পাতা প্রকাশ অনুগল্প সংখ্যা ২০২০ ।। সম্পাদক : জাকির আহমদ ।। ১ জুলাই, ২০২০ খ্রি.
বন্ধু
হেলেন আরা সিডনী
সময়ের ঘূর্ণাচলে আমরা কে কোথায় এখন কেউ জানি না শুধু কিছু কথা..কিছু স্মৃতির ভালোলাগা মনের কোনে জেগে থাকে অফুরন্তকাল। জীবনের একটা সময় যেমন টানে প্রাণচাঞ্চল্যতার অভিমুখে ভালোবাসা… তেমনি টানে বন্ধুত্ব।
ভার্সিটির ক্লাশ শেষে প্রায় তোর আর আমার সেই যে গন্তব্য পদ্মানদীর পাড়। কি রে মনে পড়ে…সেই ভালোলাগার মিষ্টি স্মৃতিকে। এই নদীর বুকে তুই আর আমি দিনের পর দিন দেখেছি কতো গড়ন-ভাঙ্গন, দেখেছি প্রেমিক-প্রেমিকার কতো না অভিসার। তুই হাসতি, আমি হাসতাম… আমরা ছিলাম নি:শ্বাসে-বিশ্বাসে খুব ভালো বন্ধু।
জীবন বা সময় কোনটাই শুধুমাত্র গতিময়তায় ভরপুর থাকে না। সেখানে ঝঙো হাওয়ার মতো থাকে নির্মমতা-স্বার্থপরতার কঠিন নির্যাতন। তুই তোর প্রেমিকার গল্প শোনাতি আমাকে, আমি শোনাতে পারতাম না কারন আমার বাসার অমতে বিয়ে করবো না বলে সেই যে সে কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গিয়েছিল খোঁজ করার উপায় ছিল না তাই ঐ জীবনের গল্পটা মুখবন্ধ বই-এর মতো হারিয়ে গিয়েছিল অনিশ্চিত এক সময়ের কাঁটাতারে। তোদের দু’জনের প্রেমগল্প শুনতাম মনোযোগ দিয়ে আর বলতাম
: ভালোবাসার মতোই ভালোবাসিস, সময় কাটানোর জন্য নয়।
তুই বলতি : ও আমার জীবনর, তুই আমার শ্বাস। বুঝলি কিছু…। এই যে আমাদের মাঝে মাঝে মন কষাকষি কিংবা মান-অভিমান হয় তখন তুই তো একটা বড় ভূমিকা নিস। এমন বন্ধু ক’জনের ভাগ্যে হয় বলতো?
মনে পরে বন্ধু… সেই দিনগুলোর কথা?
এই তো সেদিন..তুই-ও আর আমি তিন জনেই পদ্মার পাঙ ঘেঁষে বসে, মচমচে বাদাম খাওয়া আর গল্প…হঠাৎ তোদের মধ্যে কি হলো জানি না, কথা কাটাকাটি। অস্বস্তি বোধ করছিলাম, যখন ও আমাকে কটাক্ষ করে কিছু কথা বললো। আমি কি করবো, কি করা উচিত-ভাবতে ভাবতেই তোদের তর্কটা বেশ তুঙ্গে। আমি ওর হাতটা ধরে বললাম-
: আমাকে ভুল বোঝো না, আমি ওর বন্ধু বৈ আর কিছু না।
কোনো দিনও এমন ঘটনা ঘটেনি, মন বলছিল-তবে কি আমি ওদের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি যে মিষ্টি মধুর একটা সম্পর্কের মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁঙালো…ওদের ভালোবাসার মাঝে বিষ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। আমি উঠে দাঁড়াতেই ও ছুটে চলে যায় নদীর দিকে। তুই-ও ছুটলিৃ চোখের পলকে কি ঘটে গেলে…এখনো শিয়রে উঠে আমার সমস্ত শরীর। বোকার মতো.. নাকি বিশাল এক কষ্ট বুকে ও মরতে গেলো। তোরা দু’জনে পানির গভীরে… চিৎকার করে দু’একজনকে ডাকতে আশ-পাশ থেকে ৩/৪ জন ঝাপ দিল নদীতে। প্রায় একঘন্টা পর তুই ওকে তুলে আনলি, সঙ্গে বাকী লোকেরা। তুই ওর বুকে চাপ দিচ্ছিলি, মুখ দিয়ে মুখে শ্বাস দিচ্ছিলি, আমি হাত-পা ঘষে গরম করছিলাম আর ভাবছিলাম-ছি: এই আমি, আমার জন্য এত্তোবড় এক ঘটনা…।
স্পর্শধন্য সন্ধ্যা তখন আসি আসি করছে…। ভালোবাসার অপূর্ব এক শিহরণ জাগানীয়া উপভোগ্য সময় অথচ কি হতে কি হলো। তোর ভালোবাসার প্রিয়তা চোখ মেলে তোকে জডড়য়ে ধরলো। পানিরাশির স্বচ্ছতার মতোই ছিল তিনমুখী সম্পর্কের অপূর্ব মাধুরীমা কিন্তু আমার চোখ খুলে গেলো সেদিন অন্যরকম ভাবে। জীবন বৈচিত্রময়তায় নতুন অভিজ্ঞতা সন্চরণে আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছিলাম। আমি চলে আসছি মাথা নীচু করে, নিজের উপরে নিজের ঘৃণা হচ্ছিল। চোখ আর মনের মেঘবর্ষণের বারিধারায় আমি যেনো শীতল হয়ে যাচ্ছিলাম।অকস্মাত তোরা দু’জন দুপাশে ছুটে এসে হাত ধরলি। ‘ও’ জডড়য়ে ধরে কেঁদে ওঠে…তুইও আমার একটা হাত চেপে ধরলি। রেগে উঠে বললি
: এই কি তোর বন্ধুত্ব? আমায় ছেড়ে চলে আসলি..বিশ্বাস কর ওর ভুল ও বুঝতে পেরেছে।
প্রকৃতির সৌন্দর্যময়তা আর হৃদয়িক সম্পর্কের পবিত্রতার স্বর্গীয় রূপের ডালিতে সূর্য তখন বিদায় নিচ্ছিল। তোকে বললাম
: যা ওকে বিয়ে করে নে?
তুই বললি : ঠিক বলেছিস।
কাজী অফিসে গিয়ে আমি স্মাক্ষী থেকে তোরা সেদিন এক সুঁতোয় বাঁধা পরলি। আমার চোখটা জুড়ে গেলো, বুকটা ভরে উঠলো তোদের এক করতে পেরে। তোদের একটা হোটেলে তুলে দিয়ে আমি হোষ্টেলে ফিরলাম। বিভৎস ভয়ের হাত থেকে আল্লাহ রক্ষা করেছেন ভেবে শুকরিয়া জানাই দয়াময়ের কাছে। অনেক ভোঙে তুই আমাকে রিং দিয়ে লালশাঙী, লালটিপ পূর্ণাঙ্গ সেজেই আসতে বললি। ভয় পেলামৃ কেনো? না… বলতে বলতেই রেখে দিয়েছিলি রিসিভারটি। মন সায় দিচ্ছিল না কিন্তু তোর ডাক উপেক্ষা করতে পারলাম না, চলে গেলাম নদী তীরে…। যতো সম্ভব রাতেই কিছু মার্কেট করেছিস কারন ও বউ বেশে সুন্দর ভাবে সেজেছিল তখন। আবারো নতুন করে ক্ষমা চাইলো গত ঘটনার জন্য।
মনে পড়ছে বন্ধু তোর… সে দিনের সে প্রভাতী সময়টা ছিল শারদীয় সৌন্দর্যের সুশোভিত উজ্জ্বলতা। চারদিকটা কেমন যেনো র্নিমল প্রশান্তি বিরাজ করছিল। সূর্যদ্বয়ের আলোকরশ্মির আভা চারদিকে ছডড়য়ে পরেছে। শিরশিরে একটা বাতাস শরীরটাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। পাশেই ছোট একটা জলযোগের ব্যবস্থা আছে। উল্টোদিকে দুজন মানুষ বসে আছে। একজনের পেছনটা দেখে বুকটা কেপে উঠছিল বারবার। মিষ্টি বউটি আমার হাতে চুড়ি পরিয়ে দিয়ে বললো-
: সব সময় কি এমন থাকলে চলবে? জীবনটাকে সাজাতে হবে না?
বুঝতে পারছিলাম নাৃ.ওর কথার অর্থ। ভেবে উঠতে পারছিলাম না কে আর কেনোই বা আমাদের মাঝে বাহিরের লোক। হ্যান্ডসাম মানুষটিকে চেনা চেনা লাগছিলৃ. হ্যাঁ এ যেনো সেই মুখ..সামনে এসে দাঁঙালো। চমকে উঠলো আমার শরীরের সমস্ত ইন্দ্রানুভূতি। এ তো সেই…
সুন্দর একটি পাটি বিছিয়ে দিলি তোরা দু’জন মিলে। একজন মৌলুভীর সঙ্গে ওরা দু’জন বসলো। আমি যেনো পাথর প্রতিমা। কি হচ্ছেৃকেনো হচ্ছে বোঝার আগেই তোর বউ টেনে পাটিতে বসালো। আজো মনে পড়ে কেঁদেছিলামৃ ভীষণ কেঁদেছিলাম। দীর্ঘ বছর পর আমার প্রিয় ভালোবাসার হাতটি আমার মাথার উপরে। কলেমা হলো…বিয়ের কবুল হলো পুতুলের মতোৃ ও আমার হাতটি ধরে বললো-
: আর ভয় নেই, নেই কোনো অব্যক্ত কষ্ট দু:খ…। আমি এসেছি ফিরে, তোমার প্রেম। দেখো তোমার বন্ধুটি আমার কাজিন।ওর কাছ থেকেই আমি সব খবর রাখতাম আর তোমার বন্ধুটিকে বলে ছিলাম তোমাকে সবসময় আগলে রাখতে।
বন্ধু তোর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহারটি নিয়ে সুখে ঘর করছি আর তুই বিদেশের বুকে সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আজ হয়তো আর কারো খুব প্রয়োজন নেই কিন্তু অপ্রয়োজনে তোকেই মনে পড়ে বেশি। ভাবি নি আমরা দু’জন দু’দিকে একদিন সরে যাবো। হাজার বছর তোর হাতটা ছুঁয়ে দেখি নি। অনন্ত হাহাকার বন্ধু আমরা আজো অনুভব করি। তোর সঙ্গে ঝগড়া-মন খারাপের ভাগাভাগির কান্নাগুলো মনে পড়ে কি তোর? সুখময় সময়েও তোকে খুঁজে আমার এ মন। এই জীবনে আজ-কাল-পরশু থাকবে এই দামী দু:খের অনুভূতিগুলো। এই বিভক্ত সময়েও আমরা বন্ধু তাই তো বুকের গভীরে বন্ধুর সুসম্পর্ক আজো স্মৃতিবন্দী। বন্ধুত্বের ভালোবাসা বড় অমলিন। তোর দেওয়া সেই এক সকালের নদীর পারে ভালোবাসবার ভালোলাগাটুকু অনন্তকাল বেঁচে থাক দোয়া করিস, আমিও দোয়া করি তোদের জন্য। ভালো থাকিস তোরা দু’জনে…
-প্রেমা
আর্তনাদ
আল-আমীন আপেল
১.
চৈত্ররোদে ফেটে চৌচির ফসলের মাঠের মতন কষ্ট বুকে চেপে বর্গাচাষী রহিদ মিয়া বেঁচে থাকে, মরণদূত দুয়ারে এসে ফিরে যায় বারবার; লাঙলের হাতলে হাত পড়তে পড়তে কড়া পেয়ে বসেছে হাতের তালুতে। ক্লান্তিমাখা মুখে একটাই প্রার্থনা: বউট্যার প্যাটের ব্যাটাটা য্যান মোর ভরসা হয় আল্লা!
২.
জবুথবু সময়ের নিয়মচক্রে বিশ বছর কেটে গেছে। বউটা কোভিড নাইন্টিনের ছলে পৃথিবী থেকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালো ক’দিন আগে। আর ভরসা হবার স্বপ্ন নিয়ে জন্মানো ছেলেটা দু’বছর হলো চাকরি পেয়েছে, বিয়েও করেছে চাকরিতে যোগ দিয়ে দিন সাতেক পরে। বাবা-মাকে জানানো অবান্তর মনে করে এড়িয়ে গেছে তাদের। বড়লোকের জামাই সে। আজ সে অন্যঘরে আশার আলো জ্বেলে যায়। বর্গাচাষী রহিদ এখন অচল। ঘরের আলোর সাথে চোখের আলোও নিভে গেছে।
বউটা চলে গেছে ঠিকই, রেখে গেছে ভাইরাসের মায়া। রহিদের শরীরেও কোভিড নাইন্টিনের বসবাস। দু’দিন আগে প্রশাসনের লোক এসে লকডাউন করেছে তার বাড়িসহ আশপাশের কয়েক বাড়ি। দিনান্তে ভেজা চোখে গাছের পাতায় অস্থিরতা জাগায়, উঠোনে গড়াগড়ি খায় রহিদের বেদনার্ত স্বর:
বাজান, ও বাজান…মইরবার আগে তোর মুখখান কি শ্যাষবার দেইকপার পাইম না বাজান?
বাবা লকডাউন কি?
শাহ্-নাজ বেগম
দীর্ঘ দিন বাড়ির ভিতর থাকতে থাকতে ছোট আনিস তার বাবাকে বলছে-
আনিস: বাবা, বাহিরে যাবো?
বাবা:বাহিরে যাওয়া যাবে না।
আনিস: কেন বাবা?
বাবা: করোনার জন্য।
আনিস: করোনা কি?
বাবা: করোনা একটা মহামারী রোগ।
আনিস: এ রোগে কি হয় বাবা?
