গোলাম কিবরিয়া পিনু’র ৩টি কবিতা
১. চোর-বাটপার
চোর-বাটপার গাড়ি চড়ে যাচ্ছে বড় রাস্তা দিয়ে
হুডখোলা গাড়িতে প্রকাশ্যে–
তাকে দেখে হাঁ হয়ে আছো
রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে!
চোর-বাটপার আর নেই?
তোমার বাড়ির আশপাশ ও সরুগলিতে?
চোর-বাটপার বুক ফুলিয়ে কি আর হাঁটছে না!
তুমি বুকে হাত দিয়ে বলো–
চুরিকম্মটি তুমি চেয়ারে বসে কখনো করোনি?
না করলে, ভালো।
তবে, অনেকে তা করেছে, করছে!
না হলে অনেকে এত গাড়ি বাড়ির মালিক হয়ে গেল–
কেমন করে অল্পসময়ে!
বাগানবাড়িও করলো–
কেউ কেউ বিদেশবিভুঁইয়ে ঠাঁই নিয়ে
বাকী জীবনটা গোজরান করছে প্রাসাদসম বাড়িতে।
যারা চোর-বাটপার ধরবে–
তারাও ঠান্ডার দিনে গলায় মাফলার না পেঁচিয়ে
গলায় সাপ পেঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে
কীনা কাণ্ড করছে! তারাও তো ভাণ্ড ভরছে!
ফল বিক্রেতা থেকে শুরু করে মাছ বিক্রেতা
কেরানী থেকে কেরানীর বস,
শিক্ষাভবনের কর্মকর্তা থেকে
জীবনরক্ষাকারীরাও রাক্ষসের হাঁ নিয়ে আছে।
অ্যালোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগে
এ-বালাই থেকে মুক্তি হবে না!
যতক্ষণ মাতামহী-পিতামহী
আব্বাজান ও মা-জননীরা
বাটিভর্তি দুধ-কলা দিয়ে না পুষবে?
ব্যভিচার ও লাম্পট্যপ্রবণ লোকেরা ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বালাবে না!
স্বেচ্ছাচার ও জালিয়াতি নির্ভর পরিবেশে–
চোরচোট্টা, দুর্জন, ছ্যাঁচোড়, দুঃশীল ও পাজির পা ঝাড়া লোকেরা
কত রকমের পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে
কী স্বচ্ছন্দে হাঁটছে!
বিদ্রুপে ও ঘৃণায় কাজ হবে না!
তারা যেসব কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে
সেসব কাদের কারখানা?
কোথায় সেসব কারখানার চুল্লির চিমনি থেকে ধোয়া বের হচ্ছে?
বিরক্তিকর কলহ, উপদেশ ও একঘেয়ে বক্তৃতার কারণে
তাদের কিছুই হচ্ছে না!
তা আরও সর্বনাশ ডেকে এনেছে।
ওদের কিছুই হচ্ছে না–
দমন ও শাসনের হাত থেকে বাইম মাছের মতন হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে তারা!
ল্যাজে গোবরে অবস্থার কারণে–
ওদের অনেককে মাথা মুড়িয়ে দেওয়া যায়নি–হাঁটু ভেঙে দেওয়া যায়নি,
রামধোলাই তো দূরের কথা!
কতজনকে নীলডাউন করানো গেছে?
চোর-বাটপারদের
দাঁত দিয়ে কামড়ার এত শক্তি পেল কোথা থেকে?
ওদের মাঢ়িতে যে এত শক্তি!
তা তো মালী ও মালিনীরা–
বাগানবাড়ি থেকে ফল সরবরাহ করেছে বলেই;
তাদের এমন পুষ্টির উৎস অফুরন্ত!
হে স্বদেশ, তোমার হেমন্তকালীন শালি ধান–
অসময়ের বান এসে ভেসে নিয়ে যায়নি!
চোর-বাটপাররাই চোরাগোপ্তা পথে
তাদের চোরাকুঠরিতে নিয়ে গেছে বারবার!
নর্দমা ও এঁদোপুকুরের জল কবে থেকেই একাকার
সেই জল নদীতেও গিয়ে পড়েছে!
একবার দুবার চিৎকার দিলে তা বন্ধ হবে?
এইসব চোর-বাটপারের দখলে ও হাঁয়ের মধ্যে গোটাদেশ
জন্ম নিচ্ছে কত বিষবৃক্ষ!
সরু দু’একটা ডাল কেটে ফেললেও–
দ্রুত আরও ডাল গজায় যাদুবাস্তবতায়!
বিষবৃক্ষরা বিষ ছড়াচ্ছে বলেই
শিমুল গাছে জড়ো হওয়া–শালিক পাখিরা পর্যন্ত তটস্থ,
শিমুল গাছে থাকতে পারছে না!
কমল ও পেলব কচিপাতা পুড়ে খাক–
হাড়গিলা পাখিরা গলা বাড়িয়ে দিয়েছে!
২. গোলার্ধভেদী মৃত্যু
‘শোক ও সমবেদনা’ কথাটা এখন
কপি করে রেখে দিই!
এখন তা শুধু পেস্ট করি!
নিদানকালে এতটা মৃত্যু–
এত দ্রুত কপি হচ্ছে!
আমি আর কিছুই লিখতে পারছি না!
সমব্যথী হওয়ার ধৈর্য্য
হারিয়ে ফেলছি!
শোকার্ত হওয়ার ধৈর্য্য
হারিয়ে ফেলছি!
ব্যাকুল হওয়ার ধৈর্য্য
হারিয়ে ফেলছি!
বিচলিত হওয়ার ধৈর্য্য
হারিয়ে ফেলছি!
পরিবেদনার মধ্যে কাতরতা হারিয়ে যাচ্ছে
বিলাপধ্বনির মধ্যে শোকতাপ হারিয়ে যাচ্ছে
আর্তনাদের মধ্যে অশ্রুজল হারিয়ে যাচ্ছে
কী মর্মভেদী–গোলার্ধভেদী মৃত্যু!
মৃত্যুর কাছে মৃত্যু দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না!
৩. পুনর্জন্মের গজল
ও লাঙ্গলী–তোমার জমিতে
অবিরলপাত!
এইবার শস্যপূর্ণ হবে–
অকর্ষিত থাকবে না জমি!
অঙ্কুরের প্রস্ফুটন দেখে
তুমিও দ্রবন্তী হয়ে উঠবে।
অনুভূতিহীন থেকে থেকে
খরায় কেটেছে তোমারও বয়সকাল!
ঠাঠাপড়া রোদ্দুর ও তাপে
চিরহরিৎ-স্বপ্ন গাছপোঁতা হয়নি
বনবিহারেও যেতে ছিল বাধা
দারুচিনি বন ছিল আরও দুর্গম।
ও লাঙ্গলী–এইবার বৃষ্টিসিক্ত হয়ে
তুমিও হও জলগর্ভ ও সজল,
শুনি পুনর্জন্মের গজল!