কবিতা হচ্ছে সাহিত্য সৃষ্টির সবচাইতে কঠিনতম কাজ-রশীদুল ইসলাম চৌধুরী
পাতা প্রকাশ : কেমন আছেন? বসন্ত কেমন কাটছে?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি। মাশাআল্লাহ সব ফাগুনই আমার ভাল কাটে; এবারও তেমনিই শুরু হয়েছিল,মাঝে আকস্মিকভাবে আমার মা ইন্তেকাল করলেন। সে থেকেই একটু কষ্টে আছি। সবাই আমার মা-এর জন্য দোয়া করবেন।
পাতা প্রকাশ : আপনার লেখালেখি শুরুর গল্পটা শুনতে চাই…
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : স্কুল জীবন থেকেই আমার গল্প,উপন্যাস,জীবনী,কবিতা ইত্যাদি পড়ার একরকম নেশা ছিল।ওগুলো পড়তে পড়তেই মনে হত লেখকরা যা লেখেন তার কিছুটা হয়তো বাস্তবতা থেকে নেয়া আর বাকীটা কল্পনা বা অভিব্যাক্তি।সুতরাং আমি প্রতিদিনই এ রকম অনেক কিছুই দেখি আবার এসব কল্পনা দিয়ে সাজাতে ভাল লাগে। তাই একদিন সাহস করেই কাগজ কলম নিয়ে বসলাম। বলতে পারেন এভাবেই শুরু আর কি।
পাতা প্রকাশ : ছোট বেলায় জীবনের লক্ষ্য কি ছিল? তা হতে পেরেছেন কি?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : পরিবারে একজন ডাক্তারের প্রয়োজন অনুভব করে বাবা-মা আমাকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন। ওনাদের ইচ্ছেটাও আমার মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিল কিন্তু এইচএসসি পাশ করার পর ডাক্তারি পড়ার জন্য শুধু ভর্তি পরীক্ষাটা দিতে পেরেিেছলাম, ছাত্র হিসেবে নাম লেখাতে পারিনি। তখন অবশ্য প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের ব্যাবস্থা ছিল না। সুতরাং মনের দুঃখে বিজ্ঞানের পাট চুকিয়ে একেবারে ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে ঢুকে পড়ি। সুতরাং বুঝতেই তো পারছেন…!
পাতা প্রকাশ : আপনি নিঝেকে কবি ভাবেন? নাকি অন্য কিছু?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : আমি নিজেকে কবি সাহিত্যিক কিছুই ভাবি না। লিখছি অনেকদিন ধরে, সবে তা পাঠকের দরবারে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। পাঠক যদি ওসব গ্রহণ করে আমাকে কিছু একটা সম্বোধন করেন, তবে তাই। সে অব্দি বলতে পারেন আমজনতা।
পাতা প্রকাশ : নিজের বই নিয়ে উপলব্ধি কি?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : আমি যা লিখি তা আমার নিজের চিন্তা চেতনা আর নিজের থেকে একরকম চাপ অনুভব করে লিখি। কেন জানি মনে হয় আমার এ অনুভূতিগুলি সমাজের আর দশজনের সঙ্গে শেয়ার করা উচিৎ-যাতে করে তাদের চিন্তা চেতনাও শুধু কল্পনার মধ্যে না থেকে বাস্তবতার আলোয় বেরিয়ে আসতে পারে।তাই আমার সব লেখায় সব ধরনের পাঠকের মনের খোরাক জোগানোর চেষ্টা করি। বাকিটা পাঠকরাই ভাল বলতে পারবেন।
পাতা প্রকাশ : আপনার কাছে কবিতা কি?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : আমার কাছে কবিতা হচ্ছে সাহিত্য সৃষ্টির সবচাইতে কঠিনতম কাজ। আমি যেটাকে আজকের যুগে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে চাকরি পাওয়ার চেয়েও কঠিনতম বলে মনে করি। কারণ একজন ঔপন্যাসিক দু’শো পাতার একটি বইতে ইনিয়ে বিনিয়ে কতরকম উদাহরণ আর উক্তি দিয়ে কাহিনীটা শেষ করেন। আর একজন কবি ঐ একই কাহিনীটিকে মাত্র দশ লাইনে অথবা দু’চারটে পঙতিতেই তুলে ধরেন। সুতরাং কাজটাকে নিশ্চয়ই কঠিন বলবেন। তবে অর্থ আর তথ্য সম্বলিত কবিতাগুলি আমার পড়তে ভালই লাগে।
পাতা প্রকাশ : আপনার মাথায় লেখার ইমেজ কিভাবে আসে?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : জীবনের এতটা পথ অতিক্রম করতে গিয়ে সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনার সংমিশ্রনে কত কি দেখেছি, কত কি জেনেছি, কত কি শিখেছিÑএর মাঝে যেমন ছিল আনন্দের বন্যা, তেমনি দুঃখের কাল বিভিষিকা। কালের আবর্তনে এসব কিছু স্মৃতি থেকে আপনা আপনি একদিন হারিয়ে যাবে। যদি কাগজ কলমের মাধ্যমে এগুলিকে লোক চক্ষুর সামনে আনা যায় তবে এটাও হতে পারে কারও সৃষ্টির প্রেরণা অথবা কষ্টের শান্তনা। সাহিত্যের স্বাদ আস্বাদনের উপজিব্য তো বটেই। বোধ করি শুধু এটুকু ভেবেই লেখালেখি করি।
পাতা প্রকাশ : আপনি কার লেখা বেশি পড়েন? বিশেষ কারও লেখা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : কম বেশি অনেকের লেখাই পড়া হয়। তবে ছাত্রজীবন থেকেই নজরুল রবীন্দ্রনাথ তো বটেই নিহার রঞ্জণ, ফাল্গুনী মুখপাধ্যায়, শরৎ চন্দ্র, সমরেস বসু , নিমাই চট্টপাধ্যায়,বেগম রোকেয়া এমনকি কাজী আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা সিরিজগুলিও বাদ যায়নি। পরবর্তিতে অনেক স্বনামধন্য লেককের সঙ্গে হুমায়ুন আহমেদ,ইমদাদুল হক মিলন,শীর্শেন্দু মুখপাধ্যায় একটু বেশিই পড়া হয়েছে।এছড়াও সেক্সপীয়ার,ওয়ার্স ওয়াথ, মিল্টন, কীটস এনাদের স্বাদও কম বেশি নেয়া গেছে। নজরুল রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও সুকুমার রায়, নির্মলেন্দু গুন, শামসুর রাহমানের কবিতাগুলিও আমাকে বেশ আন্দোলিত করে। বর্তমানে আনিসুল হক সহ সমসাময়িক অনেকের বই পড়া হয় কিন্তু আনিসুল হকের মত হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেন জানিনা বাকীদের লেখায় ঠিক আগের মত আনন্দ পাই না। হয়তবা এটা আমার বয়সের দোষও হতে পারে। অনেকের সঙ্গে রবি ঠাকুর ও শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা আমাকে বেশি প্রভাবিত করে।
পাতা প্রকাশ : আপনার সমকালীন লেখকদের কবিতা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : আমি আগেই বলেছি, কবিতাকে আমি খুব ভয় পাই। তার কারনও আমি ব্যাখ্যা করেছি।তবে ইদানিং এত বেশি কবির সমাগম ঘটেছে যে, বোধ করি কবিতাই এখন কবির ভয়ে শংকিত। আগে ছন্দ দিয়ে কবিতা লেখা হতো। তাতে হয়তঃ কবিদেরকে ভাব, ভাষার সঙ্গে ছন্দের মিল করতে, একটু হলেও কষ্ট করতে হতো।কিন্তু কালের আবর্তে কিছু মহান কবির সুবাদে বাংলা সাহিত্যে গদ্য কবিতার রূপ পেল। আর তখন থেকে ক্রমেই বাংলা সাহিত্যে ঝড়ের বেগে কবির আবির্ভাব ঘটতে লাগল। মাশাআল্লাহ্! দেশে আমরা এখন অনেক কিছুর মত কবি আর কবিতাতেও স্বয়ং সম্পূর্ণ। মহান একুশে বইমেলা ২০২০ ই এর অন্যতম স্বাক্ষী। তবে কষ্ট একটাই, এ সমস্ত কবিগনের মধ্যে হাতে গোনা কিছু কবি ছাড়া বাকিরা যা বচনা করছেন, পাঠকগন তাকে কি বলে আখ্যায়িত করছেন-তা আমি বলতে চাই না।কাউকে কষ্ট দেবার জন্য নয়,সকল কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েএকজন পাঠক হিসেবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য হলেও বলছি, ঐ সমস্ত কবি গনের প্রতি বিণীত অনুরোধ, বেশি লেখার প্রয়োজন নেই।অল্পই লিখুন। তবে সেক্ষেত্রে ভাব, ভাষা, পটভূমি, সর্বোপরি পাঠক আর সমাজে এর গ্রহন যোগ্যতা বিবেচনায় এনে লিখলে সকলেরই মঙ্গল। কারন একটি কবিতাই একজন কবিকে বিখ্যাত করেছে, এরকম ইতিহাস অনেক আছে।
পুরাতন সকল কবির লেখাই আমার ভাল লাগে; তবে সমকালীন কবিদের মধ্যে কবিতার আঙ্গিকে যারা কবিতা লেখেন, এমন সকল কবির লেখাই আমার ভাল লাগে।
পাতা প্রকাশ : সবশেষে লেখক হিসেবে আপনার চুড়ান্ত লক্ষ্য কি?
রশীদুল ইসলাম চৌধুরী : বয়সের বিবেচনায় আমি এখন যে অবস্থানে আছি, তাতে চুড়ান্ত লক্ষ নির্ধারণ করা আমার জন্য খুবই কঠিন। আমার ইচ্ছে আর অনুভূতিটুকু একটু একটু করে পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি, এভাবেই চলুক না। তারপর যেখানে গিয়ে আমার কলম থেমে যাবে, ধরে নিন সেটাই হবে আমার চুড়ান্ত লক্ষ্য।