সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:২৪ অপরাহ্ন

জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি# শামসুর রাহমান : সৃজনমুখর আত্মশক্তি, ছিন্ন-ভিন্ন স্মৃতি ও অনুভব-গোলাম কিবরিয়া পিনু

জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি# শামসুর রাহমান : সৃজনমুখর আত্মশক্তি, ছিন্ন-ভিন্ন স্মৃতি ও অনুভব-গোলাম কিবরিয়া পিনু

এক.
শামসুর রাহমান-এমন একজন কবি যাঁর কবিতা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে গভীরভাবে পড়ে আসছি পাঠক হিসেবে। ধারাবাহিকভাবে এত দীর্ঘদিন ধরে এ-দেশের খুব কম কবি আমার পাঠস্পৃহা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত প্রায় সব কবিতার ওপরই চোখ পড়েছে, তাঁর কবিতা চোখের সামনে পড়েছে অথচ পড়িনি–এমনটি হয়নি। তবে–সব কবিতাই ভালো লেগেছে সমানভাবে তা নয়, কোনো কবিতা বেশ টেনেছে, কোনো কবিতা কম টেনেছে তুলনামূলকভাবে। স্বীকার করি–তাঁর কবিতায় এক ধরনের সহজাত আকষর্ণ রয়েছে, যে আকষর্ণ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়নি। একি শুধু মুগ্ধতা, একি শুধু আসক্তি, একি শুধু পাঠক হিসেবে পক্ষপাতমূলক হৃদয়গ্রন্থি উন্মোচনের প্রেষণা? সাহস নির্মাণে, রুচি নির্মাণে, দৃষ্টিভঙ্গী নির্মাণে, আধুনিক জীবন-বোধ নির্মাণে, স্বদেশ নিয়ে স্বপ্ন নির্মাণে ও ব্যক্তিগত বহুবিধ পর্যায়ের অনুভব ছুঁয়ে ছুঁয়ে জীবন উপলব্ধি করার জন্য তিনি তাঁর কবিতাকে শিল্পশক্তিতে সংহত করেছেন। তা ক’জন কবি পারেন? কবি হিসেবে শামসুর রাহমান তাই আমারও প্রিয় কবি।
কবি শামসুর রাহমানের সাথে সরাসরি দেখা কবে হয়েছিল, তা হয়তো এখন বলতে পারবো না, নির্দিষ্ট তারিখটি মনে নেই। তাঁর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ হওয়ার আগে থেকেই তাঁর কবিতার সাথে আমার পরিচয়, সবসময়ে আমি তাঁর নিমগ্ন পাঠক। শামসুর রাহমানের কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক আমরা হয়তো অনেকে, তাঁর কবিতা পড়ে আমরা অনেকে আমাদের সময়কালের কাব্য-পাঠস্পৃহা মিটিয়েছি। ব্যক্তি শামসুর রাহমান এখন আমাদের সম্মুখে শারীরিকভাবে নেই-কিন্তু তাঁর কাব্য-কীর্তি রয়েছে, অনেকের মত আমার সাথে তাঁর পরিচয় ছিল, বিভিন্ন পরিধিতে মেশার সুযোগও হয়েছে, কাছাকাছিও যেতে পেরেছিলাম, সেই স্মৃতিও আছে।

দুই.
মফস্বলে জন্ম নেওয়া মানুষ আমি, গাইবান্ধা শহরে মূলত আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। সেখানেই, শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরসহ ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধেও ভূমিকা রেখেছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এমএ পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্ট বের হওয়ার আগেই ঢাকায় ১৯৮৩ সালের শেষে এসে চাকরি নিয়ে থিতু হলাম। আর তখন থেকেই থেকে ধারাবাহিকভাবে ঢাকায় বসবাস করছি। সেই সময় তো শামসুর রাহমান উজ্জ্বল অবস্থানে নিয়ে আমাদের কাছে উন্মুখ ও প্রস্ফুটিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি তখন তাঁকে দেখছি, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে কাছাকাছি যাওয়ারও সুযোগ হয়েছে। তখন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও সাময়িকীতে আমারও কবিতা ছাপা হচ্ছে। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘এখন সাইরেন বাজানোর সময়’ বের হয় ১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে । সেই সময়ে কবিতা লেখার গোপনীয় স্পর্ধা নিয়ে নিজের ভেতর এক ধরনের চঞ্চলতা তো ছিল, সেই চঞ্চলতায় কবিতার পরিমণ্ডলের মানুষজনের সাথেও পরিচয়ের এলাকাটা বাড়তে থাকে। শামসুর রাহমানের সাথে পরিচয় আরও ঘনিষ্ট হয় জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের পর থেকে। জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠন হয়–১৯৮৭ সালে, এর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমিও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হই, জাতীয় কবিতা পরিষদের নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিভাগীয় সম্পাদক, ১০ বছর যুগ্ম সম্পাদক ও শেষে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করি। প্রায় ২০ বছরের অধিককাল সংগঠনটির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকে রাজনৈতিক ও সরকার পরিবর্তনের সময়ে–বিভিন্ন দ্বন্দ্ব ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কবিদের ভূমিকা, দায়িত্ব ও অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করেছি। কবি শামসুর রাহমান প্রথম কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর–কিছুদিন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাথে বিযুক্ত থাকেন। তার পর আবারও যুক্ত হোন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় কবিতা উৎসবগুলোতে তিনি উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সংকট, প্রতিকূল পরিস্থিতি ও সম্ভাবনার সময়ে কবি মোহন রায়হান, কবি মুহাম্মদ সামাদসহ বেশ ক’বার শ্যামলীর বাড়িতে আমরা গিয়েছি। এছাড়া কবিতা পরিষদের বাইরেও অন্যান্য প্রয়োজনে আমি গিয়েছি–তাঁর বাসায়। তাঁর জন্মদিনেও তাঁর বাসায় গিয়েছি। তিনি তাঁর নিজস্ব ঘরে নিয়ে আমাদের বসিয়েছেন, কথা বলেছেন আন্তরিকভাবে।
১৯৯১-৯৪ সালের দিকে জাতীয় কবিতা পরিষদ ও উৎসবের আর প্রয়োজন নেই বলে কেউ কেউ তাদের বিবেচনাবোধ তুলে ধরলেন, পত্র-পত্রিকায়, এদের মধ্যে ক’জন কবিতা পরিষদের সাথে যুক্ত থাকা বিশিষ্ট কবিও ছিলেন, কিন্তু কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ আমি কবি সৈয়দ শামসুল হকের এমন একটি লেখার প্রতিবাদ করে ভিন্নমত প্রকাশ করেছিলাম, আমার মতামতটি ১৯৯১ সালের ২০ জুন সংবাদ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতেও আরও দু’একজন বিশিষ্ট কবিও এমন মতামত প্রকাশ করে নিবন্ধ লেখেন। আমি ১৯৯৪ সালের ২২ জানুয়ারি ‘ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় কবিতা উৎসব’ নামে আজকের কাগজে ২২ শে জানুযায়ারিতে একটি কলাম লিখি এবং ‘কবির মঞ্চ, কিছু বিবেচনা’ নামে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৪ তে ‘ভোরের কাগজে’ আরও একটি নিবন্ধ লিখি। ‘ভোরের কাগজে’–সেই নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম, যা এখনো বিবেচনার আওতায় নিয়ে–আমাদের দৃষ্টিপথ পরিষ্কার করতে পারি–
‘‘উদাসীন উদারতায় সবকিছু দেখবো, তা হয় না। উদাসীন-উদারতার ফলে আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক অর্জিত ফসল ইঁদুরে খেয়েছে, হিংস্র প্রাণীর নখর-নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আমরা রক্ত দেবো, সংগ্রামে বিজয়ী হবো, আর বিজয়ী হওয়ার পর, পরাজিত শত্রুদের উষ্ণতায় কাছে টানবে, তা হয় না। এই অকেজো দর্শন বার বার বিভ্রান্তির জটাজালে ফেলেছে। . . .
