ত্রিপুরা ভ্রমণ পর্ব-৪
সুশান্ত নন্দী
পিলাক:
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ১০০ কিলোমিটার বা উদয়পুর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য নীরবে বহন করে চলেছে ছোট্ট গ্রাম পিলাক। গ্রামের পেছনে টাক্কাতুলসী পাহাড়। বৌদ্ধ দর্শণ অনুযায়ী ‘পিলা’ কথার অর্থ ‘এগিয়ে আসা’। গ্রামের মধ্যে বহুবছর ধরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে পাথরের নানান দেবমূর্তি। ১৯৯৫ সালে খনন কার্য শুরু হয় ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের উদ্যোগে। শ্যামসুন্দর টিলায় মাটির ঢিবি সরাতেই বের হয়ে এল প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। জ্যামিতির নিঁখুত নকশায় বারোটা দেওয়াল আর আটকোন বিশিষ্ট মন্দিরটি । প্রবাদ অনুযায়ী এটি একটি বৌদ্ধস্তূপ। পুজোর বেদী রয়েছে মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে। গোলাকার পুজোর ঘরের চারদিক থেকেই প্রবেশ করা যায়। পাথরের বেদীর ওপর একটা পাথর। সেটি একটা অবয়বের পা এর অংশবিশেষ। হয়তো সেটি পূজিত হতো। গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো রয়েছে সূর্যমূর্তি। আরো দুটো ভাস্কর্য্যের দেখা গেল সেখানে। তার মধ্যে একটি ‘অবলোতিকেশ্বর’ । ভেঙে যাওয়া মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কারুশিল্প। পাশাপাশি বৌদ্ধ কৃষ্টির ধারায় জায়গা করে নিয়েছে অর্ধমানব,অর্ধপশু ,পদ্মকোষ এসব মন্দিরের গায়েই। পুরাতত্ত্বিকদের কথা অনুযায়ী বাংলাদেশের ময়নামতীতে ধ্বংসস্তূপ থেকে পাওয়া স্থাপত্য–ভাস্কর্য্যের সাথে পিলাকের পুরাকীর্তির আশ্চর্য মিল রয়েছে। বাংলাদেশের কুমিল্লার ময়নামতী ছিল বৌদ্ধধর্ম ও দর্শন চর্চার বড় কেন্দ্র। সেখান থেকে বক্সনগর হয়ে বৌদ্ধসন্ন্যাসীরা পিলাক যেতেন বলে কথিত রয়েছে ।
একটু এগিয়েই পিলাক বাজার। বাজারের পাশেই ঠাকুরাণী টিলার অবস্থান। ১৯৯৮–১৯৯৯ সালে স্তুপীকৃত মাটির স্তর সরাতেই পাওয়া গেল একাধিক পুরাকীর্তি। চাতালের নীচে রাখা দশফুট উচ্চতার সূর্যমূর্তি। গ্রামের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য গণেশ,শেষনাগ সহ আরো অনেক মূর্তি । ধানমাঠের মাঝে জেগে আছে আরো ঢিবি, সেগুলো এখনও খননের অপেক্ষায়। আশপাশের গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে আছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন।