চলতি পথের গপ্পো-৩ সাব্বির হোসেন
আমরা যারা নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের পোষাক, জুতো, বেশভূষা এমনকি দু’চোখ অযত্নে অবহেলিত এবং ক্ষুধার্ত থাকে। আঁকাবাঁকা কতো বন্ধুর পথে কত মানুষের সাথে আমাদের দেখা হয়। কেউ স্বার্থসিদ্ধ করার জন্য অমায়িক ব্যবহার করে আবার কেউ স্বার্থত্যাগ করে সময় ব্যয় করে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় মশগুল থাকতে চায়। এমন একটি ঘটনা সেদিন টাউন হল চত্বরে ঘটলো।
বকুল তলার পাশে সাহিত্য মঞ্চ। প্রাণহীন বকুল গাছটি আংশিক দাঁড়িয়ে। ছায়া নেই। ছিন্নমূল এক উঠতি বয়সের যুবক এক ডালি ছোলা বুট আর বাদাম নিয়ে ঘুর ঘুর করছে। কাছে ডেকে দশ টাকার বাদাম চাইলাম। ছোট শীলপাল্লার এক পাতে এক মুঠো বাদাম দিয়ে মেপে ডালির ভেতর থেকে একটা পাঠ্যপুস্তক বের করল। যে সে পাঠ্যপুস্তক নয়। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক, আমার বাংলা বই। দশ বিশেক পৃষ্ঠা ছিঁড়ে মোড়ক বানিয়ে আগেই সাবার করেছে। এখন আমার বেলায়ও তাই করবে। মুহুর্তের মধ্যে আমি কিছু বলে ওঠার আগেই কাম তামাম। পেঁচিয়ে বাদাম ভরে বিট লবনের দুটো পুড়িয়া দিয়ে নিজের কর্ম দক্ষতার শৈল্পিক পরিচয় দিয়ে দিল।
পকেট থেকে দশ টাকা বের করছি আর বলছি, –“লেখাপড়া কর না?”
সোজা উত্তর দিল,- “না।”
-“কেন?”
কোন জবাব নেই। চোখেমুখে বিরক্তির ভাব। বুঝতে পারলাম টাকা হাতে পেলেই ভোঁদৌড় দিবে। ইচ্ছে করেই একটু দেরি করাচ্ছি। ওর মুখ থেকে কিছু কথা শুনার জন্য। অবশেষে ধৈয্য হারা হয়ে অগ্নিদেব এর মত জ্বলে উঠলো,”ভাই, সবাই এক কথাই জিগায়। কেউ কয় না সকালে কি খাইছি। মানবতার দেয়াল দিয়া শহর ভাসাইছে। কত রকম কাপড়। পেটে আমার খাবার নাই সেটা কেউ দেখে না। মানবতা মানেই শুধু কাপড় না। ডিজিটাল কইরা দেশ লাইটিং ফাইটিং করতেছে অথচ মায়ে আমার ঔষধ কিনোনের টাকা নাই। আপনে আমাকে কাম দিবেন তখন আপনারই সমস্যা হইব। শিশু শ্রম নিষিদ্ধ আইনে আপনেরে হাইকোট দেখাইবো। আপনে যতচেষ্টা করেন না কেন, আমার চাহিদা আপনে মেটাইতে পারবেন না। আমার আরও কথা শুনলে আপনার কিছু বলার থাকবে না। দিনে আবার একশ টাকা চাঁন্দা দিতে হয়।… ভাই টাকাটা দেন “
এই শুনো, তোমার নাম কি?
মাশরাফী।
মাশরাফী!
হ্যাঁ। ইচ্ছা আছে একদিন বাংলাদেশ জয় করুম। হে হে হে হে।
দোয়াকরি। ভাল থেকো হামার রংপুরের মাশরাফী।
প্রিয় মাশরাফী, এত অল্প বয়সে তোমার বাস্ততব জীবন যুদ্ধ থেকে যা শিখছো। আমি পাঠ্যপুস্তকের গল্প উপন্যাস এ তার শুধু রস নিয়েছি মাত্র। বড় হও।