গোলাম কিবরিয়া পিনুর কবিতা হাসপাতাল ও চিকিৎসা
ঐ যে দেখা যায়–অট্টালিকা–প্লাস্টিক ইমালশনে চিকচিক করছে
ওটা হাসপাতাল,
তোমার প্রবেশাধিকার নেই–ওটা ধনীদের হাসপাতাল!
ঐ যে দেখা যায়–পলেস্তারা খসে পড়া দরদালান
ওটা গরীবের হাসপাতাল,
ওখানে তোমার ছিট নেই! ঠাসাঠাসি–রোগীদের ঠাসবুনন!
স্কন্ধে তোমার ঋণ–
জামায় তোমার চিরদিনের গরীবী পরিচয়ের সীলমোহর!
তুমি এখনো মাতৃভূমিতে–
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছো! তোমাকে দেখার কেউ নেই!
গাছ থেকে পাখিরা অবাক তাকিয়ে দেখছে–
তোমার দিগন্ত শিমুল ও কৃষ্ণচূড়ার রংয়ে
উজ্জ্বল হবার কথা ছিল,
তা হয়নি এতদিনও!
মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরও!
বছরের পর বছর তোমার অসুখ ও গোঙানির শব্দ
রাষ্ট্রের দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে,
ঘাসে ঘাসে ক্লোরোফিল হারানোর ক্রন্দন এখন।
ব্যাধি নিয়ে উৎকণ্ঠা
মনঃপীড়ায় আক্রান্ত ও ভ্রান্ত! কই যাবে?
অসুখ মানেই বজ্রপাত-ভূমিকম্প!
আহার্য যোগাড় করতে সূর্যমণি ডুবে যায়–
এখন জীবন ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে
অসুখে-বিসুখে!
ভ্রষ্ট রাজনীতি আর সুবেধাবাদী রাজনীতিকের চোয়াল ও দন্তের চাপে
তুমি নাস্তানাবুদ, তারা তো নাস্তা খেতে খেতে–
সর্দি ও কাশির চিকিৎসা করার জন্য
বিদেশের হাসপাতালে গিয়ে থাকেন।
পুঁয়ে পাওয়া রোগে পাণ্ডু ও জীর্ণ হয়ে তুমি
কোনো হাসপাতালের দরোজায় পৌঁছাতে না পেয়ে
লাশ হয়ে পড়ে আছো!
এইভাবে তোমার মৃত্যু সংবিধানের কালো অক্ষর সমর্থন করে না!
এই কোন্ বিধিলিপি তোমার কপালে!
শহীদের রক্তেভেজা পথ দিয়ে–
হাতির পিঠে পাতানো কারুকার্যখচিত চাদরে বসে
কে যায়! কে যায়! রাজার পোশাকে?
রাজকীয় ব্যভিচারে অভ্যস্ত থাকার জন্য
রক্ত দেয়নি শহীদেরা!
লোভ দিয়ে তৈরি হচ্ছে–চিকিৎসার ভিত!
‘সোনার দেশ’ নিয়ে আকুলিবিকুলি করে
কার কতটুকু লাভ হলো?
পায়ের আঙুলে সোনার আংটি পরে যারা
যুগ যুগ ধরে তোমাকে পায়ের নিচে রেখেছিল,
তাদেরই বংশধর এখনো সদানন্দ!
এক টাকার ষোলো ভাগের কয়ভাগ খরচ হয়েছে
তোমারই জন্য?
পনের আনাই তো পনের জনের পকেটে!
পঁচাশিজনের পকেটে একআনা!
আকাশব্যাপী আনুকূল্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
যাহাদের জন্য,
তারা তো এ-আকাশ সৃষ্টি করেনি!
দুর্ভাগ্য ও দুর্দশা এতটা গিলে খাচ্ছে–
আমাদের বেঁচে থাকার দ্রাঘিমা থেকে
সূর্য দূরে চলে যাচ্ছে!
আমরাও মৃত্যুর গর্জনে–
অস্তমিত হয়ে পড়ছি–কী করুণ!
মরণেও পর্দা নেই!
মরণেও শান্তি নেই!
মরণেও অবাঞ্ছিত!
মৃতের কপালে কাক বসে যেন দেখছে চারদিক-