রেজাউল ইসলাম হাসুর দ্বিপদীগুচ্ছ
পাকিস্তানের উর্দু ভাষার শের বা দ্বিপদী কবিতার খ্যাতি বিশ^সাহিত্য জুড়ে। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, আরবদের ধূধূ মরুর বুকে এই শের বা দ্বিপদী কবিতার উৎপত্তি। সেই খাঁ খাঁ মরুর ধূসর মাটির মনগুলো সিক্ত করেই ছড়িয়ে পড়েছে বিশ^ব্যাপি। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এই শের বা দ্বিপদী কবিতাগুলো যখন আবৃত্তি করা হতো তখন যেন শ্রোতাদের অন্তরে কোনো এক অজানা আনন্দের হিল্লোল বয়ে যেতো। যেমন-
আর কত প্রেম চাও তুমি-ওহে ফারাজ,
মায়েরা তাদের বাচ্চাদের নাম তোমার নামে রেখে দিয়েছে আজ।
(ফারাজের দ্বিপদীগুচ্ছ, সৈয়দ তারিক অনূদিত)
এছাড়া আমরা যদি মহাবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘দ্য ম্যাসেজ’ মুভিটা দেখে থাকি, তাহলে সেখানেও দেখবেন যে, একজন কবি তাৎক্ষণিকভাবে তৎকালীন মক্কার রাজা আবু সফিয়ানকে শের বা দি¦পদী কবিতা মুখে মুখেই রচনা করে এবং তা আবৃত্তি করে কীভাবে মুগ্ধ করছেন আর এনাম হাতিয়ে নিচ্ছেন। বোদ্ধাদের মতে, কেবল আরব, পাকিস্তান বা ভারতেই নয়, এই শের বা দ্বিপদী কবিতার খ্যাতি এখন দুনিয়া জুড়ে এবং বিপুল জনপ্রিয়। কারণ এর দ্বিপদেই লুকিয়ে রছেয়ে গহীনের ইশারা।
এক.
আমাকে নিচ্ছো না তুমি, নিচ্ছে না বিরিশিরি বিকেল-জীবন যেন এতটাই সস্তা,
দেখোÑঅবরুদ্ধ আঁধার থেকে পরম নৈঃশব্দ্যে আমাকে চেয়ে নিচ্ছে মৃত্যুর ফেরেস্তা।
দুই.
চশমার ভেতর থেকে লোকটাকে দেখেছিলাম। অন্ধ ভেবে সে করেছিলো কান্না ও করুণা!
তার ভাবনা ছিলো দিবা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি-অথচ সে কখনোই জানবে নাÑজানবে না।
তিন.
শুধু কি গ্যাব্রিয়েল মার্কেজই জানতেন-নৈঃশব্দ্যের উৎসবে ডুবতে হয় কীভাবে!
যখনÑনিঃসঙ্গতার কৌশল-কসরত আজ আমাদের শেখানো হচ্ছে বৈশি^কভাবে।
চার.
হাড়গোরে খোদাই করা কান্নার সমাধি আর তিয়াস,
তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে যে থাকে-সে তো বেহায়া দীর্ঘশ^াস।
পাঁচ.
কেউ কি জানোÑকোথায় যেন ধ্বসে পড়ছে বহুতল ভবন?
তার নিচে দাঁড়িয়ে যে মায়া-হয়তো সে আমারই প্রতিসরণ।
ছয়.
বিছানার উদ্যানে গতকাল যেসব চুম্বনফুল ফুটেছিলো,
আইসেলোশনের ঝুড়ি ঘুরে তারা ভরে তুলছে ঢাকার ডাস্টবিনগুলো।
সাত.
মন-মসজিদেই ফিরতে হলো অবশেষ-হে একাকি প্রাঙ্গণ,
প্রেম ও প্রদীপে ভরিয়ে তোলো আজ সেই অসার মনাঙ্গণ।
আট.
একদিন চুম্বন ফুলে ফুলে ভরে যাবে এই শহরের শুষ্ক ঠোঁট, অভিমানী গাল,
ঝিরিঝিরি হাওায়ায় বিরিশিরি বিকেল করোনাহীন সকাল, রোগীহীন হাসপাতাল।