দেখার চেষ্টা চক্ষু খুলিয়া-৭
মো. শওকত আলী
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভিতরে চমৎকার একটা নান্দনিক ভবন রয়েছে যার নাম ‘বড় সর্দারবাড়ি’। এটি অধিগ্রহণের কারনে ফাউন্ডেশনের শুধু শ্রীবৃদ্ধি ঘটেনি, এটির কারনে ফাউন্ডেশনের আকার আয়তনও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।
এ সর্দারবাড়ি সম্পর্কে বিশেষ তেমন কিছু জানা যায় না। তবে ১৩০৮ বংগাব্দের দেয়াল লিখন অনুযায়ী গোপীনাথ জিউর নামে এক ব্যক্তি এক সময় এই ভবনের মালিক ছিলেন।১৩৩০ বংগাব্দে ভবনটির সংস্কার কাজ শেষে ভবনের দেয়াল উৎকীর্ণ করে যা লেখা হয়েছিল তা থেকে ধারনা করা হয় সংস্কার শেষে ভবনটির নামকরণ করা হয় ‘বড় সর্দারবাড়ি’। তার আগের কোন বৃত্তান্ত জানা সম্ভব হয়নি।
গোপীনাথ এবং তার শরীকগণ ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এ বাড়িতে বসবাস করেন। তারপর তারা ভারত চলে গেলে ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের দখলে আসে।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ভবনটি অধিগ্রহণের মাধ্যমে তাদের মালিকানায় নেয়। একসময় এ ভবনে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের কারুশিল্প জাদুঘর ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ ভবনটির সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করায় এটি এখন নিজেই দর্শনীয় স্হাপনা হয়ে গেছে।
বাংলা ১৩০৮ সালের পূর্বের কোন বৃত্তান্ত পাওয়া না গেলেও নির্মাণশৈলী এবং ভবন তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণ পর্যবেক্ষণ করে বিশেষজ্ঞগণ এ ভবনটির আদি কাঠামো(মূল অংশ) মধ্যযুগীয় স্হাপনা বলে মনে করেন।
ভবনটির তিনটি অংশ রয়েছে। মূল অংশ বর্তমান অবস্থায় দ্বিতীয় বা মধ্যভাগ। এ অংশটির স্হাপত্যরীতির নির্দশন, ভবন তৈরির ব্যবহৃত উপকরণ থেকে বিশেষজ্ঞগণের অনুমান এটি প্রায় ৬০০ বছরের পুরানো অর্থ্যাৎ ঈশা খাঁ বা প্রাক্ মুঘল আমলে তৈরি। দ্বিতল এ অংশে ১৮টি কক্ষ রয়েছে।
মূল অংশকে মাঝে রেখে পরবর্তীতে ভবনটিকে উভয় দিকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। মূল অংশের পরে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এর পিছন দিকে। এ অংশের নির্মাণশৈলীসহ অন্যান্য বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করে এর নির্মাণকাল মুঘল আমলের প্রথমদিকের হিসেবে অনুমান করা হয়। এ অংশে রয়েছে ৫০টির মত কক্ষ। এ অংশের সিঁড়ি, কক্ষের আকার,উন্মুক্ত করিডোর ইত্যাদি দেখে এটি আবাসিক নয় বরং বাণিজ্যিক কোন উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হতো বলে মনে করা হয়।
মূল অংশের সামনদিকেও বর্ধিত একটি অংশ আছে যেটি বৃটিশ আমলে তৈরি বলে ধারনা করা হয়। এ অংশের আর্কষণীয় জিনিস হচ্ছে এর কারুকার্যময় প্রবেশদ্বার। এটিও দ্বিতল ভবন। সেখানেও পৃথক সিঁড়ি, বারান্দা,উপর-নীচ মিলিয়ে ১৪ কক্ষ রয়েছে।
প্রাক ইসলামী,প্রাক মুঘল, বারোভুঁইয়া ও বৃটিশ কলোনিয়াল স্মৃতি – চার প্রজন্মের স্হাপত্য শিল্পের ছোঁয়া সম্বলিত এরকম একটি ভবন বাংলাদেশে কতটি আছে কে জানে?
ঐতিহাসিক এ বড় সরদারবাড়ি ভবনের মোট আয়তন ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট। সবমিলিয়ে কক্ষের সংখ্যা ৮৫টি। সরদারবাড়ির পূর্বদিকে একটা পুকুরে তিনটা শান-বাঁধানো ঘাট রয়েছে। যেখানে অশ্বারোহী সান্ত্রির ভাষ্কর্য একটা রাজকীয় আবহ সৃষ্টি করেছে। (চলমান)