দশ বছর পেরোলো সুপ্রকাশ সাহিত্য সংসদ (সুসাস)। মফস্বলে সাহিত্য আন্দোলন চালানো ও ছোটকাগজ বের করে চালিয়ে যাওয়া কঠিন সংগ্রামই বলা যায়। বর্তমান ফেসবুকীয় সময়ে বিষয়টি আরো জটিল। তবুও এর মধ্য দিয়ে সাহিত্যমনা, সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী, নবীন আগ্রহী কিংবা মানুষকে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে সংগ্রামী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সংগঠনটি। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, তিস্তা বিধৌত একটি উপজেলা, একটি জনপদ। যেখানে মানুষ (যারা আছে তারা) নদীকেন্দ্রিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকে। তার মাঝেও যে সাহিত্য চর্চা হয়নি তা নয়। তবে তা ক্ষণিক আলো জ্বেলে নিভে যাওয়ার মত কিংবা নিভু নিভু ভাবে। কিন্তু সুপ্রকাশ সাহিত্য সংসদ এই অবহেলিত জনপদে সাহিত্য আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথমে চার- পাঁচজন সাহিত্যমনা ও শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষকে নিয়ে কঙ্কন সরকার ২০১৫ সালে শুরু করেন পহেলা বৈশাখ এ সাহিত্য আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ সংগঠনের পথযাত্রা। প্রথম অনুষ্ঠানে বৈশাখী নামে ছোটকাগজও বের হয়। যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান সংগঠনটির সাথে সাথে। তবে বাঙালি ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখকে মূল উপজীব্য করেই সংগঠনটি তার পথচলাকে অব্যাহত রেখেছে। আর শুধুমাত্র পহেলা বৈশাখে ছোটকাগজ প্রকাশ, সাহিত্যানুষ্ঠান করেই কর্মকাণ্ড শেষ করেনা সংগঠনটি। সারা বছর ধরে সাহিত্য আসর পরিচালনা, পাঠচক্র, বই পড়া আন্দোলন ও পঠিত বই নিয়ে আলোচনা এবং পাঠের সুবিধার্তে বই আদান-প্রদানও করে থাকে। সাথে সাথে আগ্রহী লেখক হতে চাওয়াদেরকে তৈরি হতে সহযোগিতা করা ও করতে প্রয়োজনে লেখালেখি কর্মশালারও আয়োজন করে থাকে। সুপ্ত বা ঘুমন্ত লেখককে জাগ্রত করার পাশাপাশি অনেকের বই প্রকাশেও সহযোগিতা করেছে বা করছে। হয়ে উঠতে চাওয়া লেখককে এগোনোর প্রচেষ্টায় দেশের প্রতিষ্ঠিত লেখককে আমন্ত্রন করে এনে সংযোগ ঘটানোর কাজও করছে। পাশাপাশি গুণী ও সম্মানিত জনকে সম্মাননাও প্রদান করছে নিয়মিত। সংগঠনটি সুন্দরগঞ্জের লেখক, আগ্রহী লেখক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে সংযোগ স্থাপনের সাথে দেশের প্রতিষ্ঠিত, নামকরা লেখক ও সংগঠনের সাথে যোগসূত্র স্থাপনে ভূমিকা রাখছে। শুধু কি লেখালেখি আর বই পত্রিকা প্রকাশই কাজ! না। পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা, বৃক্ষরোপণ আন্দোলন সহ সামাজিক নানান কাজও করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
একটি বিষয়, তাহলো, সংগঠনটির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বৈশাখী তে শুধুমাত্র সুন্দরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী কিংবা সুন্দরগঞ্জে কোনো কারণে থেকেছেন বা থেকেছে এমন লেখকদের লেখা নিয়েই প্রকাশ করে চলছে। উদ্দেশ্য, সুন্দরগঞ্জে লেখক তৈরির প্রয়াস। তবে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশে বিষয়টি উন্মুক্ত থাকে। সুপ্রকাশ সাহিত্য সংসদ সুন্দরগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে ধরতে প্রকাশ করেছে ‘মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ’।
যাহোক, সংগঠনটি দশটি বছরে অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ, শ্রম এর বিনিময়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছে। এখন সুন্দরগঞ্জে সাহিত্য জাগরণ প্রকাশমান একটি আন্দোলন। আর এ কাজে সুপ্রকাশ সাহিত্য সংসদের যোদ্ধাদের লড়াইযে সংযুক্ত হয়েছেন এলাকারই শুভাকাঙ্ক্ষীগণ।
সংগঠনটি এগিয়ে যাক কাজের মাধ্যমে উদ্দেশ্য সাধনে, দশকপূর্তিতে এই চাওয়া।কঙ্কন সরকার : সাধারণ সম্পাদক, সুপ্রকাশ সাহিত্য সংসদ (সুসাস), সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।