রেজাউল ইসলাম হাসুর তিনটি কবিতা
শাদা গোলাপ
সমূহ সম্পর্কের বৃন্ত খসে
গোলাপেরা মৃত পাতার মতো ঝরছে
ভূপৃষ্ঠের জঙ্গলে,
সন্ত পলের পালকের মতো উড়ছে
অসীম অন্তরীক্ষের অভিমুখে।
এই বর্ণনাতীত
ক্ষরিত বিকেলের বয়ান,
এই ছায়াসন্ধ্যার বিপুল বিভ্রম,
কাঙ্খাতীত কান্না ও করুণা;
এসব কোন অভিসম্পাতের অভিব্যক্তি
আমাদের দিকে দিনদগ্ধার মতো ধেয়ে আসছে?
ভাষাহীন সময়চূড়ায় দাঁড়িয়ে
কেবল বলতে পারি-
ক্ষমা করুন,
হে শাদা গোলাপেরা।
ক্ষমা ব্যাতীত
আজ আমাদের কোনো স্বর নেই,
সমবেদনা জানা নেই।
‘বিদায়’ ব্যাতীত
আমাদের অভিধানে কোনো সম্ভাষণ নেই।
ঈশ^রের ফুলদানি ভরে ওঠুক
শাদা গোলাপে গোলাপে।
আপনরা আরো পরিপূর্ণ করুন,
মহিমান্বিত করুন,
সেই ফুলদানি;
কারণ তিনি গ্রসনের প্রেমে পড়েছেন
কারণ তিনি পতনে প্রবাহিত হয়েছেন
তার আরো গোলাপ দরকার
সংখ্যাতীত শাদা গোলাপ…
শহরে কারফিউ চলছে
এখানে জ¦র আসতে মানা আছে। রুমাল ব্যাতীত হাঁচি দিতে মানা আছে। জোরে কাশতেও মানা আছে। এসব এখানে দন্ডনীয় অপরাধ। আপনি আপনার অপরাধগুলো নোট করুন।
ফ্রেশ বাতাসের জন্য বাইরে বেরুবেন না। ঘরে থাকুন। দরজা-জানালা বন্ধ করে শ^াস নিন। হাঁফাবেন না। ব্যথা বাড়াবেন না কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের। চায়ের কাপে ধোঁয়া তুলবেন না যত্রতত্র। রাষ্ট্র নিয়ে কোনো কমেন্টস করবেন না। বিভ্রম ছড়াবেন না। এসব এখানে দন্ডনীয় অপরাধ। আপনি আপনার অপরাধগুলো নোট করুন।
প্রয়োজনে মাস্ক পড়ুন। বারবার হাত ধউন। কীভাবে হাত ধুবেন? সাবানের বিজ্ঞাপনগুলো দেখুন। আমাদের গণমাধ্যমগুলো কী গাধার মতো খেটে চলছে। সবই তো আপনাদের জন্য। আপনারা আপনাদের অপরাধগুলো নোট করুন।
এখানে জীবাণু নাশকের সংকোট আছে। তবু সংকোটবোধ করবেন না। জীবন গ্রসনের সঙ্কা আছে। তবু শঙ্কিত হবেন না। কারখানার গেটে গেটে ঝোলানো হয়েছে ‘নো এন্ট্রি’। শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তৃষ্ণা আর ক্ষুধা সমেত। এসব আমাদের বেঁচে থাকার কৌশল ও কসরত। অনুগ্রহ করে, আপনি আপনার অপরাধগুলো নোট করুন।
জানেনি তো, শহরে কারফিউ চলছে। পৃথিবীতে লকডাউন নামক লস্কর ঢুকেছে তস্করের মতো। নৈঃশব্দ্যে নিবিড় হউন। একাকীত্বে একাকার হউন। মৃত মাছের মতো কেবল তাকিয়ে থাকুন অন্ধকার অরণ্যের দিকে- অবরুদ্ধ পৃথিবীর ভেতর ঘটমান ঘটনাবলির দিকে।
আর অ্যাস্ট্রেগুলো ভরে তুলুন অনিদ্রার ছাইয়ে। মদের বোতলে জমা করুন বিবিধ বিষাদ। ইপিপির ভেতরে আড়াল করুন অভিঘাতের ক্ষত। ব্যবলীয়ন বিত্রস্ততার মতো দরিদ্রতার পিঠ ফুঁড়ে ফুটুক লাল গোলাপের উদ্যান…
বয়ান
মৃতদের সাথে হবে সাক্ষাৎ যেদিন
বুক খসে উড়বে যে অন্তিম স্বর,
তাতে কোনো পাপ নেই মনে রেখো পাখি
আমাকে কোথায় নেবে- জানি তারপর।
সবুজের ঋতু ছেড়ে গহীনের গানে।
প্রাণহীন ঘ্রানহীন ধূসর ও ধূধূ!
জঙ্গলে যেতে যেতে মরুর ভেতর
কাঠগোলাপের কথা মনে হবে শুধু।
কাম-তৃষ্ণাবিহীন এই শবদেহে
হয়তো বা ক্রেনে করে ভরা হবে গোর।
অজস্র অভিশাপ অভিশম্পাতে
ডুবে যাবে, ছেয়ে যাবে হয়তো সে ভোর!
ঘাসকার্পেট দিয়ো ছড়িয়ে সেদিন
কাঠগোলাপের গাছ বুকে দিয়ো পুঁতে,
ওই মুখ, ওই হাসি, ওই অঘ্রান
পারবো না চাইলেও শেষবার ছুঁতে।
ফেলে আসা উঠোনে কি ফুটবে সেদিন
অশ্রুমঞ্জুরি আর বিষাদ অঝর?
তাতে কোনো পাপ নেই মনে রেখো পাখি
বুক খসে উড়বে যে অন্তিম স্বর।