দাদুর যাদুর কলম
হামীম রায়হান
রুদ্রের পড়াশোনা মোটেও ভাল লাগে না! এত এত কঠিন পড়া সে কোনভাবেই মনে রাখতে পারে না। কী কঠিন কঠিন নমতা! সতের ঘরের নমতা মুখস্ত করতে রুদ্রের কী যে কষ্ট হল! তার উপর বারো তেরটা বই কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাওয়া যে পাহাড়ে উঠার সমান এ কথা সে কাকে বুঝাবে! আর স্কুলটাও একদম পঁচা। সামনে কোন খেলার মাঠ নাই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্কুল। স্কুল থেকে ফিরেই স্যার আসেন পড়াতে। তারপর আরেকটা স্যার। সন্ধ্যা হলেই আবার পড়তে বসা! এ পড়াশোনা আর ভাল লাগে না রুদ্রের।
সেদিন মন খারাপ করে একা একা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল রুদ্র। রাস্তার মাঝে একটা বুড়িকে দেখে রুদ্র বেশ অবাক হল। কারণ তার বয়স এত যে সে এখানে একা আসতে পারবে না কারো সাহায্যে ছাড়া। তাছাড়া এ বুড়িকে সে এ এলাকায় আগে কখনো দেখেনি। বুড়ি রুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসছে। এতে রুদ্র একটু ভয় পেয়ে গেল। পাশকাটিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে রুদ্র। কাছে যেতেই বুড়ি বলে উঠে, ‘এই রুদ্র! এদিক আয়!’ এ কথা শুনেত রুদ্র আরো ঘাবড়ে গেলে! এ বুড়ি তার নাম জানল কিভাবে? এ হয়ত ভূত! তার ঘাড় মটকাবে! সে এখন কিভাবে বাড়ি যাবে! ‘তুই আমার কাছে আয়! আমায় ভয় পাচ্ছিস? আমাকে তোর দাদুভাই পাঠিয়েছে।’ দাদুভাই! দাদুত অনেক আগে মারা গেছেন। তিনি কিভাবে পাঠাবেন! তাহলে আমি নিশ্চয়ই ভূতের পাল্টায় পড়েছি। দৌড় দিলেত ধরে ফেলবে! ‘এই নে, তোর জন্য একটা কলম দিয়েছে। যাদুর কলম!’ রুদ্র কলমটা ভয়ে ভয়ে হাতে নিল। ‘এ কলমটা তুই যা চাইবি তাই লিখে দিবে। কেবল একটা মন্ত্র পড়বি, ‘চিংরি বিংরি চিংরি ছা, কলমরে তুই লিইখে যা।’ পড়লেই তোর আর কিছু করতে হবে না। কলম আপনা আপনি লিখে যাবে!’ রুদ্র ভয়ে ভয়ে কলমটা নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে এসেই একটা কলম নিয়ে লিখতে বসল সতের ঘরের নমতা। মন্ত্র পড়ল ‘চিংরি বিংরি চিংরি ছা, কলমরে তুই লিইখে যা!’ আরে কী আশ্চর্য! কলম আপনা আপনি সব লিখে দিচ্ছে! আচ্ছা দেখি তো আমাদের ছোট নদী’ ছড়াটা লেখা যায় কিনা!
কলমটা ছড়াটাও লিখে দিল! রুদ্র যেন আকাশের চাঁদ পেল! দাদুভাইকে মনে মনে ধন্যবাদ দিতে থাকল। হঠাৎ হাতে ফসকে কলমটা মাটিতে পড়ে যায়। আর ওমনি মা ডেকে উঠেন, ‘রুদ্র, ও রুদ্র, উঠ ঘুম থেকে। স্কুলের সময় হয়ে এল!’
বিছানায় বসে এদিক ওদিক কলমটা খুঁজল রুদ্র। কিন্তু কোথাও পেল না।
স্কুলে যাওয়ার পথে রুদ্র আসপাশ দেখল কোথাও সেই বুড়িকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু না, স্বপ্ন কি আর বাস্তব হয়!