মাসুদ বশীর এর একগুচ্ছ কবিতা
সশস্ত্র আহ্বান
চাপা দুঃখের অন্তরালে লুকিয়ে আছে বজ্র নিনাদ
যেন পর্দা ছিঁড়লেই হবে
বিস্ফোরণ!
চোখের ভাষায় লুকিয়ে আছে নায়াগ্রা
চকচকে ঝিনুকের মসৃণতায়;
আমার সান্নিধ্যে এসো আমি প্লাবন
বইয়ে দেবো নিমিষে
শরীরময় ভূমিকম্প খেলবে বজ্র নিনাদে
ভালোবাসার হৃদপিণ্ডের রক্তাক্ততায় প্লাবন হবে
নায়াগ্রা ভালোবাসায়।
.
লিপস্টিকের পরোতে পরোতে আমার ভালোবাসার
রত্নেরা ভেসে বেড়ায় রামধনু
সৌন্দর্যের আদলে;
সময় সংযম সৈনিক আমি সংলাপ বুঝি
বুঝি সমঝোতা অসংযমের,
মৃত্যুরা সস্তায় বিকোয় মানি না
মানি না আইনের নামে প্রহসন
পিচঢালা পথে শহীদ নূর হোসেনের
লাশের মর্ম বুঝি-
আমার সান্নিধ্যে এসো তোমাকেও বুঝাবো
স্বাধীন ভালোবাসায় ঐ রামধনু চুম্বনে!
.
তোমরা কিচ্ছু বুঝোনা! বুঝো শুধু শ্লোগান
বেহিসেবী-
রংমাখা আলেয়ার নীল সৌরভে মারিজুয়ানার
বিশ্বাস বুঝো অবিশ্বাসে!(?)
আমি বুঝি, আমি সব বুঝি, বুঝি দারিদ্র্যের
কষাঘাতে জিপসীর উন্মত্ততা কবিতার ব্যাকরণে
সাইকেলের প্যাডেলে সত্যের সন্ধানী দুরন্ত
যুবক যৌবন বুঝি-
নাটকের ডায়ালগ বুঝি অনায়াসে; প্রচন্ড অভীপ্সায়,
প্রহসনে নয়…
.
তুমি বুঝবে আমার লোমহীন বুকের শব্দ শুনলে
নৈশব্দে, সীমারের আর্তনাদে-
বদ্ধ উন্মাদ সীমার আজ বুকের গভীরে
ভালোবাসার কথা বলে! এবং
ধ্রুপদীর পরোতে স্থৈর্য্যের বীর্য ঢেলে দেয়
তোমার উন্মাদনায় স্বপ্নীল হয়ে;
তুমি নির্ঘাত সার্থক হবে মাতৃত্বে
সশস্ত্রের আহ্বানে….
.
ডাক দিয়ে যায় মুক্ত শুভ্র বলাকারা শৌর্য্যের শিখরে
গোলাপ বেলী হাসনাহেনার অনাবিল সমারোহ
নতুন সৃষ্টির প্রতীক্ষায়।
.
আমার ভালোবাসারা স্বপ্ন দেখে নির্বিঘ্নে সময়ের
বাসস্থানে আবাসের প্রত্যাশায়
মন্দাকিনী তৃষ্ণার অর্কিডে-
আমি বলবো প্রতিবাদী, তারা প্রতিবাদী হবে
ভালোবাসবে নির্ঝর চূড়ায় বেগুন গায়ের
মসৃন উপমায়…
.
চোখের ভাষায় জন্ম নেবে নায়াগ্রা
অনিয়মের সংবিধান ভঙ্গুর হবেই বজ্র নিনাদে
চিত্তের বিলোলতায় জন্ম নেবে গণতান্ত্রিক সময়ের
অধিকার
মৃণাল জাগবে ধ্রুপদীর গভীরে
বীর্যের দাপটে…
.
আমি স্থৈর্য্যের বীর্যে সীমারের নির্মমতা
মিশিয়েছি কাটতে দুঃসময়,
সশস্ত্র ফিরবে নিশ্চিত নাসা হয়ে আধুনিক
সশস্ত্র পংক্তিমালায়, ধূসরে স্বর্গ
আবাস সাজাতে।
.
তোমার হরিদ্রাভ অবয়বের সার্থকতা হবে নিশ্চিত
যেদিন সশস্ত্র ফিরবে তোমার ঘরে
সশস্ত্রের আহ্বানে।
আঁধারের গল্প
আমারে দেখিলো কে-বা আপন, কে-বা করিলো পর,
আমার মাঝেতে অবিরাম ধারা হইয়াছে রূপান্তর…
তোমারে ভাবিয়া হেরিলাম কি’বা! হারায়েছি জোনাকি আলো,
কেন যে চাহিয়া ছিলো গো অমন, তাই লেগেছিলো ভালো।
বাসনার তরে বেসেছিলে ভালো? মনে-মনে কথা কও!
সৃষ্টি-আঁধারে বসিয়া গো কেন, ধ্বংসের বায়ে বও?
আদি ও অন্ত তোমাতেই তুমি, তোমাতে আমার বাস,
আমার বুকেতে লিখো নাকো কভু তোমার সর্বনাশ…
প্রবাদ পুরুষ
পাথর শরীর মন শুয়ে আছে বুকে,
সাপের শরীর মন বন-উপবন।
কৃষ্ণচূড়া পেলবতা কুয়াশার রূপ,
জলাধার স্থাণু হ্রদ সরল তরল।
উপত্যকা মনয়ন ক্রমণ ভ্রমণ,
পদচিহ্ন পলাতক মুক্তোর শরীর।
ঝিনুকের আবির্ভাব মহার্ণব বুকে,
পাথর প্রদাহে সৃষ্ট অমূল্য রতন।
জলজ জ্বলন্ত প্রাণ বুকের শৈবাল,
পাহাড়-পর্বত মিথ জলের গভীর।
বিষাক্ত ছোবল দাও নীল হয়ে উঠি,
আকাশের নীল নিয়ে জল ভালোবাসি।
ব্যবিলন ব্যতিক্রম চেতনা নিলয়,
কষ্ট নষ্ট করো নাকো প্রবাদ পুরুষ।
সাতকাহন
মাঝে মাঝে বৃষ্টির ঘ্রাণ ঊষার দুয়ারে জলকেলি
জলের প্রসন্ন অঞ্জলি ছুয়ে যায় মনের মানুষ।
এক অহনা-লহমা ধারায় পরিশুদ্ধ উচ্চারণঃ
মেঘ বলেছে যাবো যাবো বৃষ্টি জলে মন ভরাবো।
কখনো এমন হয়নিতো বলা-
আকাশ বলেছে কথা তবু তা লিখেনি বিজুলি শিখা।
আর তুমি কি-না মনের অন্ধবৃষ্টি ধোয়ানো অন্ধকারে
বসে বসে লিখে চলেছো অমিষ্ট সুবাসহীন মেঘের গান!
কেন বিশ্বাস নেই এমন কথায় ও কাজে?
বিরাগ মনের আহত দোলায়-
কি করে এমন লিখতে পারো অন্তহীন অন্ধ শ্বেতপত্র?
একটু তাকাও তাকিয়ে দেখো, জেনে যাও প্রিয়-
যা কিছু লেখা লিখতে থাকা
তা কিন্তু অদৃশ্যমান আঁকাবাকা…
এক শুদ্ধ উচ্চারণেও যা কি-না বারবার ভুল হয়ে রয়,
স্বচ্ছ অমলিন লেখাও কিন্তু কখনোই সঠিক লেখা নয়!
অতএব…
দেখা
তুমি গভীরভাবে দেখছো বলেই-
না দেখার ভান করছো অপলক!
তুমি তাহারে ডাকো নিঃশব্দে নীরবে,
সে জানে বলেই হাসে আহ্লাদে…
তোমার শ্রেষ্ঠত্ব তোমাতেই সমাহিত।
যদি তুমি ভাবো গভীর অভিমানে দূরেই চলে যাবে-
তবে যাও, মাইল মাইল বিরহ পেরিয়ে মানচিত্র ছাড়িয়ে!
অভিনয় করছে সারা পৃথিবীসহ সবাই।
থেমে নেই কোনো কিছুই, ওখানে মানুষ হাঁটে,
চরাচরে সবকিছু…
দূরত্ব কি করে মুছে দেবে তারে?
শেষ অব্দি ভালোবাসারই হয়ে যায় জয়।
প্রিয়জন বন্ধু সুজন…
সবাকার
আজকে আর অন্য কিচ্ছু না
আজকে আর বন্য কিচ্ছু না
আজকে আর পণ্য কিচ্ছু না
আজকে আর গণ্য কিচ্ছু না
আজ শুধুই ভালো লাগার কথা
আজ শুধুই ভালো থাকার কথা
আজ শুধুই ভালো সবার কথা
আজ শুধুই আত্মদান আত্মত্যাগ-
সৌহার্দ্য প্রীতি কথা…
এসোনা প্রিয় দু’হাত ভরে বিলিয়ে দিই-
তোমার টিপ সবুজ সাথী কাজল চোখ কাজলদিঘী
নিখুঁত হাসি সুরের খেয়া মিষ্টি কথা মৌয়ের বাসা।
মানুষগুলো কাঁদছে বড় প্রাণেরআলো ঝরছে বড়
ওই পাষাণী নিচ্ছে কেড়ে প্রাণেরআশা ভালোবাসা…