বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন

দেখার চেষ্টা চক্ষু খুলিয়:২-মো. শওকত আলী

দেখার চেষ্টা চক্ষু খুলিয়:২-মো. শওকত আলী

দেখার চেষ্টা চক্ষু খুলিয়া-২
মো. শওকত আলী

নেত্রকোণার বিরিশিরি যাবার পথেই ময়মনসিংহ থেকে মুকুল দত্ত ফোন দিচ্ছিলেন যে আমি যেন যাবার পথে ময়মনসিংহ শহর হয়ে যাই এবং জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাটি দেখে যাই।মুকুল দত্ত জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা।তিনি সংগ্রহশালাটির দায়িত্বে আছেন।তাকে কথাও দিয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তায় অনেকটা বেশি সময় লেগে যাওয়াতে যাবার সময় যেতে পারিনি।তবে ফিরতি পথে সেখান হয়ে আসি।এ প্রসংগে একটা কথা বলে রাখি। নানান কারনে (সবই দাপ্তরিক) ময়মনসিংহ শহরে বেশ ক’বার গিয়েছি।কিন্তু না জানা কোন কারনে এ সংগ্রহশালাটিতে যাওয়া হয়নি কখনও। এমনও হতে পারে হাতে কাজ থাকায় সময়ের অভাবে যেতে পারিনি।তাছাড়া,হয়তো ভাবতাম ঢাকায় তো জাতীয় জাদুঘরে জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্ম দেখেছি। ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে মনোরম পরিবেশে সংগ্রহশালাটি অবস্থিত।এর কাছাকাছি সাহেবপাড়া। সাহেবপাড়ায় কোন এক সাহেবের আবাসগৃহে রাতও কাটিয়েছিলাম বছর পনর আগে।আপ্যায়িত হয়েছিলাম আবাস প্রাংগনের পুকুরের মাছ আর আবাদের ধানের ভাত দিয়ে। যা’হোক, বিরিশিরি থেকে রওয়ানা হয়ে সন্ধ্যার বেশ পরে ময়মনসিংহ শহরে জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় পৌঁছালাম। সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৭৫ সালে।শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এর আগ্রহে জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দু’টো প্রতিষ্টান অনুমোদন করেছিলেন।একটি হচ্ছে ঢাকার অদূরে সোনারগাঁওে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং অন্যটি ময়মনসিংহে শিল্পীর নিজের নামে একটি সংগ্রহশালা।বাংলাদেশের মানুষের কাছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পরিচয় নতুন করে কিছু দেবার আছে বলে আমি মনে করি না।তবু দু-চারটি কথা বলবো।কিছু মানুষ আছেন সমাজে তার অবদান শুধু তার সৃষ্টির মাধ্যমেই রেখে যান না বরং সে সমাজে সেক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কাজটাও তিনি করে যান।জয়নুল আবেদিন ছিলেন তেমনি একজন মানুষ। দেশ যখন ভাগ হয় অর্থ্যাৎ ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চিত্রশিল্প শেখা বা চর্চা করার মত কোন ইনস্টিটিউট ছিল না। জয়নুল আবেদিন কলকাতা আর্ট স্কুলের কতিপয় তরুণ শিক্ষক-ছাত্র নিয়ে ঢাকায় চিত্রশিল্প শিক্ষালয় খোলার প্রচেষ্টা নেন।তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৪৮ সালে পুরানো ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি কক্ষে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট স্হাপিত হয় এবং জয়নুল আবেদিন ঐ প্রতিষ্টানের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান।পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে এটি পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে উন্নীত হয় এবং জয়নুল আবেদিন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত উক্ত মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্টাতা অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। চিত্রকলা শিক্ষা প্রসারের জন্য তাঁকে শিল্পাচার্য উপাধি দেয়া হয়। বাংলাদেশের আধুনিক চারকলার অগ্রনায়ক এ গুনী শিল্পী আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতিমান ছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আর্ট মিউজিয়াম ও গ্যালারীতে তাঁর আঁকা ছবি রক্ষিত আছে। জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মকে দুই সময়ে ভাগ করা হয়। ১৯৫১’র আগে এবং ১৯৫১ সাল থেকে পরবর্তী সময়ের। ১৯৪৩ সালে কলকাতার রাজপথে গ্রামের কংকালসার মানুষের দূর্গত জীবনের তাঁর আঁকা স্কেচগুলো ঐ সময়ে বিপুল আলোড়ন তৈরি করেছিল।১৯৫১ সাল হতে পরবর্তী সময়ে তিঁনি গ্রাম-বাংলার অতিসাধারণ প্রাত্যহিক প্রতীকী গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যাবলী একেঁছেন।তাঁর আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে দূর্ভিক্ষের চিত্রমালা,জীবন সংগ্রাম,সাঁওতাল, সাঁওতাল রমণী,বিদ্রোহী,তিন রমণী,নবান্ন,মনপুরা ৭১,মা ও শিশু ইত্যাদি অসাধারণ। ময়মনসিংহ সংগ্রহশালার দুটি গ্যালারীতে তাঁর ৬২টি ছবি স্হান পেয়েছে।এর মধ্যে চারটি মূল ছবির প্রিন্ট।বাকি ৫৮ টি আসল ছবি রয়েছে।এছাড়া শিল্পীর ব্যবহার্য জিনিসপত্র রয়েছে ১২১টি।ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যে রয়েছে রং তুলি,রংয়ের প্লেট,,ক্যানভাস,আর্ট করার স্ট্যান্ড,চশমা,খাট,হোল্ডার,পোশাক এরকম জিনিসপত্র ।এছাড়াও বারান্দায় রয়েছে শিল্পীর বিভিন্ন বিষয় ও সময়ের ৫৩টি ফটোগ্রাফী।গ্যালারীতে শিল্পীর আন্তর্জাতিক সম্মামনার একটি দলিলের কপি রয়েছে। মানব সভ্যতার মানবিক মূল্যবোধ ও উপলব্ধিকে গভীরতর করার স্বীকৃতিস্বরুপ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন ২০০৯ সালে জয়নুল আবেদিনের নাম অনুসারে বুধ গ্রহের একটি জ্বালামুখের নামকরণ করেছে ‘আবেদিন জ্বালামুখ’।প্রথাগতভাবে তারা বুধ গ্রহের বিভিন্ন বিষয় বিশ্বের মহান শিল্পীদের নামানুসারে করে থাকে।এটি দেখে বাংগালী হিসেবে আমিও তাই গর্ববোধ করেছি।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge