মির্জা মুহাম্মদ নূরুন্নবী নূর
সারপ্রাইজ
অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারল না রীমা। বারবার নাহিদের কথাই মনে পড়ছে ওর। কেন রাফ ব্যবহার করলাম নাহিদের সাথে! কী অপরাধ ছিলো নাহিদের? কিসের অপরাধ? কিছুই বুঝতে পারছে না রীমা। শুধু ভাবছে আর ভাবছে। ভাবছে আর হারিয়ে যাচ্ছে ভাবনার গহীণ অরণ্যে! আনমনা রীমার যখন এমন অবস্থা ঠিক তখনই শিখার আগমন ঘটে। চুপটি করে পাশে বসে শিখা।
কিরে। অমন করে কাকে ভাবছিস?
তোকে।
আমাকে, নাকি?
নাকি আবার কী?
তোর মাথা।
মানে?
কচু।
বেশি ফাজলামো হলো কিন্তু!
তাই।
হু।
তাহলে কি করতে হবে এখন।
কিছুই না। কেন এসেছিস তাই বল। একটু মোড় পাল্টিয়ে জানতে চাইল রীমা। শিখাও না বোঝার ভান করে জানতে চাইল-
আজকে বাংলা স্যার এসেছিল?
হ। এসেছিল।
কী পড়িয়েছেন আজকে?
জোহরা।
মানে।
সে অনেক কথা। জোহরা উপন্যাসের মতো একটি কাহিনী শুনিয়েছেন স্যার, তাই।
আর কিছু না।
শিখার প্রেম কাহিনী! শুনবি?
আর কথা বাড়ায়না শিখা। রীমা আর শিখা দুজন বান্ধবী। ওরা একে অপরের জানের জান। একে অপরকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা। শিখা ওদের কলেজের ছাত্র জাহিদকে ভালোবাসে। গোপনে গোপনে চলছিলো প্রেমপ্রেম খেলা। জানতনা কেউ। না রীমা। না ওদের বাসার আর কেউ। না কলেজের কেউ। কোন এক সমস্যায় পড়ে রীমাকে সবকিছু জানায় শিখা। এখন সমস্যা সমাধানে ওদের পরামর্শ চলে প্রতিদিন। নিয়মিত। আজকেও সেজন্যেই এসেছে শিখা।
শিখার কথায় তেমন একটা মন নেই রীমার। ওরও ভাবনা এখন নাহিদকে নিয়ে। ছোট্ট একটি ঘটনা নিয়ে দুজনের মাঝে শুরু হয়েছে মনোমালিন্য। টানাপড়েন। দূরত্ব। সম্পর্কের ঘাটতি। রশি টানাটানি। যেকোন সময় ভেঙে যেতে পারে ওদের সম্পর্ক। ছিঁড়ে যেতে পারে রশি। খসে যেতে পারে ভালোবাসার গিট্টু।
হাই।
পিছন ফিরে তাকায় শিখা। দেখে নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে পাশে।
কেমন আছেন?
ভালো না।
কেন?
সে অনেক কথা।
রীমার কোন দোষ?
না।
তবে?
কিছু না।
নাহিদ এবার চলে যেতে উদ্যোত হলে “কী হলো তোমার” বলেই রীমা নাহিদের হাত ধরে ফেলে। কাছে এনে পাশে বসানোর চেষ্টা করে রীমা।
ছেড়ে দাও আমাকে।
না, ছাড়বনা। তোমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতে চাই সারাটি জীবন, আর তুমি কিনা-
এসব ধোঁকাবাজি করে লাভ নেই।
মানে?
কোন মানে নেই। আমি আর তোমাকে আপন করে ভাবতে পারছিনা এটাই আমার শেষ কথা। পারলে তুমি আমাকে ভুলে যেও। ক্ষমা করে দিও।
আমার অপরাধ?
কোন অপরাধ নেই।
তবে তোমাকে ভুলে যেতে হবে কেন?
‘জানিনা এবং জানতেও চাইনা’ বলেই হনহন করে চলে গেল নাহিদ।
অনেক দিন পরের কথা। আজ বাংলা নববর্ষ। আনন্দের এই দিনে জাহিদ নাই শিখার পাশে। নাহিদও নেই রীমার কাছে। কষ্ট নদীতে সাঁতরে বেড়ায় ওরা। কিছু করার নেই। তবুও যে বাংলা নববর্ষ!
