মহুয়া দাশগুপ্ত এর দুটি কবিতা
১. প্রতীক্ষা
আর কত পা হাঁটলে বলো
মনখারাপের চূড়োয় যাবো?
আর কতকাল বাঁচলে, শেষে
অতল তোমার স্পর্শ পাবো?
মন ফকিরার জন্মজীবন
আধেকটা খাদ, আধেক পানি!
কররেখায় আয়ুষ্মতীর
হৃদমাঝারে মৃত্যু জানি
প্রতীক্ষাতে, ব্যাকুল হিয়ায়
সেই কতকাল, কত না যুগ
বসেই আছে মন যমুনায়
চিরসখা! ভীষণ লাজুক!
আর কতকাল? বলো না প্রেম,
আমায় তুমি সঙ্গে নেবে?
কপাট দেওয়া গুপ্ত ঘরের
প্রদীপশিখার স্পর্শ দেবে?
এখন আমি পদাবলীর
আখর ছুঁয়ে বিষাদ মাখি!
জীবনজোড়া কষ্টকুসুম,
তুমি তো সেই উড়াল পাখি!
তোমার ডানায় আগুন আছে,
আমার আছে মেঠো বাড়ি!
আমার বিষাদ শ্রাবণ জানে,
আমি কি আর উড়তে পারি?
২. ভোরের কথা
ভোরের নিশান নিয়ে যেসব রাত
আমার সঙ্গে জেগে থাকে—
আমাদের বংশলতিকায় সূর্য ওঠে,
ঘুম ভেঙে জেগে যায় প্রাচীন সকাল।
আমি মনে মনে হেঁটে যাই বরিশালে,
পোনাবালিয়ার ধানক্ষেতে কুড়াতে যাই
অতীতের খুদকুড়ো!
কীর্তনখোলা নদীর বুকে নৌকার খোল থেকে
আদুড় গায়ে বেরিয়ে আসেন আমার প্রপিতামহ!
বিরাট ব্যপ্ত এক সকালে চরণ ছুঁয়ে আসি
আমারই রক্তে শিরায় নিত্য বহমান প্রদীপশিখার।
দেখি সময় চলেছে ছুুটে ,অন্তহীন ,নিরলস!
মুহূর্তে অতীতের অস্থিমজ্জা নাভিপদ্ম
ভেসে যায় জলে,
মাটির গন্ধ নিয়ে ছুঁয়ে যায় ভ্রম!
বুকের খাঁচায় জাগে রাত—
নক্ষত্র হয়ে যায় আমারই অতীতচারণ।
গেরস্থঘরের চেনা কুলুঙ্গি বলে যায় কথা!
অতীতের সব ব্যথা উড়ে গেছে সাদা খই হয়ে,
আমারও বেদনা জানে , আর কিছু পথ মাত্র বাকি—
এলোচুলে সময় তো বসে আছে জীবনের পাশে,
দিঘির মতোন চোখ,শীতল স্নিগ্ধ ,যেন মেঘ—
জীবন ঝরাতে জানে, জীবনেরই সমস্ত আবেগ!