বাবা: মানুষ মারা যায়। আনিস: কিভাবে মানুষ মারা যায়-বলবে বাবা?
বাবা: হ্যাঁ, বলব।শোনো তাহলে-একজন মানুষের শরীরে এ রোগ থাকলে তা হাঁচি, কাশি মধ্য দিয়ে ছড়ায়। এ রোগের জীবাণু হাতের স্পর্স দিয়ে চোখ, নাক, মুখ দিয়ে প্রবেশ করে।
আনিস: তারপর কি হয় বাবা?
বাবা: মানুষ এর শরীরে সর্দি কাশি তীব্র জ্বর, ও মাথা ব্যাথা হয়,ডায়রিয়াও হতে পারে। এরপর তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। ফলে মানুষ মারা যায়।
আনিস: এ রোগ দেখতে কেমন বাবা?
বাবা: এ রোগ দেখা যায় না।
আনিস: বাবা, কি করলে এ রোগ হবে না?
বাবা: একজন মানুষের কাছ থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব রেখে চলতে হবে। বার বার জীবাণু নাশক দ্রব্য বা সাবান দিয়ে হাত ২০ সেকেন্ড ধরে পরিষ্কার করতে হবে। কিছু খন পর পর পানি পান করতে হবে। ভিটামিন সি,বা টক জাতীয় ফল খেতে হবে। চা, কফি,গরম পানি, গরম গরম খাবার খেতে হবে। আদা, কালিজিরা, লবঙ্গ খেতে হবে। কারো জ্বর সর্দিকাশি হলে,,, তা পরীক্ষা করার জন্য কোয়ারেন্টাইনে নিতে হবে।
আনিস: বাবা কোয়ারেন্টাইন কি?
বাবা: কোন ব্যাক্তির শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করেছে কিনা তা নিশ্চিত করা। যদি করোনার লক্ষণ পাওয়া যায়,, তবে তাকে আইসোলেশনে রাখতে হবে।
আনিস: আইসোলেশন কি বাবা?
বাবা: সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। অর্থাৎ, রোগী কে আলাদা করে রাখার এক প্রকার ব্যাবস্থা।
ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। রোগীর কাছে অন্য কারো যাওয়া যাবে না। মাস্ক পরে বাহিরে যেতে হবে।
আনিস: মাস্ক কি বাবা?
বাবা: নাক, মুখ, ঢেকে রাখার এক প্রকার দ্রব্য।হাতে গেøাব দিয়ে বাহিরে যেতে হবে। হাঁচি,কাশি এলে মুখে রুমাল, টিস্যু, বা কোনুই দিয়ে ঢেকে হাঁচি ফেলতে হবে। বাহির হতে এসে সবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে,,,, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জনবহুল জায়গায় যাওয়া যাবে না। বিনা প্রয়োজনে বাহিরে যাওয়া যাবে না।
আনিস: বাবা রোগীকে কে
দেখবে?
বাবা: ডাক্তার বা নার্স।
আনিস: তারা কিভাবে দেখবে?
বাবা: পি,পি পরে।
আনিস: পি,পি,কি বাবা?
বাবা: Personal Pro:ec:ive Equipmen:. ( ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি),,, যা এক ধরনের পোশাক মানুষ কে জীবাণু থেকে রক্ষা করে। যে জায়গায় বা যে বাড়িতে লকডাউন থাকে সেখানে যাওয়া যাবে না।
আনিস: লকডাউন কি?
বাবা: কোনো এলাকায় মহামারী হলে সেই জায়গায় যে কারো আসা যাওয়া নিষেধ থাকে অর্থাৎ,,তালাবদ্ধ করে দেয়া কে লকডাউন বলে। যেমন:- আমরা বাড়ির বাহিরে যাচ্ছি না, আমাদের বাড়িতে কেউ আসছেনা এটাই হচ্ছে লকডাউন… বুঝলে আনিস।
আনিস: হুম… বাবা…
ভাতের খোঁজ
রনিতা নাথ
সন্ধ্যায় অয়নের বউ শিখা শারীর আঁচল মাথায় দিয়ে তুলসী তলায় ধূপ দেখায়।ঘরের দেওয়ালে টাঙানো শ্বশুড়ের ছবির সামনে আর্শিবাদ নিয়ে,শাশুড়ীর পা ছুঁয়ে সংসারের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে বলে মনের ভাবনাকে লালিত করে প্রতিদিন।
সন্ধ্যার পর চা থেকে একেবারে রাতের খাবার বানানো পর্যন্ত জ্বলতে থাকে অয়নদের উনুনের আগুন।বউটি রান্নার ফাঁকে সময় হলেই বর্ণমালার বর্ণ দিয়ে মেয়ে আঁখির সাথে ছড়া কাটে সুরে সুরে।
১)সকাল হলেই
খাই খাই
হাতা খুন্তি কড়াই
এই নিয়ে লড়াই।
২)নুন আর পান্তা ভাত
খাবারের সহজপাট।
৩)আয়রে মিনি আয়
আঁখির কাছে আয়।
আঁখি দেবে দুধ ভাত
চেটে দেখ না কেমন স্বাদ।
নাদুসনুদুস লেজটি তুলে
নাচবি যখন হেলেদুলে।
আঁখি তখন মায়ের কুলে
ভাত খাবে তোকে দেখে।
ছড়া কাটতে কাটতে আবার ডাক আসে আঁখির ঠাম্মার।আমার ঔষধ টা দেখেছো।শিখা ঔষধ দিতে এগিয়ে যায়।শাশুড়ীর হাত অবদি পৌছানোর আগেই বারান্দায় গ্রিল খুলার শব্দ হয়।আঁখির কাকু দুই বন্ধুকে নিয়ে আসে।কড়াই নামিয়ে আবার উনুনে দুকাপ চায়ের জন্য জল বসায় শিখা।
রাত বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ার আগে একটু আয়নার সামনে দাঁড়াতে ভুলে না শিখা।আয়নাই নীরবে বলে দেয় শিখা কেমন আছে। শব্দহীন নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথন।বিছানায় মেয়ের দিকে একবার,পাশে শুয়ে থাকা স্বামীর দিকে একবার তাকিয়ে ভাবে ব্যস্ততায় ভালোবাসার ছোট ছোট আবদার গুলো কাজের মাঝে ডুব দিচ্ছে। কতো ডাক দিয়ে যায় অসময়ে। সেই গুলো কি আর ফিরে আসে রাতবিছানায়।ক্লান্ত শরীর পড়ে থাকে বিছানা জুড়ে। ভাবতে ভাবতেই সকালে টাটকা সবজির কথা মনে পড়ে। ফ্রিজ টা খুলে একবার দেখে নেয় সব ঠিক ঠাক আছে তো।
রাতদুপুরে মনের দরজার কপাট খুলে রাতআকাশে নিজের স্বপ্নের ছবি আঁকে শিখা।মনের মানচিত্রে ভেসে উঠে কতো রঙিন ভাবনা।মায়ের কথা বাবার কথা। কত কত মানুষেরকথা।অভাব থেকে রেহাই নেই কতো কতো মানুষের।পৃথিবীর নাকি সামনে খুব বিপদ।ধ্বংসের হাতছানি অবিরত।মানুষই ঘনিয়ে আনছে মানুষের বিপদ।
মানুষ মানুষকে ভয় পাচ্ছে।সম্পর্ক গুলোকে মানুষ টুকরো টুকরো করছে নিজ হাতে। ভালোবাসা শুধু শরীরকে।অনুভূতি জাগার আগেই তৃষ্ণা মেটানোর তাগিদে দৌড়। শুধু দৌড়।পেছনে তাকালেই এক রক্তাক্ত শব।
ক্লান্ত চোখে ঘুম এসে চুমু খায়।রাত গড়িয়ে ভোর হয়।শিখা কানপেতে শুনে কিভাবে রাতের নীরবতা ভঙ্গ হয় ভোর পাখীর ডাকে।আস্তে আস্তে বাইরের আলো ঘরের ভেতরে ঢোকার রাস্তা খোঁজে।আলো ছড়িয়ে পড়ে চর্তুদিকে। চারদেওয়ালের ভেতরে থাকা সব কিছু স্পষ্ট হয় আবার।মনেরই কোণে কিছু অন্ধকার আজ ও আলোর পথ খোঁজে।
সকালে কাজ শেষ করে একের পর এক…।
কাজ সেরে তরিঘড়ি বেরিয়ে পরতে হবে।কাজের বাজারে বহু কষ্টে সে হাসপাতালের আশাকর্মীর কাজ পেয়েছে কিছুদিন হলো।হাসপাতালে যেতে যেতে গাড়িতে বসে,সবকিছু দেখতে দেখতে হঠাৎ নজর পড়ে একজন বৃদ্ধ কড়া রোদে মাথায় লাকড়ির বোঝা নিয়ে পিচ রাস্তায় হাঁপাতে হাঁপাতে হেঁটে চলছেন নিজ গন্তব্যের দিকে।পেট একেবারে পিঠে গিয়ে ঠেকেছে অঝোরে ঝরছে ঘাম।কোচকানো চোখে শুধু মাত্র একমুঠো গরম ভাতের খোঁজ।
ভাতের খোঁজে শিখাও গাড়ি থেকে পা বাড়ায় এক দুই তিন।
বৃদ্ধাশ্রম
তৈমুর রহমান
গেটে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার কলিংবেলে চাপ দেওয়ার পর ষাটোর্ধ্ব একজন ব্যক্তি বের হয়ে আসলেন-
আরে ইশিতিয়াক যে, “আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল, কেমন আছেন? ” আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো, ইশতিয়াক? এবার আসতে দেরি হলো কেন? জ্বী আঙ্কেল, এবার ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। তাই দেরি হলো-
কথা বলতে বলতে দুজনেই চারতলা বিশিষ্ট ফ্ল্যাটের দ্বিতীয় তলায় উঠলেন।
ইশতিয়াক আহমেদ সাপ্তাহিক “মানবতার খোঁজে” পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি কবি ও লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত। ছোট বেলায় বাবা মা হারানো ইশতিয়াক অনেক কষ্টে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। জীবন সংগ্রামে সফল এই মানুষটি খুব কাছ থেকে মানব মনের কষ্টগুলো অবলোকন করেছেন। তাই তিনি বেছে নিয়েছেন এই পেশা যাতে সমাজ থেকে মানবতা শব্দটি হারিয়ে না যায়। দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাঁর একদল চৌকস কর্মীবাহিনী রয়েছে। মানবতার খোঁজে ছুটে বেড়ান দেশের আনাচেকানাচে। যেখানেই মানবতা ভূলুণ্ঠিত সেখানেই হাজির এই দল। রুটিনওয়ার্ক হিসেবে এসেছেন এখানে।
মধ্য ঢাকায় অবস্থিত “শান্তি নিবাস” এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব সাফায়েত আলম অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর একমাত্র মেয়ে,জামাই আমেরিকা প্রবাসী। স্ত্রীর অনুরোধে প্রতিষ্ঠা করা এই নিবাস। অথচ সেই স্ত্রীকেই হারিয়েছেন কিছুদিন আগে।
“আঙ্কেল আমি একটু নূরজাহান আণ্টির সাথে দেখা করে আসি।”
“ঠিক আছে বাবা যাও। যাবার সময় দেখা করিও।” ঠিক আছে আঙ্কেল।
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?
“ওয়াআলাইকুমুস সালাম। ভালো আছি বাবা, ভালো আছি এই ভেবে যে একটা ছেলে আমাকে নিয়মিত দেখতে আসে। আমার খোঁজ খবর নেয়। কথাগুলো বলতে বলতে তাঁর চোখ দিয়ে অঝোরে টপটপ করে পানি ঝরছে।
কী নেই তাঁর! স্বামীর রেখে যাওয়া বিশাল ফ্ল্যাট আর ব্যাংক ব্যালেন্স। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ছোট ছেলে প্রকৌশলী জার্মান প্রবাসী আর মেয়ে এবং জামাই দুজনেই সরকারি হাইস্কুলে শিক্ষকতা পেশায় খুলনা সদরে কর্মরত। মেয়েই মাঝে মাঝে খবর নেন। সময় পেলে দেখে যান মাকে। বড় ছেলের সংসারে দিনকে দিন অপাংক্তেয় হয়ে যাচ্ছিলেন। ঘরের কোণে অব্যবহৃত সামগ্রীতে যেমন ধুলোবালি পড়ে আরও ব্যবহারের অনুপযোগি হয় ঠিক তেমনই। তারপরও অনেক কষ্টে থাকতে চেয়েছিলেন বউ, ছেলে, নাতি, নাতনিদের সাথে যাতে প্রতিদিন সবাইকে দেখতে পান। মায়ের মনতো,
পাশের রুম থেকে ছেলে, বউয়ের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, কথা-কাটাকাটি শুনতে পেতেন নিয়মিতই। একরাতের ঘটনা তাঁকে খুব বিচলিত করে তুলে আর মনে চরম দু:খের উদ্রেক হয়।
” তুমি কোন পথ বেছে নেবে? হয় আমি এই বাসায় থাকব আর না হয় তোমার মা থাকবে।” বউ ফারিয়া জামানের প্রশ্ন শুনে ছেলে শাহরিয়ার জামান হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। শাহরিয়ার কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়ে। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে খুব সকালে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। এমন সময় মা ডাকলেন “শাহরিয়ার, বাজান একটু শুনে যাও।” জী আম্মা, আসছি,,,
“তোমাদের কথাগুলো আমি শুনেছি বাবা। আমাকে কোনো এক বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসো। আমি ওখানেই ভালো থাকব।
” না আম্মা, আপনি এখানেই থাকবেন। আপনারই তো বাসা এটা।”
“আর আমায় প্রয়োজন নেই তোমাদের। আমার পেটে তোমরা তিন ভাইবোনকে জায়গা দিতে পেরেছি অথচ তোমরা এই ফ্ল্যাটে আমার জায়গা নিশ্চিত করতে পারলেনা। তোমরা এখানে সুখেই থাকো বাজান, আমায় তুমি আজই কোনো বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসো।
মায়ের পীড়াপীড়িতে শেষতক ছেলে “শান্তি নিবাসে” রেখে গেছে। রেখে যাওয়ার পর কয়েক মাস খোঁজ খবর নিত। এখন তাও বন্ধ।
“আন্টি আপনার জন্য একটা শাড়ি এনেছি আর কিছু ফল। দেখেন শাড়ি পছন্দ হলো কিনা।”
“এতকিছু কেন করছ বাবা? “
“আপনি আমাকে ছেলে ভাবলে আমি আপনাকে মা ভাবতে পারবনা? “
“হ্যাঁ বাজান, তোমাকে পেটে ধরিনি ঠিকই কিন্তু আদর্শ সন্তানের চাইতে কম কীসে তুমি? পেটে ধরা সন্তানেরাতো ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে
কথোপকথনের মুহূর্তে দুজনের চোখ যেন বন্যায় ভাসছে। এই কী আল্ট্রা মডার্নের প্রাপ্তি!
