বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

গ্রন্থ আলোচনা : জীবনের চার লাইন

গ্রন্থ আলোচনা : জীবনের চার লাইন

গ্রন্থ আলোচনা

গ্রন্থ আলোচনা : জীবনের চার লাইন
মাসুদ বশীর

গত ডিসেম্বর ২০১৯ প্রকাশিত হয়েছে বহুমাত্রিক লেখক রানা মাসুদ’র ভিন্নধর্মী কাবিতাগ্রন্থ “জীবনের চার লাইন”, প্রকাশ করেছে পাতা প্রকাশ, রংপুর। বইটির অনিন্দ্য সুন্দর প্রচ্ছদ করেছেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। বইটিতে ৮৬ পৃষ্ঠা রয়েছে। বইয়ের মূল্য একশত বিশ টাকা।
সু-সাহিত্যিক রানা মাসুদ এর ভিন্নধর্মী কবিতাগ্রন্থ “জীবনের চার লাইন”। ভিন্নধর্মী এজন্যই যে, বইটিতে মোট ৮০টি শ্লোক রয়েছে এবং প্রতিটি শ্লোকেই চলমান জীবনের বিভিন্ন বাস্তবতা কবি তার লেখনির মাধ্যমে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন।
১ম শ্লোকেই যেমন কবি বলেছেন-
শীর্ণ দু’টি হাত, মলিন চোখে ক্ষীণকন্ঠ
‘স্যার দুইটা পিঁয়াজি দেন স্যার’।
তিনি বড় দুই বাটি হালিম নিয়ে
উঠে গেলেন ঝাঁ চকচকে নতুন গাড়িতে।
কি অদ্ভুত সুন্দর গভীরভাবে জীবনটাকে দেখা।
৪র্থ শ্লোকে যেমন বলেছেন-
দুধের রং সাদা সকলেই দেখে, দেখে না গাভীর রং
মানুষের রং সাদা কালো লোহিত কণিকা সব লাল।
চিরন্তন সত্য কথা। মানুষের মাঝে কিসের বিভেদ? কতটা সুন্দর ইংগিতবাহী উপস্থাপন।
কিংবা ধরা যাক ৭ম শ্লোক সেখানে তিনি বলছেনঃ
এক মুঠো ছাই নাও হাতটা করো শক্ত
ভালো করে ধরো পিছলাতেও পারে সুখ
জীবনের সুর ছন্দ ভুলে খোঁজে মরিচিকা
শেষ পর্যন্ত ঝুলিতে ভরে নাও খালি দুখ।
কি বলবেন পাঠক, এমন গভীরভাবে আমরা ক’জনাই বা জীবনকে দেখি। সে জন্যই তিনি রানা মাসুদ।
সমসাময়িক ঘটনাবলীও কবি’র নজর এড়ায় না এবং জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখেন-লেখেন।
যেমন ৭৯ নং শ্লোকে বলছেন-
জীবনটাওতো একটা ক্যাসিনোর বোর্ড
আজীবন সুখের বাজি জেতার চলে খেলা
না দেখে কেউ ধরে কেউ ধরে হারার পরে
হারতে হারতে জিততে জিততে যায় বেলা।
কিংবা শেষ ৮০ নং শ্লোক-
হায়েনারা নাচে হরিণ ছানার কোমল বুকে
হায়েনার নাচে থরথর কাঁপে শ্যামল ভূমি
হায়েনার নখর বিদীর্ণ করে বাবা-মা’র বুক
হায়েনা শুষে নেয়, সন্তানের রক্তে ভেজে জমি।
কবি রানা মাসুদ, তার প্রকাশিত “জীবনের চার লাইন” কবিতাগ্রন্থে এভাবেই ১ম শ্লোক থেকে শুরু করে ৮০ নং শ্লোক পর্যন্ত প্রতিটি শ্লোকের পরতে-পরতে গভীর পর্যবেক্ষণে এঁকেছেন চলমান জীবনের ছবি।
চার লাইনের ভেতরে জীবনকে তুলে ধরা সত্যিসত্যিই কঠিন কাজ। সে কাজটিই সুন্দরভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন কবি রানা মাসুদ। জীবনের চার লাইন, এতো সহজ কথা নয়। তাই তা দেখে কিংবা লিখে শেষ করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব না। তবে বহুমাত্রিক লেখক এবং সু-সাহিত্যিক রানা মাসুদ যে এই কঠিন কাজটি তার সাহস ও মেধা দিয়ে সুসম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
রানা মাসুদ’কে অশেষ ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি সৃষ্টিকর্ম উপহার দেয়ার জন্য।
আমি রানা মাসুদ এর কবিতাগ্রন্থ “জীবনের চার লাইন” এর সাফল্য কামনা করছি এবং সেই সাথে পাঠকদের আহবান করছি বইটি সংগ্রহ করে পড়ার জন্য।
এখানে সুপ্রিয় পাঠকদের সুবিধার জন্য জানাচ্ছি যে, এই লেখকের আরো পাঁচটি গ্রন্থ ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত দেয়া হলো। কক্সবাজারের মাছলি বাবা (কিশোর উপন্যাস), দার্জিলিংয়ের ডোবারম্যান (কিশোর উপন্যাস), দূর কোন দূর ঠিকানায় (উপন্যাস), এভাবেই আছি (গল্প গ্রন্থ), যুবকের একটা পাপ আছে (গল্প গ্রন্থ)। গ্রন্থগুলি সারাদেশের অভিজাত লাইব্রেরীগুলোতে পাওয়া যাবে।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge