সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

গল্পটা বন্ধুত্বের-পিয়াল হাসান

গল্পটা বন্ধুত্বের-পিয়াল হাসান


গ্রামের নাম মধুমতি। আঁকাবাকা নদীর পাশে ছোট একটা গ্রাম। এ গ্রামেই অনিকের বাস। এ গ্রামেই বেড়ে ওঠা। সে এখন ক্লাস ৬-এ। বর্তমানে বাবার চাকড়ির ফলে সে এসেছে এক মফস্বল শহরে। অনিকের দাদারা তিন ভাই এক বোন। যেদিন মফস্বলে অনিক এলো তারপরের দিন সেই এলাকার স্কুলে ও ভর্তি হয়। এই স্কুলটি মনোরম পরিবেশে সাজানো।
স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিন সে ক্লাসে ঢুকে দেখে বাংলা স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। অনিককে দেখে তিনি বললেন, ‘কে তুই? নতুন নাকি?’
‘জি¦ স্যার। আজই এসেছি।’
‘নাম কি রে তোর?’
‘অনিক।’
‘অনিক। বাহ্ বেশ সুন্দর নাম।’
অনিক যখন কথাগুলো বলছিল, তখন ক্লাসে কোলাহল শুরু হলো। স্যার চেচিয়ে উঠলেন। স্যার চেচিয়ে উঠায় অল্পক্ষনেই শোরগোল বন্ধ হয়ে গেল। যেদিন অনিক ভর্তি হল সেদিনই রবিন নামে এক বন্ধুর সাথে ওর সক্ষতা গড়ে ওঠে। সেই প্রথম ওকে ক্লাসে নিজের পাশে জায়গা করে দেয়।
মফস্বলের ক্যাম্পাস এলাকা। এখানেই অনিকের মা-বাবার সাথে এক ফ্ল্যাটে বসবাস। এখানকার সবাই খুবই ভাল। ক্যাম্পাসে আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সবার সাথে ওর পরিচয় হয়ে গেল। তপন, আবির, জাফর এরা ছিল অনিকের ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ। প্রতিদিন ক্রিকেট, না হয় ফুটবল একটা কিছু লেগেই থাকতো ক্যাম্পাস জুড়ে।
রেল স্টেশনের পাশেই মফস্বল শহরটি। সেই স্টেশনের বস্তিতে থাকতো সাগর নামে এক ছেলে। বাবা চানাচুর বিক্রেতা। অনিকের স্কুলে চানাচুর বিক্রি করতো সাগরের বাবা। অভাবের সংসার। অনিকের স্কুলেই মাঝে মাঝে দেখা যেত এই সাগরকে। কয়েকদিনের মধ্যেই সেই চানাচুর বিক্রেতার সাথে ভাল সম্পর্ক হলো অনিকের। যাইহোক, দিন যায় রাত যায়, অনিকের দিন ভালই কাটে।
দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে গেল। রবিন এবং অন্য বন্ধুদের সাথে সময় কেটে যাচ্ছে অনিকের। এরই মধ্যে স্কুলে আসে টি.এন.ও-এর একমাত্র সন্তান রুদ্র। পড়ে অনিকের ক্লাসেই। প্রথম দিন যখন ও ক্লাসে ঢুকলো তখন
বাংলা স্যার খাইরুল ক্লাস নিচ্ছিলেন। ক্লাসে সব ছাত্ররা বসে ছিল। রুদ্র প্রবেশ করে ক্লাসে। সব শুনে বাংলা স্যার রুদ্রকে বলেন, ‘অন্য স্কুল হতে এসেছ। এখানে ভালভাবে থাকতে হবে।’ রুদ্র শুধু মাথা নারে। রুদ্রর বাবা থাকলেও রুদ্রের মা ছিল না। অনেক আগেই ওর মা হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় রুদ্র হয়ে পড়ে একা। খুব ভালোবাসা পেয়েছিল রুদ্র ওর মায়ের কাছ থেকে। ওর ইচ্ছা ছিল বড় ক্রিকেটার হওয়ার। কিন্তু ওর বাবা চাইতো তার ছেলে পড়াশুনা করে বড় অফিসার হবে। সে জন্য বেশি ছেলেপেলেদের সঙ্গে মিশতে দিত না রুদ্রকে। কিন্তু রুদ্র চাইত সবার সাথে মিশতে।