“আন্টি, আজ আমি উঠি।”
“তুমি এখন থেকে মা বলেই ডেকো আমায়, তাহলে আমার প্রাণটা জুড়িয়ে যাবে। অবশ্য তোমার আপত্তি যদি না থাকে। “
“আমি সেই ছোট্ট বেলায় মা ডেকেছি। আর এখন আপনার মাঝে মাকে খুঁজে পেয়েছি। এটাই আমার চরমপ্রাপ্তি। আজ আমি, ইশতিয়াক পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। মা, আপনি শুধু আমার জন্য দোয়া করেন, আমি যেন আপনার খেদমত করতে পারি।”
করোনা’র কর্ম
ইসমত আরা
তেনার বয়েস হইয়া গ্যাছে। কাম কাইজে তেমুন জোর পায় না তয় মুখখান এক্কেরে সুঁইয়ের নাহাল ধার। একবার চললে থামায় কার বাপে। হেই বিহান তন না খাইয়া আছে পোলাডা, সে হুশ্ তার আছে? কি করি, কি খাই, কনে যাই দিশা পাইতাছি না! মনে কয় গলায় দড়ি দেই!
শেষ বেলায় নিপূঁত নাম ধুচাবার তয় একটা ছাওয়াল দিলাই যদি খোদা, এত বিপদ দেও ক্যা অভাবের ঘরে। বুইড়া সেই কতদিন ধইরা ঘরে বইসা। রিসকা নিয়া পথে যাওন মানা। কি যে রোগ বালাই আইল মরার দ্যাশে? বাড়াইলে পিডন, লাঠি, গুতা, কান ধরাই থয় আইনের মানুষ। হাতে কইরা ব্যাডে খাওন মানুষগুলার কি হইবো আল্লাই জানে?
কারো বাইত্তে যাওনের উপায় নাই। ব্যাক্কে কয়,ঘরে থাকেন। এইডা কেমুন কতা! ঘর কি প্যাড চালাইব। গরিবের আবার ডর কিসের? অসুক বড় না ক্ষিদা বড়, কন! যা গো মাতার উপর আকাশডাই ছাদ, আল্লাই ভরসা। তাগো আবার জীবনের হারাইবার ভয় কি?
মন্ডল বাইত্তে আগে কাইজ কাম কইরা কতদিন চইলা যাইত। অন্তত ভাতের অভাবডা হয় নাই। অহন তাগো গেডে তালা। হুনছি তারাও নিজের কাইজ নিজেই করে। হায় আল্লাহ! কি অবিশাপ! কনে যাই, কি করি! আর ছাওয়ালের মুখের দিক চাইবার পাইতাছি না! আল্লাহ উপায় কইরা দেও। কি অসুখ দিলা দ্যাশে। গরিবগুলা যাইব কনে, কও!
-অ দুখুর বাপ, দুখুর বাপ! কতা কও না ক্যা! অহন মুখের মধ্যে কি তালা দিছ? খুব তো কতায় কতায় হাত চালাও,মুখ চালাও। যা মনে কয় তাই কও। অহন দেখি খুব ভালা মানুষ হইয়া গ্যালা। একটা উপায় বাইর কর, দ্যাহ পোলাডা কিমুন চিৎ হইয়া শুয়া রইছে। প্যাডডা ধারার নাগাল হইছে দ্যাহ! গায়ে কেমুন জ্বর জ্বর ঠেকে!
ঠিক এভাবে অনর্গল বকবক করেই চলছিল দুখুর মা। হঠাৎ রেবেকার আগমন তাকে চমকে দিলো যেনো। রেবেকা দুখুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। রেবেকাকে দেখে দুখুর মা খুব আগ্রহ নিয়ে কাছে আসতে চাইলে, তিনি সুকৌশলে বললেন,শোন দুখুর মা,তুমি ওখানেই দাঁড়াও। জান তো, পৃথিবীতে এক অদৃশ্য ভাইরাস এসেছে যা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ। সে জন্যই তোমাকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে বুঝছো। আমার এই বস্তায় তোমাদের জন্য সামান্য কিছু খাদ্য সামগ্রী আছে। নিয়ে যেও। আর দুখু কেমন আছে? ও কি বাড়িতে নেই?
-কি যে কয় আফায়? হেই যে আপনে একদিন আইসা কইয়া গেলেন, বাড়িত তন বাহির না হইতে। অজানা অসুক আইছে,মানুষগুলা এমনি মইরা যাইতাছে। হেই কতা শুইনা হেয় আর বাড়িত তন বাহির হয় নাই গো। আপনের কতা হ্যায় কারেন্টের নাহাল শোনে গো আফা!
-বেশ ভালো। তা কই সে? ডাক একবার কথা বলে যাই।না গো আফা। ছাওয়ালডা এক্কেরে ভালা নাই। গায়ে জ্বর জ্বর ভাব। সাতে কফ কাঁশি। খাওন নাই। বড় চিন্তায় আছি। কয় দিন হইলো সরকারের লোক আইসা কিছু তেরান দিয়া গেছে আর খবর নাই। খাবার ফুরাইছে দুইদিন। অর বাপে রিসকা নিয়া বাইর হইলে পথে অপমান হইয়া ঘরে ফিরে। কি এক আজাব যাইতাছে, কি যে কই আফা আপনেরে!
-হুম, বুঝছি। আর বলতে হবে না। ওকে ডাক্তার দেখাইছ?
নাহ্! গরিবের আবার ডাক্তর! তয় গরম পানি খায়। অহন নাকি ঐডাই চিকিস্সা।
দুখুই কয়,মা তুমি লেবুর রস দিয়া গরম পানি দাও।,আদা,রসুন দিয়া পানি গরম কইরা দাও খাইলে জ্বর সাইরা যাইব,আফায় কইছে। কিন্তু লেবু পামু কই। বাজারে পাওয়া যায়,খুবই দাম -সে তো বুঝলাম তবে এটাই এখন ঔষধ, বুঝছো তো! দেখি কি করতে পারি?
ক দিন এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। রেবেকার হঠাৎ মনে হলো দুখুর জ্বরটা সেরেছে তো! একটু খোঁজ নেয়া দরকার। এখন কোন জ্বরকে সাধারণ বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না ভেবে ঝটপট প্রস্তুতি নিতেই ভেসে আসছে দূর হতে করুণ কান্নার আওয়াজ।
তবে কি!হায়,সেটাই সত্যি। কৃপণ সময় তাকে আর দেয়নি ধার একটি দিনও। তার আর কোন পর থাকেনি বাকী! সর্বনাশা “করোনা”! শুনে, বড় বেশি দ্র্বূল হলেন রেবেকা। মুঠো হতে একটা একটা করে পড়ে গেলো মাটিতে লেবুগুলো। ক ফোঁটা জল অজান্তে গড়িয়ে পড়লো চোখের নদী হতে। দুখুরে-
দু:স্বপ্ন
শামীম খান যুবরাজ
এভাবে এত বছর পর হঠাৎ করে অনিকার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে ভাবেনি আবরার। চোখে চোখ পড়তেই ঝটকা লাগল মনের দরজায়। দীর্ঘদিনের খিল আঁটা দরজায় হঠাৎ ঠকঠক শব্দে যেমন চমকে ওঠে গৃহবন্দি, আবরারের বেলায়ও তেমনটাই অনুভ‚ত হলো।
: কেমন আছো আবরার?
প্রথম কথাটা অনিকার মুখ থেকেই বের হলো।
: জি, ভালোই। আপনি?
আবরার অনিকার মুখ থেকে নিজের চোখ নামিয়ে নিল, যথাসম্ভব দৃষ্টিটা অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা করল সে।
: তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেনো?
: জি, আপনি তো এখন অন্যের স্ত্রী, অপরিচিতজন। আপনি তো ভালো করেই জানেন অপরিচিত কাউকে আমি ‘তুমি’ সম্বোধন করি না।
: তাতো জানি, কিন্তু আমি কীভাবে তোমার অপরিচিত হলাম। আমি যে তোমার সাবেক স্ত্রী। আমাকে তো ভালো করেই চেনো তুমি। থাক সে কথা, শুনলাম তুমি নাকি বউ নিয়ে বেশ সুখেই আছো। টানাপোড়েনের সংসারে এতো সুখে থাকো কী করে? তাছাড়া আমার স্মৃতি বুঝি তোমাকে তাড়া করে না! এতো কিছুর পরেও ভালো থাকার অভিনয় করছো নাতো?
: দেখুন, আপনি যখন আমার স্ত্রী ছিলেন তখন আমার মেলা টাকা-পয়সা ছিল। আর যখন টাকায় ভাটা পড়ল, তখনই আপনি আমায় ছেড়ে গেলেন। ওসব স্মৃতি নিয়ে কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আপনার সঙ্গে যে কবছর সংসার করেছি, সেসব আমার দু:স্বপ্ন বলেই আমি ভুলে গেছি। আমার সংসারে এখন শুধু স্বপ্ন আর স্বপ্ন। ভালোবাসা আর ভালোবাসা। দু:স্বপ্নগুলো কাছেই ভিড়তে পারে না।
আমার এখন অনেক টাকা নেই সত্য, কিন্তু সুখ আছে। একটি সুখপাখি আছে আমার সংসারে। হ্যাঁ, জ্যোতিকাই আমার সংসারের সেই সুখপাখি। অল্পতেই যে তুষ্ট। সুখের জন্য লক্ষ কোটি টাকার দরকার হয় না। ভালোবাসা আর ভালো একটা মনের দরকার। যা আপনার কাছে ছিল না। আশাকরি আগামীতে আর কোনোদিন আমাদের দেখা হলে পুরনো পরিচয়ে কথা বলতে আসবেন না। আমি আপনাকে চিনি না। আপনিও আমার পরিচয়ে কথা বলবেন না।
জ্যোতিকা আমাকে, আমার দারিদ্রতাকে সমানতালে ভালোবাসে। ওর প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আপনি আমার জীবনে যে কলঙ্কের কালি লেপন করেছিলেন, জ্যোতিকা তা মুছে দিয়েছে অনেক আগেই। আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। আপনার জীবন অসুখী হোক এটা আমি কোনোদিনই চাইনি। আর চাইনি বলেই আপনার মুখোমুখি হইনি কোনোদিন। আমি খুশি হবো আগামীতে আমার সঙ্গে আপনার আর দেখা না হলে। ভালো থাকবেন।
আবরারের চলে যাওয়া পথের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল অনিকা।
সত্যিই আবরার অনেক সুখী, ফুটফুটে দুটি ছেলেমেয়ে তার। স্বামীভক্ত গৃহিনী যার ঘরে তার আর দু:খ কীসে! আর আমার সবকিছু থেকেও কিছুই নেই। স্বামীর রোজকার সন্দেহ, সংসারের অশান্তি, অবিশ্বাস সবমিলিয়ে নিজেকে নি:স্ব বলেই মনে হলো অনিকার কাছে। অথচ আবরার তাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল। আর সে কিনা মেকি এক ভালোবাসার টানে পরকিয়ায় জড়িয়ে আবরারকে ছেড়ে মফিজের হাত ধরে…
আর ভাবতে পারে না অনিকা। কয়েকটা বছর হয়তো আবরার দু:স্বপ্ন দেখেছিল। আর আমাকে দু:স্বপ্নের ঘোরে কাটাতে হবে সারাজীবন।
দোষ যতো করোনার
মির্জা মুহাম্মদ নূরুন্নবী নূর
আমিন সাহেব একটি মাল্টিলেভেল কোম্পানিতে জব করেন। মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি অফিসেও কাজ করতে হয় তাকে। চাকরির প্রয়োজনে শহরে থাকেন তিনি। বিভাগীয় শহরে। রংপুরের তাজহাটে। করোনার আতঙ্কে বিশ্ব পরিস্থিতি এখন ভালো না। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন।
ছুটির দিন। অলস সময় কাটে আমিন সাহেবের। দিন শেষে রাতের খাবার সেরে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েছেন মাত্র। বসের ফোন। কল ধরলেন তিনি। সালাম বিনিময় শেষে তার অবস্থান জানতে চাইলেন বস।
বাসায় আছেন, বললেন আমিন সাহেব।
গ্রামের বাসায় নাকি শহরে? বসের পরের প্রশ্ন।
শহরে আছি। আমিনের জবাব।
ও আচ্ছা। আগামীকাল একটু অফিসে আসবেন। জরুরি কাজ আছে।
দেশের যে অবস্থা! শহরে বের হওয়া তো কঠিন। পুলিশের লাঠিচার্জ। আর্মির টহল। আরও বিবিধ সমস্যা!
জানি সব। তবুও আসতে হবে। মার্কেটিংয়ে চাকরি করেন। জানেন তো ব্যবসার টার্গেট পূর্ণ হয়নি আপনার।
জী জানি।
টার্গেট ফিলআপ করতে হবে। নতুবা বেতন কমে যাবে। দেখুন কী করবেন এখন!
জী। আপনিও কি আসবেন?
আসব। ফোন করে ডেকে নেব আপনাকে।
ওকে স্যার।
পরের দিন। দুপুর বারটা বাজে। স্যার ফোন দেননি এখনও। অধস্তন কর্মকর্তা বসকে ফোন দেবেন দেবেন ভাবতেই স্যারের ফোন-
আপনি কোথায়?
বাসায়।
অফিসে গিয়েছিলেন?
জী, না। আপনি ডেকে নেবেন বলেছেন।
হ্যাঁ, আসার কথা ছিল বটে। বিশেষ প্রয়োজনে যাওয়া হচ্ছেনা।
বস ফোনে কাজের তালিকা দিয়ে বললেন, অফিসে গিয়ে কাজগুলো করে দিয়েন।
এটা কী সম্ভব! প্রশাসনের লোকজন এলে? আমার ভয় হয়। না জানি কোন সমস্যায় পড়ে যাই।
এতো ভয় করলে হবে?
যদি তারা সমস্যা করেন?
আমাকে ফোন ধরিয়ে দেবেন।
আপনি থাকলে ভালো হতো।
এমন করলে হবে? অফিসে যান। আমি দেখছি।
কিছুই করার নাই। বস আসেননি তো কী হয়েছে! অধস্তনকে ঠিকই অফিসে গিয়ে কাজ করতে হবে। ঝুঁকি নিতে হবে।
অনেক অফিসে এভাবেই কাজ চলছে। কেউ মাঠে কাজ করছেন, কেউবা অফিসে। কেউ গোপনে, চুপিসারে। করতে হবে, করতে হচ্ছে। ঊর্ধতন বসেরা ঘরে বসেই হুকুম দিচ্ছেন। কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। অধস্তনের কোন সমস্যা হলে দায়ভার কে নেবেন? বস নাকি কোম্পানি?
যত্ত দোষ শুধুই করোনার!
অরুতি
মাহমুদ হাসান অয়ন
: ওই গাঁধা সারাদিন কোথায় ছিলিস রে?
: কোথাও না এখানেই।
: চল!
: কোথায়?
: কোথায় হয় হোক, উঠে পড়।
: পারবো না।
: একদম চুপ! উঠে পড়না বাবা।
: বø্যাকরোজ এনেছিস?
: না!
: তাহলে তুই যা, আমি যাবো না। তোকে না বলছি বø্যাকরোজ ছাড়া আমার সাথে দেখা করতে আসবি না!
: আচ্ছা বাবা সরি, চল তোকে বø্যাকরোজ কিনে দেইই। এবার ওঠ তো!
: হাতটা বাড়িয়ে দে উঠছি।
: উফ্ তোকে নিয়ে আর পারা গেল না! আচ্ছা এবার উঠে পড়।
অরুতীর হাতে একটা চকচকে সোনালী খাম। ওটা দেখতেই চেঁচামেচি শুরু করে দিলো অয়ন!
: ওটা কি লুকাইলি? দেখি দেখি তোর হাতে ওটা কি!
: আরে কিচ্ছু না, একটা খাম।
: না না, দেখি আমার হাতে দে তো!
: (অয়ন খামটা কেড়ে নিয়ে) বাহ্ কি চমৎকার খাম! কারো বিয়ে নাকি রে?
: হু।
: কার?
: খুলেই দ্যাখ না!
অয়ন অরুতীর চোখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে একবার চেয়েই এক নি:শ্বাসে খামটা খুলে ফেললো। নীলরঙা একটা কার্ড। কয়েকটা লাল গোলাপের জীবন্ত চিত্র, সাথে অর্কিডের মত স্বপ্নরঙা একটা প্রচ্ছদ- ‘শুভ বিবাহ’! অপরূপ ষোড়শী বধূর মস্ত একটা নোলকের নিচে ঠিক এভাবেই লেখা-
বর:- অরণ্য মোর্শেদ।
পিতা:- আলভী মোর্শেদ।
মাতা:- অদিতি মোর্শেদ।
ঠিকানা:- ৩৬ #০২ নিকুঞ্জ, ঢাকা।
কনে:- আলেখ্যা মাহজাবিন অরুতি।
পিতা:- আহমেদ রিয়াজ।
মাতা:- আজমেরী রিয়াজ।
ঠিকানা:- দাদাভাই সড়ক, বাবুপাড়া, নীলফামারী।
কার্ডটা পড়ার পর বাকরুদ্ধ অয়ন! চোখের কোণে একফোঁটা জলের অস্তিত্ব খুঁজতে খুঁজতেই সে পিছনে ফিরে যেতে লাগলো! এইতো সেদিনের কথা পাগলীটাকে খুব মনে আছে আমার! বর্ষার কোন এক পড়ন্ত বিকেলে এক পশলা বৃষ্টির পর যে স্নিগ্ধতা আকাশের বুকে ফুটে ওঠে সেদিন ওটা আমি তার চোখে দেখেছিলাম। জলপাই রঙা পাজামাতে হালকা কাঁদার ছোপ, তারপর উপরের মানুষটাকে আবৃত করে রেখেছিলো আকাশি রঙা মিষ্টি একটা কামিজ। সেদিনকার শুরুটা ঝগড়া দিয়েই হয়েছিল। পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে আমার স্যান্ডেলটা হঠাৎ বৃষ্টিধারী উদ্ভুক একটা গর্তে পড়ে যায়, আর মুহূর্তেই কাঁদা ছিটকে একেবারে তার সাঁধের জামায়!
: দিলেন তো ড্রেসটা নষ্ট করে! চোখে দেখেন না?
: ইয়ে মানে সরি।
: কাপড় নষ্ট করে এখন সরি সরি করছেন!
: না মানে আমি সত্যিই দু:খিত।
: থাক আর ন্যাকামো করতে হবে না! দিন কোন টিস্যু মিশু থাকলে ঝটপট দিন?
: (আমি পকেট হাতরে) ফেসিয়াল টিস্যু নেই, টয়লেট পেপারে চলবে?
: (কাঁদামানবী চোখ বড় বড় করে) আপনি আসলেই একটা মহা ফাজিল মানুষ!
: সত্যিই বলছি কসম আমার কাছে টয়লেট টিস্যু ছাড়া অন্য কোন টিস্যু নেই!
: নিন হয়েছে হয়েছে! তাড়াতাড়ি টিস্যু পেপারটা দিয়ে একটা পানির বোতল নিয়ে আসুন!
: আমার হৃৎপিন্ড তখন রেলগাড়ির চেয়েও দ্রæতগতিতে ওঠা-নামা করছে। ভয়ে জড়সড় হয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলাম- আচ্ছা!
সেই যে কাঁদামানবীর সাথে আমার হঠাৎ করেই ঝগড়া থেকে সখ্যতা শুরু হলো ওকে আর ছাড়তে পারিনি। দিনে-রাতে, সময়ে-অসময়ে আমার পিছে আঠার মত লেগে থাকতো মেয়েটা! পরে অবশ্য তাকে আর কাঁদামানবী নামে ডাকতে হয়নি সত্যি নামটা জেনেছিলাম ক’দিন বাদেই। হ্যা স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর নাম, ছবির চেয়েও সুন্দর ছবি অরুতী,,, আমার অরুতী।
পেছনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়েই বুকের ভেতরটাতে কেমন জানি হু হু করে উঠলো অয়নের! কি বলছে মেয়েটা এসব? সে কি সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেল নাকি? একফোঁটা জলকে সঙ্গী করে আবার সে বাস্তবে ফিরে গেল, ফিরে গেল অরুতীর দেয়া অনাকাঙ্খিত বিয়ের কার্ড প্রসঙ্গে-
: বাহ্ তোর বিয়ের কার্ড? বেশ তো!
: হু তোকে দিবো বলেই নিয়ে এলাম!
: আরে আমাকে কেন? আমাকে কি আর কার্ড দিতে হয় আমি তো এমনিই চলে যাবো!
: আচ্ছা অয়ন তোকে একটা প্রশ্ন করি?
: (অয়ন অরুতীকে প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে) আরে তোর বরটা নিশ্চই দারুণ দেখতে?
: আছে একটু সুন্দর টুন্দর চলে আর কি!
: (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অয়ন) বরের মাথায় টাক নেইতো আবার? তোর তো আবার টেকো মাথার বর পছন্দ না!
: না নেই! আর্মি অফিসার, ক’দিন বাদেই ক্যাপ্টেন হবে।
: বাহ্ বেশ ভালো ভালো তুই তাহলে আর্মি অফিসারের বউ হবি!
: অয়ন তোকে যে একটা কথা বলতে চাইলাম তুই এড়িয়ে গেলি কেন?
: (কান্না চেপে রেখে) আরে বললাম তো তোর বিয়েতে যাবো! আর গ্রাম্য ভাষায় কি যেন বলে একটা? দানিবুড়ি! হ্যা আমি তোর দানিবুড়া হবো!
: (চোখ লাল করে একটু রেগে গিয়ে অরুতী) অয়ন তুই ফাইজলামি বন্ধ করবি? আমার কথার উত্তর দে!
: বলে ফ্যাল আর কি কি করতে হবে তোর জন্য বলে ফ্যাল?
: কিচ্ছু করতে হবে না আমার জন্য, শুধু এটা বল আমি চলে গেলে তুই একা থাকতে পারবি?
: বা রে থাকতে পারবো না ক্যান? আমি মেয়ে নাকি? খুউব পারবো!
: (এবার অরুতীর চোখও ছলছল) সত্যিই পারবি অয়ন?
কান্না লুকিয়ে রাখার মত আর কোন শক্তি খুঁজে পায়না অয়ন, মুহূর্তেই বাঁধভাঙা জলের প্রবাহ আছড়ে পরে অয়নের দু’চোখের উপকূল বেয়ে! সিন্দুকের ভেতর থেকে আচমকাই বেড়িয়ে আসে বন্ধুত্বের আঁড়ালের চিরন্তন প্রেম!
: (বদ্ধ পাগলের ন্যায় চিৎকার করতে করতে অয়ন) না না না আমি তোকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না পাগলী!
: (অপরদিক হতে অরুতীর মেঘে ঢাকা আকাশও ঝরতে লাগলো) তুই এতদিন আমাকে বলিস নাই ক্যান শয়তান?
: তুইও তো কখনো আমায় বুঝিস নি পাগলী!
দু দুটি নিষ্পাপ প্রাণ মুহূর্তেই সীমানা প্রাচীর ভেঙে সংস্পর্শে এলো! অশ্রæ বিসর্জনের মহড়ায় কেউ কাউকে ছাড়িয়ে যেতে পারলো না।
মিনিট দুয়েকের অশ্রæবৃষ্টি শেষে অরুতীর আকুতিমাখা প্রলাপ-
: অয়ন চল ফুসকা মামার দোকানে সব কাপড় রেখে এসেছি যা করার আজকের মধ্যেই করতে হবে!
: (অয়ন অরুতীর মাথাটা বুক থেকে একটু আলাদা করে) অরুতী তুই কি পাগলী হয়ে গেছিস?
: হ্যা আমি পাগলী হয়ে গেছি! বালা বললেন, আগামী ২৬ তারিখ ওরা আসবে! আমি জানি তুই আমাকে ফিরিয়ে দিবি না তাই একেবারে তৈরি হয়েই এসেছি।
: না না পাগলী এটা ঠিক না! তোর বাবা ওপেন হার্ট সার্জারির পেশেন্ট!
: অয়ন আমি ওসব শুনতে চাচ্ছি না, তুই যাবি আমার সাথে?
: পাগলী শোন তুই মাথা ঠান্ডা করে বাড়ি যা, আঙ্কেল কে একটু দেখে রাখবি। উনি যা করতে বলবেন সব করবি বুঝলি?
: অয়ন! আমি তোকে কিছু বলছি তুই শুনতে পাচ্ছিস না?
: (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অয়ন) পাগলী আমার কানে মনে হয় একটু প্রবেøম হয়েছে রে!
: অয়ন আমি আর বাসা ফিরে যাবো না রে প্লিজ আমাকে দূরে কোথাও নিয়ে চল!
: পাগলী তুই তো বাবার একমাত্র মেয়ে রে আঙ্কেল নিশ্চই খুব টেনশন করছে তুই বাড়ি যা!
: অয়ন!!! আমি তোকে শেষবারের মত বলছি আমি তোকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না! না না প্লিজ অয়ন আমাকে তোর সাথে নিয়ে চল!
: পাগলী বললাম তো তোর বিয়েতে আমি আসবো আর তোর দানিবুড়াও হবো! খুব ঘন ঘন দেখতে যাবো তোকে!
কথা রেখেছে অরুতী আর একটুও দাড়ায় নি মেয়েটা! আর একফোঁটা জলও মাটিতে পড়তে দেয়নি সে! অয়ন পর্বত অটল হয়ে দাড়িয়ে রইলো আর অশ্রæর মেয়ে অরুতী বাষ্প হয়ে মহাশূণ্যে মিলেয়ে গেল! চারটি হাত আর এক হলোনা, দু’টি প্রাণ আর একটি হয়ে আগামী বর্ষাকে ছুঁতে পারলো না! ওরা বদলে গেল সময়ের প্রয়োজনে, জীবনের নিয়মে! তারপর আর কি হয়েছে ঠিক জানা যায়নি। জীবন কাব্যের মৃত পাতার স্মৃতিগুলো হয়তো এমনই হয়! ঘুরেফিরে বার বার আমাদের জীবনের সাথে গেঁথে যায়; কাঁদে, কাঁদায়!