কমল কুজুর এর ৩টি কবিতা
১. চাওয়া -পাওয়া
তোমাকে পাবার পর ভেবেছিলাম
সুখে থাকব এবার
চেতনার রঙে রাঙিয়ে সাজাবো ভূবন
নতুন করে!
বিষণ্ণ চিন্তার পোকারা কুরে কুরে
খাবেনা বারবার।
তারপরও যখন দেখি ফুটপাতে শুয়ে থাকা
সারি সারি মাংশপিন্ড;
শীতে কুঁকড়ে যাওয়া এবড়ো থেবড়ো শরীর,
বাসে ট্রেনে বাজারে চায়ের দোকানে
দু’হাত পেতে
অশ্রুসিক্ত নয়নের আকুতি
“একটু ভিক্ষা দাও বাবা।”
আর পাশেই রাস্তা দিয়ে সাই সাই করে
ছুটে চলা দামী গাড়ি,
আকাশ ছুঁতে চাওয়া বহুতল বাড়ি;
ব্যাংক বীমায় জমা হওয়া কাড়ি কাড়ি টাকা
গরীবের পাহাড়সম ঋণের বোঝা !
তখন সত্যি মনে হয়-
তোমার আগমনটা হয়তো একটু দ্রুতই
হয়ে গেছে বাঙালির জন্য !
তাই চাওয়া ঐ একটাই
এই শতকে দানবের বীভৎস চিৎকার মুছে ফেলে
পূর্ণ শুভ্রতায় সব বৈষম্য
করো দূর।
২. বৈপরীত্য
কী এক অদ্ভুত ভাল লাগায়
জড়িয়ে পড়েছি বলতো
আষ্টেপৃষ্ঠে;
যতক্ষণ পাশেপাশে থাক
মনে হয়
বসন্ত বাতাস বয়ে চলে,
কোকিল গান গায় অবিরাম
মধু গন্ধে ভরে ওঠে ভূবন।
অথচ পরমুহূর্তেই মনে বেজে ওঠে
বিরহের সুর;
যদি চলে যাও!
যদি হারাই তোমায়!
যদি ব্যথা দাও, এই হৃদয় টাকে
ভেঙে টুকরোটুকরো করো
আবার!
দূরে থাক যখন
কষ্টের তক্ষকেরা ভিড় জমায় চারপাশ,
হাজারো সংগীত পারে না
দূরে সরাতে তাদের; বেদনার ঢেউগুলো
ভাসিয়ে নিয়ে যায় কোথায়
আমায় !
তবু পাশে যাই,
গান গাই
ভাল লাগায় মোহিত হই,
সব কষ্ট ভুলে হাত বাড়াই
সুখের আশায় !
এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য আমার !
৩. আরাধ্য
যদি জিজ্ঞেস কর
কী করতে পারবে আমার জন্যে?
বলব না জীবনটা বিলিয়ে দিব
কিংবা মহাকাশ থেকে চন্দ্র এনে দেব
তোমার পায়ে।
সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে
মণিমুক্তা এনে ভরিয়ে দিতে পারবনা আঁচলে তোমার।
তাহলে কী করতে পারবে?
কাটবে ঘোড়ার ঘাস শুধু ?
না। তাও না।
নক্ষত্রের রাতে চাদের আলোয় ভরিয়ে দেব উঠোন তোমার;
বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় হাতে হাত রেখে
পারব হেটে যেতে
বহুদূর!
প্রাচুর্য না থাকলেও অভাব হবেনা
আরাধ্য বস্তুর।
তারপর ও যদি থাকে কিছুমাত্র অভাব
পুষিয়ে দেব তা ভালবাসায় আমার।
আরো কিছু জিজ্ঞাস্য আছে কি
তোমার!!