বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

শিশুতোষ গল্প: ব্যাঙের মাথায় ফুল-আসহাদুজ্জামান মিলন

শিশুতোষ গল্প: ব্যাঙের মাথায় ফুল-আসহাদুজ্জামান মিলন

শিশুতোষ গল্প:
ব্যাঙের মাথায় ফুল
আসহাদুজ্জামান মিলন

ফারিহান ও আবরার খুব ভালো বন্ধু। ওরা একই ক্লাস ও একই স্কুলে পড়ে। ওরা প্রতিদিন একসাথে স্কুলে যায়। স্কুল ছুটি হলে বাড়ি ফেরেও একসাথে। ওদের বাড়ি পাশাপাশি। ওদের বাসা থেকে স্কুল খুব বেশি দূরে নয়। এই জন্যে ওদের মায়েরা মাঝে মাঝে স্কুলে আসে ওদের সাথে। সব সময় আসে না। যখন ওদের মায়েরা আসে তখন ওরা রাস্তায় দুষ্টুমি করে না। কিন্তু ওরা যখন শুধু দু’জন স্কুল থেকে বাসায় ফেরে তখন দুষ্টুমি করতে করতে বাসায় ফেরে।
ওদের দু’জনের মধ্যে ফারিহান বেশি দুষ্ট। কথাও বলে বেশি। মুখে সারাক্ষন কথা লেগেই আছে। আর আবরার একজন ভালো শ্রোতা। সে কথা বলে খুবই কম। এই কারনেও ওদের বন্ধুত্ব খুবই গাঢ়।
সেদিন ছিলো বৃহ:বার। আগেই স্কুল ছুটি হয়ে গেলো। মাত্র দুটি ক্লাস হলো। ওদের বাড়ি ফেরার পথে একটি বড় পুকুর রয়েছে। ওরা প্রতিদিন ঐ পুকুরটি দেখে আর আপসোস করে। ঐ পুকুরে ইদানিং অসংখ্য শাপলা ফুল ফুটে আছে। দেখতে অপূর্ব লাগে। ওদের খুব লোভ জাগে। খুব ইচ্ছে হয় শাপলা ফুল হাতে নিতে। কিন্তু ইচ্ছে জাগলেই কি হয়? ওরা শুনেছে পুকুরটি অনেক গভীর। সেখানে নামা সম্ভব নয়। আর বেশির ভাগ শাপলাগুলো পুকুরের মাঝ স্থানে।
ওরা স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ফারিহান বললো-
‘আবরার, চল আজ কয়েকটা শাপলা ফুল তুলবো।’
আবরার অবাক হয়! কিন্তু কিছু বলে না। ইশারায় বুঝিয়ে দেয়। সম্ভব না।
ফারিহান আবার বলে -‘আরে তুই শুধু চেয়ে দেখ আমি কিভাবে শাপলা ফুল আনবো!’
এবার আবরার মুখ খোলে-‘ঠিক আছে দেখি তোর বাহাদুরি’।
আশেপাশে খুঁজে বড় একটা লাঠি পায় ফারিহান। লাঠিটার মাথায় একটা হুকের মতো করে নেয়, যাতে শাপলা ফুল সহজে আঁকড়ে ধরতে পারে। লাঠি দিয়ে একটি শাপলা ফুলকে কাছে টেনে আনে ধীরে ধীরে সে। এভাবে কয়েকটি ফুল এনে হাতে দেয় আবরারের। আর ওরা লাফাতে থাকে। ফারিহান হঠাত খেয়াল করে সাদা রঙের শাপলা ফুলের মাঝে একটি সবুজ রঙ্যের সুন্দর ফুল রয়েছে। আবরারকেও ফুলটি দেখায়। আবরার দেখে অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে কি ফুল ওটা? ‘আমিও জানি না’ গম্ভিরভাবে বলে ফারিহান। আর মনে মনে ভাবে ঐ ফুলটি আমার চাই-ই চাই। শাপলা ফুলের মতো হুবহু, শাপলা ফুলের পাতাগুলো গাঢ় সবুজ, পাপড়িগুলো সাদা লম্বা লম্বা, মাঝে হালকা হলুদ। তবে ঐ ফুলের সবই গাঢ় সবুজ- পাতাগুলো, পাপড়িগুলো এবং মাঝের অংশ। বড়ই অদ্ভুত, বড়ই অদ্ভুত। ফুলটি পুকুরের পাড় থেকে অনেক দূরে। ফারিহানের হাতে যে লাঠি আছে সেটা দিয়ে ফুলটি টেনে আনা সম্ভব নয়। ওরা আরো বড় লাঠি খুঁজতে শুরু করলো। পুকুরের পাশে বেশ বড় বাঁশ দেখতে পেলো। কিন্তু বাঁশটি ওরা তুলতেই পাড়লো না। কাজেই বাঁশ দিয়ে ফুল টেনে আনা সম্ভব নয় ওরা বুঝেই গেলো।
ওদের হাতের লাঠিই ভরসা। ফারিহান বললো-