কবি হলেই হাত মেলানোর গান গাওয়া ঠিক নয়। একই মঞ্চে যদি মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গী নির্ভর কবিদের দখল দিই, দেখা যাবে একদিন রাজনৈতিক-সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক অনেক ক্ষেত্রে মৌলবাদীদের অবস্থান যেমন শক্তিশালী হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে কবিদের মঞ্চেও তারা শক্তিশালী হয়েছে, দেখা যাবে কবি শামসুর রাহমান ও অন্যান্য যারা আধুনিক হয়ে উঠেছেন, তাঁদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং আধুনিক কবিদের মঞ্চ হয়তো এভাবে লুপ্ত হয়ে যাবে।’’
ভিন্নমত ও অন্যান্যজনের কারণে কবি শামসুর রাহমান জাতীয় কবিতা পরিষদ থেকে বিচ্ছিন্ন হোন কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আমৃত্যু কবিতা উৎসবের সাথে যুক্ত থাকেন। কবি সৈয়দ শামসুল হকসহ আরও ক’জন বিশিষ্ট কবি ভিন্নমত প্রকাশ করার পরও কবিতা পরিষদের উৎসবের সঙ্গে আর কখনো বিচ্ছিন্ন থাকেননি। এসব আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। জাতীয় কবিতা পরিষদ বা উৎসবের সাথে তখনকার মূলধারার বেশিরভাগ কবিরা বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট থেকেছেন, দীর্ঘদিন ও ধারাবাহিকভাবে–যা অন্য কোনো কবিতার সংগঠনের সাথে কবিদের এমনভাবে থাকতে দেখা যায়নি!
ইতিহাসের কণ্ঠলগ্ন হয়ে আমরা লক্ষ করি–তাহলে এই দৃশ্যপট দৃশ্যমান হয়ে ওঠে যে, সেই সময়ে দেশ বিভাগোত্তর পূর্ব বাংলার প্রথম প্রজন্মের অন্যতম একঝাঁক কবি, গল্প লেখক, প্রবন্ধ লেখকের হাতে সাহিত্যের মূলধারার পাটাতন তৈরি হতে থাকে। অন্যদিকে লেখকদের একটি ভগ্নাংশ সাহিত্যকে সংকীর্ণ বৃত্তের মধ্যে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় ও পশ্চাৎপদ চিন্তার ঘূর্ণিজলে আবদ্ধ করতে তৎপর হয়ে ওঠে। অন্যদিকে–এর বিপরীতে শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে আলাউদ্দিন আল আজাদ, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, সানাউল হক, মুনীর চৌধুরী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান হাফিজুর রহমানসহ অন্যান্যরা, যাঁরা আধুনিক, যুক্তিবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর জীবনঘনিষ্ট সাহিত্য রচনার পথকে আপন পথ হিসেবে বিবেচনা করেন। এর ফলে তাঁদের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তৎকালীন রাষ্ট্রের সঙ্গে এঁরা সংঘাতের মধ্যেও পড়েন। একদল অতি উৎসাহী লেখকরা চেয়েছিল ইসলামী ভাবাদর্শ নিয়ে সবাই লিখবেন, এরকম বিভিন্নমুখী চাপও ছিল। এইসব চাপকে দূরে ঠেলে দিয়ে এই ভূখণ্ডের মূলধারার সাহিত্য বিকশিত হতে থাকে। পঞ্চাশ দশকের লেখকদের পথ ধরেই পরবর্তীতে ষাট দশকের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী জনমত তৈরি ও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নির্মাণে মূলধারার কবি-সাহিত্যিকরা ধারাবাহিক ভূমিকা রাখেন।
১৯৫০ সালের মার্চে কবি আশরাফ সিদ্দিকী ও আবদুর রশীদ খানের সম্পাদনায় ‘নতুন কবিতা’ নামে একটি কাব্য সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনে পূর্ব বাংলার কবিতার বৈশিষ্ট্য ও ভিন্নতা স্পষ্ট হয়। এই সংকলনে পঞ্চাশের অন্যতম কবি শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, মযহারুল ইসলাম, আলাউদ্দিন আল আজাদ ও বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ছিলেন।
আশির দশকে কবিতা বিষয়ক চারটি সংগঠন গড়ে ওঠে। সংগঠনগুলো হলো–‘পদাবলী’, ‘কবিকণ্ঠ’, ‘বাংলাদেশ কবিতা কেন্দ্র’ ও ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’। ১৯৮০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ‘পদাবলী’ আত্মপ্রকাশ করে। এই সংগঠনটি দর্শনীর বিনিময়ে প্রথম কবিতা পাঠের আয়োজন করে, তা সেসময়ে অভিনবত্বে বেশ কৌতুহলোদ্দীপক ছিল। কবি আবুজাফর ওবায়দুল্লাহর নেতৃত্বে–শামসুর রাহমান, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, মাহমুদুল হক, বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, রবিউল হুসাইন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রমুখ প্রগতিশীল কবিরা ‘পদাবলী’ সংগঠনটির সাথে যুক্ত থেকেছেন।
দেশ বিভাগোত্তর পূর্ব বাংলার প্রথম প্রজন্মের অন্যতম একঝাঁক কবি-গল্পকার-প্রবন্ধকার; তাঁরাসহ তাঁদের উত্তরসূরিরা আবারও জাতীয় কবিতা পরিষদের মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক অবস্থানে যূথবদ্ধ হোন। কবিতা পরিষদের সাথে কবি শামসুর রাহমান ছাড়াও আরও কতজন যে বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিলেন, যাঁরা আজ নেই–সুফিয়া কামাল, ফয়েজ আহমদ, মযহারুল ইসলাম, লুৎফর রহমান সরকার, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সৈয়দ শামসুল হক, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, খালেদা এদিব চৌধুরী, সমুদ্র গুপ্ত, সাযযাদ কাদির, রবিউল হুসাইন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ।
বিভিন্ন বছরের জাতীয় কবিতা উৎসবের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানের সাথে একই মঞ্চে বসে উৎসব-ঘোষণাপত্রপাঠসহ আমিও বক্তব্য দিয়েছি। উৎসব মঞ্চে তাঁর চোখে ওষধের ড্রপও দিয়ে দিয়েছি, কবির চোখ–সেই চোখ দিয়ে দেখা কতকিছু কবিতায় তিনি প্রাণ দিয়েছেন, সেই দৃশ্যপট এখনো আমার মনের ভেতর কী এক অভিব্যঞ্জনা নিয়ে আছে! তিনি তাঁর সম্পাদিত কবিতা সংকলনেও আমার কবিতাকে স্থান দিয়েছেন, সেই কৃতজ্ঞতা অকুণ্ঠচিত্তে আজও মনে করি। মনে পড়ে–১৯৯৭ সালে গাইবান্ধা সাহিত্য সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তখন তিনি ঢাকার বাইরের অনুষ্ঠানে যেতেন না কিন্তু তিনি আমার অনুরোধ রেখেছিলেন! তাঁর শ্যামলীর বাসায় তাঁকে ও কথাসাহিত্যিক বিপ্রদাশ বড়–য়াকে মাইক্রোবাসে তুলে দিয়েছিলাম কিন্তু আমি যেতে পারিনি, অফিসের জরুরি কাজের জন্য, তাতেও তিনি সেদিন গাইবান্ধার সাহিত্য সম্মেলনে গিয়েছিলেন! তারুণ্যের চঞ্চলতায় জেগে থাকা সেইসব স্মৃতি ভোলা যায় না।

তিন.
কবি শামসুর রাহমানের রুচি ও স্বাধীনতা অনুযায়ী তাঁর পোশাক-আশাক, চালচলন ইত্যাদি আমাদের টানে। মনে হয়েছে তাঁর জীবন-দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বেশ-ভূষায় বা পোশাক-আশাকও আধুনিক হয়েছে। আমার মনে হয়েছে–কবি হিসাবে সমাজের অন্যান্য স্বাভাবিক সাধারণ ও সুস্থ জীবনবোধের মানুষের মতো পোশাক-পরিচ্ছদ কবিরাও পরবেন–ভেতরে হয়তো ভিন্ন দার্শনিক-নৈতিকবোধ জিইয়ে রেখে ভিন্ন রকমের স্বপ্নঘেঁষা অঞ্চলে চলবেন কিন্তু ভেতরে থাকবে সাধনার বিষয়, সৃজনশীলতার বিষয়, স্পর্ধার বিষয়–তা কেন শুধু বাহ্যরূপে প্রকাশিত হবে? এ ভাবনা থেকে হয়তো আলাদা ভাবে শামসুর রাহমানকে নিছক ‘পোশাকী-কবি’ হওয়ার প্রয়োজন হয়ে ওঠেনি। এই বৈশিষ্ট্য আমাকে টেনেছে। আধুনিক কবিরা শুধু আমাদের দেশে নয় বিভিন্ন দেশেও খুব পোশাকী হয়ে উঠেন? না! কবিদের জীবন বোহেমিয়ান হতে পারে, বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কিন্তু কবির মর্যাদা কোনোভাবেই খাঁটো হোক পরিবারে-সমাজে-প্রতিষ্ঠানে বা অন্য কোনো পরিবেশে, তা শামসুর রাহমান সচেতনভাবেই কখনো চাননি বলে মনে হয়। এমন অনেক উদাহরণ–আমারও পর্যবেক্ষণে রয়েছে। আমিও মনে করি, কবিরা অগ্রজ্ঞানে অগ্রগামী মানুষ, কবিদেরও জ্ঞান ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক-প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা অন্য কারো চেয়ে কম নয়। সে কারণে কবি পরিচয়ে বা কবির পোশাক-আশাকের কারণে তাঁর মূল্য কমুক, তা তিনিও চাননি কিংবা কবি হিসেবে ব্যক্তি ও সমাজ-প্রতিষ্ঠানের করুণা নিক্ষেপিত হোক, তাও চাননি বলে মনে হয়েছে। শামসুর রাহমান কবিসত্তাকে সবসময়ে মর্যাদার আসনে রাখার জন্য সচেষ্ট থাকার চেষ্টা করেছেন–সে কারণে তিনি আমাদের এক দেদীপ্যমান কবি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।

চার.
কবি শামসুর রাহমানের সাথে আমাদের নিত্যদিনের ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও–মনে হতো তিনি আমাদের চিরপরিজ্ঞাত এক আত্মীয়। তাঁর অগোচরে থেকেও, দূরবর্তী থেকেও মনে হতো তিনি আমাদেরই অংশী। তাঁর কাব্য-প্রতিভা, ব্যক্তিত্ব ও ভূমিকার কারণে তিনি আমাদের কাছে ছিলেন–অন্তরের অধিবাসী। তাঁর প্রতি কোনো আঘাত ও অনুসূয়া আমাদের শুধু ব্যথিত করেনি, আমরাও তাঁর অচ্ছেদ্য যন্ত্রণার অংশী হয়ে প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছি, তাঁর সাথে থাকার চেষ্টা করেছি। ১৯৯৫ সালে এপ্রিলে তৎকালীন রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধে নিয়ে, সরকারের ছত্রছায়ায় ও রাজনৈতিক দলগুলোর শিথিল মেজাজ-মর্জির কারণে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কালজ্ঞ-শক্তি সিলেটে কবি শামসুর রাহমানকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পণ্ড করেছিল। কেন করেছিল–কারণ, তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন, গণআদালতে উপস্থিত হন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে মিছিলে থাকেন, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিজাত একজন উদার মানুষ। সেদিন কবি-সাহিত্যিক ও বিবেকবান মানুষেরা প্রতিবাদ করার পরও–মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চিহ্নিত শত্রুরা সিলেটবাসীদের জিম্বা করে–রাষ্ট্র ও সরকারের অনুকূল পরিবেশে–সেইদিনের শামসুর রাহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ভন্ডুল করেছিল। আমিও সেদিন ‘কবি শামসুর রাহমানের সিলেটে সংবর্ধনা ও ঐকমত্যের ভূমিকা’ নামের এক প্রতিবাদী কলাম লিখেছিলাম ২৫ শে এপ্রিল ১৯৯৫ সালে, আজকের কাগজে। আমরা ভেবেছিলাম–শামসুর রাহমানের মর্যাদা না বাঁচাতে পারলে–আমাদের মর্যাদা শুধু ক্ষুণœ হবে না, আমাদের সূর্যও অস্তমিত হবে। সেই কলামে লিখেছিলাম, সেদিন–
‘‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি যেমন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বহু বুদ্ধিজীবী ও কবি-সাহিত্যিককে হত্যা করে বাঙালির বিকাশকে রুদ্ধ করতে চেয়েছিল, সেই দর্শনে বিশ্বাসী অপশক্তির উত্তরাধিকারী জামাত-শিবির-যুব কমান্ড ও ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী মক্তির মানুষরূপী পশুরা আজ আবারো বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহক বুদ্ধিজীবী-কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের ওপর আঘাত হানতে শুরু করেছে। মিথ্যে শ্লোক দিয়ে, মিথ্যে বক্তৃতা দিয়ে, মিথ্যে আওয়াজ দিয়ে তারা পুরনো কৌশলে মানুষকে বিভ্রান্তির চোরাস্রােতে ফেলতে চাইছে।’’

পাঁচ.
আশ্চর্য হতে হয়–তাঁর অদম্য সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের বিন্যাস দেখে, তিনি সেই ধরনের কবি যিনি সুশৃঙ্খলভাবে কবিতা নির্মাণে জীবনকে যতটা সম্ভব বিনিয়োগ করেছেন এবং এ-ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। তাঁর এই সৃজনমুখর আত্মশক্তি যে-কোনো পাঠক, কবি ও মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কবিতা লেখার শুরুতে তাঁর সেই অকম্পিত দৃঢ়তা ছিল, যা পরবর্তীতে পরিশীলিত ও সংহত হয়ে পরিব্যাপ্ত হয়েছে–
‘‘তখন আমরা মাহুতটুলি থেকে সরে এসেছি অশোক লেনে। সেখানেই আমি আমার প্রথম কবিতা লিখি যেটি ঢাকার প্রসিদ্ধ সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সোনার বাংলা’য় প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকায় কবিতা দাখিল করার ব্যাপারে আমার বন্ধু হামিদুর রহমানের পীড়াপীড়ি সক্রিয় ছিলো। তার উদ্দীপনা না থাকলে হয়তো পত্রিকাটির দিকে আমি পা বাড়াতাম না।
‘সোনার বাংলা’য় আমার কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর আমি পত্রিকাটি আমার মায়ের হাতে দিয়েছিলাম তাঁর পুত্রের কবিতাটি পড়ার জন্যে। ইতিমধ্যে আমার বাবা ঘরে ঢুকে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলেন। আমার বাবা ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘এসব ঢের দেখেছি। পারবে সে হুমায়ুন কবীরের মতো কবি হতে?” আমি আমার চরিত্রের বিরুদ্ধে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে জোরালো কণ্ঠে ব’লে ফেললাম, ‘‘যদি আমি কোনোদিন কবি হই তাহ’লে হুমায়ুন কবীরের চেয়ে বড় কবি হবো।’’ এই দুর্বিনীত বাক্য উচ্চারণ করার পর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ায়নি, পাশের ঘরে চলে যাই। এই কা-ে আমি নিজেই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম, যে-আমি বাবার সঙ্গে কথা বলতেই কেন যেন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়তাম।
যা-ই হোক, শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন কবীরের চেয়ে বড় কবি হতে পেরেছি কিনা, তবে হুমায়ুন কবীর পরবর্তীকালে আমার কবিত্বশক্তির তারিফ করেছেন, কারো কারো কাছে এবং তাঁর পত্রিকা ‘চতুরঙ্গে’ আমার বেশ কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। জানি না, আমার কবিতা কত কাব্যপ্রেমীর কাছে আদৃত, যা-ই হোক এখনো আমি লিখে চলেছি এবং যতদিন বেঁচে আছি, লেখনীর গতিকে মুখ থুবড়ে পড়তে দেবো না। যদি ভবিষ্যতে কোনো সম্পাদক আমার কবিতা আর পত্রিকায় ছাপতে আগ্রহী না হন, তাহলে আমি স্বেচ্ছায় কোনোদিন কোনো সম্পাদকের দহলীজে গিয়ে ধরনা দেব না। আমার কবিতার পা-ুলিপি স্যুটকেশের ভেতর কিংবা বিছানার নিচে রেখে দেবো।’’ (ভূমিকা, কবিতা সমগ্র ১, অনন্যা, ঢাকা, ২০০৫)

ছয়.
