বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

দেখার চেষ্টা চক্ষু খুলিয়া : ১০-মো. শওকত আলী

দেখার চেষ্টা চক্ষু খুলিয়া : ১০-মো. শওকত আলী

দেখার চেষ্টা চক্ষু খুলিয়া-১০
মো. শওকত আলী

একদা বাঙলায় যে জমিদার শ্রেণি ছিল তার উদ্ভবের ইতিহাস নিশ্চয় সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর ইতিহাসের পাঠ। তবে আমি সাদা চোখে যা দেখেছি, এদের মধ্যে কেউ ছিলেন লবনের কারবারি, কেউ বা মলম বেচে পয়সা কামিয়েছিলেন কারো বা মাছের ব্যবসা ছিল। আবার কেউ বা ছিলেন রাজকর্মচারি।
এ জমিদাররা রাজা-বাদশা এবং সর্বশেষ বৃটিশ শাসক-শোষকদের ভূমি রাজস্ব আদায়ের প্রধানতম মাধ্যম ছিলেন। তারা এদেশের আমজনতার নিকট থেকে খাজনা আদায়ের যে কৌশল গ্রহণ করতো ইতিহাসে তা জনজীবনের উপর অত্যাচার হিসেবেই স্বীকৃত।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫৫ সালের আগপর্যন্ত সারাদেশে ছোট-বড় অনেক জমিদার ছিল। সেসব জমিদারদের রেখে যাওয়া বসতবাটি, দালানকোঠা আবার আমাদের গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত। এ এক অদ্ভুত সত্য !
তবে অত্যাচারী জমিদারের পাশাপাশি কিছু জমিদার তাদের প্রজাহিতৈষী কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। তেমনই এক জমিদার পরিবারের কথা বলছি এখানে। ঢাকা শহর থেকে আনুমানিক ৩৫ কি.মি. দূরে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলায এখনও এক জমিদার বংশের স্মৃতি স্মারক রয়েছে যা বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত। তবে এলাকায় দশআনি জমিদারবাড়ি নামেও ডাকা হয়। এক সাহা পরিবার থেকেই এ বালিয়াটি জমিদার বংশের সূচনা। মূলতঃ লবণ ব্যবসার মুনাফা থেকেই জমিদারি কেনা হয় অষ্টাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। প্রথম পুরুষের নাম ছিল গোবিন্দ রাম সাহা। তার চার পুত্র ছিল। বতর্মানে জমিদার বাড়ির চত্বরে যে ভবনগুলো এখনও দৃশ্যমান আছে ঐগুলো মূলতঃ তার পুত্রগণই নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদ চত্বরের আয়তন ৫.৮৮ একর।চারদিকে প্রাচীর ঘেরা। সুউচ্চ প্রাচীরে তিনটি চমৎকার স্হাপত্যশৈলীর ফটক রয়েছে। প্রাসাদ চত্বরে ৭টি ভবন থাকলেও মূল জমিদার বাড়িতে একইরকম কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ৫টি ভাগ ছিল বলে জানা যায়। ভবনগুলোতে সবমিলিয়ে ২০০ কক্ষ রয়েছে যদিও অধিকাংশ ভবনের অবস্থা জ্বরাজীর্ণ।
মূল ভবনের ২য় তলায় একটি দৃষ্টিনন্দন রঙ মহল ছিল জমিদারদের আমোদ-ফূর্তি করার জন্য। যেটি এখন প্রত্ন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে জমিদার পরিবারের নানান জিনিসপত্র প্রদর্শনের ব্যবস্হা করা হয়েছে।

প্রাসাদ চত্বরের পিছনদিকে একটি পুকুর রয়েছে যেখানে ৪টা ঘাট এবং একটা শৌচাগার রয়েছে। চত্বরে ছিল লবণের গোলাও।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৭ সালে এ জমিদার বাড়িটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে তাদের তত্বাবধানেই রয়েছে জমিদার বাড়িটি।
এ জমিদার বংশের দুজন জমিদার বৃহত্তর ঢাকায় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছিলেন। আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেটি আগে জগন্নাথ কলেজ ছিল সেটিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এবং কে এল জুবিলী হাইস্কুল প্রতিষ্টা করেন জমিদার কিশোর লাল চৌধুরী এবং রায় বাহাদুর নরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। জমিদার কিশোর লাল চৌধুরী তার বাবার নামে প্রতিষ্টা করেছিলেন জগন্নাথ কলেজ।

বাংলাদেশে উনিশ শতকের কলোনীয়ান যুগের স্হাপত্যকলার অনন্য নির্দশন এই বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি। এক সময় গাজীখালী নদী ছিল এ জমিদার বাড়ীর কাছে। বাংলাদেশের অনেক নদীর মত ঐ নদীটিও আজ মৃত।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge