয়ে সাদা বরফ গুলো তখন সোনার মতো চকমকে হয়ে যায়। আর কাঞ্চনজঙ্ঘার আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের মুখ আর শরীর হয়ে উঠে আরো উজ্জ্বল আর ঝকমকে।৷ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপর আরেকটি নাম হচ্ছে তুষারের পাঁচ ধনদৌলত। এ ধরনের নাম দেওয়ার মূলকারণ হলো, কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পূর্বের পর্বতশ্রেণীগুলো থেকে প্রায় ২৭০০০ ফুট এরও বেশি সুউচ্চতায় অবস্থিত রয়েছে এবং এর রয়েছে ৫টি পর্বত চূড়া। এই চূড়া গুলোর প্রত্যেকটিকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার পর্বতশৃঙ্গের পাঁচটি ঐশ্বর্যগর্ব বলা হয়ে থাকে।হিমালয়ের Mount Avarest এর দক্ষিণ ও পূর্বের দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অবস্থান। এই পর্বতশৃঙ্গকে হিমালয়ের সবচেয়ে উচ্চতর এবং ২য় শৃঙ্গ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এখানের যে ৫ টি চূড়া রয়েছে এর মধ্যে ২ টি ইন্ডিয়ার সিক্কিম নামক জেলায় এবং ১ টি নেপালের সীমানায় অবস্থান করছে। আর বাকি ২ টি রয়েছে নেপালের অন্তর্ভুক্ত তাপ্লেজুং নামের জেলায়। মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘার মূল কেন্দ্র হলো ভারতের দার্জিলিং শহরে। ভারতের দার্জিলিংয়ের স্থানীয়বাসিন্দা – রা ৫ টি ঐশ্বর্যের অধিকারী কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পবিত্র ভেবে বিশেষ দিনে পূজা করে থাকেন।

এভাবেই খানিকটা সময় পার করছি। কিন্তু কি অদ্ভুত বিষয়, মিনিট পনের মধ্যে কোথা থেকে যেন কুয়াশা আর মেঘ এসে ঢেকে ফেলে পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমরা ফিরে আসছি এরপর। ড্রাইভার জানাল দাদা এখানে টিকিট কেটে নিতে হবে। ৭০ রুপী করে। এই বিষয় টা আগে জানা ছিলো না। কিন্তু তাই বলে ৭০ রুপি। অবাক হলাম। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই কর আরোপ নাও করতে পারতো অন্তত পর্যটকদের জন্য। পর্যটক আসে বলে দার্জিলিং আজ এত সুন্দর। নানা ভাবে পর্যটক রা বাচিয়ে রাখছে এই পাহাড়ি জনপদের মানুষকে। মোটেও কাম্য নয় অতিরিক্ত কর আরোপ আর টিকিটের এই বাড়াবাড়ি। অদূরে এই টাকা কামাইয়ের ধান্ধাবাজি হয়তো প্রকৃতির এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে পার্কের পর্যায়ে নিয়ে যাবে যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত এবং পর্যটকরা।
দীর্ঘ গাড়ির সারি। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য বাতাসিয়া লুপ। বাতাসিয়া লুপ বলা যায় শহরের ভিতর ই। রাস্তার পাশেই। স্থানটি দার্জিলিং থেকে ৫ কিমি (৩ মা), ঘুম শহরের নীচে অবস্থিত।এছাড়াও ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা সৈন্যদের একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে যারা ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর তাদের জীবন উৎসর্গ করেন।

বিখ্যাত খেলনা ট্রেন যাত্রা করে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের পথে বাটাসিয়া লুপ (একটি উইন্ডিজ প্লেস) এবং ওয়ার মেমোরিয়াল দিয়ে যায়। এই জায়গাটি 5 কিমি। দার্জিলিং শহরের আগে এবং ঘোম (বিশ্বের সর্বোচ্চ পয়েন্ট যেখানে লোকোমোটিভ ইঞ্জিনগুলি পরিচালনা করে) এবং দার্জিলিং শহরগুলির মধ্যে অবস্থিত। বাটাসিয়া লুপটি মাউন্টেনের দর্শনীয় দর্শনের জন্য মানুষকে আকর্ষণ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং অন্যান্য তুষারপাত হিমালয় পর্বতগুলি এবং দার্জিলিং হিমালয়ান রেলপথের অসাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিং আশ্চর্য দেখায় যেখানে প্রায় অজ্ঞাতসারে রেললাইনটি একটি বৃত্তের সাথে আলোচনা করে এবং উচ্চতায় 1000 ফুট নিচে নামায়।বাতাসিয়া লুপের কেন্দ্রে একটি ওয়ার মেমোরিয়াল দাঁড়িয়ে আছে। এই স্মৃতিসৌধটি জেলা সৈনিক বোর্ড, দার্জিলিং কর্তৃক সাহসী গোর্খা সৈনিকদের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল, যারা স্বাধীনতার পর থেকে জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিল। এই স্মৃতিস্তম্ভটি 22 শে মার্চ, 1995-এ পবিত্র হয়েছিল স্থানীয় মানুষ এখানে পর্যটকদের জন্য হস্তশিল্প এবং পশমের জিনিসপত্র বিক্রি করতে ভিড় করে। ৩০ রুপি করে টিকিট কেটে আমরা ভিতরে ঢুকে পড়ি। সুন্দর আর গোছালো করে সাজানো এই। লুপ মানে বক্রাকার। এখানে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা চমৎকার দেখা যায়। অর্থাৎ দার্জিলিং এর চারপাশ থেকে আপনি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। পুরো লুপ অনেক টা বড় পার্কের মতো দেখতে। তবে এখানকার বিশেষত্ব হলো আপনি দুনিয়ার আর কোথাও দাঁড়িয়ে হাতের কাছে পৃথিবীর তৃতীয় সু-উচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন না। নানা ধরনের অর্কিড, রডোডেন্ড্রোন আর অজানা ফুলে ফুলে পুরো বাতাসিয়া লুপ এক অসাধারণ রূপ ছাড়াচ্ছে। হরেক রকমের দোকানে ভর্তি। গরম কাপড়, আরও ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ছোট খাট জিনিসপত্র। তবে দাম টা বেশ চায় তারা। প্রায় সব দোকানী মহিলা অর্থাৎ গুর্খা নেপালী। দামাদামি না করে নিলে ঠকে যেতে হবে। পুরো লুপ ঘুরে বেড়াতে মোটামুটি ভালো সময় লাগবে। শান্ত শীতল আর কোলাহল মুক্ত পরিবেশ আর দূরের খাড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে সময় পার করার জন্য অসাধারণ একটা জায়গা এটা। আমরা ও কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে নেমে পড়ি পাহাড়ের উপর থেকে আবারও গাড়িতে চলছি। অত্যন্ত গোছানো শহর দার্জিলিং। রাস্তায় পর্যটকদের পায়ে মুখরিত হয়ে থাকে। সারাদুনিয়া থেকে ছুটে আসে এই পাহাড়ের রূপ আর একাকিত্ব ঘুচাতে। নির্মল বাতাস, পাহাড়ের সাদা মেঘের খেলা আর বৃষ্টিতে গা ভেজাতে। একটা বিশাল চা বাগানের গেটে গাড়ি থামলো। আমরা গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ি, আহা কি সৌন্দর্য। দুনিয়ার আর কোথাও এমন চা বাগানের খোঁজ হয়তো পাওয়া যাবে না। ঘনো ঘনো বৃষ্টি হওয়ার কারণে চায়ের পাতা গুলো সবুজে সয়লাভ হয়ে গেছে। আর তার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুহাত মেলে সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা। চা বাগানের মাথার উপর কাঞ্চনজঙ্ঘা। একবার ভাবুন তো। এই নশ্বর রূপে প্রেমে পড়া ছাড়া উপায় নেই। চা বাগানে রাজা রানীর কাপড় ভাড়া মেলে। ফাহিম আর রায়হান দেখি হটাৎ রাজা হয়ে গেছে, সাথে তারেক আর মিঠুন। এবার আমার পালা। আর কি উপায় ছিলো এদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া। আমি ও রাজা হয়ে গেলাম এই পাহাড়ের দেশে। কিন্তু রানী কই? এবার জুটে নিলাম দ্রুত একটা সুন্দরী রানীকে। অসাধারণ একটা রুপসী রানী যেন মুহুর্তে সব রাজার মনোবাসনা পুর্ন করে দিল। রানী ও যেন আমাদের পেয়ে মুহুর্তে হারিয়ে যায় কল্পনার রাজ্যে। তারপর কাঠের তলোয়ারে একটা সাবধানী রক্তপাত হীন যুদ্ধ হলো। জয় পরাজয় স্থির। সিদ্ধান্ত হীন। এই পাহাড়ের পাতার তাজা চা বিক্রি করে এর দরজার সামনে। অনেক দাম চাইবে তারা প্রথমে। আর চায়ের স্বাধ মুখে লেগে আছে এখনো। আর এজন্য হয়তো বলা হয় দার্জিলিং চা দুনিয়ার সেরা চা। এখানে এসে চা কিনে বাড়িতে না নিয়ে গেলে এখানে আসাটাই বৃথা। আমরা পর্যাপ্ত চা কিনে নিলাম সবাই। তবে হ্যা দাম করে নিতে হবে। দামাদামি করতে পারলে খুব সস্তায় পেয়ে যাবেন কাচা পাতার এই নিখাদ চা। এখান থেকে ফেরার পথে দেখা পেলাম তেনঞ্জিং রকের। তেনজিং এভারেস্ট জয় করেন ১৯৫৩ সালে। ‍আর তেনজিং রক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে। তেনজিং নোরগে (নেপালী: तेन्जिङ नोरगे) (২৯ মে, ১৯১৪ – ৯ মে, ১৯৮৬) একজন নেপালী শেরপা পর্বতারোহী ছিলেন।.তিনি এবং এডমন্ড হিলারি ১৯৫৩ সালের ২৯ শে মে যৌথভাবে বিশ্বে সর্বপ্রথম পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট পর্বত জয় করেন।