শিখা আর রীমা গল্প করছে। ওদের জীবনের সব এলোমেলো কাহিনী। ওরা নস্টালজিয়ায় ভাসছে। বিগতদিনের পহেলা বৈশাখের অনেক স্মৃতিই ওদেরকে অতীত সময়ে নিয়ে যাচ্ছে। পুরাতনে ভাবাচ্ছে। অনেক স্মৃতিই আজ শীল হয়ে বিঁধছে। আঘাত করছে শক্তকরে! প্রেমের জ্বালা বলে কথা!
জাহিদের খবর কী? শিখার কাছে জানতে চায় রীমা।
ভালো। ছোট্ট করে জবাব দেয় শিখা।
যোগাযোগ আছে তোদের?
আছে। আবার নাই।
সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছিল দুজনের?
দুমাস হবে আরকি।
এরপর আর দেখা নেই কেন?
জানিনা।
ন্যাকামো তাইনা!
হ, ন্যাকামো!
ওদের দুজনের তর্ক চলছে। তুমুল লড়াই। কেউ কারো কাছে হারতে রাজি নয়। এমন সময় ওরা দেখে পাশে এসে দাঁড়ানো নাহিদ। নাহিদের আগমন কেন ওরা কেউ বুঝতে পারছেনা। না শিখা না রীমা। কারণ এর আগে নাহিদের সাথে কারো যোগাযোগ হয়নি।
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ। আনন্দের বন্যা বইছে সকলের হৃদয়ে। সকলের প্রাণে প্রাণে। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। বৈশাখী মেলা বলে কথা! কেবল শিখা আর রীমা এর বাইরে। ওদের অন্তরে বৈশাখের ভিন্ন রূপ। ভিন্নরেখায় ওদের অবস্থান। রীমার পাশে নেই নাহিদ। জাহিদও নেই শিখার পাশে। তাই কষ্ট নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ছে ওদের হৃদয় জমিনে। কোমল মনে। ভালোবাসার নীল দরিয়ায়।
আপনি যে, নাহিদকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ল শিখা।
কেন, আসতে মানা বুঝি!
না, ঠিক তা নয়।
আমি একা তাই বুঝি এমন প্রশ্ন! অপেক্ষা করুন আরেকজন আসছেন খুব তাড়াতাড়িই।
মানে? প্রশ্ন রীমার।
জাহিদ ভাইয়াও আসছেন।
আগপাছ বুঝতে পারছেনা ওরা। কিছুই না। সককিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে। রীমা আর শিখার ভাবনার খবর ওদের জানার কথা নয়। কিভাবে জানল ওরা! ভাবছে রীমা। ভাবনা শিখারও।
ইতোমধ্যে জাহিদ এসে হাজির। তুই কখন এলি? নাহিদকে উদ্দেশ্য করে জানতে চাইল জাহিদ।
এইতো।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় রীমা! শিখাও বুঝতে পারছেনা কিছু। ওরা স্বপ্নেও এমনটি ভাবেনি কখনও। ওদের কল্পনার রাজ্যে এখন অন্য কিছু। কী করবে ওরা তা বুঝতে পারছেনা কিছুই। কিছুইনা। আচমকা এমন পরিস্থিতিতে নাহিদ আর জাহিদের উপস্থিতি রহস্যজনকই বটে! ওরা কিছু বুঝে না উঠতেই-
পকেট থেকে লালগোলাপ বের করল নাহিদ।
লালগোলাপ বের করল জাহিদও।
সমস্বরে নাহিদ আর জাহিদ হাত দুটো এগিয়ে বলে উঠলো ‘এই নাও লালগোলাপ। এগুলো তোমাদের জন্য। বাংলা নববর্ষের সারপ্রাইজ’! ভুলে যাও অতীত। ভুলে যাও সবকিছু। আর হতাশা নয়! আজ থেকে আমরা আবারও আগের মতোই চলব। আগের মতোই হাসব। খেলব। শুভ বাংলা নববর্ষ!