ব্রেকআপ
সজল হালদার
তারপর হঠাৎ ভেঙে গেলো দীর্ঘ ন’বছরের অটুট বন্ধন ! যেন বিনামেঘে বজ্রপাত। না না, কোনো কারণ ছিল না তেমন । ইদানিং মনে হয় আশ্রিত পৃথিবীটাই হলুদ বিষণ্ণতায় ভরাট। যন্ত্রণার ধূসর শূন্যতা ঠেলে ঠেলে চলেছি একা । শব্দহীন এক নিস্তব্ধ সময় আমাকে ঘিরে স্থির , পৃথিবীর সমস্ত পরাভূত প্রেমিকের মতো। আমাদের ফেলে রাখা বহুমাত্রিক রামধনু উষ্ণতা যেন আমাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে । এই আত্মদংশনে ঝোড়ো বাতাসে দিকশূন্য নাবিকের মতো উদ্দেশ্যহীন ভেসে চলেছি কোথায়… হদিশ নেই!
নিজেকে তছনছ করার প্রায় তিন মাসের শেষে-অপ্রত্যাশিত ফিরে এলো একটি ফোনকল। একরাশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে এবং উৎকণ্ঠায় রিসিভ করলাম ফোন।
ফোনের ওপাশ থেকে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ভেসে এল… সরি…! আমি ভুল করেছি…! অন্যায় ক-রে-ছি! তোমাকে দিয়েছি ভীষণ কষ্ট, আমাকে একটিবার শেষ সুযোগ দাও…,প্লিজ…!
উত্তর হাতড়াতে হাতড়াতে, ধরাগলায় বললাম- আ-আ-আচ্ছা ঠিক আছে, কাল বিকেলে দেখা হবে সেই প্রথম দেখার স্থানে। শুভরাত্রি।
সারারাত ঘুম এলো না ,এলোমেলো আবেশি আবেশে। সারাদিন অপেক্ষায় অপেক্ষায়। এই প্রথম উপলব্ধিতে এলো সময়ের অতি বাস্তব-দীর্ঘ শূন্যতা। এই সময়ের দূরত্ব যেন কিছুতেই কমছে না!
অবশেষে দেখা হল যথাসময়ে । দু’জনের মাঝখানে তখন গলেগলে পড়ছে নিঃস্তব্ধতার হীম। সেও নিশ্চুপ।
নীরবতা ভেঙে আমি বললাম— ব্রেকআপ তো তুমিই চেয়েছিলে। অথচ একদিন পাগলের মত পেতে চেয়েছো। তোমার অনর্গল কথার ফুলঝুরি সাজিয়ে সাজিয়ে নিয়েছিলাম, উজ্জ্বল রং মশালের মত । সেই তুমি…! পারলে…? এই তিনমাস অসহনীয় যন্ত্রণায় ,বারবার আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছি নিজেকে। আর প্রতিদিন তলিয়ে যেতে চেয়েছি নিষিদ্ধতার অন্ধকারে। জানিনা, এই তিনমাসে কতটুকু্ ক্ষত-বি়ক্ষত হয়েছো তুমি! তার চোখে তখন অঝোর শ্রাবণধারা ঝরে পড়ছে অনায়াসে । চোখের নিচে আঙুল রেখে বললাম, ব্রেকআপ নিয়ে আর নতুন করে সত্যি মিথ্যা কিছুই শোনার ইচ্ছে নেই। যতটা সন্দেহের পাহাড় জমেছে বুকে তা দুঃস্বপ্ন বলেই মেনে নিই এসো। তবে হ্যাঁ, ভবিষ্যতে সতর্ক থাকা দরকার। চূর্ণচূ্র্ণ না হয়ে যায় আমাদের স্বপ্নের স্ফটিক প্রেমস্তম্ভ।
এই কথা শুনে মুখে উজ্জ্বলতা নিয়ে, একরাশ সোনালি রোদ্দুরের মত হাসি ছড়িয়ে জাপটে ধরলো সে।
আমরা আবার ভেসে চললাম সম্পর্কেরস্রোতে। ভেজা চোখে বুকে মাথা গুজে সে তাকালো আমার চোখের দিকে । জলপ্রপাতের মত আমার চোখের ভাষা তার চোখের কিনার ছুঁয়ে গেল যেন পৃথিবী ফিরে পেলো তার প্রগাঢ় সৌন্দর্য।