ত্রিপুরা ভ্রমণ পর্ব-২
সুশান্ত নন্দী
ছবিমুড়া:
উদয়পুর থেকে বারো কিমি দূরে মহারানী ঝোড়া হয়ে গোমতী নদী পথে নৌকো বিহারে দেখে নেওয়া যেতে পারে ছবিমুড়া। উদয়পুর থেকে যাত্রাপথে স্থানীয় জনজাতিদের বাজার থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে বাঁশ করুল কিংবা কাউফল।তবে বাঁশ করুল রান্না করেই খেতে হবে। ত্রিপুরার জনজাতিদের একটি প্রধান সুস্বাদু খাবার বাঁশ করুলের গোদক। এই ছবিমুড়াকে অনেকে ত্রিপুরার আমাজন বলেও ডাকে। দুই দিকে সবুজের টিলাপাহাড়ের মাঝপথ দিয়ে এই ভ্ৰমন বেশ এডভেঞ্চারস। যাতায়াত মিলিয়ে প্রায় চার ঘন্টা ঘুরিয়ে আনবে সেই জলযান। ভাড়া প্রায় আড়াই হাজার টাকা বোট পিছু। যদিও এই দীর্ঘ ভ্রমণে যদি কারও আগ্রহ না থাকে তবে ছবিমুড়া সংলগ্ন এলাকা ঘুরে আসতেও পারেন বোটে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বারোশ টাকা। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে জ্যাকেট পড়া বাঞ্ছনীয়।যাত্রাপথে পাথুরে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা ভাস্কর্য দেখে মনে হতেই পারে এক অলীক সৌন্দর্যের মহলে প্রবেশ করার কথা। ঘন সবুজের ক্যানভাসে এতো সৌন্দর্য! আহা! দুচোখ জুড়িয়ে যায়। যারা ওড়িশার সিমলাপাল গিয়েছিলেন তারা এই দৃশ্যপটের সাথে কিছুটা মিল খুঁজে পাবেন। গাছেদের মিছিল বুক দিয়ে যেন আগলে রেখেছে গোমতীকে। দিগন্ত বিস্তৃত নীলাকাশের সাথে ঘন সবুজের মেলামেশার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি না করে উপায় নেই। প্রকৃতি যেন নিপুণ হাতে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে সবুজের আল্পনায়।মনে হতেই পারে দুদিকে পাহাড়ের বুক চিরেই সৃষ্টি হয়েছে এই জলনদী। ভরা বর্ষায় নদীর জলতরঙ্গ আর পাখির কুজন যেন মিলেমিশে একাকার। ছবিমুড়ায় পাহাড়ের গায়ে দুর্গা সহ অন্যান্য দেব মূর্তিটির একাধিক খোদাই চিত্র যেন এক আশ্চর্য কিছুর সন্ধান। কে এই নিখুঁত ভাস্কর্যের কারিগর তা জানা নেই কারো। কথিত আছে, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার রাতে এখনও সেখানে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসে। রাত জেগে জেলেডিঙি যখন মাছ শিকারে ব্যস্ত তখন ভেসে আসে সে শব্দ আর সঙ্গে ধুনোর গন্ধ। ছবিমুড়ার হোটেলে খেতে পারেন স্থানীয় উপজাতিদের খাবার গোদক(শুঁটকি মাছ ও বাঁশ করুল মিশিয়ে রান্না)। বাঁশ করুলের ভর্তাও খেতে পারেন সহজে।
(পর্ব-৩ আগামী শুক্রবার)