মোস্তারী মিতার ৫টি অনুগল্প
১. XY
অভি আর খেয়ার বিয়ের দশ বছর হতে চললো।আল্লাহর অশেষ রহমতে মহাসুখেই আছে তারা।তিন তিনটা মেয়ে সন্তানও আছে তাদের।এনিয়ে মোটেও অসুখী নয় তারা।কিন্তুু ছেলে সন্তান হয়না বলে শ্বশুরকুল আর প্রতিবেশীদের কটুৃক্তি আর যেন সহ্য হয়না খেয়ার।বায়োলজিতে লেটার মার্ক পাওয়া খেয়া আজ আর তাদের বোঝাতেই পারেনা,ছেলে বা মেয়ে সন্তান হবার জন্য মেয়েদের কোন ভূমিকাই নেই।
ইচ্ছে না থাকলেও শ্বশুরকুলের মুখ বন্ধ করতেই আবার সন্তান সম্ভবা হয় খেয়া,সবাই দোয়া করতে থাকে এবার যেন ছেলে সন্তান হয়।কত ঝাড়ফুঁক,পানি পড়া খাওয়া।তবুও খেয়ার মনে অজানা ভয়,কি জানি হয়।ছয় মাসে পড়লে খেয়াকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে নিয়ে যাওয়া হয়,সবার জানার আগ্রহ কি সন্তান হবে,যদিও খেয়ার কোন ইচ্ছেই ছিলনা।মেয়েসন্তান হবে শুনে সবার আশায় গুড়েবালি।বাসায় বাচ্চা নষ্ট করার জন্য খেয়াকে চাপ দেয়া হয়।খেয়া অনড়,এ বাচ্চা সে জন্ম দেবেই।ওর অজান্তে ওর খাবারে মিশিয়ে দেয়া হয় এবরশনের ঔষধ।মাঝরাতেই প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয় খেয়ার,বন্ধ হওয়ার নাম নেই।রক্তস্নাত খেয়াকে দেখে ঘাবড়ে যায় অভির পরিবার।দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্হা করে তারা।
প্রচন্ড রক্তপাত হয়েছে খেয়ার,গর্ভের ফিটাসটিও বের হয়ে এসেছে, রক্তমাখা একটা মাংসপিণ্ড যেন।জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার খেয়াকে মৃত ঘোষণা করে।
পুরো হাসপাতাল জুড়ে এক অখন্ড নীরবতা। অভিকেও বোবায় ধরেছে যেন।তার খেয়া,তার সন্তানের মা আর নেই,তার কাছে সব দুঃস্বপ্ন মনে হয়।
অঝোরে অভির চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে………..!
এরই মাঝে খেয়ার রক্তমাখা শরীর পরিষ্কার করতে করতে হাসপাতালের আয়া বলে উঠে,”আহারে ছইলটা পোলা আছিল।”
২. অবসর
অভি আর খেয়ার সুখের সংসার।খেয়া ভীষণ ভ্রমণপ্রিয়।কিন্তুু অভির চাকরী আর ব্যস্ততার কারনে তাদের মধুচন্দ্রিমাতেও যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি।এনিয়ে প্রায় অভিমানে গাল ফোলায় খেয়া।অভিই বা কি করবে,তার চাকরী যে তার দেশ,তার দেশপ্রেম।
সময় চলতে থাকে স্রোতের মতো।
আজ অভির চাকরীর শেষদিন।এখন থেকে খেয়াকে আর গাল ফুলিয়ে থাকতে হবেনা,অভির যে অখন্ড অবসর।ফেয়ারওয়েল শেষে ফুলঘরে গিয়ে লাল গোলাপের বাকেট আর একটা বকুলমালা কিনে অভি,পাগলীটা যে ফুলের পাগল।তারপর হাত উঁচিয়ে রিক্সাওয়ালাকে ডাকে,তার খেয়া যে রিক্সায় ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসে।আজ সারাটাদিন খেয়াকে সময় দিবে সে।
রিক্সাওয়ালার ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায় অভি,”কই যাইবেন চাচা?”
অভির নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,”আজিমপুর কবরস্হানে যাবে বাবা?”
৩.বৃদ্ধাশ্রম
নাদিয়া,সানি,নুসরাত,জান্নাত আর তনু খেয়ার খুব ভালো বান্ধবী। স্কুল-কলেজ জীবনটা তাদের ছাড়া সে চিন্তাও করতে পারতো না।কলেজ জীবন শেষে সবার বিয়ের পর ফোন আর ফেসবুক ছাড়া তাদের তেমন আর কোন যোগাযোগ নেই।কিন্তুু মনে-প্রাণে তারা একাত্মা। সবসময় প্লান করতো কবে,কোথায় দেখা হবে।কিন্তুু স্বামী-সন্তান-সংসার জীবনের যাতাকলে আর দেখা করার সুযোগ হয়ে ওঠেনা।
অবশেষে আজ ত্রিশ বছর পর তাদের দেখা করার মহাসুযোগ এসেছে ,কেউ আর তাদের আলাদা করতে পারবেনা।তাদের আজ দেখা হচ্ছে শহরের সবথেকে বিখ্যাত বৃদ্ধাশ্রমে।
৪. একটি প্রেমের ক্ষুদ্র গল্প
সাল ২০০৩ : অভি আর খেয়ার প্রেমের শুভ সূচনা
সাল ২০১৩: অভি আর খেয়া বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত
সাল ২০২৩: অভি আর খেয়া পার্কে এসেছে বেড়াতে।দুজন দুজনের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তাদের সঙ্গে তাদের সন্তান।একটি ছেলে সন্তান ও আরেকটি মেয়ে সন্তান। কিন্তুু তারা দুজন আপন ভাই-বোন নয়।
৫. খুন
বাড়িতে শুধু মা ও সন্তান।মা বিছানায় বালিশের তলে একটা ধারালো চাকু রেখে দেয় সুরক্ষার জন্য।একরাতে এক অচেনা মানুষ তাদের ঘরে ঢোকে, মেরে ফেলতে চায় মায়ের সন্তানকে।সন্তানকে বাঁচাতে মা সেই চাকু দিয়ে আগন্তুকের বুকে ক্রমাগত আঘাত করে, রক্তাক্ত হয় হাত,ঘামে ভিজে যায় পুরো শরীর।
মা অকস্মাৎ জেগে উঠে। উফ!! কি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন!!
লাইটটা জ্বালিয়ে এক গ্লাস পানি ঢকঢক পান করে সন্তানের কাছে বিছানায় ফিরে মা।
কিন্তুু কোথায় সে সন্তান!! এ তো এক রক্তাক্ত নিথর মাংসপিণ্ড!!