তিনি তাঁর দর্শন বা কাব্যবিশ্বাসকে বারবার বদলিয়ে চোরাস্রােতে ছেড়ে দেননি, দৃঢ়তার সাথে সেই দর্শন বা কাব্যবিশ্বাসকে সংরক্ষিত রেখেছেন–যারফলে বাংলা কবিতা বিশেষত বাংলাদেশের কবিতায় যে মধ্যযুগীয় সংকীর্ণ দর্শন বা কাব্যবিশ্বাস বেশ প্রভাববলয় তৈরি করে ফেলেছিল, তা অনেকটা তিনি এককভাবে প্রতিরোধ করেছেন। এই ভূমিকা বাংলা কবিতা বিশেষত বাংলাদেশের কবিতাকে মুক্ত-স্বাধীন ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গী নির্ভর জীবনমুখী পথে এগিয়ে যাওয়ার স্পর্ধা আরও সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। তাঁর বোধভাষ্যি থেকে আমরা পাঠ নিতে পারি–
‘‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই, আমার বিশ^াস এটুকু যে, আমি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে বিশ^াস করি, আর ব্যক্তির বিকাশ,তাঁর সৃজনশীল বিকাশের প্রতিও আমি বিশ^াসী, এবং এ পৃথিবীর সব মানুষের কল্যাণ হোক এবং মানুষ প্রগতির দিকে এগিয়ে যাক–এই বিশ্বাস আমার আছে।’’
হুমায়ুন আজাদ : আপনি ব্যক্তিগতভাবে ধর্মপ্রবণ কি না?
শামসুর রাহমান : ধর্ম ছাড়াতো কোন মানুষ নেই, আমি মনে করি আমার ধর্ম হলো মনুষ্য ধর্ম, সেটা যদি মনে বলেন, তবে আমি ধর্মপ্রবণ। কিন্তু প্রচলিত অর্থে যেটাকে ধর্মপ্রবণ বলা হয়, সে অর্থে আমি ধর্মপ্রবণ নই।

হুমায়ুন আজাদ : বাঙলাদেশে যদি একটা উগ্র ডানপন্থী মৌলবাদী দল ক্ষমতায় আসে তাহলে বাঙলার ভবিষ্যৎ কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?
শামসুর রাহমান : মধ্যযুগের মতই তমসাচ্ছন্ন।
হুমায়ুন আজাদ : ঐ দেশে আপনি বাস করতে পারবেন?
শামসুর রাহমান : বাস করা মুশকিল হবে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনি তখন জীবিত থাকবেন বলে কি মনে হয়?
