চলতি পথের গপ্পো ৬
সাব্বির হোসেন
ছাদেক ভাইয়ের পানের দোকানে বসে আড্ডা মারছিলাম। সুখ দুঃখের ঘটে যাওয়া কিছু গল্প শেয়ার করছিলাম। ছাদেক ভাইয়ের কষ্টের দিনগুলোর কথা বলে আমাকে হতাশার রাস্তা থেকে তুলে নেবার চেষ্টা করছিলেন। আমি মন দিয়ে তার কথা শুনছিলাম। হঠাৎ করে আমাদের দুজনের সামনে এমন কিছু উপস্থিত হল যে আমরা দু’জনেই গল্প থামিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করলাম। আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের সামনে বিশাল এক নজির উপস্থিত হল, হ্যাঁ। সত্যই সেরকম। দু জন ভিক্ষুক। একজন ভ্যানে শুয়ে আছেন আরেকজন টাকা তুলছেন। তখন আমি বেকার। কোন চাকরীই পাইনি। শুনামধন্য নামীদামী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শহরের বড় বড় ব্যবসায়ী এবং যতদূর আবেদন করা যায় কোনটাই বাদ রাখিনি। ভিক্ষুকদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ।
আমার শূন্য পকেটে তাদের দেওয়ার মত কিছুই ছিল না। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখা ছাড়া। ছাদেক ভাই একটি দশ টাকার নোট আমাকে দিয়ে ভিক্ষুকদের দেওয়ালেন। আমাদের দুজনের অবাক তাকিয়ে থাকার কারনটা হল, যে মানুষটা ভ্যানে শুয়ে আছেন তার দু টো চোখ নেই, দু হাতের এবং পায়ের আঙ্গুলও নেই। শুধু আছে দেহ আর শ্রবণ করার জন্য দুটো কান। কথা বলার মত মুখ ছাড়া। তারা টাকা পেয়ে সামনের পথ ধরলেন। আমরা আবার আমাদের পুরোন কথায় ফিরে আসলাম। ছাদেক ভাই কথার মাঝে ভ্যানে শুয়ে থাকা ফকিরটার উদাহরন দিলেন। আমি তার সাথে সমস্ত ব্যাপারে সহমত পোষণ করলাম। বললেন, “ঐ ফকির ব্যাটারও টাকার প্রয়োজন আছে, অথচ তার দেহটা ছাড়া আর কিছু নাই। আল্লাহ তারও রিজিক লিখে রাখছেন। আমরা কতো ভাল আছি ওর থেকে। শুধু সৎ চেষ্টা এবং ভাল কাজ করা দরকার “
ছাদেক ভাই আমাকে যা বোঝাতে চাইলেন তা বুঝে গেলাম সহজেই। কিন্তু ছাদেক ভাইকে একটা কথা খুব বলতে চেয়েছিলাম —
” কি দোষ ছিল ঐ মানুষটার, যার কারণে আজ তার এমন পরিনতি”
বলি নাই।
আমি খয়ার, ছয়- সাত পদের জর্দা, একটি সুপারি দেওয়া পাঁচটি পান বেঁধে বাসা ফিরলাম।
আর একই কথা চিন্তা করলাম সারা রাত।