‘এই লাঠি দিয়েই চেষ্টা করি। ‘
ফারিহানকে বেশ কিছুদুর পানিতে নামতে হবে। তাই জুতা মোজা খুললো। ফারিহান নামলো পানিতে। একটু একটু করে এগিয়ে গেলো পুকুরের গভীরতায়। লাঠি লাগাল পাবার মূহুর্তে ফারিহান ডুবে যেতে লাগলো পুকুরের গভীরতায়। এরপরও সে সেই ফুল টেনে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফারিহান চিৎকার করে বললো,
‘আবরার আমার বাম হাতটি তুমি ধরো, না হলে আমি ঢুবে যাবো।’
জুতা মোজাসহ আবরার নেমে পড়ে পুকুরে। ফারিহানের বাড়িয়ে দেয়া হাতটি ধরে। অন্য হাতে ধীরে ধীরে ফুলটি কাছে টেনে আনতে থাকে ফারিহান। আনন্দে ওদের চোখ চিক চিক করে উঠে। ওদের আনন্দে কিছুটা ভাটা পরে যখন ওরা খেয়াল করে সবুজ শাপলা ফুলটি নড়ছে। প্রথমে ভাবে গভীরতম পানিতে থাকার কারনে বোধহয় শেকড়গুলো ছাড়ার সময়ই এমনটা হচ্ছে।
ফারিহানের একটু বেশিই জোড় লাগছে ফুলটি টেনে নিয়ে আসতে। তবুও হাল ছাড়ছে না সে। পুকুরের পাড়ের কিছুটা কাছাকাছি নিয়ে আসাতে অনেক বেশি কষ্ট হতে লাগলো ফারিহানের। সে আবরারকে বললো,
‘আমি আর পারছি না,অনেক জোড় লাগছে। তুমিও আসো দুজনে মিলে টেনে আনি।’
বলার সাথে সাথে কাজে লেগে গেলো আবরার। এবার দু’জনে মিলে টেনে আনতে লাগলো সবুজ শাপলা ফুলকে। ওরা যতই কাছে টেনে আনতে থাকলো সবুজ ফুলটি ততই নড়াচড়া বাড়িয়ে দিলো। একসময় মনে হচ্ছিলো কোন মাছ যেন টেনে আনছে। কিন্তু ওরা ছেড়ে দেবার ছেলে নয়, ওরা শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে টানতে লাগলো সবুজ ফুলটি। এবার ঘঠলো ভয়ঙ্কর ঘটনা।শাপলা ফুলটি জীবন্ত হয়ে উঠলো। বিশাল এক মুখ হাঁ করে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। ওরা স্পষ্টই দেখলো শাপলা ফুলটি একটি বিশাল ব্যাঙের মাথায় রয়েছে। সেই ব্যাঙটিকেই ওরা এতোক্ষন টেনে নিয়ে আসছিলো। এই রকম ভয়ংকর অবস্থার জন্যে ওরা কোনভাবেই তৈরি ছিলো না। ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো ওরা। এরপর ঘটলো আরো ভয়ঙ্কর ঘটনা। মাথায় সবুজ ফুলওয়ালা ব্যাঙটি বিশাল হাঁ করে ফারিহানের হাত কামড়ে ধরলো। হাত থেকে লাঠি পরে গেলো পানিতে। এবার ফারিহানকেই টানতে শুরু করলো ব্যাঙটি। চট করে বুদ্ধি এলো আবরারের মাথায়। সব ভয় উধাও হয়ে গেলো তার। শুধু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো যে করেই হোক বন্ধুকে বাঁচাতে হবে।
শাপলা ফুল টেনে আনা লাঠিটা হাতে তুলে নিলো আবরার। কোন দিকে না তাকিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ব্যাঙের মাথায় আঘাত করলো সে লাঠি দিয়ে। এতেই দারুন কাজ হলো। ফারিহানের হাত ছেড়ে দিয়ে গভীর পানিতে উধাও হয়ে গেলো ব্যাঙটি। নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না ফারিহান। জামা কাপড় সহ পুরো শরীর তখন ভিজে একাকার। এক মূহুর্তও ওরা থাকলো না পুকুরের পাড়ে। স্কুল ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে বাড়ির দিকে দিলো দৌড়।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge