মালিপাখির এক গুচ্ছ ছড়া-কবিতা
১. চিঠি
করতলে ছিল রেখা আর ছিল সোনামণি সোনা —
বাদাবনে ঘুরে বেড়াবার এক অলীক বাসনা — !
সারারাত যথাতথা দিশে হারা কথা গুলি ঝরে,
মিশে গেছে কালি হয়ে নোনা পথ সোনালী পাঁজরে !
নোনা পথ, সোনা পথ দাও পিঠে জুড়ে দেখি ডানা !
আমি জানি বাঁধা গুলো কেটে গিয়ে পেরুবে সীমানা !
তোড়া বাজা রাঙা ভোরে ঘোড়া গুলি চরে খাবে ঘাস ।
অবশেষে ভাষা শিখে আমাদের শোনাবে আকাশ — ।
ওরা কেউ হাঁস নয়, কোনো এক কিশোরের চিঠি !
হাঁস হয়ে খেলে আর পড়ে শুধু কিশোরী নদীটি !
২. কবি
প্রিয় ভাষা তরী ভেসে আসে । কবি ঘেমে নেয়ে টানে গুন — ।
বুকে অবিরত কড়া নাড়ে এক ভালোবাসা গুন গুন — ।
দ্যাখো যুযুধান বীর দ্যাখো, দ্যাখো ধুসরিত ধরাতল ।
ছোটে হরিণীর দুটি চোখ আর বেধে যায় রসাতল ।
কবি ডুব মারে রসাতলে- কবি তুলে আনে ঘোড়া দিন ।
কবি ঘাড় গুঁজে লিখে লিখে একা শোধ করে সব ঋন ।
প্রিয় ভাষা তরী ভেসে আসে । কবি ঘেমে নেয়ে টানে গুন ।
বুকে অবিরত কড়া নাড়ে এক ভালোবাসা গুন গুন — !
৩. ঢেউ
মন নদীটি একলাতো নয় ওই দ্যাখো এক তারাও —
আর ঘোরে এক নীল পাখি বন, দেখবে যদি দাঁড়াও — !
কী দেখছো কী ফুলের সাগর ? আঁকছো ও – মুখ পাতার ?
এমনি করেই রোজ প্রিয় ভোর দেয় জেগে ডুব সাঁতার –!
দাঁড়িয়ে থাকো ছবির মতন , নাচ দ্যাখো নাচ তুলির — !
কি খুশি আজ হারিয়ে যাওয় খেলনা-পুতুলগুলির — !
সে জোছনা ঢেউ ঘর ছুঁয়েছে তোমার এবং আমার !
কাল শিখেছি যার কাছে গান পাহাড় থেকে নামার — !
পাগলি তোকে / মালিপাখি
পাগল বলেই চাঁদের পাহাড় । ছুটছি নেশায় — । অবোধ চোখে
তুই বাঁধা থাক । ভুলছি না আর আঁকছি পাতায় পাগলি তোকে ।
তোর দেহে যে টগর ভাষা — এইতো মনের দুয়ার খুলে —
ভোর থেকে ভোর বেড়ায় নেচে নগর গাঁয়ের পথটি ভুলে — ।
এইতো আমার মাটির শরীর । এইতো আমার মনের তুলি,
তারায় তারায় ছড়িয়ে রাখে কিশোর বেলার মোহর গুলি !
মাছরাঙা মন বুকের ভিতর ছড়ায় পালক বুঝতে পারি,
তুইযে আমার মেঘপাতা গান তুইযে আমার মেঘনা শাড়ী ।
তোর মায়াতেই আকাশ হলুম । তোর মায়াতেই হলুম ঘুড়ি ।
উড়তে উড়তে পেলুম খুঁজে সেই হারানো ভূতুম পুরী ।
ভুতুম পুরীর চিক চিকে ঢেউ ঘুম এনে দেয় গভীর চোখে ।
ঘুমের ভিতর কেবল দেখি– ঠিক বলেছিস পাগলি তোকে —- !
৩. জয়
রাতের মতন জেগে থাকে চিলেকোঠার ঘর ।
এবং কবির মাথায় বাড়ে কালবোশেখির ঝড় !
চায় কি কবি ? নিজেই নিজের ছিঁড়তে থাকে চুল !
চিলেকোঠার ঘর খানি তার দুঃখতে মশগুল !
ঘরের ভিতর শব্দ নাচে, কবির চোখে জল !
ভালোবাসার সেই তারাটি হয়েছে উজ্জ্বল !
সেই তারাটি ভীষণ ভালো , সেই তারাটি বেশ
বললে কবি লিখতে থাকো, এইতো রঙের দেশ !
এইতো আমার খুশির জামা ,এইতো আমার চোখ;
ছড়িয়ে দিলাম পাতায়, পাতায় তোমারই জয় হোক !
৪. সুখ
তুমি বললেই থামবে নদী, তুমি বললেই চর ;
তোমার হাতের তালুর ওপর বসাবে নাচ ঘর !
তুমি ভাবলেই পাগল আছে, তুমি ভাবলেই নেই ।
তোমায় কবি ভালো বেসে উড়ছে তো উড়ছেই — !
উড়তে উড়তে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষন্ন নীল চোখ !
তুমি ভাবছো কল্পনা সব ? বেশ তবে তাই হোক !
কল্পনাতেই বাঁচুক কবি, একটু দ্যাখাও মুখ !
কবির কাছে স্বপ্নে হাঁটার এই টুকুই তো সুখ — !
৫. চাকা
ভোরের আলো, গানের ঝালর, আর কি কি চাও ?
বেশ তো নদী ডাকছে তোমায়, চরকি বানাও !
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে — !
চরকি হরিণ ঘুরতে, ঘুরতে জুড়েছে নাচ !
পাগল হয়ে দেখছো কাকে দেবদারু গাছ ?
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে — !
চরকি পিসি, তুলিটা দাও ! আঁকবো কি ফুল ?
ওইতো ও ঘাস মালীর বাগান, সোনালী চুল ।
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে — !
চরকি সাঁকো কেমন আছে সেই ছবি গ্রাম ?
একটু বোলো, ওকেও ভালোবেসে ছিলাম !
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে — !
ও চরকি বোন তোমার এখন ঢেউ গোনা কাজ ?
কেউ কাছে নেই, দাঁড়িয়ে একা ! কি লিখবো আজ ?
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে — !
৬. স্বপ্ন
ঝাউ বুঝি এক গ্রাম ?
শুনেই ঘোরে, ঘন সবুজ সাগরে ডুবলাম ।
ডুবতে, ডুবতে হাঁস ।
ঝিনুক কিংবা ঘোড়াও হচ্ছে, ওড়াচ্ছে নীল ঘাস !
ডুবতে ডুবতে মন,
কুড়াচ্ছে মেঘ, পাহাড় চূড়ো । মল্লিকা নির্জন —
শব্দ বুনে ঝুপ — !
লাফিয়ে পড়ে স্বপ্ন গুলো যে চরে টুপ্ টুপ্ —
ঝরছে এবং ঘর
বানিয়ে দিচ্ছে আলোর রাজা এক থেকে পর পর — !
ঝাউ বুঝি এক গ্রাম ?
শুনেই ঘোরে, ঘন সবুজ সাগরে ডুবলাম — !
৭. যে মেয়েটা
যে মেয়েটা ছড়ায় সাগর পারুল চাঁপার মনে।
যে মেয়েটা খুশির খবর পাঠায় হলুদ বনে।
যে মেয়েটা ঘুরে বেড়ায় শিরিন নদীর বাঁকে।
যে মেয়েটা আপন মনে উদাস দুপুর আঁকে।
যে মেয়েটা ধুলো ওড়ায় কুসুম পুরের পথে।
যে মেয়েটা আবির ছড়ায় লাজুক মনের মঠে।
যে মেয়েটা সাহস জাগায় আশার প্রদীপ জ্বেলে
যে মেয়েটা রামধনু মন। সরায় আঁধার ঠেলে
যে মেয়েটা রূপকথা পুর। নুপুর পরে নাচে।
যে মেয়েটা সোহাগ দিয়ে ফোটায় কুঁড়ি গাছে।
যে মেয়েটা রোদের কুচি ছড়ায় নদীর কুলে।
যে মেয়েটা মনের আগল সদাই রাখে খুলে।
যে মেয়েটা শালুক ফুলের আদর ভালোবাসে।
যে মেয়েটা খুশির পালক ছড়ায় সবুজ ঘাসে।
যে মেয়েটা টগর, পলাশ, তিতির পুরের ছুটি।
যে মেয়েটা নদীর সাঁকো। বুনো হাঁসের জুটি।
যে মেয়েটা সাঁতার কাটে গাঁয়ের পুকুর ঘাটে।
যে মেয়েটা কাগজ কুড়োয় নিঝুম পুরের হাটে।
যে মেয়েটা ঝুমঝুমি ভোর, কেবল কাছে ডাকে
সেই মেয়েটাই বাঁশি আমার। হৃদয় জুড়ে থাকে
৮. সাঁকো
নদী গোনে ঝিকিমিকি তারা, খেলা করে দুধশালি পুঁটি ।
ছেলেবেলা পুরে যারা থাকে, তারা বলে সারাবেলা ছুটি ।
দুপারে কাশের বন ছুঁয়ে, কাকতাড়ু
নেড়ে বলে মাথা ।
ধরোনা কলম কবি আজ, খুঁজে আনো
কবিতার খাতা ।
আমি কি থাকতে পারি চুপ ? হৃদয়টি
ওঠে ফের দুলে !
আমিও গানের পাখি হই, তোমাদের
মন গুলি ছুঁলে ।
একা একা নদী কথা বলে, নীরবতা
হাসে একা ভোরে ।
এই সব খেলা গুলি আমি, রেখেছি
আমার মনে ধরে ।
তোমরাতো ভালো খুব জানি, তোমরাতো
কত খুশি আঁকো ।
এপারের সুখ গুলি মেখে, পার হও
ঝুমঝুমি সাঁকো ।
এপারের প্রজাপতি গান, ওপারের
চাঁদ হয়ে নাচে ।
হীরে ফুল হাততালি দেয়, ফোটে দেশ
রূপকথা গাছে।
অপরূপ এই সব খুশি, অভিলাষী
ডানা দুটি মেলে ……..
কবিতার মত ওড়ে বুকে, বাঁশি নাও
ও রাখাল ছেলে !