শামসুর রাহমান : আমার মনে হয় না আমি তখন জীবিত থাকবো।
হুমায়ুন আজাদ : অর্থাৎ আপনাকে জীবিত রাখবে কি না।
শামসুর রাহমান : আমার মনে হয় না তারা আমাকে জীবিত রাখবে।’’(হুমায়ুন আজাদ, শামসুর রাহমানের মুখোমুখি, মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা, শামসুর রাহমান সংখ্যা, জানুয়ারি-মার্চ ১৯৯১)
কবি শামসুর রাহমানের নিজের একটি লেখার অংশবিশেষ টেনে নিই–কী অকপটে বলেছেন, তাঁর দর্শনানুভূতি :
‘‘নিজেকে ব্যক্ত করার অদম্য ইচ্ছা এবং সত্যের সন্ধান একজন লেখকের প্রধান কর্তব্য। সত্য যদি তার নিজের বিরুদ্ধেও যায়, তবু সত্যেও দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অনুচিত। সর্বোপরি, যে কোনো মূল্যে মনুষত্ব বজায় রাখার সাধনায় অবিচল থাকা একান্ত জরুরি একজন লেখকের পক্ষে। মহৎ সাহিত্যের সাহচর্যে এই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। কী করে ভুলি প্রাচীন কবির সেই অমোঘ পঙক্তি, ‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’।’’ (শামসুর রাহমান, আমার কথা, মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা, শামসুর রাহমান সংখ্যা, জানুয়ারি-মার্চ ১৯৯১)
‘‘সত্যি বলতে কি , আমার মনের মতো সমাজ গড়ে ওঠেনি আজো। মুক্ত চিন্তাসমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সমাজ আমার কাম্য। সেরকম সমাজের প্রতীক্ষায় আছি, জানি না দেখে যেতে পারবো না। যে দাঁতাল স্থ’ল সময়ে আমরা বাস করছি তার অবসান সহজে ঘটবে বলে মনে হয় না। যদি কোনোদিন হয় তাহলে আমাদের লড়াই একেবারে ব্যর্থ হয়নি, এ-কথা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো স্বীকার করবে।’’ (শামসুর রাহমান, আমার কথা, মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা, শামসুর রাহমান সংখ্যা, জানুয়ারি-মার্চ ১৯৯১)
শামসুর রাহমানের উল্লিখিত উচ্চারণসমূহ কবিদের শুধু পথ দেখায় না, নিজেদের সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। কী স্বচ্ছ ধারণা! কী ঋজু বক্তব্য!

সাত.
শামসুর রাহমানের দৃষ্টিভঙ্গির যে মূলভূমি–তা আধুনিক মানুষের মনন ও চেতনারই বহু বিস্তৃত এলাকা নিয়ে উচ্চকিত, সেখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা বিশেষ মূল্য নিয়ে উজ্জ্বল হয়ে আছে। শামসুর রাহমানের কবিতার উচ্চারণ শুধু তাঁর কবিতাকে নয়–বাংলা কবিতাকে দিয়েছে এক নতুন-মাত্রা। বাংলা কবিতার মূলধারাকে করেছে আরও সংহত, গতিশীল ও কাব্য-স্পর্ধায় দিগন্ত-প্রসারী।
কবি হিসেবে তিনি আমার প্রিয় প্রতিকৃতিও। তাঁর ব্যক্তিত্বেরই প্রতিরূপ হিসেবে যেন তাঁর কবিতা উন্মুখ। মনে হয় তাঁর কবিতা ও তাঁর ব্যক্তিত্ব অবিচ্ছিন্নতা নিয়ে একই যোগসূত্রে উজ্জ্বল। তাঁর কবিতা ও তিনি তাই হয়ে ওঠেন গ্রাহ্য অনেকক্ষেত্রে, ব্যবধান সৃষ্টি হয় কমই। শামসুর রাহমান তাঁর নিজস্ব বোধ থেকে উৎসারিত বিবেচনা থেকে এদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও ব্যক্তিগত অভিঘাতকে সূক্ষ্ণভাবে কবিতায় প্রাণ দিয়েছেন, সেই বোধ জনগণের প্রগতিমুখী চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর যে স্বদেশানুভূতি তা এই ভূখণ্ডের কাঙ্ক্ষিত সংস্কৃতিমানকে সংরক্ষণ ও পরিব্যাপ্ত করেছে। বাংলা কবিতাকে তিনি বিশেষ মর্যাদায় শুধু অধিষ্ঠিত করেননি, ভাব ও শৈলীকে নিজের মতন করে কবিতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা অনন্য সৃষ্টি হিসেবে পাঠকের মস্তিষ্কে অনুরণিত হবে বহুদিন।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge