বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন

মিনার বসুনীয়ার ৫টি কবিতা

মিনার বসুনীয়ার ৫টি কবিতা

মিনার বসুনীয়ার ৫টি কবিতা

১. ছায়ামূর্তি
ঘুমটা কেটে গেল, ঠিক
যেমন কেটে যায় তন্দ্রা,
বাদামওয়ালার ডাকে নিশিথ যাত্রায়
স্যার, বাদাম দেবো?
বলি, দাও দু’টাকার-
অদ্ভুত প্রশ্নটা পিষ্ট হয় তখনই ট্রেনের চাকায়
দু’টাকায় কি স্বপ্ন পাওয়া যায় ?
ট্রেনটা ছুটে চলে কল্পনার তালে
অচেনা চালক, তবুও করি অতল বিশ্বাস
দেখাবে গন্তব্য অামায়, এই যেমন
অতি বিশ্বাস করে ঠোঁটে চাপি সিগারেট-
অথচ, বিশ্বাস ঘাতক নিকোটিন ক্রমেই
নিঃশেষ করে অামায়
প্রশ্নটা পূনরায় পিষ্ট হয় ট্রেনের চাকায়
দু’টাকায় কি বিশ্বাস পাওয়া যায়?
স্যার, একটা বাঁশি কিনবেন?
বাঁশের বাঁশি, খুব ভাল বাজে-
নিতান্ত অবহেলে বলি বাজাও, বাজাও শুনি
বেজে ওঠে বাঁশি-
অদ্ভুত খেয়ালী সুর খেলে যায়
শালবনের পাতায় পাতায়
লম্বা দীর্ঘশ্বাস কাটা পড়ে ট্রেনের চাকায়-
ছেলেবেলার ভাঙা বাঁশিটা
জানি না কোথায়!
অাচ্ছা, দু’টাকায় কি সুর পাওয়া যায়!
ট্রেনটা ছুটে চলে, হঠাৎ তন্দ্রা কেটে যায়
দাদা, অামড়া খাবেন? চমকে উঠি, বলি
ঝাল লবন থাকলে দুটো দিও
কি করে ভুলি
ওটা ছিল তোমার কত প্রিয়!
বড় দুঃখ হয় অাজ, তবু
দখিনা দীর্ঘশ্বাস শুকিয়ে দেয় রোজ
তোমার ভেজা চুল অন্যের ব্যালকনিতে-
সেথা প্রবেশের নেই অধিকার!
তাকিয়ে দেখে, অদূরে ল্যাম্পপোষ্টের অাড়ালে
একটা নির্লজ্জ ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে থাকে
নিলে না তো খোঁজ!
বলোনি তো বিশ্বাস করা মহাপাপ!
হাসির অাড়ালে এতো মিথ্যে কি করে বলো তুমি?
অফুরন্ত প্রশ্নগুলো রক্তাক্ত হয় চাকায় চাকায়-
অনেক পরে জেনেছি,
অামড়া খেতে খেতেও মিথ্যে বলা যায়!
বিশ্বাস ভাঙেনি ট্রেন, শুধু
ভাবনা গুলো পিষ্ট হয় চাকার চাপায়।

২. মরে অমর হও
প্রকাশক অার পাঠকের
দ্বারে দ্বারে কত ঘুরবে রোজ!
বরং, ক্ষয় হয়ে যাওয়া চটিজোড়া
হাতলভাঙা চশমা, অার যা অাছে
অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি
অামায় দিয়ে দাও-
নিলামে বেঁচে দেবো। ভাল দাম পেলে
তোমার নামে একটা ব্যায়ামাগার বানিয়ে দেবো
কবিতা পড়ে কি হবে?
বরং পেশী মজবুত হলে কাজে দেবে
মিছিল মিটিং এ ভাড়ায় যাবে
পয়সা পাবে, ছেলেরা অায়েশ করবে।
দুটো সড়ক হবে তোমার নামে
তোরণে থাকবে শ্বেত পাথরের অাবক্ষ মূর্তী
কত কিছু করবো কবি-
তুমি শূধু মরে যাও, তারপর দেখো
লালসালু মোড়ানো একটা মোটা শোক বই
অামি ভরিয়ে দেব বানীতে বানীতে
কমপক্ষে দশটি দৈনিকে শিরোনাম হবে তুমি-
ভাল একটা ছবি দিও
চার রঙে ছাপিয়ে দেবো, সারারাত
সবকটি চ্যানেলে চলবে তোমার কীর্তন
তোমার লেখা উচ্চাংগের গান গাইবে
মেয়েরা সর্বাংগ নাচিয়ে।
তোমার স্মরণসভার বিশাল মঞ্চে
সেও থাকবে, কি যেন নাম!
ঐ যে, যার বিরহে
তুমি দাড়িচুল কাটোনি শেষ ছ’বছর
মেকাপ করা চোখে ওর কান্না
ও তুমি নাইবা দেখলে
দেশ দেখবে-
সরাসরি সম্প্রচার হবে সবক’টি
টিভি চ্যানেলে।
অনেক লিখেছ কবি-
এবার তুমি মরে যাও, দুইদিনে চারবার
ভিন্ন জায়গায় জানাজা হবে তোমার
ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে তোমার কফিন
কত বিখ্যাত লোক তোমায় দেখবে-
তোমাকে দেখার সময় চুপটি করে
তুমিও একটু দেখে নিও।
কি যেন কবিতাটা কবি ?
হ্যাঁ হ্যাঁ, “মহাকাল”
নিশ্চিত জেনো, ওটা অামি
স্কুলের পাঠ্য বইয়ে ঢুকিয়ে দেব
ক্লাসটিচার তোমার কবিতার দুটি চরণ
নামকরনের সার্থকতা নিয়ে
গুরুগম্ভীর অালোচনা শেষে বলবে,
“এই কবিতা কবি কোথায় লিখেছেন জানিস?”
জানিসনা গর্ধব,
অামার মামার বাসার বারান্দায় রে
কবির সাথে মামার একটা সেলফিও অাছে
তোদের দেখাবো একদিন।
তুমি শুধু মরে যাও গো কবি-
বেঁচে থেকে কি লাভ? কি পেয়েছো?
ঘেটে দেখ, পায়নি কেউ অতীতে
বরং মরে যাও, যাবার অাগে
ক্ষয় হয়ে যাওয়া চটিজোড়া
হাতলভাঙা চশমা অার যা অাছে
অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি
অামায় দিয়ে দাও।

৩. প্রতিধ্বনি
তারপর যেদিন সন্ধ্যায়-
না ঠিক সন্ধ্যা নয়, বিকেলের একটু পরে
তীব্র অনিচ্ছা শিশুটির, তবু কাটা হলো
ছিন্ন করা হলো সংযোগ নাড়ি-
কান্না-চিৎকার, ধারালো ব্লেড মানেনি সে বাধা
শোনেনি অার্তনাদ তার!
মাটি পেল প্রথম রক্তের স্বাদ
চারিদিকে উৎসব হলো, অাজান হলো-
মা চলে গেল কবরে
ঠিক সেদিন, ঠিক সেদিন থেকেই
পৃথিবী হলো ধুসর মরুভূমি, পাথুরে
ভালবাসাহীন প্রেম শুন্য অাকাশ-
অভিমানি কবি
অভিমান রাখার জায়গা খোঁজে পথে, বনে-
অাদর, ভালবাসার প্রতি লোলুপ দৃষ্টি তার
স্কুলে বন্ধুদের নিতে অাসে মা, লুকিয়ে টিফিন খায়
কবির কেউ নেই, কবি চেয়ে থাকে!
অবিরাম চলা দু’চোখ যেদিকে যায়
ক্লান্ত জীবন, উদ্ভ্রান্ত, তবু থেমে নেই-
অলিন্দের ডানে বামে অলিতে গলিতে
কোথাও কেউ নেই
তলানী শূন্য, নিঃশ্চুপ হাহাকার-
এক টুকরো অাদর দাও! করে চিৎকার
কেউ অাছো? এক মুঠো ভালোবাসা দাও
প্রতিধ্বনি হাসে-
নিজের নিঃশ্বাস, তবু অচেনা মনে হয়

৪. ভালো থেকো দেশ
সীমিত শব্দ দিয়ে কী লাভ অহেতুক বাক্য রচনায়
বেতন নেই, বোনাস নেই, প্রনোদনা নেই-
জমানো টাকা নেই নিয়ে নালিশও নেই মধ্যবিত্তের
কাদের ব্যবসায় লাভ হবে! কে অাক্রান্ত হবে!
কাদের মৃত্যু হবে অধিক তরান্বিত, কিংবা
কারা চায় অর্ধেক হোক সাবার-
কৌতুহল নেই এসবেও
বক্রতা, শিথিলতা, মাথামোটা অতি পুরাতন রোগ-
অযথা, দাম্পত্যে হারবালি কসরত
সীমিত শব্দ দিয়ে কী লাভ অহেতুক বাক্য রচনায়

৫. ভগ্নভাগ্য
যখনই ভেবেছি পেরুবো
রুদ্র সাগর, তখনই ঝড়-
অামি ভেসে গেছি একাকী
ক্ষুদ্র ভেলায়, ডুবে গেছে চর
ভেবেছি একদিন ছোঁবো নীলাকাশ-
করবো তারার চাষ, ভাসে মেঘ
ছিল ধীরগতি, তখনই
ক্ষিপ্র বাতাসের গতিবেগ

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge