ত্রিপুরা ভ্রমণ পর্ব-৩
সুশান্ত নন্দী
ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান:
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্মারক স্মৃতি পার্ক মৈত্রী উদ্যান। ভারতের ত্রিপুরার চোত্তাখোলায় ২০ হেক্টর জমির ওপর গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের এই পার্ক। উদ্যান ভূমিতে পা রাখলেই নিপুণভাবে তৈরি সব শিল্পকর্ম দেখে স্মৃতিপথ ধরে আপনি অনায়াসেই চলে যেতে পারেন একাত্তরের সময়কালে। দুচোখের জল গড়িয়ে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসবে শহীদদের প্রতি।
২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে এই উদ্যানের উদ্বোধন করবেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। এর নাম রাখা হয়েছে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পার্ক’। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ত্রিপুরার চোত্তাখোলায় এ উদ্যানটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই চোত্তাখোলাতেই মুক্তিযোদ্ধাদের ছাউনি ছিল। সে সময় মুক্তিবাহিনী এখানে বেসক্যাম্প তৈরি করে দেশের ভিতরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। সেই স্মৃতি বিজড়িত এলাকার প্রেক্ষাপটকে ধরে রাখতেই ২০০৯ সালে স্থানীয় বিধায়ক সুধন দাস ওই স্থানকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্ক নাম দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ উৎসব শুরু করেন।যদিও পরে ওই স্থানের নামকরণ করা হয় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান এবং ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এই পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এটি শুধু একটি উদ্যানই নয়, আরও অনেক কিছু রয়েছে এতে। একটি যুদ্ধ জাদুঘর, উঁচু টিলা, সবুজ উপত্যকা, হ্রদ, গাছপালা, আর্ট কলেজের পড়ুয়াদের ও বাংলাদেশের শিলীদের অসংখ্য ভাস্কর্য, বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান ছাড়াও আরও অনেক কিছু স্থাপত্যের ঠিকানা এই উদ্যান। এই উদ্যানের ভিতরেই রয়েছে একটি উচ্চ ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে দেখা যাবে বাংলাদেশের কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীর একাধিক জায়গা। ’ এই উদ্যানের ভিতর বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশাল মূর্তি রয়েছে। প্রাচীরের গায়ে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত যেমন লেখা রয়েছে তেমনি দুই দেশের জাতীয় পতাকার ছবি সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করেছে।