বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন

গোবিন্দ ধর এর একগুচ্ছ কবিতা

গোবিন্দ ধর এর একগুচ্ছ কবিতা

গোবিন্দ ধর এর একগুচ্ছ কবিতা

১. বিদ্যালয়
বিদ্যালয় আমাদের মেধা বিকাশের হাসপাতাল।আমার বাবা মা অথবা ইতিহাস সচেতন ঠাকুরদা দেবেন্দ্রনাথ বড় রায়টের সময় দেশ ছেড়ে ছেঁড়া মানচিত্র বগলে করে চাতলার বর্ডার ক্রস করে দুচোখ বরাবর হাঁটতে হাঁটতে চলে আসেন ইন্ডিয়ায়।ঠাকুরদার স্বপ্নে গড়া বিদ্যালয় মিঁয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ তিরিশ বছর শিক্ষকতা করে দেশভাগ আটকাতে পারেননি।
ঠাকুমার মুক্তিযুদ্ধের স্পিহা তাও ফেলে দিয়ে এলেন ভারতে।লিগেসিডাটা নেই বলে আমি তাদের তৃতীয় পান্ডব মহাভারত থেকে ছিঁটকে পড়া স্কুল ছুট বালকের মতো বর্ণমালা জানি না।
বিদ্যালয় আমায় অক্ষর কেড়ে নিতে চায়। আমি বাহান্ন হই।একষট্টি হই।একাত্তর হই।সাতচল্লিশ হই।আমি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে নিহত স্পাইনবৃক্ষ।দেশ পাহারাদার সৈনিক।আমার শরীর শুধু বুলেট খেয়ে শহীদ হতেই জন্ম।বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিলাম দেশসেবার।দেশ কোথায় শুধুই নষ্ট ভূগোলের সীমানায় রক্ত ছাড়া?
বংশবৃক্ষের শাখাপ্রশাখা জুড়ে আমিও নদীর দিকে দূরন্ত গতিতে ছুটছি।

২. অন্ধকার কোভিড সময়
=এক এক করে লাউডগা সময় থমকে পড়ে মাচায়।
=অন্ধকার গ্রহণলাগা সময় থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা বিশেষ কিছু কাজে আসছে না আর।
=পথ খুঁজতে খুঁজতে পথের ভাষা আর মুখের ভাষায় তালগোল পাকিয়ে ওস্তাদজী গৃহবন্দী।
=হঠাৎ বাঁক দিয়েই গভীর লুঙ্গায় যোনীর মতো অন্ধকার পথ।
=প্রচণ্ড আমপান বেগে হাওয়া মোরগের ডাকাডাকি স্তব্ধ বিষণ্ণ আর্দ্র ত্বকে ছত্রাক বাড়ায়।
=হাতছানি ছানিপড়া চোখের অক্ষিকাচ অতিক্রম করে দিকবিদিকশুন্য খড়কুটোয় ভাসছে।
=জাতিসংঘ থেকে ভাষণে কেউ কোভিড নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।তখনই আক্রান্ত মানুষ সময় এবং গোষ্ঠীও।
=বিশ্বস্বাস্থ্যের সকল পরিচিত নির্ণয়গুলো কাজে আসছে না।দিশাহারা হুকর্তার নির্দেশে সকাল হয় নিঝুমরাতের মতো কোভিডআক্রান্ত।
=এই সময় মাননীয় মাননীয়াগণ সকল সংকেত থেকে প্রকাশিত হয় কে কার দলদাস।কে কার পিঠ চাপড়ে দেয়।কে কার পদরেণু চুমে।কার পা কতটুকু সন্তর্পনে বিড়ালের থাবার ভেতর আটকে রাখে গার্লফ্রেন্ডের চপ্পল।

৩. দেখা
এত সুন্দর চারদিক আলোকিত করে থাকে।
আমিই শুধু অন্ধকার অন্ধকার সব অন্ধকার দেখি।
এত সুন্দর তার বৃত্তের ভেতরে ও বাইরে একটিই চাওয়া
আমায় আরো সুন্দর দেখার চোখ দাও।
আরো সুন্দর দেখবো।
আরো সুন্দর চাই
পৃথিবীটা সুন্দরে ভরে যাক।
আমার চোখ থেকে অন্ধকার উপড়ে ফেলো
আলোয় আলোয় আলোকিত হোক পুবের মাঠ।

৪. কবিতাক্ষর
তুমি জানতে চাইছিলে আমার কবিতা লেখার বিষয় প্রেম
নাকি যুদ্ধ?
ভালোবাসা
নাকি প্রতিবাদ?
নাকি প্রতিরোধ?

আমি নিজের কষ্টগুলো
নিজের খামে রাখি
শানিত তলোয়ার করে।
আর কোন অর্জন নাই
আর কোন
চাওয়া নাই আমার।

তবুও মানুষের ভালোবাসা হাত আমার উপর আশীর্বাদের মুদ্রায় আসে।
চলে যায়।
আমি জানিও না
কেন আসে
কেনই বা চলে যায়?

আর বাড়তি পাওনা হলো নিজের দূঃখগুলো
পাঁচ কান করি
মনে করি
এই বুঝি
বিশল্যকরণী
এই বুঝি মৃতসঞ্জীবিনী কেউ
আমার কবর থেকে
আমায় তুলে এনে
করবে শল্যউন্মোচন।

শেষ অব্দি যা পাই
আমার করবী খাওয়া জীবন
তিলেতিলে মৃত্যুরূপী মহীরুহ
ততদিনে শেকড় ডাবায়
আমার মনমাটির বহু নিচ অব্দি।

ব্যর্থ ভালোবাসা আমায় আর কি দেবে?
কিছু রুগ্নকবিতা
অসুস্থ শরীর,মন
এসবই আমার কবিতা।

আর কবিতাগিরি করে
দুএকটা সম্মান টম্মান ঝুলায়
আসলেও এসব
আমার মনের আনন্দ নয়।
এগুলো কলাপাতা ছাড়া আমায় আর কিছুই দেয় না।
আমি আমার আত্মরক্ষণ নিয়ে প্রতি মুহূর্তকাল নিশ্বাস নিই
কবিতাক্ষরের।
কবিতাগুলোর পাঠক চাই না আমি।
আমি চাই না পাঠ্য হোক।
আমি চাই আমার ভারগুলো বহন করে
আমার কবিতা আমার থাক।

৫. শ্রীহট্টীয়পুরাণ
শেকড় উপড়ানো গাছ আমি।
নাগরীলিপি ভুলে গেছি কবেই
শব্দকোষ যৎসামন্য মনে থাকলেও
পুরায় বুঝি না হেরে বুঝি।

শ্রীমঙ্গল আগুন লাগলে এখনো দেখি।
বাবার পদধূলিমাখা চালতাপুর বর্ডার হয়ে
যেদিন আমিও ভারতে এলাম
শরীরের লোমকূপ কাঁটা দিয়ে উঠলো।

আমিও শ্রীহট্টীয় আমার রক্তেও আছে
সিলেটের লবণ ও মাটি
জেতাগাছ হয়তো মনের গভীরে
বাকীটা শেকড় উপড়ানো মৃতকাঠ।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge