চলতি পথের গপ্পো ১০
মো. সাব্বির হোসেন
আমার বাসা থেকে কয়েক গজ এগুলেই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী চাউল ওয়ালার বাড়ি। সে বিশাল আকৃতির। দুই প্রজন্ম ধরে তারা চাল, ডাল এর পাইকার। আমার এক মুরুব্বি আছে। প্রায় ঐ বাসার সামনে দিয়ে গেলেই বলে,”উমমহ বাড়ি করছে কি। বাপ ছিল মূর্খ। আর বেটাও মূর্খ। টাকা আছে। কিন্তু এখনো সাক্ষর করতে পারে না। টিপ সই দেয়।”
আমি বেশ কিছুদিন এই কথা শুনার পর একদিন বলেই ফেললাম, ” তারা যা করেছে, তাদের প্রচেষ্টায়। তোমার এত জ্বলে ক্যান”।
আমার কথা শুনে মুরুব্বি আকাশ থেকে পরলেন। বুঝলাম জায়গামত হাত দিছি। আর সুযোগ মিছ করা যাবে না। বলেই ফেলি বাকি সংলাপটা।
“আমাদের বাঙ্গালী সমাজে একটা রেওয়াজ আছে। ওমুকের ছেলে তমুক বিশাল কিছু হয়েছে, আর তোমরা? এই বিশাল বলতে অধিকাংশ যেটা বোঝায় তা হল টাকাওয়ালা। আর গুটিকয়েক মানুষ বোঝে সুশিক্ষিত বা জ্ঞ্যানী। আজ যদি আমি একটা সেলুন দেই। তোমরাই বলবে পড়াশুনা করে নাপিত হয়েছে। অথচ ব্রিটেন বা বড় দেশে এটাই মূল্যবান। অনেকে তো এত টাকা দেওয়ার ভয়ে মাথা চেচে বেড়ায় আর না হলে বছরে একবার চুল কাটায়। এই ধর যদি চাউল বা মুদির দোকান বা গালামালের দোকানি হওয়াটাও আমি খারাপ চোখে দেখি না। মুদ্দা কথা কোন কাজই খারাপ নয় যদি সেটা সৎভাবে করা যায়। একমাত্র লোকে কি বলবে এই শব্দকটার ভয়ে আমরা এগুতে পারছিনা। বেকারত্ব বাড়ছে। বাড়ছে বিষন্নতা। পরিবারে অশান্তি। চাহিদাজনিত সমস্যা।… “
আমার এসব কথা শুনে মুরুব্বি ধাওয়া করল। আর চিৎকার করে বলতে থাকলো, “তোর বাপের সাথে আগে দেখা হোক। সব বলবো। বিদেশে পড়াশুনা করে এই শিখছিস।” আমি পেছন ফিরে থেমে বললাম, “এটাই তো তোমাদের সমস্যা।!
টাকা ছাড়া দুনিয়াতে কোন দাম নাই, এটা বোঝ কিন্তু বাকিটা বুঝেও না বোঝার ভান কর।”