এদিকে রবিন অনিক ক্যাম্পাসে ভালই আছে। ওরা ক্রিকেট খেলে, ঘুরে বেড়ায় আর বরশি দিয়ে ক্যাম্পাসের পুকুরে মাছ ধরে। একদিন সাগরও আছে সেখানে। শেষ পর্যন্ত ওরা তিনজন বন্ধু হয়ে যায়। ভালোই কাটে ওদের সময়।


রাখু। দৌলতিয়ার প্রান। সে অনিকের একমাত্র রসিক মামা। দৌলতিয়া। অনিকের নানাবাড়ি। এখন শীত পড়েতে শুরু করেছে। এসেছে খেজুরিয়া। তাদের কাজ খেজুরের রস হতে গুড় তৈরী।
একদিন এ রাখু মামা ফোন করলেন অনিককে। অনিক তখন তার কক্ষে পড়াশুনায় ব্যস্ত। তিনি জানালেন খুব শীঘ্রই তিনি অনিকের বাড়িতে আসছেন। এ রাখু মামা পড়ে নিউ টেনে। এক সকালে সেই রাখু মামা বরশি ফেলেছে পুকুরে মাছ ধরার জন্য। আজ সে মাছ ধরেই ছাড়বে। ওর শখগুলোর মধ্যে একটি হলো বরশি দিয়ে মাছ ধরা। বরশি পানিতে ফেলেছে রাখু। হঠাৎ, বরশি তে টান পড়ল। বরশি তুলতেই সে দেখলো বড় একটি মাছ। ওয়াও বলে চিৎকার করল রাখু। আজ মাছ পেয়ে তার মন খুবই ভালো। হঠাৎ অনিকের বড় মামা আনোয়ারের কথা শুনে সে দিল ভো-দৌড়। কারন, আনোয়ারকে খুবই ভয় পায় এই রাখু।
পারুল। অনিকের খালাতো বোন। পড়ে ইন্টারে। যাইহোক, অনিক গ্রামে এলে এ বোনের বাড়িতেই আগে ওঠে সে। পারুল পড়াশুনার পাশাপাশি অনিককে সময় দেয়। গ্রামে এলেই পারুল, অনিক সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। সাথে থাকে রাখু।
শহরের কথায় আসা যাক। অনিক তার স্কুলে ভালই আছে। শীতের মাঝামাঝি। তাই অনিকের মা সীদ্ধান্ত নেয় গ্রামে যাওয়ার। কিন্তু, অনিকের বাবার চাকরির ফলে আর যাওয়া হয় না। এদিকে রাখু ফোন করেছে, সে অনিকের বাসায় আসছে। ঘনিয়ে এসেছে সে দিন। এক সকালে অনিকের মা জানতে পারে রাখু আসছে। সাথে খেজুরের গুড় আর রস নিয়ে। তারপরে, আবার এখন রসে নিপা ভাইরাস দেখা দিয়েছে। কি যে হবে বোঝা মুসকিল। অনিকের বাবা তো নিষেধ করেছে রস না আনতে। কিন্তু, কে শোনে কার কথা। শেষ পর্যন্ত রাখু হাজির হলো গুড় আর রসের ক্ষির নিয়ে।
সকালবেলা অনিকের বাসার কলিংবেলের শব্দ হলো। দরজা খুলতেই রাখুর উকি। হাতে গুড় আর রসের ক্ষীরের হাড়ি। দরজা খুলেছে বাসার বুয়া। রাখু জিজ্ঞেস করল, ‘বাসায় আপা আছে?’
‘মাইনে।’
‘বোঝেন নাই। বাসার মালিক আছে নাকি বাসায়।’
‘থাকুক বা না থাকুক, এখন বাসায় ঢোকা বাড়ন। আপা কইছে এ কথা।’
‘তোমার ম্যাডামরে বল তার ছোট ভাই রাখু আসছে।’
তখনি অনিকের মা বসার ঘরে আসলেন। রাখু তার আপাকে দেখে দ্রæত ঘরে ঢুকলো। তারপর চট করে কদমবুচি করে বলল,
‘আপা, আইসা পড়লাম। আমার ভাগনা কই?’
‘আছে স্কুলে।’
‘তাহলে স্কুলে যাই। ওরে নিয়ে আসি।’
‘শোন। আগে ফ্রেশ হ। নাস্তা কর। তারপর যাস।’
‘না, আগে নিয়া আছি। তারপর ফ্রেশ হব।’
হঠাৎ, অনিকের মার নজর গেল রাখুর হাতের দিকে। তিনি তার ভাইয়ের হাতের জিনিসগুলো দেখে বললেন, ‘এসব কি এনেছিস?’
‘গুড় ও রসের ক্ষীর।’
‘কি? তুই জানিস না রসে নীপা আছে। খেলেই অসুখ হবে।’
‘ছাকনি দিয়ে ছেকে ক্ষীর করেছি। ডন্ট ওরি।’
সেদিন রাখু অনিকের স্কুলে যায় অনিককে আনতে। যখন রাখু স্কুলে গেল, সে সময় অনিক চানাচুর খাচ্ছিল। পিছন হতে টোকা দিতেই অনিক ঘুরে তাকাল।
‘কি খবর? কেমন আছিস।’
‘মামা তুমি।’
‘হ্যাঁ আমি। এলাম আরকি।’
‘কখন আসলে। বাড়ির সবাই কেমন আছে?’
‘ভালো, ভালো।’ রাখু এরপর বলল, ‘চল বাসায় চল।’
‘না, না। ক্লাস আছে তো।’ অনিকের জবাব।
‘থাকুক। আজ ছুটি। ’
তারপর অনেক আকুতি মিনতি করে স্যারের কাছে ছুটি চেয়ে অনিককে বাসায় নিয়ে আছে রাখু।
এদিকে অনিকের বাবা রেগে আগুন। “রস এনেছে। শালা। তোকে বললাম রসে নিপা আছে। তবুও শুনলি না। গুড় আনলি ভাল কথা। আবার রস। গাধা একটা। ইস্টুপিটের বাচ্চা।” অনিকের মা বলছে, “ক্ষীর এনেছে। রস তো আনেনি। রসের ক্ষীর বুঝলা।” “ক্ষীর এনেছে ভাল। তা রসের আনতে হবে। ক্ষীর না এনে তো টক দৈ বা মিষ্টি আনতে পারতো।” “ও-য়! তোমার টক দৈ ভাল লাগে বলে …” এ সময়েই রাখু আর অনিক বাসায় প্রবেশ করে। ওদের দেখেই অনিকের বাবা একটু শান্ত হলেন। বাচ্চাদের সামনে তো আর ঝগড়া করা যায় না।
রাখু আসতেই রান্না বসিয়ে দিলেন অনিকের মা মিসেস আয়েশা বেগম। সাথে সাহায্য করছে কাজের বুয়া। আজ ইলিশ মাছ এনছেন অনিকের বাবা ইদ্রিস আলী। সে ইলিশই রান্না হচ্ছে যতœ করে। সরষে ইলিশ। ওদিকে মামা ভাগনার গল্প জমে গেছে। রাখু গ্রামের রস পাড়ার কথা, শিপ দিয়ে মাছ ধরার কথা, হা-ডু-ডু, ফুটবল, ঘুড়ি ওরানো ইত্যাদি কথা ভাগনা অনিককে বলছে। অনিক কেবল হাসছে তো হাসছে। আগেই বলা হয়েছে রাখু নিউ টেন এর ছাত্র। অনিক কেবল ৭ম শ্রেণীতে।
যাইহোক, চানাচুর বিক্রেতার ছেলে সাগরের জীবন ভালই চলছে। ইতিমধ্যে সে অনিকের স্কুলে লেখাপড়া করছে। কিন্তু বাবার কম টাকা থাকায় তার পড়াশুনার কমতি হচ্ছে। তাই ও কাজ নেয় এক গাড়ির গ্যারেজে। কি হবে তার। বোঝা মুসকিল। এদিকে, রুদ্রকে বাসার বাহিবে বেশি যেতে দিচ্ছে না ওর বাবা। শুধু স্কুল আর বাড়ি। খেলাধুলা বন্ধ। শুধু পড়াশুনা। ওর জীবনও তাই সঙ্কতপূর্ণ। স্কুল বাসা। এ হলো তার জীবন। পড়াশুনায় তার মন বসে না। শুধু একুটি জানালা খোলা রেখে সে আকাশ দেখে। স্বপ্ন দেখে বড় কিছু হওয়ার। কি হবে তার জীবনে। কি অপেক্ষা করছে তার জন্য। কি? সেটা কি?


আব্বাস। অনিকের আরেক মামা। গম্ভীর টাইপের। বিয়ে শাদি এখনও করেননি। এক সকালে তিনি বাজার থেকে ফিরছিলেন বড় মাছ নিয়ে। যখন আব্বাস মিয়া বাজার হতে আসছিল, পথে দেখা হলো তার বক্কর মুন্সির সাথে। মুন্সি আব্বাসকে জিজ্ঞেস করল, “কি মিয়া। ব্যাপার কি? এতো সকাল সকাল মাছ নিয়া কই যাও।”
‘বাড়ি। আর কোথায়।’
‘তা কেউ আসবে নাকি?’
‘ভাগিনার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।’
‘ঠিক আছে। মাছ রান্না করলে আমারে বলিও। যাব এখন।’
‘দেখা যাক।’
এ বলে আব্বাস পা বাড়ায় বাড়ির দিকে।
এ আব্বাসের একটি শখ ছিল বিচার বসানো। কে কি অপরাধ করেছে তা তাঁর দেখতে হবে। বিচারও করতে হবে। বাড়িতে মেহমান আসলেই বিচার বসে। আবার সবার মুখে গান শোনাও আব্বাসের শখ। অর্ধেক নয়, পুরোটা গান গাইতে হবে। এখন তিনি বিড়াল পালেন, খামার রয়েছে তার।
অনেক দিন পর অনিকেরা নানাবাড়ি আসছে। এজন্য আব্বাসের মাছ কেনা। মাছটা কেটে ফ্রিজে রাখবেন। ভাগনা এলে তাকে খাওয়াবেন। যাইহোক, শীতের শেষের দিকে প্রায়। খেজুর রস-এর মিস্ত্রিরা এখনও আছে। পিকনিক একটা হতেও পারে। রাখুর সাথে অনিক আসতেও পারে। অনিকের বড় মামা আনোয়ার-ও তৈরী ভাগনাকে বরন করার জন্য।
ওদিকে রাখু শহরে ভালই আছে। বোনের বাড়িতে খায়-দায় থাকে। রুদ্র এখন বেশি বের হয় না বাড়ি হতে। ওর বাবা ওকে বাসার বাহিরে যেতে দেন না। একদিন বিকালে অনিক বের হয়েছে মাঠে খেলতে। হঠাৎ সে দেখতে পেল রুদ্রকে জানালার পাশে বসে থাকতে।
সে রুদ্রকে দেখে বলল, ‘কি ব্যাপার রুদ্র। বের হবি না?’
‘না-রে। খুবই কম বের হতে দেয় আমার বাবা। কিছুই ভাল লাগে না। আমার মা নেই। মা থাকলে আমার কষ্টটা একটু কম হতো। বিকেলেও খেলতে পারতাম। তোর তো মা আছে। মা না থাকার কষ্ট তুই কিভাবে বুঝবি।’
অনিক বুঝতে পারে না কি বলছে রুদ্র। কেটে যায় কয়েকটা দিন। অনিক তৈরি হয় নানাবাড়ি বেড়ানোর জন্য। সাথে রাখু। অনিক যাওয়ার সময় সাগর ও রবিণকে বলে যায় রুদ্রের এ ঘটনার কথা। ওরা দু’জন যেন রুদ্রকে দেখে রাখে।
রাখু ও অনিক গ্রামে যাওয়ার দিন ট্রেনে ওঠে পড়ে দ্রæত। ট্রেন স্টেশন কাছে থাকায় ওরা ট্রেনেই রওয়ানা হয় নিজ গন্তব্যেও দিকে। এদিকে সাগর ও রবিণ চিন্তায় পড়ে কিভাবে রুদ্রকে বাড়ির বাহিরে আনা যায়। ওর সাথে বন্ধুত্বেও সম্পর্ক গড়তে ওরা দু’জন ব্যস্ত হয়ে ওঠে। অনিকের সাথে ওদের বন্ধুত্ব অনেক দিনের। এখন রুদ্রই বাকি। শেষ পর্যন্ত বন্ধুক্ত স্থাপিত হয় ওদের তিনজনের। রুদ্র আর সাগর-রবিণ। একটা কথা বলা দরকার। রবিণ কিন্তু ক্যারাতের বø্যাক বেঞ্চার। ও শত্রুকে ধরাশায়ি করতে ওস্তাদ।
যাইহোক, অনিকের নানা বাড়ি ভ্রমন খুব ভাল হচ্ছে। পারুলের সাথে দেখা হয়েছে ওর। সারাদিন ওরা ভাই-বোন পাড়া ঘুরে বেড়ায়। আব্বাস একদিন অনিককে উদ্দেশ্য করে পিকনিকের আয়োজন করে। কেটে যায় সময়। চলে আসে অনিকের শহরে ফেরার দিন। এদিকে শহরের টাউন হলে এক জরুরী সভা ডেকেছে রুদ্রের বাবার উপর মহলের লোকজন। এ সভায় কি যেন নিয়ে দ্বন্দে জড়ায় রুদ্রের বাবা। অপমানিত হন তিনি। হুমকি আছে তার উপর। কি হবে বোঝা মুশকিল।
অন্যদিকে রবিণ আর সাগর রুদ্রকে নিয়ে টেনশনে আছে। একে ওর বাবা ওকে বাসা হতে বের হতে দিচ্ছে না। শুধু বাসা আর স্কুল। বুঝে উঠতে পারে না ওরা কি করবে? তারপরেও কেটে যায় দিন কেটে যায় সময়। অনিক ফিরে আছে শহরে। শুরু হয় এক আরেক জীবন।


রুদ্রকে কিছুদিন হলো দেখা যাচ্ছে না। অনিক নানাবাড়ি হতে এসে অন্য বন্ধুদের পেয়েছে। কিন্তু তার প্রিয় বন্ধুকে পায়নি। অন্যদিকে রুদ্রের বাবাকে তার উপর মহল হুমকি দেওয়ায় তিনি অস্থরি হয়ে আছেন বিরোধী পক্ষ রুদ্রকে কিডনাপ করল নাকি এ ভয়ে।
সাগর গ্যারেজ কাজ করছে নিয়মিত। এর মধ্যে সে পড়াশুনা করে। ইদানিং হয় একটি কালো গাড়ি সার্ভিসিংয়ের জন্য গ্যারেজে আসা যাওয়া করছে। এ গাড়ির মালিক কে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। গ্যারেজ মালিক বলছে, “সাগর গাড়িটারে একটু রিপায়ার করবি। স্কুরু টাইট দিবি। বড় লোকের গাড়ি। খানদানি বংশের।” “ঠিক আছে ওস্তাদ।”
সেদিন সন্ধ্যায় কালো গাড়িটি আসার পর সাগর ধোয়া-মুছার কাজ শুরু করে দেয়। স্কুরু টাইট দেয়। এ সময়ই সে একটি জিনিস পায়। কোন একজনের সার্টের ছেড়া অংশ। সে আশ্চার্য হয়। এ অংশটা তার চেনা। সে এ অংশটা তার পরিচিত একজনের গায়ে দেখেছিল। চিন্তায় পড়ে সে। হঠাৎ সে বলে উঠে, “রুদ্র তো কিছুদিন হয় মিসিং। এটি ওর শার্টের অংশ নয় তো।” কারণ সে একদিন রুদ্রকে এ শার্টটি পরে থাকতে দেখেছিল। চিন্তা তার বেড়ে যায়। কি করবে সে? বোঝা বড় দায়।
এদিকে অনিক যখন ক্যাম্পাসে এলো তখন একদিন রবিণ ওকে রুদ্রর মিছিং ব্যাপারটা জানায়। চিন্তায় পড়ে অনিক। অন্যদিকে সেদিন সন্ধ্যায় সাগর রুদ্রের ব্যাপারে অনিক আর রবিণের সাথে দেখা করে। জানায় শার্টের অংশের কথা। রবিণ বø্যাক বেঞ্চার হলেও গোয়েন্দা গিরিতে ছিল খুব পাকা। সেদিন শার্টটা দেখে রবিণ বুঝতে পারে এটা রুদ্রেরই শার্টের কলার। কারন, সেও রুদ্রকে এ শার্টে দেখেছিল। এরপর একটা সীদ্ধান্ত নিয়ে বসে ওরা। যেভাবেই হোক তদন্ত করে বের করবে আসল রহস্যটা কি।
এক বিকেলে অনিক, রবিন, সাগর একত্রিত হলো তদন্তে নামার জন্য। রবিন সাগরকে বলল, ‘আজ কালো গাড়ি কি আসবে গ্যারেজে?’
‘হ্যাঁ।’ সাগর জানায়।
রবিন বলে, ‘গাড়ির ডাইভারকে যে ভাবেই হোক পাকরাও করতে হবে। তুই চেতনা নাশক ঔষধ সাথে নিয়ে ওকে অজ্ঞান করবি। আমরা তারপর যাব ওখানে।’
‘ওকে।’ সাগর উত্তর দেয়।
সেদিন সন্ধ্যায় সেই কালো গাড়ি আবার ঐ গ্যারেজে আসে। সাগর রেডি ছিল। সে গ্যারেজের মালিককে কোন কিছুর বাহানা দিয়ে, ড্রাইভারের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলল। চা খাওয়ার নামে সেই গাড়ির ড্রাইভারকে নিয়ে সে বেড়িয়ে পড়ল। হঠাৎ গাড়িটি বের হতেই, ড্রাইভারের পিছন থেকে চেতনা নাশক ঔষধ রুমালে চেপে ডাইভারের মুখে ধরলো সাগর। তারপর, কোনমতে গাড়ি থামিয়ে নিচে নেমে এল সে। ফোন দিল রবিন, অনিককে। ওরা তিনজন একত্রিত হলে ড্রাইভারকে নিয়ে প্রবেশ করে নির্জন কক্ষে।


অন্ধকার কক্ষ। এ কক্ষে চোখ খুললো এক কিশোর। হাত-পা বাধা। কিশোরকে বন্দি করে রাখা হয়েছে এই কক্ষে। হালকা আলো আসছে। হঠাৎ, সেই কিশোরের পানির পিপাসা পায়। কিন্তু, আশে পাশে কেউ না থাকায় সে পানির দেখা পায়ঢ না। কি করবে সে? বোঝা মুসকিল।
ড্রাইভারকে বেঁধে রেখেছে ওরা তিনজন । ড্রাইভার লোকটি বুঝছে না কি করবে। হঠাৎ ওরা তিন কিশোর প্রবেশ করল কক্ষে। তিনজনার মধ্যে দু’জনের হাতে লাঠি।ড্রাইভারের চোখ বাধা। চোখ খুলে দিল এক কিশোর। নাম সাগর।
অন্য একজন রবিণ ড্রইভারকে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের বন্ধু রুদ্র মিছিং। আমরা ধারণা করছি আপনার গাড়িতে ওকে তুলে নেওয়া হয়েছে। বলুন ঠিকানা। না হলে।”
অনিক বলল, ‘বলুন। কোথায় সে?’
ড্রাইভার বুঝে উঠতে পারছে না কি বলবে। হঠাৎ সাগর ড্রাইভারকে দিল একটা বাড়ি। লাঠিটা শক্ত থাকায় ড্রাইভারের কপাল ফেটে গেল। চুলের মুঠি ধরল রবিণ। “শুনুন, বলে ফেলুৃন। না হলে কিন্তু আপনার উপর ডিম বোম্বিং হবে।”
ড্রাইভার তখন বলে, ‘ওরা আমার গাড়ি ব্যবহার করে। টাকাও দেয়। কিন্তু, ওদের গোপন আস্তানার কথা ওরা নিষেধ করেছে কাউতে বলতে।’
‘রুদ্র কোথায় বল্।’ ক্ষেপে ওঠে অনিক।
সে আপনি হতে সরাসরি তুমি নয় তুই-তে নেমেছে। হঠাৎ, ডিম বের করল সাগর। রবিণ ডিমটি নিয়ে ড্রাইভারের মাথায় টারগেট করল। ড্রাইভার একটু ভয় পেল যেন।
এরপর সে ভয়ে বলেই ফেলল, “কিছুদিন আগে রুদ্র নামে এক ছেলেকে রাস্তা হতে তুলে আমার গাড়িতে উঠায়।”
‘তারপর কি হলো বল।’ জানতে চায় অনিক।
ড্রাইভার কিছু বলে না। এরপর ড্রাইভারের মাথায় পঁচা ডিম ভাঙ্গে ওরা। এতেও কাজ না হওয়ায় লাঠির বাড়ি মারে সাগর। তখনি ড্রাইভার ভয়ে বলে ফেলে, ‘জঙ্গল বাড়ি।’

রুদ্রের বাবা আমজাদকে কে যেন ফোন করেছে। তার বাড়িতে অনিকের বাবা উপস্থিত। আমজাদ টেলিফোন তুললেন। ফোনের ওপাশ হতে বলা হচ্ছে, “মুক্তিপন চাই। আপনার ছেলে আমাদের জিম্মায়।” তখনি অনিকের বাবা অনিককে ফোন দেয়। ফোন দিতেই রবিণ জিজ্ঞেস কওে,
‘লোকেশন কি ওরা জানিয়েছে আঙ্কেল।’
‘হ্যাঁ। শহরের পাশের এক রেল স্টেশনে। কিন্তু তোমরা কি করবে?’
‘আপনি সেখানে যাবেন পুলিশ নিয়ে। আমরা জঙ্গল বাড়ি।’
‘মানে?’
‘মানে পড়ে বলল। আগে রুদ্রকে উদ্ধার করি।’

‘ঠিক আছে। লেটস মুভ।’

 

জঙ্গলে ঘেরা বাগান বাড়ি। নির্জন নিস্তব্ধ। এ বাড়িরই এক কক্ষে বন্দি রুদ্র। একদল দুস্কিতিকাারি ওকে আটকে রেখেছে। সন্ধ্যার ঠিক পরেই ওরা প্রবেশ কওে জঙ্গলে। অনিক, রবিণ, সাগর।
সাগর বলে, ‘বন্ধুরা। খূব সাবধানে আমাদের এগুতে হবে। আমরা যে কোন সময় বিপদে পড়তে পারি।’
সাগর ওর জীবনে একটি পদ্ধতি জানতো। তা হলো আগুন নিসয়ে খেলা। এটা সে অনেক সাধণা করে শিখেছিল। যাইহোক, ওরা প্রবেশ করল বাগান বাড়িতে। নিচ হতে শুনতে পেল রুদ্রের আওয়াজ। ওরা রুদ্রকে টরচার করছে।
সাগর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। হাতে নিল একটি আগুনের মশাল। রবিণ বাধা দিল। বলল, “উত্তেজনায় কাজ করা যাবে না। সাবধান বন্ধু সাবধান।”
‘কিন্তু ওরা তো রুদ্রকে … ’ সাগর বলল।
অনিক বলল, ‘আস্তে আস্তে আমাদেরকে এগুতে হবে। সাবধান।’
এরপর সবাই একটু ধিরে উপরে উঠতে থাকে। হঠাৎ ওদের সামনে দেখা যায় এক সুথাম দেহের মানুষকে। টচ লাইটে ওকে দেখতে পায় ওরা। তখনি রবিণ কিক মাওে সুটাম দেহের মানুষটাকে। সাগর আঘাত করে লোকটির মাথায়। এতে ধরাসায়ি হয়ে পড়ে লোকটি। ওকে বেধে ফেলে আবার পরবর্তী মিশনে অগ্রসর হয় ওরা।
সে সময়ই সাগর দেখতে পায় রুদ্রকে দড়ি দিয়ে বাধা অবস্থায়। তার পাশে তিনজন লোক দাড়িয়ে। এরাই বেধে রেখেছে ওকে। ওদের দেখে সাগর এগুতে ধরে। অনিক বাধা দেয়।
‘দাড়া সাগর। আস্তে।’
হঠাৎ, সাগর আবারও আগুন জালায়। এবার সরাসরি মুখে পেট্রোল নিয়ে আগুনে ফুক মারে সাগর। আগুন গিয়ে লাগে এক দুস্কৃতি কারীর গায়ে। জ¦লতে থাকে সে। আর এর মধ্যে অনিক ও রবিণ অপর দু’জনকে ধরাসায়ি করে। আর সাগর মুক্ত কওে রুদ্রকে। ওরা চারজন ওপর তলা হতে

নামার সময় আরও দু’জনের মুখোমুখি হয়। রবিণ এবার ওর ক্যারাতে স্টাইলে কুপোকাত করে ওদেরকে।
সাগর জঙ্গল বাড়িতে আসার সময় দু’একটি গোলাবারুদ সাথে করে নিয়ে এসেছিল। জঙ্গল হতে বেরুতেই সাগর গোরাবরুদ দিয়ে উড়িয়ে দেয় বাগান বাড়ি। এরপর, ওরা এগুতে থাকে সামনের দিকে যেখানে রাখা আছে সেই কালো গাড়ি।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge