ফ্লাশব্যাক-৩
আমাদের মুক্তাংগন ও লন্ডনের হাইডপার্ক-মো. শওকত আলী
সন, তারিখ কিছুই মনে নেই।শুধু মনে আছে জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থেকে রাজনীতিক হিসেবে আত্নপ্রকাশের লক্ষ্যে সামরিক শাসন শিথিল করেন এবং i make politics difficult বলে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন। ঐ সময়ের কাছাকাছি সময়ে সম্ভবত সত্তর দশকের শেষভাগে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা করার জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়। লন্ডনের হাইড পার্কের ধারনা অনুযায়ী ঢাকা শহরের তোপখানা রোড থেকে জিরো পয়েন্টের দিকে যাবার রাস্তার বামপাশে মুক্তাংগন নামকরণ করা হয় এ স্হানটির।বলা হয় কোন রাজনৈতিক দল যদি সভা করতে চায় তাহলে ঐ স্হানেই করতে হবে। অন্য কোথাও সভা-সমাবেশ করা যাবে না।হাইড পার্কের নাম আসায় এটি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না।ঢাকায় এসে সুযোগমত সময়ে দেখতে গিয়েছিলাম সেই মুক্তাংগন।আকার -আয়তন দেখে যারপর নেই হতাশ হয়েছিলাম।মনে মনে ভাবছিলাম লন্ডনের হাইড পার্ক কি এরকম? আজ মুক্তাংগনের এক প্রান্তে পাবলিক টয়লেট বাকিটা অংশ রেন্ট -এ-কার ব্যবসায়ীদের দখলে। যা’হোক ২০০১ সালে যখন লন্ডন যাবার সুযোগ হলো তখন হাইড পার্কে গিয়েছিলাম। Hyde Park শুরুর একটা ইতিহাস আছে।পঞ্চদশ শতাব্দীতে এর কিছু অংশ সামন্ত প্রভুদের কাচারি এবং চালচুলোহীন সন্ন্যাসীদের ডেড়া ছিল ।ঘন বৃক্ষরাজিতে আচ্ছাদিত জায়গাটিতে হরিণ,বন্য শুকর,বন্য ষাঁড় শিকারের শখ মিটানোর জন্য রাজ পরিবার একসময় এটি সন্ন্যাসীদের থেকে দখলে নিয়ে হয়। ১৬৩৭ সালে জনসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়। সেন্ট্রাল লন্ডনে অবস্হান হওয়ায় শুরু থেকে মে দিবসের সমাবেশের জন্য এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে।পরবর্তীতে উনবিংশ শতাব্দী থেকে পার্কটি মুক্ত বক্তৃতা এবং সমাবেশের জন্য জনপ্রিয়তা পায়। সে কারনে ১৮৭২ সালে একটি মুক্ত বক্তৃতা এবং বিতর্ক কর্ণার নির্দিষ্ট করা হয় এ পার্কে।যুদ্ধ বিরোধী, সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে অনেক আন্দোলনের সূচনা হয় এখান থেকে। বিংশ শতাব্দী থেকে এটি বড় বড় ওপেন এয়ার মিউজিক কনসার্টের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। নির্মল বায়ু সেবন,হাঁটা এবং হাল্কা ব্যায়াম করার জন্য স্বাস্হ্য সচেতন মানুষের কাছেও হাইড পার্ক একটি প্রিয় স্থান। আর আমার মত ভিনদেশিদের কাছে এর প্রসিদ্ধি লাভের মাহাত্ম্য খোঁজা এবং অভিজ্ঞতা লাভের জন্যও দর্শনীয় স্হান। পার্কের ভূমি ৩৫০ একর এবং এর সংলগ্ন Kensington Gardens এর ২৭৫ একরসহ এটিকে মোট ৬২৫ একর বলা যায়। সারা বছর ভোর পাঁচটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। একদিন সকালের গিয়ে মোটামুটি ঘন্টাখানেক হাঁটার পর কিছুটা ক্লান্তি আর পেটে টান পড়লো অন্য সংগীদের সাথে আমারও।গাছের ছায়া খুঁজে বসার জায়গা বের করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে একটা ভ্রাম্যমান স্নাক্স এর ভ্যানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম।আমার পালা যখন এলো জানতে চাইলো কি নিবো? কি, কি আইটেম আছে জানতে চাইলে হরহর করে বৃটিশ লোকাল উচ্চারণে যা বললো তারমধ্যে একটি হলো Hot Dog. নাম শুনে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম।মনে মনে ভাবছি এ আবার কি জিনিস?কুকুরের সংগে এর সম্পর্ক কি?একটা কথা বলে রাখি বৃটিশদের সেলসম্যানশিপ কোয়ালিটি খুব একটা সুখকর বলে এর আগে আমার অভিজ্ঞতা হয়নি।যা’হোক কিছুটা জড়তা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এ আইটেম কি এবং কি দিয়ে তৈরি? ভ্যানটা অনেকটা পিক-আপ ধরনের ছিল। পিছনটা কিছুটা উঁচু।সেখান থেকে বিতরনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আমাকে জানালো, এটিতে বিশেষ ধরনের বানরুটি, সংগে চিকেন সসেজ এবং এপিটাইজার হিসেবে সস থাকবে।বুঝলাম যে নামকরনের নিশ্চয় একটা পটভূমি আছে তবে আভিধানিক অর্থের কোন ইংগিত নেই। হট ডগ তখনও ঢাকা শহরে এসেছিল কীনা আমার জানা নেই। আমি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অনেকটা নবীণ একজন সরকারি কর্মকর্তা।তিন কিম্বা পাঁচ তারকা হোটেলে লান্চ কিম্বা ডিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কালেভদ্রে গেলেও এধরনের আইটেমের সংগে কখনও পরিচিত হয়নি।ঢাকা শহরে এখন যেমন বিভিন্ন এলাকায় ফাস্টফুড কিম্বা জাংকফুড যাই বলি না কেন যত শপ বা রেস্তোরাঁ আছে তখন অভিজাত এলাকায় কদাচিৎ চোখে পড়ত। চাইনিজ রেস্তোরাঁই ছিল বিদেশি খাবার রসিকদের জন্য ভরসা।আর ফাস্টফুড হিসেবে বার্গারই ছিল প্রচলিত।যাহোক কোকোকোলার ক্যানসহ একটা অর্ডার করে নেবার সময় অথবা খাবার সময় হটডগের উপরিভাগে বেশি ল্যাপটানো সস আমার কাপড়ে এমনভাবে লেপটে যায় যে টিস্যু পেপার দিয়ে পরিষ্কার করে কোনরকম সম্মান রক্ষা গাড়িতে বসেছিলাম। গাড়ি চলা শুরু করলো হাইড পার্ককে পিছনে রেখে।আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম ঢাকা শহরের খর্বাকৃতির মুক্তাংগন কি আমাদের রাজনীতি আর রাজনীতিকদের সংগে তামাশা নাকি রসিকতা?