পাকিস্তান ভ্রমণ-২
মাহাতাব লিটন
হতাশা মিশ্রিত হৃদয় লইয়া গুলশান ২ এ পাকিস্তান দূতাবাসে দ্বিতীয় দিন হাজির হইলাম। ইচ্ছা করিয়া আজ আর পূর্ব পুরুষেদের খোঁজ করিলাম না মানে দূতাবাসের সেনানিবাস লাগানো দেয়ালের দিকে লক্ষ্য করিলাম কারণ গতকাল তাহারা আমাকে দেখিয়া ভেংচি কাটিতেছিল। সে যাই হউক আজও নিয়ম মাফিক লাইনে দাঁড়াইলাম খানিকক্ষণ পর টোকেন দেখাইতে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতর হইতে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করিয়া পাকিস্তান যাইবার ভিসা সংযুক্ত পাসপোর্ট হাতে ধরাইয়া দিলেন। পুলকিত চেহারা লইয়া কান্ট্রি অফিসে হাজির হইলাম। শিবলী ভাই পাসপোর্টে আগেই ডলার এনড্রোস করাইয়া রাখিয়া ছিলেন। সাথে কিছু ডলার দিলেন।
ভিসা ও ডলারতো মিলিল কিন্তু উড়ালের দিন যতই নিকটে অাসিল আমার মনের গহীনে ভয়বিবির বিস্তার বাড়িতে লাগিল কিন্তু বাহির দেখিয়া বুঝিবার উপায় নাই।
অবশেষে পাকি বিমানের টিকেট ও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সহ বিমানবন্দরে প্রবেশ করিলাম। টিকেটে মুদ্রণ Dacca to Karachi by PIA কিন্তু ঢাকার ইংরেজি বানানটিতো এরশাদ সাহেব অনেক আগেই ইহার পরিবর্তন করিয়াছিলেন সেতো দুই দশক হইবে তাহার কম নহে। বায়ুযানের টিকেটে মুদ্রিত নতুন বানানটি সংযুক্ত নহে কিন্তু Dhaka লেখাটি অনুমোদিত স্বদেশে , তবে তাহারা (বিদেশী বন্ধুগণ) অমান্য করিলেন কেন ? যাহা হউক ইহা আমাদের বিষয় নহে। ইহারপর বোর্ডিং কার্ড লইবার জন্য লাইনে দাঁড়াইলাম ভাগ্যিস মাহমুদা আপার সহিত ছিলাম বলিয়া মনে সাহস পাইতেছিলাম। বোর্ডিং কার্ড লইয়া আপাকে ফলো করিয়া যাইতেছিলাম, এইবার ইমিগ্রেশন পুলিশের অধিকারিকের নানা জিজ্ঞসাবানে গলদঘর্ম হইবার অবস্থা আমার, ভাবিতেছিলাম নিমন্ত্রণ থাকিবার পরও এই অবস্থা। চুড়ান্তক্ষণ এখানো বাকি ঘন্টা খানিক পর ইহারও সমাপ্তি ঘটিল, পাকি বিমান সেবিকারা পরিমিত হাসি দিয়া সাদর সম্ভাষণ জানাইয়াল। ইহা যে কৃত্রিম তাহা বুঝিলাম, যতই হাসুক ইহা তাহাদের ডিউটির অংশ। প্রথমবার বিমানের ভিতর প্রবেশ ইহা অন্যরকম তাহার উপর বয়সও কম, তখনও আবেগ ভাবাবেগ সবই টলমল করিতো।
যাহা হউক বায়ুযানের ভিতরে ডানদিকের আসন মানে জানালার ধারে, ইহা দেখিয়া ভীষণ খুশী হইলাম। পরে শুনিলাম ইহা মাহমুদা আপার কল্যাণে। আপা পূর্বেই শুনিয়া ছিলেন ইহা আমার প্রথম বাযুযানে চড়িয়া বিদেশযাত্রা তাই আমাকে দেখভাল করিতেন যাহাতে ভ্রমণ আনন্দদায়ক হয় সংগত কারণে বোর্ডিংএ আমার আসনটি যাহাতে জানালার পাশে থাকে তিনি অনুরোধ করিয়া ছিলেন।
বিশাল বিমান ইহাকে নাকি বোয়িং বলা হয়। কিন্তু অবাক হইলাম বায়ুযানের বেশির ভাগ যাত্রীর মাথায় সাদা টুপি কেন? জামার উপর সাদা গলা কাটা গেঞ্জি কেন ? হঠাৎ দেখিলে মনে হইবে ইহারা কোনো দিবস উদযাপন করিয়া সকলেই উড়ালযানের ভিতর প্রবেশ করিয়াছেন।
আসলে যাহাদের অভিজ্ঞতা আছে এই পথে যাইবার মানে ঢাকা টু দুবাই পাকি বিমানে বিরতি করাচি তাহারা এতোক্ষণে লেখা পড়িয়া হাসিতেছেন নিশ্চয়ই। এই সকল মানুষগুলো আমার দেশের রেমিট্যান্স সৈনিক। যাহারা রক্ত ঘামে মরুর বুকে সুবজের ফসল ফলাইতেছে। যাহারা আকাশচুম্বী অট্টালিকা বানাইতেছে। তাহারাই এই বাযুযানের যাত্রী। তাহাদের বুকে পিঠে কোম্পানির নাম ছাপা চোখেমুখে বিদেশী মুদ্রা আয়ের আনন্দ। মনে মনে স্যালুট জানাইলাম।
যাত্রাকালে জানালা দিয়া নিচের মেঘমালা দেখিয়া দেখিয়া সময় ব্যয় করিতেছিলাম। কিন্তু বেশি নড়াচড়া করি নাই কারণ আমার পাশে অতবড় মাপের হাই প্রোফাইলের গুণী ব্যক্তির পাশে বসিয়া ঢাকা টু করাচি যাওযার চাইতে পায়ে হাঁটিয়া রঙ্গপুর হইতে ঢাকা যাওয়া উত্তম (আপা ক্ষমা করুন আপনিতো আমার ফেসবুক বন্ধুও বটে আপনার চোখে লেখাটি না পড়াই ভালো হইবে)।
যথারীতি বোর্ডিং সম্পূর্ণ হইবার পর বিমান সেবিকারা কোমর বন্ধনী বাঁধিবার মাইম করিলেন। জরুরি বর্হিগমণ পথও দেখাইলেন। অক্সিজেন শেষ হইলে স্ব স্ব মস্তকের উপর মাস্ক নামিয়া আসিবে, কৃত্রিমভাবে কি করিয়া শ্বাস লইয়া বাঁচিয়া থাকা যায় সেই উপায় বলিয়াতো আমার ঘাম ছুটাইয়া দিল।
মধ্যাহ্নের উড়াল কিছুক্ষণ পর রুপালী কাগেজ মোড়ানো খাবারের প্যাকেট গ্রহন করিলাম। অপেক্ষা করিতেছিলাম আপা কিভাবে ইহা উন্মুক্ত করিবেন, আহার করিবেন, কারণ প্যাকেটর সহিত আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেট রহিয়াছে। ভাবিতে ভাবিতে আপা বলিলেন ” নিন শুরু করেন ” বলিবার মাত্র শুরু আহার শুরু করিলাম। চিকন সুগন্ধি চালের পোলাও সাথে কিঞ্চিৎ পরিমাণ চিকেন কিন্তু বুঝিবার উপায় ছিল না ইহা দেশি নাকি বয়লার নাকি পাকিস্তানি কক্। প্লাস্টিকের চামুচে খাইতে গিয়া (আমি মোটেও অভ্যস্ত নহে) সাদা কিচমিচ মনে করিয়া মুখে পুড়িয়া বুঝিতিছিলাম ইহা উহা নহে। তবে ইহা কি জনাব ? ইহা সাদা মরিচ দেখিখে গোলাকার ঠিক আঙ্গুর বা কিচমিচের মতো। না পারিতেছিলাম গিলিতে না পারিতেছিলাম মুখের বাহিরে আনিতে কারণ যদি উনার চোক্ষে পড়ে আমার এই অদ্ভুত রকমের আচরণ তবে তিনি নির্ঘাত রাগান্বিত হইবেন। শুধু উনি কেন যে কেহ রাগান্বিত হইতেন বৈকি।
আসন হইতে উঠিবার জন্য মন আনচান করিতেছিল কি করিয়া উঠিব তাই ভাবিতে ছিলাম। তারপর আসন ছাড়িয়া উঠিলাম গন্তব্য ছোটঘর।