এটি একটি প্রাকৃতিক পাথরখণ্ড। জানা যায়, তেনজিং নোরগে এভারেস্ট জয়ের আগে এতে অনুশীলন করেন। পরের বছর পর্বতারোহণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
জওহর লাল নেহেরু সেসময় দার্জিলিং ভ্রমণে এলে কোনো নিরাপত্ত সরঞ্জাম ছাড়াই এই পাথরখণ্ডে ওঠেন তেনজিং। দার্জিলিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হিমালয়ান মাউন্টেইনিং ইনস্টিটিউটের প্রথম ডিরেক্টরও হন নোরগে। এই রকটি এখনও পর্বতারোহী ও ভারতীয় সেনাদের মহড়ার জন্য আদর্শ। হিমালয় মাড়ানোর আগে এই ছোট্ট এই রকে আরোহন এখনও ‍মানা হয় আশীর্বাদ হিসেবে।
বিশাল তেনজিং শিলাটির নামকরণ করা হয়েছে তেনজিং নরগয়ের, যিনি ১৯৫৩ সালে এডমন্ড হিলারির সাথে মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। গম্বু রকটির নাম নওয়াং গম্বুর নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি তেনজিংয়ের ভাগ্নে ছিলেন এবং তিনি দু’বার এভারেস্টে উঠেছিলেন এবং এটি প্রথম ব্যক্তি হয়েছিলেন।
এই তেঞ্জিং শিলার কাছেই রয়েছে দেশের সেরা চিড়িয়াখানা।
দেশের ১৫০ টি চিড়িয়াখানাকে টপকে সেরা চিড়িয়াখানার তকমা পেল দার্জিলিং চিড়িয়াখানা। দেশের চিড়িয়াখানাগুলিকে নিয়ে র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করল জাতীয় চিড়িয়াখানা নিয়ামক সংস্থা ‘সেন্ট্রাল জু অথরিটি অব ইন্ডিয়া’। এবারই প্রথম র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু করার পরই প্রথমবারই র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর স্থান পেল শৈলরানি দার্জিলিং চিড়িয়াখানা। যদি ও আমাদের এখানে প্রবেশ করার সময় আর সুযোগ মেলেনি। কিন্তু একজন মাত্র লাল পান্ডা এখানেই মেলে বলে খুব লোভ হচ্ছিলো। তবে এরপরে এলে সে সুযোগ আর হাতছাড়া হওয়ার সুযোগ রাখতে চাই না। দার্জিলিঙে রক গার্ডেন।

রক গার্ডেন (বারবতে রক গার্ডেন হিসেবেও পরিচিত) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিংয়ে অবস্থিত পর্যটন আকর্ষণ। ১৯৮০-এর দিকে রাজনৈতিক গোলযোগের কারণে পর্যটন বাধাগ্রস্ত হলে পরবর্তীতে রক গার্ডেন প্রতিষ্ঠিত হয়। লয়েডস বোটানিক্যাল গার্ডেনে অবস্থিত স্যার জন অ্যান্ডারসন রক গার্ডেন নামক অপর একটি উদ্যানও দার্জিলিংয়ে অবস্থিত।

প্রেক্ষাপট১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা সিকিমের রাজা হতে দার্জিলিং অধিগ্রহণ করে এবং এ অঞ্চলের উন্নয়ন করে। এই অঞ্চলে তারাই চা বাগান প্রতিষ্ঠা করে। নগরের পত্তন হয়, হোটেল নির্মিত হয় এবং দ্রুত এ অঞ্চলের জনসংখ্যা বেড়ে যায়। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ১০০ থেকে ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে এই সংখ্যা ১০,০০০ এ উন্নীত হয়। ২,১৩৪ মিটার (৭,০০০ ফুট) উচ্চতার পাহাড়ি অঞ্চল জুড়ে গড়ে ওঠা এ নগর গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়।
১৯৮০-এর দিকে গোর্খা ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএ) কর্তৃক পরিচালিত আন্দোলন ব্যাপকতর রূপ ধারণ করে দার্জিলিংয়ে। পর্যটকদের আগমন বেশ হ্রাস পায়, গণ্ডগোল চলমান থাকে। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ (ডিজিএএইচসি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসে।

গোর্খা পার্বত্য কাউন্সিল পর্যটন বিভাগ রক গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করে, এবং জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুভাষ ঘিসিং এর উদ্বোধন করেন। রক গার্ডেনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় “পথের পার্শ্ববর্তী সৌন্দর্যস্থল যা কীনা বেশ খানিকটা কংক্রিট দিয়ে নির্মিত।” উদ্যানে ফুলবাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন উচ্চতায় পাহাড়ের গা ঘেঁষে বসার স্থান তৈরি হয়েছে। এখানে একটি ছোট হ্রদও রয়েছে। পর্যটক বৃদ্ধির সাথে সাথে এখানে চায়ের দোকানও গড়ে উঠেছে। অসাধারণ সুন্দর এই জায়গায় না এলে নাকি দার্জিলিং ভ্রমণের ষোলকলা পূর্ণ হয়না। পাহাড়ের ঝর্না আর ফুলের বাগানে ভরা পুরো চত্তর। পাহাড়ের বুকে এক বিশাল পার্ক যেন। প্রায় দুপুর গড়িয়েছে। আমাদের গাড়ির সবাই তখন বাড়ি ফেরার চিন্তায় মগ্ন। আর ক্লান্তিও যেন পেয়ে বসেছিল এবার বিদায় জানাতে হলো দার্জিলিং কে। অল্প সময়ে সব কিছু দেখা সম্ভব নয়। তবু্ও আমাদের স্মৃতি জমলো অনেক।
আমাদের গাড়ি ছুটে চলছে পাহাড়ের বুক ধরে শিলিগুড়ির পথে। সমাপ্ত।

সূত্র : উইকিপিডিয়া, পত্রিকা, জার্নাল।

লেখক: লেখক ও আইনজীবী।

৪র্থ পর্বে লিংক:

সিকিম, দার্জিলিং : বরফ, নদী আর পাহাড়ের দেশে-লতিফুর রহমান প্রামাণিক

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge